মা দূর্গার শশুর ঘর
মা দূর্গার শশুর ঘর
মা কয়েক দিন বাদে তার বাপের বাড়ি আসছেন। তাঁর আগে একবার মায়ের শশুর বাড়ি মানে শিবের ঘর কৈলাশের সম্পর্কে কিছু কথা জেনে নিই আসুন।হিন্দুদের মতে কৈলাস পর্বতেই শিব সপরিবারে বাস করেন ।গ্যাঙ্গডিস পর্বতের চূড়া যা তিব্বতের হিমালয় পর্বতমালার একটি অংশ। এটি এশিয়ার বৃহৎ সিন্ধু নদী, শতদ্রু নদী, ব্রহ্মপুত্র নদ প্রভৃতি নদীগুলোর উৎস স্থান।সংস্কৃতে কেলাস বা Crystal কথা থেকে কৈলাস কথাটির এসেছে। কারণ বরফে ঢাকা কৈলাসকে দেখে মনে হয় স্ফটিক।
ছটি পর্বত শ্রেণী পদ্ম ফুলের পাপড়ির মতো ঘিরে আছে কৈলাস পাহাড়কে।কৈলাসকে ঘিরে রয়েছে নানা রহস্য, এই রহস্যে ঘেরা এই পর্বত সম্পর্কে এখনও অনেক কিছুই অজানা থেকে গিয়েছে। এই কৈলাস পর্বতের চূড়ায় এখনও পর্যন্ত কেউ উঠতে পারেননি। কৈলাস সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬ হাজার ৬৫৬ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। এভারেস্টের উচ্চতা ৮ হাজার ৮৪৯ মিটার হলেও এর চূড়ায় ঠিকই পর্বতারোহীদের পা পড়েছে। জানলে অবাক হবেন, এভারেস্টের চেয়েও কম উচ্চতাসম্পন্ন এই পর্বতে আজও কেউ উঠতে পারেনি। তিব্বত মালভূমি থেকে ২২ হাজার ফুট ওপরে অবস্থিত কৈলাশ পর্বত শুধু হিন্দুদের নয় বৌদ্ধ এবং জৈনদের কাছেও পবিত্র।
ধর্মীয় প্রচলিত বিশ্বাস, যেহেতু কৈলাশে দেব-দেবীর বাস, সেখানে গেলেই দেবতাদের রোষে পড়তে হবে।তাই কোনও মানুষ সেখানে যেতে পারে না। এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। পৌরাণিক বিশ্বাস, কৈলাশ পর্বতের পাদদেশেই রয়েছে মানস সরোবর এবং রাক্ষসতাল। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১৪ হাজার ৯৫০ ফুট ওপরে অবস্থিত মানস সরোবর বিশ্বের উচ্চতম মিষ্টি জলের হ্রদ।।মানস-রাক্ষস দুই হ্রদ পাশাপাশি আছে। অথচ মানসের পানি মিষ্টি ও শান্ত। আর রাক্ষসের পানি নোনা ও অশান্ত।
শোনা যায়, কয়েক জন সাইবেরিয়ান পর্বতারোহী কৈলাশ পর্বতের ‘ গিয়েছিলেন ,সঙ্গে সঙ্গে তাদের বয়স নাকি কয়েক দশক বেড়ে গিয়েছিল।, ওই পর্বত থেকে ফেরার পর হঠাৎ করেই নাকি নখ বা চুল বড় হয়ে যায়। সেই থেকে এ ঘটনা রহস্যের মধ্যেই আছে।
কথিত আছে, ১১ শতকে মিলারেপা নামে এক বজ্রযানী বৌদ্ধ সন্ন্যাসী এই পর্বতের চূড়ার কাছাকাছি উঠতে যেতে পেরেছিলেন। তিনি নাকি সবাইকে সাবধান করেন যে, ঈশ্বরের বাসস্থানে না যাওয়ার উপদেশ দেন। যদিও তারপরেও নাকি অনেকে সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তবে সবাই পথভ্রষ্ট হয়ে, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে মারা গিয়েছেন।
কৈলাশ পর্বত দেখতে কিছুটা পিরামিডের মতো। কৈলাশেই স্বর্গ এসে পৃথিবীতে মিলেছে বলে হিন্দুদের বিশ্বাস। হিন্দু পুরাণে মতে কৈলাস পর্বত হলো শিবের 'লীলাধাম'। শিব ও তার সহধর্মিনী দুর্গা এবং কার্তিক-গণেশ ও শিবের অনুসারী ভক্তরা কৈলাশে মহা আনন্দে বাস করেন। ২২ হাজার ফুট উচ্চতার কালো পাথরের এই পাহাড়কে প্রাচীন কাল থেকেই পৃথিবীর স্তম্ভ বলে মনে করা হয়, যা ধরে রেখেছে পৃথিবীর ভর।
তবে এই পবর্তটি খাড়া হওয়ায় চূড়ায় যাওয়া সম্ভব হয়না। এখানে কোনো বরফ না জমে নিচে পড়ে যায়। আর বরফ গলে গিয়ে উৎপত্তি হয় নদীগুলোর। হাজার বছর ধরে পর্বতের উদ্দেশ্যে প্রণাম জানাতে চারপাশে ৫০ কিলোমিটার ট্র্যাকের পথে হেঁটেছেন অনেক তীর্থযাত্রীরা । এ পর্বতের গায়ে অনেক প্রাচীন গুহা আছে।যেখানে বহু বছর ধরে বৌদ্ধ ও হিন্দু সন্ন্যাসী তাপস্যে মগ্ন আছেন।বিজ্ঞানীরা বলছেন কৈলাসে নাকি কোনো চুম্বকীয় ক্ষেত্র নেই। যে কারণে কোনো কোনো কম্পাস কাজ করে না।
১৯৯৯ সালে রাশিয়ার এক চক্ষু বিশেষজ্ঞ এর্নেস্ট মুলদাশিফ এবং তার দল ঠিক করেন কৈলাস পর্বতের রহস্য উন্মোচন করবেন।হোয়ার ডু উই কাম ফ্রম’ বা ‘আমরা যেখান থেকে এসেছি’। বইয়ে তিনি কৈলাস পর্বতে সময় কাটানোর অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন।
এর্নেস্ট মুলদাশিফ বলেছেন, বাস্তবে কৈলাস পর্বতে একটি মানব নির্মিত পিরামিড আছে। আর এ পিরামিডটি নির্মাণ করা হয় প্রাচীনকালে। তিনি দাবি করেন, একটি বড় পিরামিডকে অনেক ছোট ছোট পিরামিড ঘিরে আছে আর সেখানে ঘটে অলৌকিক ঘটনা।
তিনি লেখন, "রাতের নিস্তব্ধতায় পাহাড়ের ভেতর থেকে ফিসফিস করে কথা বলার শব্দ আসে। এক রাতে আমি আর আমার দুই সহযোগী পাথর পড়ার আওয়াজ পেয়েছি। আর এ আওয়াজ কৈলাস পর্বতের পেটের ভেতর থেকে আসছিল। আমরা ভেবেছিলাম, পিরামিডের মধ্যে হয়তো কোনো শক্তি আছে, যারা ঠিক মানুষের মতোই কথা বলছে।"
তিনি লিখেছেন"বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ দিয়ে আমার পক্ষে কঠিন এ বিষয়ে চর্চা করা । তবে আমি পরিষ্কারভাবে বলতে পারি, পৃথিবীর বাইরের জগতের সঙ্গে জড়িত আছে কৈলাস পর্বত।