আপনজন
আপনজন
ছেলেরা সব দূরে দূরে, ব্যস্ত আপন কাজে,
তাদের জগৎ, তাদের জীবন, তাদের মতন আছে।
আমরা বুড়ো মা বাবা, একলা একলা থাকি,
কবে তারা পাবে ছুটি, বাড়ি আসবে নাকি।
নাতিনাতনির পড়াশুনা, গান-নাচে ফাঁক পেলে,
বৌমারাও তখন একটু সুবিধা করে নিলে,
আসে যদি সবাই মিলে, বড়োই ভালো লাগে,
শুনশান এই বিশাল বাড়ি গমগমিয়ে জাগে।
এমনিতে খুবই ভালো ওরা, প্রায়ই ফোনে ধরে,
নিয়ম করে 'কেমন আছি' ঠিক জিজ্ঞেস করে।
এই তো কালকে ছোটছেলেটা বললো "মা গো জানো,
আমি আর দাদা কি ভাবছি সেইটে একটু শোনো।
একলা তোমরা, অথর্ব মানুষ, অসহায় ভাবে থাকো,
একটু এদিক ওদিক হলেই ফোন করে খালি ডাকো।
সামাল দিতে পারো না তো বুড়োবুড়ি দুই মিলে,
তার চেয়ে চল বৃদ্ধাশ্রমে, থাকবে সদলবলে।
সবসময়ই সঙ্গী পাবে, দেখভালেরও লোক,
ওষুধ, বদ্যি হাতের কাছেই, চিন্তা সহজ হোক!
রান্না-বাড়া কোনো কিছুই করতে হবেনা আর,
গল্পসল্প করেই দেখবে চারবেলা কাবার!
খরচাপাতি ভেবোনা কিছু, আমরা সামলে নেব,
দাদার সাথে কথা করেছি, বাড়িটা বেচে দেব।
অত বড় সাবেকি বাড়ি, যত্ন পায়না আর,
তোমরাও খুব ঝামেলা পোহাও, দেখাশোনাটাই ভার!
সবদিকেরই বেশ সমাধান, জানালাম তোমাকে,
আসছে মাসে আসবো আমরা, বলে রেখো বাবাকে।
মনটা হঠাৎ থমকে গেল, পেলাম না কোনো কথা,
গলার কাছটা শুকিয়ে এল, বুকে হালকা ব্যথা।
কর্তা বলে, "ও গিন্নি, কি হলো গো এমন?
লাল টুকটুকে মুখখানা যে আমসি দেখায় কেমন!"
"ও কিছু না, ছেলেরা বললো আসবে না ঘরে আর,
রাখবে না আর কোনো যোগাযোগ, থাকবে যে যার।
আমি বলি কি, পাশের গলির অনাথশ্রমে যাই,
পেনশন থেকে বেশ কিছুটা ওদের দিয়ে দেই।
করবো সেথায় রোজ যাতায়াত, করবো দেখভাল,
ওরাও মাঝেমাঝে আসবে, রাখবে খেয়াল।
শিশুগুলোর কলকলানো চাগাবে এই বাগান,
আমরা মিলে খুদে'দের সাথে জুড়বো ঐকতান।
মানুষ যখন ছোট থাকে, থাকে যে বড়ো আপন,
তাই চলো গো, তাদের নিয়েই করি জীবনযাপন।"