আমি মাধবীলতা, আপনি কে
আমি মাধবীলতা, আপনি কে
আপনি কে ?
আমার ইচ্ছার একান্ত সরোবরে
কেবলি তোলেন ঢেউ, দূঃখের মর্মর
সহসা বিপন্ন হই আমি
আনন্তর বয়ে যায় সিডরের ঝড়।
সমুদ্রতল থেকে ধেয়ে আসে সুনামি।
আপনি বারবার শাসান, আর
পৃথিবীর সব আগুনের চোখ এক করে
আমার দিকে যখন তাকান, চারখার
হয়ে যায় সবকিছু, জ্বলে পুড়ে ভষ্ম হয়
বেদনা মথিত হৃদয়।
কে আপনি ? আমার মা ?
মাতৃভূমি ? আমার জননী ?
জানি শাসন আর সোহাগ পাশাপাশি চলে
আপনার সোহাগ নাই কেন ?
কেন হবেন চোখেরমনি
সোহাগ লুকিয়ে রাখেন বুঝি শাড়ির আঁচলে
আপনি কি মহাস্থানগড়ের রেনুকা পাল ?
এসেছেন আমার কাছে নদী নালা খাল
পার হয়ে
ঝরাতে রক্ত আমার হৃদয়ে।
মাধবীলতা আমি
পৃথিবীর তাবৎ হিংসা, নোংরামি
আর সন্দেহ থেকে দূরে থাকি
মানুষের ভালোবাসা
অযাচিত বুকে ধরে রাখি।
আপনি প্রকৃতি, মহাপ্রকৃতি,
আপনি শিক্ষক, বিবেকের চোখ
গরবিনী মহিয়সী
আমার স্বপ্নের ভিতর যখন এসেই গেছেন
আসুন, এইখানে বসি
দু’দন্ড কথার ফাঁকে ফাঁকে
ভালো করে বুঝতে পারবেন আমাকে।
আমি কবি নই, আমি কবি’র মাধবী লতা
চাই না দালান কোঠা, চাই না অমরতা
চাইনা কারো পথ রুদ্ধ করা কাঁটা হয়ে থাকি
চাই শুধু প্রেম,
তাই বর্ষণসিক্ত ভালোবাসার চিত্র আঁকি।
আপনাকে দেখিনি কোনদিন
না স্বপ্নে না বাস্তবে
না কবিতার কোলাহলে
না ফসলের স্তবে
দেখিনি কখনো জাগরনে
বগুড়ার লাল ইটের প্রাগৈতিহাসিক ভাঁজে
করোতোয়ার ঘোলাজলে, বাবলার বনে
নীতি কিম্বা দুর্নীতির সুক্ষ কারুকাজে
আপনি ছিলেন চির অধরা
পাহাড় সমুদ্রবন ছেড়ে উত্তর বঙ্গের রুক্ষ বাতাসে
আপনার ছবি আমার ঘামের নুনে ভাসে
আপনার গায়ের রঙ কি শ্যমলা ?
নাকি শ্যওলাশূন্য বহমান জলের মতো
দুধ শাদা
জানি জননীর রঙ মাতৃভূমির মতো সসাগরা সুফলা
ক্ষমা করে দিন, আমি আপনার
স্নেহধন্যা অনুরাধা।
আপনি জেনে নিন, আপনাকে জানতে হবে
পৃথিবীতে পাপ ও পূণ্যের
জন্ম হয়েছিলো কবে
ঘৃণার কুৎসিত কলরব থেকে, কলরবে
কখন ছড়িয়ে পড়ে সন্দেহের কালো আগুন
জানতে চাইনি। তাই আপনাকে বলি
একবার পড়–ন এইসব পদাবলী
তারপর জেনে নিন
ন্ধদয় থেকে বড় কিছু নাই
আপনাকে জানাই, যদি মানুষকে ভালোবাসতে
পার হতে হয় চরাই উৎরাই
এক লাপে পার হবো আগুনের নদী
ভালোবাসার জল হয়ে
বয়ে যাবো নিরবদি।
আপনি কি জানেন ?
আমি নুয়ে পড়িনা কুমড়ো লতার মতো
ভ্রান্তির কৃপাণে যতই আঘাত হানেন
যতই করেন আমাকে ক্ষত বিক্ষতো
এই আমি
নই কোন দুরগামী
মেঘ কিম্বা চালকশূন্য ভাসমান
নৌকো, দিকচিহ্নহীন।
গেয়ে যাই ভালোবাসার গান
আঁধারে নিশীথে আমি মাধবীলতা রাত্রিদিন।
যদি নিভে যায় পৃথিবীর সব প্রচলিত আলো
যদি আকাশ থেকে ঝরে নীহারিকা
বকুল শিউলি যে ভাবে ঝরে আঙ্গিনায় আগোচালো
তখনো মিটিমিটি জ্বলবে
মমত্বের দীপশিখা
আমি সেই আলোকের পাখায় ভর করে
উড়াল দেবো কবিতার লীলাভূমে
দেখিবো নতুন সুরুজ সাহসের মর্মরে
ক্লান্ত হবো না আমি আর কালঘুমে।
আপনাকে চেয়েছিলাম ভিজিয়ে দিতে
আমার শ্রদ্ধার জলে, পূণ্যতোয়া জোছনায়
আমার হৃদস্পন্দনে, ধমনীতে
অদৃশ্য কিছু সতর্ক বার্তা
নেচে গেয়ে যায়।
কাকে সতর্ক করেছেন হে মাতা ?
প্রকৃতির কণ্যা, বিমলা বসুন্ধরা
আমাকে ? কবি’র কবিতার খাতা
ভয়ে কাঁপে থর থর, হে জননী সয়ম্ভরা ।