মান্তু মাসির মরণ বাঁচন
মান্তু মাসির মরণ বাঁচন
ধাঁই ধপাধপ হুড়ুম দুড়ুম হচ্ছে একি ধুন্ধুমার,
দ্বার, জানালা কাঁপছে ঘরের, ভাঙছে নাকি দেয়াল তার!
পাখনা মেলে পরাণ পাখি, হয় কি ভূমিকম্প?
ছাদের উপর মান্তু মাসি করেন লম্ফ ঝম্প।
একশো কেজি ওজন তাহার, খোরাক কিলো দশ,
জল খাবারে ডজন ডিমের সঙ্গে ফলের রস।
লাঞ্চ খানি তার হালকা খানিক গোটা মুরগির রোস্ট,
সঙ্গে থাকে কয়েক পাউন্ড পাউরুটিরই টোস্ট।
নিশি যাপন অর্ধাহারে, কয়েক ধামা খৈ,
গিলতে সহজ তাইতো সাথে কিলো খানেক দই।
এহেন সেই মান্তু মাসি বড্ডো মিতাহারী,
এতো করেন কৃচ্ছ সাধন তবু যাচ্ছে ওজন বাড়ি।
ক মাস আগেই পড়েন রোগে শয্যাগত প্রায়,
ঘাড় নাড়িয়ে ডাক্তার কয় একটিই উপায়,
বললো মাসি মিনমিনিয়ে কহেন মহাশয়,
মরতে আমি চাইনা ভবে কত খাবার হয়!
কে এফ সির চিকেন থেকে ডমিনোসের পিজা,
মাটন বিরিয়ানীর সাথে চিতল পেটী ভাজা ।
রেগে আগুন ডাক্তার কয় খেয়েই তুমি মরো,
ছাড়ো আমায়, নিজের ইলাজ নিজেই তুমি করো।
কেঁদে পড়েন মান্তু মাসি, চান করজোড়ে মাফ,
যা বলবে তা শুনবো আমি, রোগকে করো সাফ।
সেই বচনে চিকিৎসকের শান্ত হলো মন,
লিখতে বসেন নিয়ম নিধির বিশদ বিবরণ।
চিকিৎসা নয় কঠিন তেমন, একটি মাত্র কাজ,
নোলা রাখবে নিয়ন্ত্রণে - সকাল, দুপুর, সাঁঝ।
এই নিদানে দিলেন তিনি লিখে ডায়েট চার্ট,
সাথে করো শরীর চর্চা, তাতেই বাজি মাত।
সেদিন থেকে শুরু হলো মাসির অনুশীলন,
ঘন্টাখানেক প্রাতঃভ্রমণ করেন যোগাসন।
ফুঁসে ওঠে ফুসফুস তার কপাল ভাতির চোটে,
পুশ আপ, সিট্ আপ, ইত্যাদিতে কাল ঘর্ম ছোটে।
বেন্ডিং আর স্ট্রেচিং করে কোমর টনটন,
খিদের চোটে যখন তখন মাথাও বন্ বন্।
কিন্তু মাসি কোনো মতেই হইলো নাতো কাৎ,
সকালে গ্রীন চা আর দিবসে দুইটি চামচ ভাত।
সায়ং কালে শুকনো মুড়ি, পুরো আধ খান শশা,
সবজি সেদ্ধ নৈশাহারে; ফিরবে এবার দশা।
দাঁতে দন্ত চেপে মাসি মানেন ডায়েট সূচি,
শরীরে যুত ফিরলে পরেই ,খেয়ে আমি বাঁচি।
সেই আশাতে চালিয়ে গেল মাসি মাসেক ছয়,
ডাক্তার খুশ; যেন বাকি জীবন এই ছকেতেই রয়।
শুনে মাসির দুই চোখেতে নামলো জলের ধারা,
মরণ হলো শুরু আমার, বাঁচা হলো সারা।