Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Ananya Podder

Classics Inspirational

4  

Ananya Podder

Classics Inspirational

বিভেদ

বিভেদ

6 mins
403



প্রায় বছর পঁচিশেক হবে স্কুলের গণ্ডি ছেড়ে বেরিয়ে গেছি | ক্লাস ফাইভ থেকে টেন এই ছটা বছরের যে সুবর্ণ দিন গুলি এই গণ্ডির মধ্যেই কাটিয়ে দিয়েছি আনন্দে, সেই গণ্ডির সামনে দাঁড়িয়ে পুরোনো বহু স্মৃতির রোমন্থন হচ্ছিলো আমার | দিনটা , আমাদের মাধ্যমিক স্কুলে রি- ইউনিয়ন এর দিন | তাই অনেক ছাত্রীর সাথে আমিও নিমন্ত্রিত | "নিমন্ত্রিত " শব্দটায় কেমন যেন খটকা লাগলো মনে | আমি কি আমার স্কুলেই অতিথি ?? কিন্তু একদিন এই স্কুলেই তো কতো দিদিগিরি ফলিয়েছি | নিজের দাবী খাটিয়ে গিয়েছি বুঝে, না বুঝে |

মনের মধ্যের কিছু খুশি, কিছু বেদনা নিয়ে স্কুলে প্রবেশ করলাম | আজ অনেক পিছনে ফেলে আসা বন্ধুদের সাথে দেখা হবে, যাদের সাথে বসার জায়গা থেকে টিফিন অবদি ভাগ করে নিতাম একদিন |

এক এক করে সবাই আসছে | নূপুর, পূর্ণিমা, সোমা, রেশমি, রমা, পারমিতা, ঝুমকি আরও অনেকে | কতো আমাদের চেয়ে বড়ো দিদিদের সাথেও দেখা হোলো | কিন্তু যার সাথে দেখা করার খুব ইচ্ছে ছিল আমার, সে হোলো এই স্কুলে আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু সমর্পিতা |

স্কুল ছাড়ার পরে ওর সাথে সেভাবে আর দেখাই হোলো না | ওর বাবা মুর এভিনিউতে ফ্ল্যাট কিনে চলে গেলেন | তখন আমাদের বাড়িতে টেলিফোন ছিল না, তাই যোগাযোগটাও বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো | তাই ওর সাথে দেখা করার অপেক্ষায় রয়ে গেলাম |

কিন্তু সমর্পিতা এলো না | নূপুর বলল , " তুই ওর অপেক্ষায় থাকিস না | সমর্পিতা হয়তো আসবে না | "

আমি একটু বিরক্তি আর একটু সংশয় নিয়ে ওকে প্রশ্ন করি, " তুই কি করে জানলি ?? "

" কারণ, সমর্পিতা এখন বোম্বেতে থাকে | আমি যখন বোম্বেতে বেশ কিছুদিন ছিলাম, তখন ওর সাথে দেখা হতো মাঝে সাঝে| "

"সে তো ভালো কথা | কিন্তু বোম্বেতে থাকে বলে যে আজ আসতে পারবে না, তা তো নয় | ঝুমকিও তো শুনলাম, ঝারসুগুদায় থাকে, তাই বলে কি এলো না ঝুমকি?? "

" ঝুমকি আর সমর্পিতা আলাদা রে!! সমর্পিতা আসবে না | ওর সেই ইমোশনটাই কাজ করবে না | তুই দেখিস| "

আমি ওর সাথে আর তর্কে জড়ালাম না | শুধু বললাম, " তোর কাছে সমর্পিতার ফোন নাম্বার আছে ?? "

নূপুর সমর্পিতার ফোন নাম্বার দিয়ে বলল, " তুই চাইলি বলে দিলাম নাম্বারটা | কিন্তু তবুও বলবো, যদি পারিস, এভয়েড করিস সমর্পিতাকে | তুই কিন্তু কষ্ট পাবি | "

নূপুরের কথা আমার কানে উঠল না | আমি তখনই ফোন লাগলাম | ওপার থেকে একটি মেয়ের গলা, " হ্যালো | "

আমি উচ্ছসিত হয়ে বলে উঠলাম, " হ্যালো, সমর্পিতা বলছিস?? "

ওপার থেকে উত্তর এলো, " জি, কৌন ?? "

আমি জবাব দিলাম, " আমি সমর্পিতার বন্ধু | "

মেয়েটি বিরক্ত হয়ে বলল, " জি, হিন্দী মে কাহিয়ে| "

আমি একটু বিমর্ষ হয়ে বললাম, " জি, ম্যায় সমর্পিতা কি সহেলী| আপ কৌন?? "

"জি, হাম উনকি বেটি বাত কর রাহি হুঁ | মাম্মি বজার গায়ি হ্যায় | উন্কা ফোন ঘর পে হি ছোর গায়ি | "

আমি বললাম, " তুমহে বাংলা নেহি আতি হ্যায় ক্যায়া ?? "

ও উত্তর দিলো, " জি নেহি | "

আমি আর কথা না বাড়িয়ে বললাম, " মাম্মি জব্ আয়েগী, কাহেনা কে হাম মাম্মি কি স্কুল কা ফ্রেন্ড হ্যায় | হামে ফোন করনে কে লিয়ে কহেনা মাম্মি কো | "

বললাম বটে ফোন করতে, কিন্তু সমর্পিতা কিন্তু ফোন করলো না | আমি আশাহত হলাম কিন্তু তবুও মনে মিথ্যে আশা জাগিয়েও রাখলাম |

নিজের মনের দ্বন্দ্বকে পাশে রেখে আবারও একদিন ফোন করলাম সমর্পিতাকে | এবার আমার বন্ধু ফোন ধরলো | বেশ কিছুক্ষন কথা বলার পরে আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, " তোর মেয়ে বাংলা জানে না?? "

সমর্পিতা আমার প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে বেশ গর্ব করে বলল, " না রে, বাংলা শিখে করবে কি আর?? থাকে তো বাংলার বাইরে| তাই, আর ওই ভাষাটা শেখাইনি| "


"তবুও... "


সমর্পিতা আমার কথা চাপা দিয়ে বলল, " কি হবে ওই বাংলা ভাষা শিখে ?? কি আছে বল ওই বাংলা ভাষায় ??... আমার তো প্রথম থেকেই বাংলা পড়তে গিয়ে মাথা ঘুরতো | তাই তো ইংলিশে অনার্স করেছি | তাই মেয়েকেও আর ওই ঘুম পাড়ানি ভাষাটা শেখাইনি | বছরে দুবছরে একবার কলকাতায় যায়, তখন অন্যরাও ওর সাথে ওই হিন্দিতেই কথা বলে | আর বাংলা জানে না বলে কি আছে?? মুসকান তো হিন্দী, ইংলিশ ছাড়াও মারাঠি, ফ্রেঞ্চ ভাষাও বলতে পারে অনর্গল ভাবে | "


আমি ওর কথায় চুপসে গেছি বুঝেই বোধহয় বলে বসলো, " তোর তো বোধহয় আমার কথা ভালো লাগলো না| তুই তো আবার বাংলা ভাষার প্রেমী!!... বিজয়াদির সবচেয়ে প্রিয় ছাত্রী!! "


আমি কথার মোড় ঘুরিয়ে অন্য দুচার কথা বলে রেখে দিলাম | মনে মনে ভাবলাম, নূপুর বোধহয় এই জন্যই বলেছিল সমর্পিতাকে ফোন না করতে | মানুষ এভাবে শিকড় উপড়ে ফেলে বাঁচতে পারে ??


তারপর সমর্পিতা ফেসবুক ফ্রেন্ড হয়েই রয়ে গেল আমার |


এর বেশ কয়েক বছর বাদে, এই মাস খানেক আগে ফেসবুকে আমার এক বন্ধুর খোঁজ পেলাম| বর্তমানে বাংলায় একটু লেখালেখি শুরু করেছি| একটা নিজস্ব পেজও আছে গল্প আর কবিতার | সেখানে বেশ কিছু পাঠক বন্ধুকেও পেয়েছি | সেই পাঠক বন্ধুদেরই এক বন্ধু তালিকায় দেখলাম, আমার উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের এক বন্ধুকে, নাম রিতু | ইলেভেন টুয়েলভ এই দুটো বছর অভিন্ন হৃদয় বন্ধু ছিলাম আমরা | তারপর ওই, ফোন নাম্বার নেই | রিতু চলে গেল নিউট্রিশন নিয়ে পড়তে, আর আমি গেলাম অঙ্ক নিয়ে| আর দেখা সাক্ষাৎও বন্ধ হয়ে গেল|

তারপর মাঝখানে অনেক গুলি বছর বয়ে গেল| ফেসবুকে ওর প্রোফাইলে দেখলাম, যে, ও এখন জার্মান নিবাসী | জার্মান দেশটা দেখে আমি একটু মনমরা হয়ে গেলাম | দেশে থেকেই যখন অনেকে শিকড়ছাড়া, তখন দেশের বাইরে থেকে শিকড়ের টান ধরে রেখেছে কি রিতু !!

যোগাযোগ করবো কি করবো না ভাবতে ভাবতেই মেসেঞ্জারে একটা মেসেজ ছাড়লাম, " চিনতে পারছিস ?? "

দুদিন বাদে রিতুর জবাব পেলাম | জবাব বললে ভুল হবে, পেলাম উচ্ছসিত ভালোবাসা|


যেহেতু বিদেশ, তাই হোয়াটস্যাপেই কথা বলতে হবে| তাই প্রথম ফোন নাম্বারটা ওই দিলো | তারপর লিখল, " তোর নাম্বারটাও দিস| তোর সাথে আমার সময়ের পার্থক্য প্রায় চার - সাড়ে চার ঘন্টা | কোন সময় ফ্রি থাকিস জানাস, কথা বলবো |"


আমি ফোন নাম্বার দেওয়ার একদিনের মাথায় ভিডিও কল এলো রিতুর থেকে | দেখলাম, যে রিতুকে উচ্চমাধ্যমিকে শেষ দেখেছিলাম, সেই রিতুকেই আবার দেখছি |

শুরুতেই গড়গড়িয়ে পরিষ্কার বাংলায় বলল, " কি রে, অঙ্ক ছেড়ে লেখালেখি ধরলি কবে?? "

ওর কথায় বুঝলাম, যে, ও আমার প্রোফাইলটা ভালোই ঘেঁটেছে |

আমাদের সেদিনের কথায় স্কুল জীবনের কথাই বেশি ছিল | আমিই যেচে বললাম, " আট বছর ধরে দেশের বাইরে আছিস| তবুও বাংলাটা ভুলিস নি দেখছি !! "

রিতু আমার কথায় অবাক হয়ে বলল, " বাংলা ভুলবো কি রে!! আমরা তো বাড়িতে বাংলাতেই কথা বলি| আমার ছেলেও কিন্তু বেশ ভালো বাংলা বলে| ওর কথায় কিন্তু কোনো অবাঙালি টান নেই |"

আমি মুগ্ধ হলাম | আবেগে ভেসে বললাম, " সেই, তুই এখনও শিকড়টাকে ধরে রেখেছিস দেখছি | নাহলে, অনেকে তো দেশে থেকেই শিকড়টাকে উপড়ে ফেলে দেয় | "

রিতু বলল, " ধুস, কি যে বলিস তুই!! শিকড় উপড়ে ফেলবো কি রে!! শিকড়টাই তো আমাদের ধরে রেখেছে| আমাদের তো আর দেশে ফেরা হবে না রে | ছেলের পড়াশুনা তো এখানেই | এখানে তো ইংলিশ চলে না | এখানে দুয়াজ ভাষা চলে | তাই দেশে ফিরে গেলে ওর পড়াশুনায় খুব অসুবিধা হবে | তাই, ও যতদিন পড়াশুনা করছে, ততদিন তো আর ফিরতেই পারবো না | "

তারপর আমরা দুজনেই একে অপরের ছেলের মেয়ের সাথে কথা বললাম | দেখলাম, আমার মেয়ে দেশে থেকে যতটা বাংলা জানে, রিতুর ছেলেও বিদেশে থেকে ঠিক ততটাই বাংলা জানে |

আমি সেদিন উপলব্ধি করলাম, যে, দেশ বিদেশ বলে কোনো কথা নেই | যে শিকড়ের সাথে জুড়ে থাকতে চায়, সে মায়ের ভাষাকে মা জেনেই আদর করে | আর যে চায় না, তার কাছে মাতৃভাষাটা ঘুমপাড়ানিই হয় |

সেদিন ভগবানকে আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানিয়েছিলাম, কারণ, তিনি আমায় দেখিয়েছেন, মানুষ বিভেদ নিজের ইচ্ছেয় তৈরী করে , জায়গা বিশেষে নয় | সবটাই মানুষের মধ্যে বর্তমান |


তবে আজ ২১ ফেব্রুয়ারী মাতৃভাষা দিবসে আমি খুব হাসলাম| যখন দেখলাম, সমর্পিতা ওর ফেসবুকের টাইম লাইনে কবি ভবানীপ্রসাদ মজুমদারের লেখা "২১ শে ফেব্রুয়ারী ” কবিতাটা পোস্ট করে লিখেছে,


" হ্যাপি মাতৃভাষা দিবস "!!



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics