নারীত্বের উদযাপনে
নারীত্বের উদযাপনে
ন'মাস ধারণ করে অপত্যকে জঠোরে,
তীব্র সে এক যন্ত্রণা কে সহ্য করে হাসি মুখে,
অনাবিল আনন্দে ভেসে যাওয়া ভূমিষ্ঠের মুখপানে...
পালিত হল মাতৃত্বের উদযাপন।
এখানে যাবি না, ওখানেও না।
সন্ধ্যে নামার আগে বাড়ি আসবি।
কোন ভদ্র বাড়ির মেয়ে এতো রাত করে ফেরে রে!
চুল বেঁধে বেরোবি বাড়ি থেকে।
ওড়ানা টা ঠিক করে নিতে পারিস না।
শুধু পড়লে হবে না; এবার একটু রান্না টাও শেখ।
পালিত হয়েছিল নারীত্বের উৎসব।
কই, একটু মুখটা তোলো তো।
আরেকটু চুল রাখতে পারতে তো।
রান্নাবান্না করতে পারো তো?
গান, সেলাই শিখেছ কিছু?
নিজের বাড়ির সাথে প্রথম আলাপ পর্ব।
নিজের বাড়ি! নিজের বাড়ি তবে কোনটা?
মা যে বলতেন ছোট থেকে, স্বামীর বাড়িই নাকি নিজের বাড়ি।
আমি কি তবে পরের বাড়িতে বেড়ে উঠলাম?
নারীত্ব আমার রক্তে লেখা,
স্বামীর চোখে নিজেকে দেখা,
তার হাত ধরে আরেকবার চলতে শেখা,
অচেনা স্পর্শে নিজেকে সঁপে দিলেই মিলে যায় নারীর ভাগ্যরেখা।
মিনিবাস কিম্বা লোকাল ট্রেন ধরে ছোটা শুরু জীবিকার টানে,
অস্পৃশ্য কিছু হাতের ছোঁয়ায় উদাসীন ভাবে মিশে যাওয়া মোহনায়,
একবিংশ শতাব্দীতেও হাজারো ছুৎমার্গের অভিঘাতের ব্যবধানে,
পুরুষের পরিচয়ে এগিয়ে চলাতেই তবে স্বতন্ত্র মেয়েদের স্বাধীনতা!
ভালোবাসার অসুখে কুঁকড়ে থাকা শরীরের ভাঁজে ভাঁজে,
সারাটা রাত জুড়ে অসংখ্য কামনার লালিত্যময় গতিপথে,
সুডৌল শরীরের অগণিত গণতান্ত্রিক ধর্ষণের আহূতিতে,
রক্ত মাখা মেয়ের পতিতালয়ের বদলে পত্নী হওয়া কি সাজে?
কয়েকটা কালসিটে দাগ, কয়েকটা দাঁতের কামড়;
কোণঠাসা নারী আবার যেদিন হয়ে উঠবে লক্ষ্মীবাঈ,
স্তনের উজানের উত্থানে উদ্ভাসিত ত্রিশূলধারী রণাঙ্গনে,
'নষ্ট মেয়ে' র ভ্রূণেও নারী আসুক গৃহস্থালির অঙ্গনে।
গগণচুম্বী স্পর্ধা তোমার, দর্পের নিধনে গর্জে ওঠা নারী;
পুরুষ ছাড়াই শেকলভাঙার সকাল আমরাই আনতে পারি।