গোলাপজাম গাছ
গোলাপজাম গাছ
এককালে একটি নাম না জানা নদীর ধারে একটি বড়ো গোলাপজাম গাছ ছিলো । ওই গাছে এক বড়ো আদুরে বাঁদর ছিলো । প্রকৃতির কোলে হেসে খেলে ফল খেয়ে বেঁচে থাকতো । একটি কুমীর ক্ষুধার্ত হয়ে একদিন নদী বেয়ে ওই গাছের কাছে এলো ।
" আহা , খুব ক্ষিদে বলো ! এই নাও মিষ্টি গোলাপজাম খাও । " বলে দশ বারোটা গোলাপজাম কুমীরটিকে খেতে দিলো বাঁদরটি ।
" বড়ো ভালো রসালো খেতে গো । তুমি আপত্তি না করলে আমি মাঝে মধ্যে আসবো তোমার কাছে । " কুমীর বললো ।
" ওমা তুমি আসবে আপত্তি কী ? আজ থেকে আমার একটা নতুন বন্ধু হলো । "
এরপর থেকে ওরা খুব বন্ধুত্বপূর্ণভাবে দিন কাটাতে লাগলো ।
এরপর থেকে কুমীর প্রায়দিন আসতো আর গল্প করতো বাঁদরের সাথে । কুমীর গল্পে গল্পে বললো , " আমার বউকে তোমার কথা বলছিলাম সেদিন । "
" ওমা বলোনি তো তোমার বিয়ের কথা ! এই নাও কটা গোলাপজাম নিয়ে যাও দেবে বউকে তোমার । "
খুব আনন্দিত হয়ে কুমীর সেই গোলাপজাম নিয়ে বউকে এসে দিলো ।
" আহ কি মিষ্টি গো ! " বললো কুমীরপত্নী ।
" বলেছিলাম না মন ভরে যাবে । "
" আমি ভাবছি যে এত্ত মিষ্টি গোলাপজাম খাওয়ালো তার হৃদয়ও কত না মিষ্টি হবে কে জানে ! ওর হৃদয়টা চাই আমি , এনে দিও প্লিজ ! "
" কিন্তু বউ ও তো আমার প্রিয় বন্ধু ওকে কী করে বলি একথা ? "
" সে আমি জানি না । ওর হৃদয়টা এনে দিতেই হবে । "
কুমীর দুঃখী মুখ নিয়ে বাঁদরকে এসে সব বললো । বাঁদর বরং বললো , " ও এই ব্যাপার ! এই নিয়ে এত্ত চিন্তা , চলো যাচ্ছি । "
এই বলে গাছের কোটর থেকে বেশ কটা গোলাপজাম যেগুলো জমিয়ে রেখেছিলো তাতে বিভিন্ন সময়ে পায়ে শরীরে আটকানো কাঁটাগুলো যা জমিয়ে রেখেছিলো সেগুলো আটকে দিয়ে জলদি নেমে এলো ।
" বৌদির জন্য আরও কটা গোলাপজাম নিয়ে নিলাম । আর তো খাওয়াতে পারবো না ! "
" তোমার মনের তারিফ না করে পারছি না । কিন্তু হায় কপাল ... "
কুমীরের ডেরায় যেতেই কুমীর বউকে গোলাপজামগুলো খেতে দিয়ে বাঁদর বললো , " এগুলো খেয়ে আমার হৃদয়টা নেবেন নয় । "
" তাই সই । দাও শেষবার খেয়ে নেওয়া যাক গোলাপজাম । "
বুকের কাছে জড়ো করা গোলাপজামগুলো কুমীরপত্নীকে দিতে সে খেতে লাগলো আর একসাথে তিন চারটে ।
কুমীর ঘরের বাইরে দুঃখে জলে ভাসছে । ওদিকে ওই ফলগুলো খেতেই গলায় বুকে কাঁটা ফুটে প্রচন্ড রক্তক্ষরণ হতেই জোরে চেঁচালো কুমীরপত্নী ।
তা শুনে কুমীর এসে কিছু বোঝার আগেই বাঁদর নিজের নখ দিয়ে কুমীরের চোখ লক্ষ্য করে আঁচড়ে এল লাফে ঘরের বাইরে এসে নদীর পাড়ের জঙ্গলে লাফ দিয়ে চলে গেলো ।
নীতিকথা : বিশ্বাসঘাতকতার শাস্তি অবধারিত ।