STORYMIRROR

Partha Pratim Guha Neogy

Abstract Inspirational Others

3  

Partha Pratim Guha Neogy

Abstract Inspirational Others

মানুষগড়ার কারিগর

মানুষগড়ার কারিগর

4 mins
131

শিক্ষা যদি জাতির হয় মেরুদণ্ড, তবে তো শিক্ষকরাই সেই মেরুদণ্ডের নির্মাতা। জাদুর কাঠির স্পর্শে যেমন মূল্যহীন বস্তুও মহামূল্যবান হয়ে যায়, তেমনি একজন আদর্শ শিক্ষকের প্রভাবও একজন শিক্ষার্থীর জীবনে পরশ পাথরের মতোই। শিক্ষার্থীর মননের উৎকর্ষতা, মানবীয় গুণাবলির বিকাশ সাধন, জ্ঞানার্জনের স্পৃহা জাগানো এবং মানুষ হিসেবে পূর্ণতা প্রাপ্তির রূপকারই হচ্ছেন শিক্ষকগণ। জগতে যত রথী-মহারথী নিজ গুণের জ্যোতির্ময়তায় জগতকে উদ্ভাসিত করেছেন, প্রত্যেকেই তাঁদের শিক্ষকের অবদানকে নির্দ্বিধায় শিকার করে নেন।


সোনার মানুষের রূপকার সকল শিক্ষকদের সম্মানার্থে প্রতিবছর ৫ অক্টোবরে তাই ঘটা করেই ‘শিক্ষক দিবস’ উদযাপন করা হয়। শিক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৯৫ সাল থেকেই ইউনেস্কো কর্তৃক প্রতিবছর এই দিনটিকে ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ হিসেবে উদযাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়। সেই থেকেই বিশ্বের শতাধিক দেশে দিবসটি যথাযথ আয়োজনে পালিত হয়ে আসছে। এবারের বিশ্ব শিক্ষক দিবসের প্রতিপাদ্য ‘শিক্ষা পুনরুদ্ধারের কেন্দ্রবিন্দুতে শিক্ষক’।


জ্ঞান অর্জনীয়, আর শিক্ষা আচরণীয়। অর্জিত জ্ঞানের যথেচ্ছ প্রয়োগ আর সদ্বিবেচক আচরণই সুশিক্ষা। জ্ঞান, প্রজ্ঞা, নীতি-নৈতিকতা, সততা, সময়ানুবর্তিতা, মহানুভবতা, ব্যক্তিত্বের বলিষ্ঠতা ও সকল প্রকার অনুকরণীয় মানবীয় গুণাবলির ধারক ও বাহক যেই শিক্ষক, তাঁর ছাত্ররাও যে মানুষ হিসেবে সফলতার শিখরে আরোহন করবে, এটাই তো স্বাভাবিক। আর এখানেই একজন আদর্শ শিক্ষকের চূড়ান্ত সিদ্ধি।


যে শিশু চারাগাছের মতো অপরিণত ও অপ্রস্তুত হয়ে তার শিক্ষালয়ে প্রবেশ করলো, তাকে সুশিক্ষার অবলম্বনে পরিণত এক মহীরুহের মতোই সুপ্রতিষ্ঠিত করার কৃতিত্ব একজন শিক্ষকেরই।


শিক্ষার্থীর অন্তরে জ্ঞান-তপস্যার অভিপ্রায় জাগানো, তার মেধার স্ফূরণ ঘটানো, মননের বিকাশ সাধন, উৎকৃষ্ট চারিত্রিক গুণাবলির দীক্ষা প্রদান, দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটানো, অন্তরের মরীচিকা ঘুচানো, নিরহংকার, নির্লোভ, ব্যক্তিত্ববান, সৎ, যোগ্য, পরোপকারী ও মহানুভবতার আদর্শের অনুঘটক তো একজন শিক্ষকই। এমনই ছাঁচে গড়া যেই শিষ্য, সেই তো সুশিক্ষার ধারক ও বাহক।


 বিহারের এই শিক্ষকের গল্প চোখে জল এনে দেবে

‘হিউম্যানস অব বম্বে’ নামক একটি ফেসবুক গ্রুপ পোস্টটি শেয়ার করেছে। সেখান থেকে জানা গিয়েছে, গরিব পরিবার থেকে উঠে আসা এক মেধাবী ছাত্রকে কী ভাবে তিনি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় একজন চিকিৎসক গড়ে তুলেছেন।


ছাই রঙা পাঞ্জাবি, লুঙ্গি পরে সিঁড়ির উপর বসে আছেন এক বৃদ্ধ। ফেসবুকে এমনই একটি ছবি ঘুরছে। সকলেই কুর্নিশ জানাচ্ছেন ওই বৃদ্ধকে। ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ জনপ্রিয়ও হয়ে উঠেছেন তিনি।


ওই বৃদ্ধ পেশায় এক জন শিক্ষক। বিহারের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বহু ছাত্রছাত্রীকে তিনি গড়ে তুলেছেন। যে কোনও শিক্ষকের এটাই তো বড় কর্তব্য। শিক্ষক হিসেবে ওই বৃদ্ধও তাই করেছেন। তবে শিক্ষকতার ঊর্ধ্বে গিয়ে তিনি যা করেছেন, গোটা শিক্ষক সমাজ আজ তাঁর জন্য গর্ববোধ করছে। শুধু শিক্ষক সমাজই নয়, ছাত্রসমাজও এই শিক্ষককে কুর্নিশ জানাচ্ছে।


‘হিউম্যানস অব বম্বে’ নামক একটি ফেসবুক গ্রুপ পোস্টটি শেয়ার করেছে। সেখান থেকে জানা গিয়েছে, গরিব পরিবার থেকে উঠে আসা এক মেধাবী ছাত্রকে কী ভাবে আর্থিক দিক থেকে সহযোগিতা করে চিকিৎসক বানিয়েছেন ওই শিক্ষক।


পোস্টটি থেকে জানা গিয়েছে, ছেলেটি পড়ার জন্য ব্যাকুল ছিল। কিন্তু তাঁর সেই ইচ্ছায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল আর্থিক অনটন। ক্লাস নেওয়ার সময় ছাত্রটির প্রতিভা ওই শিক্ষকের নজরে আসে। দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারের পক্ষে ওই ছাত্রের পড়াশোনা চালানো তো দূর, স্কুলের পোশাক এবং খাতা-বই কিনে দেওয়ারও সামর্থ্য ছিল না। একটা প্রতিভা এ ভাবে নষ্ট হয়ে যাবে! মেনে নিতে পারেননি ওই শিক্ষক। নিজেই উদ্যোগী হয়ে ছাত্রটিকে পড়াশোনার প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে দেওয়া শুরু করেন। এ ভাবে কয়েকটা বছর কেটে গিয়েছিল। তত দিনে ওই ছাত্রের পরিবারের আর্থিক অবস্থা একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকে। পরিস্থিতি এমন হয় যে ফি দিতে না পারার জন্য স্কুল থেকে তাকে বার করে দেওয়ারও উপক্রম হয়। শিক্ষকের সঙ্গে বরাবরই যোগাযোগ ছিল তাঁর প্রিয় ছাত্রের। এ বারও ত্রাতা হিসেবে এগিয়ে আসেন ওই শিক্ষক। নিজের মাইনের টাকা থেকেই তাঁর অন্যতম প্রিয় ছাত্রের স্কুল ফি দেওয়া শুরু করেন। তিনি বলেন, “এমনটা নয় যে শিক্ষকতা করে আমারও যথেষ্ট আয় ছিল। কিন্তু পরিবার চালানোর মতো আর্থিক স্বচ্ছলতা ছিল। ওই ছাত্রটিকে সাহায্য করার সুযোগ যখন এসেই গেল, ভবিষ্যতের জন্য টাকা জমানোর বিষয়টা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললাম।”


স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে ঢোকার পরেও শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল প্রিয় ছাত্রের। তবে এ বার সে নিজেই উদ্যোগী হয়, স্কুলে ফি দিতে না পারার মতো ঘটনাকলেজেও যাতে না ঘটে। কলেজের ফি মেটানোর জন্য ঋণ নেয় সে। ওই শিক্ষক বলেন, “আমি ওকে বলেছিলাম, যখনই তোমার কোনও প্রয়োজন হবে, এসো। কিন্তু, ও কলেজের খরচ মেটাতে পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করাও শুরু করে।”


পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেলে তার যে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নপূরণ হবে না! তাই পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ চালিয়ে গিয়েছে সে। আজ ছেলেটি এক জন সফল চিকিৎসক। শিক্ষক বলেন, “আমার আজ বলতে গর্ব হচ্ছে যে ও আমার ছাত্র ছিল।”


এক জন সফল চিকিৎসক হয়েও শিক্ষকের ঋণ ভোলেননি তিনি। হাজার কাজের চাপের মধ্যেও তিনি শিক্ষকের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। নিয়মিত তাঁর খোঁজ রাখেন। স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে শিক্ষক বলেন, “সেই অসহায় ছোট্ট ছেলেটা, যাকে স্কুল থেকে দেখেছি, আজ ও শহরের এক জন নামকরা ডাক্তার। ওঁর জীবন সফরের নৌকায় এক জন সওয়ারি হতে পেরে আমি গর্বিত।”


শিক্ষকের ওই অবদান এখন সকলের মুখে মুখে ঘুরছে। নেটিজেনদের মধ্যে এক জন এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন, “এক জন হয়তো গোটা বিশ্বকে বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন না। কিন্তু এক জনের জগত বদলে দিতে পারে... আর সেই দৃষ্টান্তই উঠে এসেছে বিহারের এই শিক্ষকের হাত ধরে।” আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলী এই মানুষ গড়ার কারিগরের প্রতি।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract