গলিত সূর্যের দেশ
গলিত সূর্যের দেশ


(১)
আরব সাগরের জলে ফেনার মতো ধীরে ধীরে জমা হয় আলো,
ভোরের প্রথম কাক চড়ুইভাতির মতো দল বাঁধে ডালে ডালে।
অসংখ্য ভূতুড়ে ছাপা শব্দ ঝিমোতে ঝিমোতে
ক্লান্ত চা খায়,
এলোমেলো অলস ভাঙ্গা চুলের ঢেউ দুলে দুলে
ছাদে কাপড় শুকায়।
প্রিয়তমা , জমে থাকা সূর্যালোক মাড়িয়ে চলে
যাবো তোমার সাথে।
(২)
জমাট বাঁধা অন্ধকার থেকে গলতে গলতে
ভয় মিশে যায়
সিন্ধু- কাবুল- ইউফ্রেটিস- জডন কিংবা
কিজিল নদীর জলে ।
তাঁরা মানুষ ছিল, তাঁরা কেউ নেই, সভ্যতার ইতিহাস আছে,
সমস্ত বালির রাজ্য জুড়ে প্রাচীন কয়েকটা খেজুর গাছ, মরুদ্যান,
কয়েকটা সাদা পায়রা উড়ে গেছে, আজ নয়
বহুদিনের কথা।
(৩)
মাথার ওপর দিয়ে শ্রাবণের মেঘের মতো
অসংখ্য বোমারু বিমান
সারি সারি শবের ভিতর সন্ধ্যা যখন আসে
ঝিঁঝিঁ গুলো চুপ হয়ে যায়
শুধু বন্দুকের শব্দ কথার ছলে মৃত দেহের
ফর্দ পড়তে বসে।
একবিংশ শতাব্দীটা শুধু মুষ্টিমেয় লোভী মানুষের যাদের হাতের গুণে
সমস্ত আকাশ জুড়ে তারাদের মতন রাশি রাশি
লাশ পড়ে আছে প্রান্তরে
ভাইয়ে ভাইয়ে রক্ত মাখানো লাশ।
(৪)
বেয়নেটের ওপারে ওরা ঘুরে ফেরে ক্ষয়িষ্ণু
গলিত সূর্যের দেশে
নদীর ওপার দিয়ে চিলের আর্তনাদ,কাকতাড়ুয়া কাঠফাটা রোদে একদিন কিছু সরীসৃপ
পাখি হয়ে উড়ে যায় সার বেঁধে নীলিমায়।
এমনি লালচে মলাটের আকাশের নিচে ডাইনোসর,
আদিম মানুষের গন্ধ নিয়ে জেগে আছে
প্লাটিপাস আর পাফিন।
কিন্তু মানুষ তো আর মানুষ থাকে না,
আর কতো দিন আগলে আগলে রাখবো
তোমায় হিংস্র উপত্যকায়।
(৫)
ভিজে কালো চুলে ঢাকা ভোরের আকাশে
চিরতরুণ সূর্য
আবার চির যুবকের পাড়া পাড়া ঘোরা
সোনালী গমের শীষ
বসন্ত ফিরে পায় পাতা, কচি কচি খেজুর পাতা
ভাগ করে নেয় নরম রোদ।
পাশের বাড়ির বউটি কি আজকে ও ছাদে দাঁড়িয়ে আছে?
কিংবা ঘরমোছার মেয়েটা ঠিক ক'দিন ধরে আসছে না?
দখিনা চোখের জল খবরের কোণায় কোণায়
উপন্যাসের শেষ পৃষ্ঠা।
তবু ও প্যারিসের লন্ডনের করাচি বাগদাদ
মুম্বাই কিংবা ঢাকার রাস্তায় চলার আগে
মানুষ ছেলের মুখ দেখে যায়!
প্রিয়তমা , জমে থাকা সূর্যালোক মাড়িয়ে চলে
যাবো তোমার সাথে।