Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Sourya Chatterjee

Classics Others

4.7  

Sourya Chatterjee

Classics Others

শব্দ

শব্দ

5 mins
295


খবরের কাগজটা নিয়ে শব্দজব্দ বিভাগটা খুলে বসল অদিতি। শব্দের মানে খুঁজতে খুঁজতে কখন যে জীবনের মানে খুঁজতে শুরু করে অদিতি, ও নিজেও টের পায় না। 

বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে, বাবা রিটায়ার করবেন পরের মাসে। অত্যন্ত নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারটি তাকিয়ে অদিতির দিকে। কলকাতায় একটা দু কামরার ভাড়া বাড়িতে ক্রমাগতই দুশ্চিন্তা, আশঙ্কারা ভিড় জমায়। জীবনের মানে খুঁজে চলে অদিতি। প্রতিদিন সালোয়ার পরে চাকরির খোঁজে বের হয় সে। কোথাও ইন্টারভিউ ক্লিয়ার হয় না! আবার কোথাও প্রচুর ডোনেশন চেয়ে বসে কোম্পানি। দিন যায়, রাত আসে। ভাগ্যের শিকে আর ছেঁড়ে না অদিতির। 

ফোন বেজে ওঠে। হৃদপিণ্ডের ধুকপুকানির শব্দ গাঢ় হয়। কোনো চাকরির ফোন কী! কেউ কি ফোন করে বলবে অদিতির চাকরিটা হয়ে গেছে। আশায় আশায় ফোন ধরে অদিতি। না! বাড়িওয়ালা ফোন করে ভাড়া চায়। দীর্ঘশ্বাস ফেলে অদিতি। কখনো বা কেবেল অপারেটর ফোন করে টাকা চায়, আবার কখনো ব্যাংক-লোন শোধের জন্য ফোন আসে! আশা নিরাশার দোলাচলের ফোনের ক্রিংক্রিং শব্দকে ক্রমশ ভয় পেতে শুরু করে সে।

-   এই আদি

-   হুমম মা?

পেপার থেকে মুখ তুলে মায়ের দিকে তাকালো অদিতি।

-   তোর ফোনটায় কি একটা আওয়াজ হল! দরকারি যদি হয়! তাই নিয়ে এলাম।

-   কই! দাও দেখি।

অদিতির মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠল। নিরাশার বালুচরে কোন এক আশার ঢেউ যেন আছড়ে পড়ছে।

-   কি রে মা! হাসছিস? কোনো সুখবর?

-   মা, গত পরশু একটা ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম। ওটার প্রিলিমিনারি সব রাউন্ড ক্লিয়ার হয়ে গেছে। কাল ফাইনাল ইন্টারভিউ হবে। 

হাত দুটো মুঠো করে জড় করে কপালে ঠেকিয়ে ওপরে তাকিয়ে নমস্কার করলেন অদিতির মা। পেছন দিক থেকে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরল অদিতি।

-   আদি, এবার চাকরিটা হয়ে যাবে দেখিস। ঠাকুর ঠিক কথা শুনবেন।

-   তাই যেন হয় মা।

কিন্তু একটা সমস্যা দেখা দিল। ইন্টারভিউটা হবে সেই দুর্গাপুরে। কলকাতা থেকে অনেকটা দূর তো! কাল সকাল ন'টায় পৌঁছাতে হবে। অবশ্য অদিতির কলেজের এক বন্ধু বিদিশা ওখানে থাকে। বিদিশার বাড়িতে থেকে গেলে কেমন হয়! বিদিশাকে ফোন করতে বিদিশাও রাজি। মা বাবাকে প্রণাম করে দুর্গাপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হল অদিতি। চোখে মুখে দৃঢ়তার ছাপ, আত্মবিশ্বাস! ভালো করে ইন্টারভিউটা দিতে হবে যে করেই হোক।


-   কতদিন পর! আয় আয়!

অদিতিকে দেখে খুশিতে ডগমগ হয়ে ওঠে বিদিশা। নিজের হাতে রান্নাবান্না করে রেখেছে সব। অদিতি হেসে নিজের দুশ্চিন্তাগুলোকে ঢাকার চেষ্টা করে। বিদিশার মা যত্ন করে খাবার পরিবেশন করে দিলেন। সুস্বাদু সব রান্নাবান্না। আয়োজনেও কোনো ত্রুটি নেই। বিদিশার সাথে বসে পেট ভরে, মন ভরে খাবার খেল অদিতি। শুধু হাসির খিলখিল শব্দের অন্তরালে অথৈ জলে দুশ্চিন্তারা সাঁতরিয়ে কুল কিনারা খুঁজতে যে ব্যস্ত তখন, টের পায়না বিদিশা।

কলেজে পড়ার সময় থেকেই কতবার অদিতিকে বাড়িতে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিল বিদিশা। নানাবিধ কারণে হয়ে ওঠেনি। রাত্রে পাশাপাশি শুয়ে নস্টালজিয়ার সমুদ্রে ডুব দেয় বিদিশা। পূর্ণিমার চাঁদের আলো জানলা বেয়ে ঘরে ঢুকেছে তখন। 

-   এই আদি, তোর মনে আছে সেই কলেজ ফেস্টের দিন মাঝরাতে আমরা জাম গাছটার তলায় বসেছিলাম। দূরে প্রোগ্রাম হচ্ছিল। সেদিনও জ্যোৎস্না ছিল, বল। 

-   হুমম রে। বিদিশা! চাকরিটা কনফার্ম হয়ে গেলে আরেকদিন এরম তোর সাথে শোব এসে। সারারাত গল্প করব সেদিন।

-   তুই চিন্তা করিস না রে। তোর চাকরি কনফার্ম হবেই। মিলিয়ে নিস।

-   আজ ঘুমিয়ে পড়ি। হুমম! পরে গল্প করব একদিন।

অদিতির হাতটা শক্ত করে ধরে বিদিশা। 

-   ঘুমিয়ে পর।

পুরোনো দিনের সব কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছে বিদিশা, তা ও নিজেও জানে না। কিন্তু অদিতির চোখে ঘুম নেই। কাল ইন্টারভিউটা যেমন করে হোক ক্র্যাক করতেই হবে। পাশের জলের বোতলটা থেকে জল খেল অদিতি।

আস্তে আস্তে ভোরের আলো ফুটছে তখন। পাখির দল ঘুম থেকে উঠে কিচিরমিচির করছে। পাশ ফিরল বিদিশা। একি! অদিতি তো ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।

-   কিরে! ঘুম হয়নি? 

-   না, না। এই জাস্ট একটু আগেই চোখটা খুললাম।

অদিতি জানে ওর সারারাত সত্যিই ঘুম হয়নি। সত্যি বললে বিদিশা আবার শুধু শুধু ব্যস্ত হবে। কি দরকার! এমনিতেই এত যত্ন নিচ্ছে ওর!

-   কলকাতায় এত পাখি ডাকে রে আদি? কি সুন্দর ডাকছে শোন! 

-   হুমমম।

প্রত্যেকবার ইন্টারভিউ থেকে রিজেক্টেড হয়ে বেরোনোর পর বিকেলের ঘরে ফেরা পাখির ডাকগুলোকে তীব্র ব্যাঙ্গাত্মক মনে হত অদিতির। কিন্তু পাখির ডাক তো সুন্দর। সবাই তো তাই বলে। তবে কেন অদিতির সেই ডাককে মনে হয় কর্কশ ব্যাঙ্গাত্মক ! বিদিশা আবার বলে

-   পাখির এই ডাক মনটাকে কত ভালো করে দেয় রে! সারাদিন কানে লেগে থাকে শব্দটা! বল!

ভোরের কুয়াশা ভেদ করে দূরে একটা ট্রেন যাচ্ছে। ট্রেনের সেই পু ঝিকঝিক শব্দতরঙ্গ বাতাস বেয়ে বিদিশাকে কানে এসে পৌঁছাচ্ছে।

-   আদি, ট্রেনের আওয়াজ! শুনতে পাচ্ছিস? আচ্ছা! ট্রেনের আওয়াজ শুনলেই তোর প্রথম কিসের কথা মনে পড়ে! আমার তো মনে পড়ে যে বেশ ট্রেনে চাপবো, ঘুরতে যাব। তোর তেমন কি মনে পড়ে!?

অদিতি যখন খবরের কাগজে চোখ বোলায়, কত লোক তখন অফিসের জন্য ট্রেন ধরতে যায়। কারোর হাতে ব্যাগ। কারোর পিঠে। অদিতি স্বপ্ন দেখে প্রথম যখন চাকরিটা পাবে তখন বাবা মাকে জামা শাড়ি গিফট করবে যেমন! ঠিক তেমনি নিজের জন্য একটা ব্যাগ কিনবে। তারপর সেই ব্যাগটা নিয়ে ট্রেনে চেপে অফিস যাবে। ভাবসাগরে ডুব দেয় অদিতি।

-   কিরে! কি ভাবছিস! ইন্টারভিউটা নিয়ে খুব চাপ নিচ্ছিস! তাই না! চিন্তা করিস না আদি। সব ভালো হবে। দেখিস।

বিদিশার দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসে অদিতি।

-   আমার চাকরিটা হয়ে যাক। তারপর ট্রেনে চেপে একদিন ঘুরতে যাব আমরা। কেমন!

-   সে আর বলতে! আমি তো প্ল্যান করেই নিলাম। চাকরিটা পাবি। আর আমরা সোজা দার্জিলিং। খুব মজা করব।

ঘড়িতে ঢং ঢং শব্দে ছ'টা বাজল। ঘড়ির কাঁটার পেন্ডুলামটা দুলে চলেছে অনবরত। বড্ড অস্থির, বড্ড চঞ্চল।

বাইরে ঝনঝন করে কলতলায় বাসন ফেলার শব্দ! 

-   উফফ! মাসিকে কত করে বলি জানিস! এভাবে বাসনগুলো রাখবে না। কে শোনে কার কথা! গোটা পাড়ার ঘুম ভাঙিয়ে ওনাকে বাসনগুলো ওভাবেই ফেলতে হবে। আবার কি অদ্ভুত জানিস! মাসি যেদিন আসে না সেদিন মনে হয় ধুর! দিনটা ঠিকমতো শুরুই হলো না। ওই শব্দটা যেন দিনটাকে শুরু করে। 

অদিতির কাছে ওই শব্দটা তো দিন শেষের ইঙ্গিত দেয়। রাতে ডিনারের পর সব বাসনগুলো নিয়ে অদিতি মাজতে বসে। তারপর তার সেদিনের মত একটু ছুটি ঘুমের জন্য। দীর্ঘশ্বাস ফেলে অদিতি। একই শব্দ ভিন্ন ভিন্ন রূপে ধরা দেয় দুজনের কাছে। কি অদ্ভুত! 

-   এই আদি। এবার বকব কিন্তু। চাপ নিতে বারণ করছি তো। 

-   না রে। নিচ্ছি না।

অদিতির দিকে পাশ ফিরে ওর কাঁধে হাত রাখে বিদিশা।

-   চল। উঠি আস্তে আস্তে নাকি! একটু আগে পৌঁছানোই ভালো।

ফাইনাল ইন্টারভিউ দিয়ে আসে অদিতি। রেজাল্ট দু একদিনের মধ্যেই জানাবে। 

অদিতির মা অদিতির সাফল্য কামনা করে সন্ধ্যেবেলা শঙ্খধ্বনি দেন। তার থেকে অনেকটা দূরে দুর্গাপুরে বিদিশা নিজের ঘরে বসে অন্তর্যামীর কাছে প্রার্থনা করে অদিতির চাকরিটা যেন হয়ে যায়। বিদিশার মায়ের শঙ্খধ্বনিকে মাধ্যম করে সেই প্রার্থনা গিয়ে পৌঁছায় অন্তর্যামীর কাছে। নিজেদের অজান্তেই শঙ্খধ্বনির শব্দতরঙ্গ মিলিয়ে দেয় প্রার্থনাদের।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics