Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Ananya Podder

Classics Inspirational Others

3  

Ananya Podder

Classics Inspirational Others

বৌমা vs পুত্রবধূ

বৌমা vs পুত্রবধূ

10 mins
313


নন্দিনীকে অনুরাধা দেবীর প্রথম থেকেই পচ্ছন্দ হতো না | চাপা গায়ের রঙ , দোহারা গড়ন | সৌন্দর্যের ছোঁয়াটুকু পর্যন্ত নেই গোটা চেহারায় | অথচ তার অনির্বানের কি সুন্দর চেহারা , যাকে এক কথায় সুপুরুষ বলা যায় | এক সাথে একই কলেজে পড়ার সুবাদে অনির সাথে নন্দিনীর আলাপ | ছেলেটা এমন ভাবে মেয়েটার প্রেমে মজেছে , যে নন্দিনীর নামে বিন্দুমাত্রও ছেলের কাছে কিছু বলা যায় না |

মা মরা মেয়ে নন্দিনী | নন্দিনীকে পৃথিবীর বুকে আনতে গিয়েই নন্দিনীর মা মারা যান | বাবা অঙ্কের শিক্ষক ছিলেন | সুরেশবাবু মানে নন্দিনীর বাবা আর বিয়ে করেননি | ছোট্ট নন্দিনীকে নিয়ে তার সময় ভালোই কেটে গিয়েছে |

সুরেশ বাবু নিজে একটু অগোছলা মানুষ ছিলেন | স্কুলের চাকরীর পরে ছাত্র পড়িয়ে যেটুকু সময় পেয়েছেন সেটুকু তিনি তার আদরের নন্দিনীকে দিতেই বেশি পছন্দ করতেন | নন্দিনী বাবার তত্ত্বাবধানে মানুষ হলো , শিক্ষিত হলো , শুধু সংসার গুছিয়ে রাখার মতো উপযোগী হলো না |

কলেজে প্রথম বর্ষে নন্দিনী যখন অঙ্কে অনার্স নিয়ে ঢোকে , তখনই অনির্বানের সাথে আলাপ হয় ওর | ছেলেটি বেশ প্রানবন্ত , পড়াশুনাতেও বেশ ভালো | পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র | প্রথমে বন্ধুত্ব , তারপর প্রেম | এক সাথে পাঁচ বছর পড়াশুনা করার পর নন্দিনী S.S.C. এর মাধ্যমে স্কুলের শিক্ষকতার চাকরী পায় আর অনির্বান এম. ফিল করে একটি বড়ো কোম্পানীতে চাকরি পায় | এত বছরের সম্পর্ককে এবার রূপায়ণ দেবার পালা |

নন্দিনী নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানায় বাবাকে | সুরেশ বাবু মেয়েকে স্বাধীন মানসিকতায় বড়ো করে তুলেছেন | তাই মেয়ের সিদ্ধান্তে বাধা দেওয়ার প্রশ্নই আসেনি |

নন্দিনী অনিকে জানায় যে তার বাড়িতে তাদের সম্পর্ক নিয়ে কোনো সমস্যা নেই | এবার অনির পালা | অনিকেও তার বাড়িতে জানাতে হবে তাদের দুজনের কথা | কিন্তু অনি দু একবার এড়িয়ে যায় নন্দিনীর কথাকে |

কারণ , অনি জানে যে অনুরাধা দেবীর নন্দিনীকে হয়তো পচ্ছন্দ নাও হতে পারে | কারণ , নন্দিনী মায়ের মনের মতে ফর্সা নয় , সুন্দরীও নয় | উপরন্তু , ভীষণ প্রাণ খোলা , আত্মমর্যাদা সম্পন্ন ও পড়াশুনা পাগল মেয়ে | সারাদিন পুতুল খেলার মতো সংসার হয়তো বা নন্দিনী করতে পারবে না | তবুও অনি নন্দিনীকে ভালো না বেসে পারে না | নন্দিনীর ব্যক্তিত্ব , একাগ্রতা অনিকে প্রবল ভাবে আকর্ষন করে |

তাই , অনির্বান ঠিক করে যে , নন্দিনীর কথা প্রথমে সে তার বাবাকে জানাবে | জগদীশ বাবু মানে অনির্বানের বাবা রিটায়ার্ড মানুষ | ভালো মানুষ বলতে যা বোঝায় উনি ঠিক তাই | সংসারের সাতে পাঁচে থাকেন না | অনুরাধা দেবীর অঙ্গুলী হেলনেই সংসার চলে | তবুও যদি বাবাকে রাজী করানো যায় তবে হয়তো অনুরাধা দেবীও বিশেষ আপত্তি করবেন না |

প্রথম যেদিন অনির্বান নন্দিনীকে তাদের বাড়িতে নিয়ে আসে , সেদিনই অনুরাধা দেবীর মনে কেমন একটা সন্দেহের সূত্রপাত হয় | যে ছেলে কোনোদিন কোনো মেয়ের সাথে মেলামেশা করেনি , সে কিনা আজ বাড়িতে একটি মেয়েকে নিয়ে আসছে বাবা মায়ের সাথে আলাপ করাতে !! বলাই বাহুল্য , নন্দিনীকে দেখে অনুরাধা দেবীর পচ্ছন্দ হয় না , কিন্তু জগদীশ বাবু খুব সুন্দর ভাবে নন্দিনীর সাথে আলাপ জমান |

নন্দিনী বাড়ি থেকে চলে গেলে অনির্বান বাড়িতে নন্দিনীর কথাটা পাড়ে আর প্রথমেই অনুরাধা দেবী একটু আপত্তি জানান | মেয়ে দেখতে সুন্দর নয় , সে কথা তো আর বলতে পারেননা | উনি জানান যে উনার ঘরোয়া মেয়ে চাই ছেলের বউ হিসেবে | কিন্তু অনি স্পষ্ট জানিয়ে দেয় , যে সে নন্দিনীকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবে না | অনুরাধা দেবী কি করে বোঝাবেন যে সুশ্রী না হওয়াটাই শেষ কথা নয় | নন্দিনীর মত এত স্বাধীন মানসিকতার মানুষ , তারপর প্রায় ছেলের সমতুল্য বিদ্যে , চাকুরীরতা , সাবলম্বী বউ ঘরে এলে অনুরাধা দেবীর সংসারের উপর এত দিনের আধিপত্য যে হারিয়ে যেতে পারে |

এর মধ্যে সুরেশ বাবু মারা যান | বাবাকে হারিয়ে নন্দিনী যখন বিধ্বস্ত , তখন জগদীশ বাবু নন্দিনীর মাথায় পিতৃসুলভ হাত রাখেন | স্বামী , ছেলে যখন দুজনেই বেঁকে বসে , তখন অনুরাধা দেবীর আর বিশেষ কিছু করার থাকেনা | অনির্বানের বউ হিসেবে নন্দিনীর প্রবেশ ঘটে অনুরাধা দেবীর সংসারে |

বাবাকে হারিয়েও যেন বাবাকে হারায়নি নন্দিনী | জগদীশ বাবুর সাথে খুব ভাব | কিন্তু নন্দিনীর কপালে মা জুটল না | অনুরাধা দেবী তার শাশুড়ি হয়েই রয়ে গেলেন , মা হতে পারলেন না | নন্দিনীকে নিয়ে প্রথম থেকেই বিভিন্ন বিষয়ে অনুরাধা দেবী বিভিন্ন প্রকার আপত্তিকর আচরণ ও মন্তব্য করতে থাকেন যা নন্দিনীর ব্যক্তিত্বে বারংবার হানা দেয় | খারাপ লাগলেও অনির সাথে ওর সম্পর্কের কথা ভেবে চুপ করে থাকে | দিনের শেষে মাঝে মাঝে অনির কাছে দুঃখ প্রকাশ করে | তাতে অনি কখনও সান্ত্বনা দেয় , বলে , "একটু মানিয়ে গুছিয়ে নাও |" আবার কখনো প্রচন্ড রেগে যায় নন্দিনীর উপর |

ভালো ভাবে রান্না সামলাতে পারে না বলে , ঘর দুয়ার ভালোভাবে গুছিয়ে রাখতে পারেনা বলে শাশুড়ির নিত্য নতুন অপমান নন্দিনীকে সহ্য করতে হয় | তবুও সে চুপ করে থাকে | কিন্তু যখন তার আত্মসম্মানে ঘা দেন উনি , তখন আর নন্দিনী চুপ করে থাকতে পারে না , প্রতিবাদ করেই ওঠে | সংসারে মাঝে মধ্যেই ঝামেলা লেগে থাকে | জগদীশ বাবু স্ত্রীকে বোঝানোর চেষ্টা করেন তার ভুল কোথায় | কিন্তু অনুরাধা দেবী নাছোড়বান্দা | উনি যেন ঠিক করেই ফেলেছেন নন্দিনীকে নানা অছিলায় তার সংসার থেকে তাড়াতে |

জগদীশ বাবু বুঝতে পারেন যে , সংসারে যা ঘটছে তা মোটেও ভালো হচ্ছে না | তার বৌমা যে তার সংসারে খুব ভালো নেই সে কথা উনি জানেন | স্ত্রীকে বলেন , "যে একদিন আসবে অনু যেদিন তোমার প্রয়োজনে তোমার ছেলে নয় , আমার বৌমা দেখবে তোমায় |"

অনুরাধা দেবী নাক সিঁটকিয়ে , ঘাড় বেঁকিয়ে বলেন , " মরণ , নিজের ছেলে থাকতে পরের মেয়ের উপর নির্ভর করতে যাব কেন ?? "

জগদীশ বাবু দীর্ঘ নিশ্বাঃস ফেলেন |

এভাবেই বছর তিনেক কেটে যায় | নন্দিনী ঠিক করে যে সে , ডক্টরেট করবে | কিন্তু বাধ সাধে অনুরাধা | তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন , " চাকরী করছো এই অনেক | পড়াশুনা করা আর চলবে না | আমার ঘরোয়া মেয়ে পচ্ছন্দ ছিল যে গৃহবধূ হয়ে আমার সংসারটারে গুছিয়ে রাখবে | আমার সে আশা পূরণ হয়নি | চাকরী করতে গিয়েই তো নাকানিচোবানি খাও | আবার পড়াশুনা করবে বলো কোন আক্কেলে " |

নন্দিনী হোঁচট খায় | তার পড়াশুনায় তাকে প্রথম বাধা পেতে হয় | শাশুড়ির এই সংকীর্ণ মানসিকতাকে মেনে নিতে পারে না | অনির্বানকে জানায় সে তার উচ্চতর শিক্ষালাভের আকাঙ্খার কথা | কিন্তু অদ্ভূত ভাবে এই প্রথম অনির্বান মায়ের পক্ষে যায় | সে স্পষ্ট জানিয়ে দেয় , সংসারে অশান্তি এড়াতে গেলে তাকে মায়ের কথাই শুনতে হবে | সে তো একটা চাকরী করছে | আর লেখাপড়া করার প্রয়োজনটা কী ??

নন্দিনী ভীষণ ভাবে ধাক্কা খায় | ভাবে যে সংসারে স্বাধীন ভাবে বাঁচার অধিকার নেই , সে সংসারে থাকবেই না | কিন্তু বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে বাড়ি ছাড়তে পারে না |

এত অশান্তির মধ্যেও যেন সংসারে হঠাৎ খুশীর হাওয়া খেলে | নন্দিনী সন্তানসম্ভবা হয় | কিন্তু সে খুশীও খুব বেশিদিন স্থায়ী হয় না | একদিন স্কুল যাওয়ার পথে পড়ে যায় নন্দিনী | আর তার সন্তান পৃথিবীর আলো দেখার আগেই মায়ের গর্ভে চিরনিদ্রায় শায়িত হয় | নন্দিনীর এই অপরাধ আর ক্ষমা পায় না | অনুরাধা দেবী অনির কানে নিরন্তর বিষ ঢেলে যেতে থাকেন নন্দিনীর বিরূদ্ধে | সন্তান হারানোর দুঃখে অনি এটা ভুলে যায় , সে একা নয় , নন্দিনীও হারিয়েছে সেই অমূল্য সম্পদকে | যে মানুষটার চোখে নন্দিনী একদিন তার প্রতি সম্মান আর ভালোবাসা দেখেছিল , সেই মানুষটার দৃষ্টিতে তার প্রতি ঘৃনা আর চূড়ান্ত অবহেলাকে সে মেনে নিতে পারেনা |

নন্দিনী ঠিক করে যে সে সংসার ত্যাগ করবে | এক জায়গায় থেকে একে অপরকে অসম্মান করার চেয়ে দূরে থেকে একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করাটা অনেক সাস্থ্যকর ও নৈতিক |

এবার আসরে নামলেন অনুরাধা দেবী |

"যাবে যখন চিরতরে যাও | অনিকে ডিভোর্স দিতে হবে তোমায় | "

জগদীশ বাবুর বুকটা কেঁপে ওঠে | তার বৌমাকে তিনি হারাবেন !! কিন্তু অদৃষ্টকে খন্ডায় কে ??

ডিভোর্সের ৬ মাসের মাথায় অনুরাধা দেবী প্রায় জেদ করেই আবার ছেলের বিয়ে দিলেন | মেয়েটি গ্রাজুয়েট | চাকরী বাকরী করে না | দরকার কি ?? তার অনি তো মোটা মাইনের চাকরী করে | রূপের আলোয় সংসারটাকে সারাদিন ঝলমল করে রাখবে | জগদীশ বাবুর বৌমা বিদেয় নিয়ে তার সংসারে অনুরাধা দেবীর পুত্রবধূর প্রবেশ ঘটেছে | অনুরাধা দেবী ভীষণ খুশী | সুখী গৃহকোণ যদি এবার তৈরি হয় | সুতপা মানে তার পুত্রবধূ রূপে , গুণে দুয়েতেই একেবারে মা লক্ষ্মী | কি সুন্দর রান্না করে , ঘর দোর গুছিয়ে রাখে , সকাল সন্ধ্যে সবাইকে নিজের হাতে খেতে দেয় | এই না হলে পুত্রবধূ | এর মধ্যেই জগদীশ বাবু এই সংসারের নাটক থেকে মুক্তি পান |

যাওয়ার আগে স্ত্রীকে আবার একই কথা বলে যান |

" তোমার প্রয়োজনে তোমার ছেলে , তোমার পুত্রবধূ তোমায় দেখবে না | দেখবে আমার বৌমা |"

স্বামীকে হারিয়ে অনুরাধা দেবীর মন ভারাক্রান্ত | এত দিনের সাথীর চলে যাওয়া | এই সময় সুতপা সুন্দর ভাবে সব সামলিয়ে নিয়েছে |

অনুরাধা দেবীর প্রথম ভুল ভাঙে যেদিন তিনি অনির জন্মদিনে পায়েস বানাবেন দেখে রান্না ঘরে ঢোকেন | সুতপা তাকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয় যে তার অনুমতি ছাড়া যেন সংসারের কোনো বিষয়ে অনুরাধা সিদ্ধান্ত না নেয় | এক লহমায় সে উপলব্ধি করে যে তার সংসারের লক্ষ্মী , তার আদরের পুত্রবধূ কি ভাবে তার সন্তান , তার সংসার এমনকি তার স্বাধীনতাটুকুও ছিনিয়ে নিয়েছে | সেদিন সে প্রথম বুঝতে পারে তার পুত্রবধূ ও তার স্বামীর বৌমার মধ্যে পার্থক্য কোথায় |

এভাবেই সংসারের এক কোণে পড়ে থেকে দিন কাটছিল অনুরাধা দেবীর | নন্দিনীর বিরূদ্ধে কতই না অভিযোগ করতো সে অনির কাছে | আজ কি অভিযোগ করবে সে | সুতপা যে তারই পছন্দের |

এর মধ্যেই অদৃষ্ট নিষ্ঠুর প্রতিশোধ নেয় অনুরাধার কাছে | অনির প্রোমোশন হয় যার সুবাদে তাকে তিন বছরের জন্য দেশের বাইরে গিয়ে কাজ করতে হবে | কিন্তু সমস্যা এসে দাঁড়ায় মাকে নিয়ে | মাকে কোথায় রেখে যাবে সে ?? সুতপা তো অনুরাধার দায়িত্ব নিতে নারাজ | সে স্পষ্ট জানিয়ে দেয় , যে সে শাশুড়ির কোনো দায়িত্ব নিতে পারবে না |

অগত্যা ঠিক হয় , এই তিন বছর অনুরাধার স্থান হবে বৃদ্ধাশ্রম | অনুরাধা আবার দেখে বৌমা বনাম পুত্রবধূকে | কিন্তু তার আজ আর কিচ্ছু বলার নেই |

অগত্যা বৃদ্ধাশ্রম যাওয়ার দিন আসন্ন হলো | বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় অনুরাধা ঈশ্বরের কাছে তার সমস্ত অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করল , আর কামনা করল যে আর যেন তাকে এ বাড়িতে ফিরে আসতে না হয় | আজ সত্যিই নিজের সিদ্ধান্তে অনুশোচনা হয় অনুরাধার | যে সুতপাকে সে একদিন তার ঘরে নিয়ে এসছিল সেই সুতপাই তাকে আজ চলে যাওয়ার দিনে ছাড়তে আসল না | নিজের প্রতি রাগেই তার ভীষণ কান্না পেল |

তাদের গাড়িটা কখন বৃদ্ধাশ্রম এসে পৌঁছেছে অনুরাধা খেয়ালই করেনি | গাড়ি থেকে নামতে তার একটুকুও ইচ্ছে করছিল না | তবুও নামতে তো হবেই | গাড়ির দরজা খুলে মাটিতে পা রাখতে যাবে , হঠাৎ দেখে সে , জগদীশ বাবুর বৌমা |

" কোথায় যাচ্ছ মা ?? ওই বৃদ্ধাশ্রম তোমার জন্য নয় | নিজের মেয়ে থাকতে কোনো মা বৃদ্ধাশ্রম যায় নাকি ?? চলো , বাড়ি ফিরে চলো "

বড় অভিমানে অনুরাধা বলে ওঠে , "আমার কোনো বাড়ি নেই" |

নন্দিনী দুহাত জুড়ে অনুরাধাকে জড়িয়ে ধরে বলে , "আমার বাড়িই তোমার বাড়ি মা | মা মেয়েতে মিলে থাকব | তুমি তোমার সংসার গুছিয়ে রাখবে | আর আমি স্কুলের শেষে তোমার সাথে অনেকটা সময় কাটাতে পারব | এক সাথে দিনগুলি বেশ কাটবে | আমি কখনো মায়ের আদর পাইনি | দেবে আমায় তোমার ভালোবাসা ?? "

অনুরাধা আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না | নন্দিনীকে ধরে হাউহাউ করে কেঁদে ওঠে | নন্দিনী ওকে পরম আদরে কাছে টেনে নেয় | এত কিছুর মাঝে অনি একদম নির্বাক হয়ে যায় | সে বুঝতে পারে না নন্দিনী এত কিছু জানল কি করে ??

অনির সব প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে সে জানায় , " অনি , তোমার অফিসের কিছু কলিগ আজও আমার বন্ধু | তাদের মধ্যেই কেউ তোমার সমস্যার কথা জানায় আমাকে | আমি তোমার পরিবারে অনেকদিন ছিলাম | যখন ছিলাম তখন তোমার মাকে পেয়েছিলাম | কিন্তু , আজ তোমার অনুমতি থাকলে আমি আমার মাকে আমার কাছে নিয়ে যাই | "

অনি নন্দিনীর কথায় কিভাবে কৃতজ্ঞতা জানাবে ভেবে পায় না | সেও তার সমস্ত সিদ্ধান্তে অনুশোচনা করতে থাকে | কিন্তু তার আর ফিরে আসার সুযোগ নেই | অনির খুব ইচ্ছে করে , নন্দিনীর হাত দুটোকে একবার নিজের হাতের মুঠোয় নিতে | কিন্তু সমস্ত নিঃস্তব্ধতা ভেঙ্গে নন্দিনী বলে ওঠে , " অনি , তুমি আর আমার সাথে দেখা করো না | তোমার স্ত্রী আছে , সংসার আছে | তাকে নিয়ে তুমি সুখে থাকো | আজ থেকে মায়ের সব দায়িত্ব আমার | "

অনুরাধাকে আর বৃদ্ধাশ্রমে যেতে হয়নি | জগদীশ বাবুর বৌমা তাকে যেতে দেয়নি সেখানে | আজ তাই বারবার অনুরাধা দেবীর মনে পড়ে তার স্বামীর কথা - " তোমার প্রয়োজনে তোমার ছেলে আর তোমার পুত্রবধূ তোমায় দেখবে না | দেখবে আমার বৌমা " |

অনুরাধা দেবীর পুত্রবধূ জগদীশ বাবুর বৌমার কাছে হেরে গিয়েছে | সাথে হেরেছেন অনুরাধা দেবী নিজেও | কিন্তু এই পরাজয়ের মধ্যেও যে এত আনন্দ তা আজ প্রথম উপলব্ধি করলেন অনুরাধাদেবী | আর সেই উপলব্ধিতেই তার আজ গৃহপ্রবেশ হবে , মাতৃরূপে , জননী রূপে ||



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics