অ ব্রাহ্মণ
অ ব্রাহ্মণ


"আশ্বিনের শারদপ্রাতে......" দেবীর আগমন বার্তা,
কি করে সমস্ত অন্ধকার বিনাশ করে,
এনেছিল শরতের শিশিরের মতো স্নিগ্ধতা!
প্রকৃতি ধীরে ধীরে জেগে উঠেছিল, সেই ভোরে।
পৌঁছে গেছি সে কোন ছোটোবেলায় এক অচিনপুরে,
রেডিওতে ভেসে আসা গলা শুনেই জানিনা কি করে।
শুধু কথা, গান বা কন্ঠ নয়, এ তো আবেগ বাঙালির !
মহালয়া শুনতে বসে মনে পড়ে অবদান সকলের।
বানীকুমার থেকে শুরু করে পঙ্কজ মল্লিক,
বীরেন্দ্রকৃষ্ণর গলাকে পাঠের জন্য করেছিলেন ঠিক।
প্রেমাঙ্কুর আতর্থীর অসম সাহস ও উৎসাহ,
এগিয়ে নিয়ে চলছিল বাংলা ও সংস্কৃতর রস ও স্নেহ।
প্রথমবার অব্রাহ্মণ বাঙালির চন্ডিপাঠে
কেউ কেউ অসন্তুষ্টও তো হয়েছিলেন।
পরে আপামর বাঙালির ভালো লাগাতে,
বাধ্য হয়ে তাঁরা একরকম মেনে নিয়েছিলেন।
কলকাতায় ট্রামের হাত ধরে মেট্রো রেল হয়েছে,
রেডিও,এ্যান্টেনা গিয়ে আজ হাতে মোবাইল এসেছে।
কিন্তু মহিষাসুরমর্দিনী! এখনও মহালয়ায় চলছে।
একশো বছর হতে এখনও কিছু বছর বাকি,
আগামী একশো বছরও মানুষ শুনবে, আশা রাখি।
"আমি তো শুধু পাঠ করি না, পূজো করি মা
ত্র!"
বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের এই কথাটা যে কত বড় সত্য !
প্রমাণ হয়েছিলো কথাটা উনিশশো ছিয়াত্তরে।
হায়ার অথরিটি হয়েছিলেন বেশ জব্দ,
যাঁরা তখন ছিলেন সে সব চেয়ারে।
উত্তম কুমার তো প্রথমে রাজি হননি,
কি করবেন, অনুরোধে ঢেঁকি গেলা সে যে !
অভদ্র ভাবে না করতে পারেননি।
মনটা তাঁরও এ কাজে সায় দেয়নি।
স্কটিশ চার্চের স্নাতক বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র এক কথায়,
রেলের চাকরিতে ইস্তফা দিয়েছিলেন।
আকাশবানীর ডাকে চলে এসেছিলেন,
ছিলো কিছুটা স্বাধীনতা, যদিও সরকারি প্রতিষ্ঠান।
পরাধীনতা, ঈংরেজের গোলামী কি তাঁর পোষায় !
একাই সঞ্চালনা, পিয়ানো, আবৃত্তি চালিয়ে যেতেন।
মহালয়া, শিউলির মতো পূজোর গন্ধ নিয়ে আসে,
বাঙালী আজো বীরেন্দ্রকৃষ্ণের গলার আবেগে ভাসে।
ওনার কাছে যেদিন চেয়েছে ভেতরে ঢোকার পাস,
সেদিনই ঘটেছে আকাশবানীর আসল সর্বনাশ !
অন্তরীক্ষে দাঁড়িয়ে মা সবটাই দেখেছিলেন,
সেদিন যে তাঁর একান্ত ভক্ত ভেঙে পড়েছিলেন।
তবু নতুনকে আসতে বাঁধা দেননি কোনোদিন,
বাঙালীর আবেগের কাছে হেরে গিয়ে শেষে,
আকাশবানী তাঁকে আবার ডেকেছিলো একদিন।