বিদ্যাসাগরের জন্মদিনে
বিদ্যাসাগরের জন্মদিনে


তোমাকে নিয়ে আদিখ্যেতার লেখা লিখতে আজ ভারি বাঁধছে এ বুকে;
আমি সত্যিই জানি না, তুমি না এলে ধরাধামে কথা ফুটত কি মূক মুখে?
যে ভাষাকে আঁকড়ে ধরে ডেকেছি প্রথম 'মা',
সেই ভাষাকেই বাঙালি আজ অনায়াসেই করেন ঘেন্না।
পরক্ষণেই বুক ফুলিয়ে ইংরেজির ধ্বজা উড়িয়ে বলেন, 'আমার ছেলের বাংলা টা ঠিক আসে না!'
মাথাটা বেশ বড়ো, হাঁটুর উপর ধুতি, বীরসিংহের বাঙালি বাবু ছিলেন বেশ জেদী;
ছেলেবেলাতে শোনা গল্প মায়ের মুখে- তিনি ছিলেন বিদ্যারসাগর, মায়ের ডাকেই পেরিয়েছিলেন নদী।
বারো মাসে তেরো পার্বণের তালিকা জুড়ে কোটি কোটি দেব-দেবীর পুজা চলে বাংলার ঘরে ঘরে;
যাঁর জন্যে নারীর ঘরে ফুটল আলো, দেখল নতুন আশা; তাঁর চরণে ফুল দিয়েছে এমন নারী, বলো তার নামটি মনে করে!
যাঁর শিক্ষায় পেয়েছ ভাষা, রেখেছ সোজা শিরদাঁড়া; তাঁর মুখেতেই লেপেছ কালি;
মিডিয়ায় তর্ক করে, দোষের ভূত নামিয়ে পরে, বাঙালি কি আনন্দে এ প্রাণ জুড়ালি!
পেরিয়ে সকল প্রতিকূলতার ঝড়, আশৈশব বৈধব্যের শেকল ভেঙে দেখালেন নতুন দিগন্ত;
অকপটে সাহস নিয়ে একমাত্র বাঙালি বলেছিলেন ভুল ছিল 'সাংখ্য দর্শন ও বেদান্ত'।
হয়ে উঠতে পারতেন সহজেই এক মহান ব্যক্তিত্ব ভারতমাতার; শুধুই তিনি আজ ঈশ্বর রূপী রক্ত-মাংসের শরীর,
বাংলা ভাষার প্রথম শিল্পী বলেই হয়তো বিদ্যাসাগরের ভূয়ষী ব্যাখ্যায় কখনো থেমেছিল কলম বিশ্বকবির।
তোমার সন্তানরা হয়েছে মূর্তি ভাঙায় দক্ষ, জানি তুমি এসবের করো না তোয়াক্কা;
আসলে তুমি যতটা ছিলে সোজা, তোমার এ যুগের ছেলেদের পথ ততটাই হয়েছে বাঁকা।
শিক্ষক হবেন পারদর্শী বাংলা ও ইংরেজিতে, এটাই দাবি ছিল তোমার একদিন;
শিক্ষকের দাবিতে আজ গুলি চলে, ছাত্রের রক্তে রাঙানো হয় তোমার শিক্ষার প্রাঙ্গণ।
তোমার জন্মদিন ঘিরে হোক্ মোদের শিক্ষক দিবস, এই সম্মানটুকু স্থান পাক্ তোমার মুকুটে,
বিশ্বজুড়ে বাঙালির হৃদয় হবে গর্বিত, উজ্জ্বল হয়ে জ্বলবে তুমি চিত্রকূট থেকে বালুতটে।
দুইশত বছর পরেও তোমার আদর্শ ততটাই প্রাসঙ্গিক যতটা পেরেছি করতে আত্মস্থ;
তোমার চরণে আজ তারাই রাখুক ফুল যারা আজও বোঝেনি তুমিই এক এবং অদ্বিতীয় শাস্ত্র।