পূর্ণিমা ও একটি মৃত্যু
পূর্ণিমা ও একটি মৃত্যু


সেদিন সবই হ'ল,
ধুলো মেখে লুটোপুটি,
চোখে চোখ রেখে জ্বলে উঠল চিতা।
আকাশজোড়া অজস্র চোখ আর
চারপাশের দেবদারু গাছের মধ্যিখানে তখন
নামছে উর্বর রাত্রি।
একবারও বাধা দিইনি।
ক্ষিদে আমারও পায়,
কিন্তু দু'পায়ের মাঝে ঈশ্বর একটি নিরালা গহ্বর দিয়েছেন
যার স্রোত নিভুনিভু হওয়াই শ্রেয়।
তোমাকে বহুবার ডাকলাম,
অস্ফুটে,
ফুসফুসের অনেকটা ভেতরে একফালি চিৎকার
কৃষ্ণপক্ষের চাঁদের মতো অসম্পূর্ণ থেকে গেল।
তুমি পড়তে পারোনি,সেটি পারত আরেকজন,
আমার মুখেচোখে ভেসে উঠত লেখা,স্পষ্ট ভাষায়
কিছুই বলতে হ'ত না আমাকে।
কিন্তু যেহেতু আপাতত আমার বসতবাড়ি নেই
তাই এই এই এই ধুলোর ওপর,এই শিশিরভেজা ঘাসে,
এই আলতার উষ্ণতার মতো বাতাসের চাদর জড়িয়ে
তোমার স্পর্শ নিলাম।
জমিতে ধান ফলার কথা ছিল না,
কিন্তু তিলতিল করে বয়ে গেল স্রোত
আর আমি ভুলে গেলাম ক্ষিদে পাওয়া পাপ,
দুই ঊরুর জাঁতাকলে পিষে ফেলতে ফেলতে
দেখলাম চাঁদের রূপ খুলছে,
চুঁইয়ে পড়ছে তরল রৌপ্য ,
হাঁটু গেড়ে বসে আছো তুমি,
অমোঘ দৃষ্টিতে লেহন করে চলেছ আমার গোটা অস্তিত্ব,
স্তরে স্তরে লিখে রাখছ আলো বাতাস
যেভাবে মৌটুসি পাখি তার সরু ঠোঁটে শুষে নেয় মধু,
প্রশিক্ষিত খুনি তার পিস্তল ধ'রে থাকে স্থির শান্ত হাতে,
তেমনই স্থিরদৃষ্টি ,তেমনই অনন্য প্রত্যয় তোমার গ্রীবায়।
বুদ্ধদেবের মতো আসন ঘিরে বসে আমাকে জিভ দিয়ে প্রণাম
করলে।
আমার মধ্যে কয়েকঘণ্টার ভ্রূণ ।
তারপর আকাশটা কেমন বদলে গেল।
প্রেমিকা ছাড়া অন্য নাম জুটল না আমার
আর আহত বাঘিনীর মতো কাঁচা রক্ত
ঝরাতে ঝরাতে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে সরে গেলাম দূরে।
মেঘে মেঘে ঘষা লেগে উছলে গেল সমস্ত বিনয়টুকু,
তোমার বাহুর ওপর শুয়ে থাকা হ'ল না।
সমস্ত গোলার্ধ তখন গভীর ঘুমে।
আমি ধীরে ধীরে উঠে এলাম যেমন
ঘুমন্ত সন্তানের হাতের মুঠির ভেতর থেকে
অতি সন্তর্পণে আঁচল সরিয়ে নেয় মা।
টলতে টলতে পেরিয়ে আসছি সমুদ্র ,আমার কাছে
মদ নেই,ধোঁয়া নেই,শান্তি নেই
স্মৃতি আছে।
আমি হাঁটছি, একা,যেভাবে
হেঁটে গেছি পাঁচ হাজার বছর আগেও।
যেভাবে হেঁটে গেছে আমার পূর্বপুরুষ ।
যেভাবে হেঁটে গেছে ঈভ এবং আরো অনেকে
যাদের নাম লেখা নেই কোথাও।
দু পাশের রুদ্রপলাশ গাছ গুলো নুইয়ে
পড়ছে হলুদ আলোর ডানার ঝাপটায় ।
কৃষ্ণপক্ষ শেষ হ'ল মাত্র।