মনের কথা
মনের কথা


ছোট্টবেলায় বলেছিলে টিয়াপাখিটার কথা,
হারিয়ে গিয়ে কাঁদছিলো সে, মায়ের কোলের ঝোঁক।
মা'পাখিটা পাগলপারা, বুক জ্বালানো ব্যথা!
গল্পটা আজও একইরকম ভাসায় জলে চোখ।
চির'টাকাল আমি তোমার আঁচলধরা মেয়ে,
আর কেউ এসে গাল টিপলেই 'মা যাবো' বলে কাঁদি!
বড় হওয়ার সবখানে'তে তোমার চালনা পেয়ে,
আজ যে আমি নিজের করে দূরত্বে ঘর বাঁধি!
কলেজে উঠেই দূরে গিয়ে থাকা হোস্টেলে,
উচ্চশিক্ষার যাত্রাপথে আরো দূরের ঠাঁই,
বিদেশ যাওয়ার হাতছানি তবে হেলায় ফেলেছি ঠেলে
শুধুমাত্র তোমার কাছে থাকার ইচ্ছে, তাই!
চাকরি দূরে, নতুন বিয়ে, পৃথিবী গদ্যময়,
সঙ্গে তোমার পুরোনো শাড়ি, গন্ধে ঘুমিয়ে যাওয়া।
জীবনযুদ্ধে এগিয়ে চলি, তোমার পথেই জয়,
আমার মনের সমস্ত বল তোমারই তো দেওয়া!
জীবনগাড়ি বেদম জোরে ছুটছে কালের ঠেলায়।
এমন সময় কোভিড এলো, এলো তোমার নাতি!
বাইরে যাওয়া বারণ হলো, অসাবধান হলেই
দুই'টি প্রাণের একযোগেতেই অশেষ দুর্গতি!
সব মেয়েরাই এই সময়ে মায়ের কাছে যায়।
আমার তরেও একই ধারা, তুমি ভীষণই খুশি!
বুক বাঁধাটাই সার তবে এই অতিমারী আসায়,
দূরে দূরেই কাটলো আমার শ্রান্
ত দিবানিশি।
সাধের খাওয়া খেলাম আমি তোমার দেখা ছাড়াই,
চিকিৎসকের কথাবার্তা ফোনে জানাই খালি।
নবাগত'র কান্না সামাল, তুমি পাশে নেই,
আঁতুড় কেটে ষষ্ঠী পূজা সবই গেল চলি।
অন্নপ্রাশন হলো যে তার মামারবাড়ি বাদে,
বসতে শেখা, উপুড় হওয়া, সবই আমি দেখি,
রোজই ভাবি কবে তুমি আদরে আহ্লাদে
ভরিয়ে দিয়ে তাকে কোলে তুলবে এসে ডাকি।
জগৎ যে তার আমিই এখন, আমার যেমন তুমি
ছিলে যে সেই নতুন মা'গো, বহুদর্শী আজ!
আমি এখন একলা নতুন, বিস্ময়ে, বিরহে,
তিক্তমধুর অভিজ্ঞতায় আনাড়ী জীবন'মাঝ!
এখনই যে আমার তোমায় সবচেয়ে বেশি চাই!
কেমন করে পেয়েছিলে তুমি মনের অসীম জোর!
শিখিয়ে পড়িয়ে আশ মিটিয়ে আমায় দিলে তাই
নিজের মতো বড় হওয়ার যোগ্যতারই ডোর!
জানিনা'গো আর কতদিন কাটবে এভাবেই,
ছোট্ট খোকা বড় হবে আমার ধ্যানে জ্ঞানে,
মায়ের গড়ন শিখব আমি তোমার অভাবেই,
ঘাত প্রতিঘাত আবেগ যত না'বলা গহীনে।
আশীষ দিও আমায় তুমি এই কামনা করে,
মনের জোরে তুমি যেমন সামলেছ সংসার,
আমিও তেমন মা হয়ে উঠি সকল বাধা চিরে,
পরোয়া না থাক দেখা না হওয়ার তীব্র বেদনা'ভার।।