Krishna Banerjee

Classics

4  

Krishna Banerjee

Classics

যখন আমার সত্তর

যখন আমার সত্তর

6 mins
29


                        যখন আমার সত্তর

                     কলমে - কৃষ্ণ ব্যানার্জী

                           29/ 02 /2024

                    পৃথিবীটা প্রচন্ড বিচিত্র , মুহূর্তের মধ্যে সবকিছুই কেমনযেনো ওলোটপালোট হয়ে যায়। ফেলে আসাদিনগুলো খুব কাছে মনেহলেও তাকে ধরে ওঠা আর সম্ভব হয়না । তখন ব্যালকুনির আরামকেদারাতে বসে একজন সত্তর বছরের বৃদ্ধ আর তর মুখমুখী বসে আর একজন আটশোটটি বছরের বৃদ্ধা একটা অজানা পৃথিবীর সন্ধান কোরি। মন বলে কাত কিছুইতো বাঁকি রয়ে গেলো দেহটা বলে আমি আর নিতে পারছিনা বস । একটাদিন ভাবতাম টাকা থাকলেই হয়তো সবটুকু মিলবে তাই রোদ , ঝড় , বৃষ্টিতে একটা আলাদা উদ্দমে ছুটেছি টাকার পিছনে । একেরপর এক পরীক্ষা অবশেষে সাফল্য , জুটিয়ে ফেললাম ব্যাংকের কেসিয়ারের চাকরিটা । সময়ের সাথে সাথে টাকার নেশা আরো জাঁকিয়ে বসলো মাথার মধ্যে । ছোটবেলাতে অভাবকে দেখেছি , টাকার এভাবে বাবা - মায়ের ওষুধটুকুও ঠিক ঠাক জুটতোনা । তারমধ্যাদিয়েও আমাকে মানুষ করবার লড়াই। আমি যখন মানুষ হলাম তখন বাবা আর আমাদের মাঝেই রইলোনা , মাত্র 65 বছর বয়সেই তিনি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করলেন । আমি একটু অধিক বয়সেই বিবাহ করেছি , আমি যখন বিয়ে করলাম তখন আমার বয়স 35 । তখন আমাদের সংসারে অভাব আর নেই বললেই চলে , কিন্তু মনে একটা অভাব রয়েই গিয়েছিলো , আর সেই অভাব থেকেই জন্মেছিলো নেশা । অনেক টাকার নেশা । টাকা ছাড়া পৃথিবীর কিছুই আমারকাছে মূল্যবান ছিলোনা । ফলে পৃথিবীকে ঠিকভাবে চেনার সুযোগ আমার হয়ে উঠেনি কোনদিন । আমাদের সংসারে একটা মেয়ে এলো তার সাথে এলো আমার প্রথম প্রমোশন , কেশিয়ার থেকে এসিস্টেন্ট ম্যানেজার । এক ধাক্কাতে স্যালারি বেশ অনেকটাই বেড়েগেলো কিন্তু আমার মনের শান্তি হলনা । আরো বৃহদ পোস্টে পৌঁছাতে হবে ম্যানেজার , জনার ম্যানেজার , এরিয়া ম্যানেজার ইত্যাদি ইত্যাদি । রিটার মেন্টের 2 বছর আগে আমার স্যালারি 1.5 লক্ষ ছাড়িয়েছে । মেয়েযে কবে ডাক্তারি পড়তে শুরু করেছে সেটাও আমার জানা ছিলোনা । মেয়ের ডিপার্টমেন্ট ওর মা আর ঠাকুমা দেখতেন , মেয়ে যখন 11 ক্লাসে পড়ে তখন মা আমাদের সঙ্গ ছাড়লেন । ঐ দিন 15 রো মেয়ের সাথে আমি খুব কাছাকাছি হয়েছিলাম । আমি যে বছরে রিটার হলাম তার ছয়মাস পর মেয়ের বিয়ে ঠিক হলো । ছেলেও ডক্টর , বিদেশে থাকে । বিয়ের পর ওরা ওখানে শিফট করবে , তারপর আমাদের মেয়েটাও ওখানেই জামায়ের হসপিটালেই প্র্যাক্টিস করবে । জামাই যদিও বলেছিল আমাদের সাথে নিয়ে বিদেশে চলেযাবে কিন্তু আমি রাজি হলামনা , এই বয়সে দেশের মাটি ছেড়ে বিদেশে ঠিক মেনেনিতে পারলামনা । বিয়ের দিন পোনের বাদে ওরা চলে গেলো । বাড়িতে এখন মানুষ বলতে আমরা দুজন , কিছু চাকর , বাকর রয়েছে বটে তবে আপন বলতে আমি আর আমার স্ত্রী আর ব্যাংক ভর্তি টাকা । ঠিক কত টাকা রয়েছে তা আমার জানা নেই আজও তার উপর মাস গেলে একটা মোটা টাকা পেনশন । ব্যাঙ্কের সঞ্চিত অর্থে হাত পড়েনা বললেই চলে । স্ত্রী কে বললাম বুঝলে গিন্নি এখন আমার সকল কাজ শেষ , এবার শুধু ঘুরবো যেদিকে দুচোখ যাবে । সেদিন ওর মুখথেকে কোনো জবাব পাইনি । তারপড় যদিও কয়েকটা জায়গাতে গিয়েছিলাম কিন্তু দেহ , দেহটা আর সঙ্গ দিচ্ছেনা একটুতেই হাসপাশ করছে দেহ , নিজের উপড় কেমন যেনো একটা অস্পষ্টতার ছায়া উপলব্ধি করতে লাগলাম যে ছেলেটা এক সময় ফুটবল পায়ে নিয়ে টানা 90 মিনিট মাঠের এ মাথা থেকে ও মাথা ছুটে বেড়াতো আজ তার এ কি অবস্থা, কবে এমনটা হলো , সবটাই জেনো চোখের সামনে একটা সিনেমার মত মনে হচ্ছে , যাইহোক পুড়িথেকে ফিরে ডাক্তারের সরনাপর্ন হলাম , তারপড় একবস্তা রক্তের রিপোর্ট লিখেদিলেন তিনি । গিন্নির হাঁটুর বেথা বহুদিন আগেই ধরেনিয়েছে এখন জানিনা আমার কিকি গজিয়েছে দেহেরমধ্যে । এতগুলো বছরের মধ্যে এক বারের জন্য আমার মনেই হয়নি আমারো একটা দেহ রয়েছে , তারমধ্যেও কিছু যন্ত্র পাতি রয়েছে যেগুলো ও খারাপ হতেই পারে । টাকার পিছনে ছুটতে ছুটতে সবকিছুই ভুলে মেরেছিলাম । সেদিন সারারাত আমার ঠিকঠাক ঘুম এলোনা নিজেকে আমার স্ত্রী - কন্যার অপরাধী বলে মনে হচ্ছিল । টাকার মহে আমি এমন এক যন্ত্রে রূপান্ত্রিত হয়ে গিয়েছিলাম যে আমার কাছে টাকার বাইরে পৃথিবী ছিলোনা । পরের দিন সকালে ল্যাবে গিয়ে রক্ত দিয়ে এসে সন্ধ্যার অপেক্ষাতে রইলাম , সন্ধ্যার সময় রিপোর্ট আসলো , পরেরদিন ডাক্তারের নিকট যেতে জীবনে একটা নুতন অধ্যায়ের সূচনা ঘটল । সকাল থেকে সন্ধ্যা খাবারের থেকে ঔষধ অধিক । খাদ্য থেকে পথ চলা সবটাই সময়ের হিসাবে বাঁধা পড়ল । আমার মনেহল একটা জেলখানা থেকে বেরিয়ে আর এক জেলখানাতে অনুপ্রবেশ করলাম , এখানকার নিয়ম কানুন অবশিষ্ঠ জীবনের জন্য লাগু হলো । এই কারাগাড়ের জেলার হলেন আমার ডক্টর , তার অনুমতি ছাড়া এক পাও নরবার ক্ষমতা আমার নেই । ভেবেছিলাম ঝাড়া হাত - পায়ে বৌটাকে সাথে নিয়ে তীর্থে তীর্থে ঘুড়ে বেড়াবো , অর্থের প্রতী অধিক অসক্তি থাকার ফলে দেবতা হয়তো আমাকে তার দুয়ারে ঠায় দিলেন না । তারপড় একবছর কাটার পড় বাড়িতে একটা আনন্দের ঝড় বয়ে গিয়েছিলো , আমার জামাই ওভারফোনে জানালো আমাদের মেয়ে অন্তস্বত্তা সে মেয়েকে নিয়ে এখানে ফিরছে । মেয়ের ছেলে অর্থাৎ আমার নাতির জন্ম হলো আমাদের কলকাতার বাড়িতে । মেয়েকে এবার দের বছর কাছে পেয়ে এতগুলো বছর তাকে যে স্নেহ দিতে পারিনি এই দের বছরে সেটা পূরণ করবার চেষ্টা করলাম , বাড়িটা আবার জমজমাট হয়ে উঠলো । সবকিছু বেশ ভালোই চলছিলো কিন্তু নাতির 6 মাস বয়স হতেই জামাই মেয়ে আর নাতিকে নিয়ে উড়ে গেলো বিদেশে , আবার আমি আর আমার স্ত্রী মুখ মুখী দিন গুনতে থাকলাম ।  এভাবে আরো সাতটা বছর কেটে গেলো , এখন আমার বয়স সত্তর একবছর আগে আবার আমি অসুস্থ হলাম , হসপিটালে ভর্তিহলাম বুকের বেথা নিয়ে , পরীক্ষা নিরীক্ষা কোরে জানা গেল আমার একটা স্ট্রোক হয়ে গিয়েছে যারফলে আমার হার্ডে ব্লকেজ এসেছে । ডক্টর হসপিটাল থেকে মেয়ে জামায়ের কাছে ফোন যেতে তাড়া তৎকালীন ফ্লাইডের টিকিট নিয়ে কয়েক ঘন্টার মধ্যে কলকাতাতে এসে পৌঁছালো তারা , অপারেশন ভালোভাবেই হয়েগেলো , ডাক্তার মেয়ে - জামাইকে জানালো বাড়িতে সারাক্ষণের জন্য একটা লোকের দরকার । মেয়ে - জামায়ের এই মুহূর্তে থাকার উপায় নেই কারণ ওরা দুজনেই বিদেশের একটি সরকারী হসপিটালে চাকরি রত , তাই এইভাবে তাদের ফিরে আসা সম্ভব নয় । ওরা একজন লোককে দিনরাতের দায়িত্ত দিয়ে ফিরেগেলো বিদেশে । সবটাই ঠিক ছিলো কিন্তু পর কোনদিন আপন হয়না , তাই লোকটিও আপন হলনা , আমি সব বুঝেও অবুঝের মতো স্ত্রীর সাথে দিন কাটাতে থাকলাম , দোকান থেকে রেশন সব হিসাবেই গরমিল তবুও আমি চুপ কোরে মেনে নিতে থাকলাম । কারণ আমাদের হাতে আর কোন বিকল্প নেই । যখন একা একা বসেথাকি তখন নিজের উপর খুব রাগ হয় । যে টাকার জন্য জীবনটাকে অবহেলা করেগেলাম সেই টাকা আজ আমাদের অবহেলা করছে অথচ এই সত্তরে দাঁড়িয়ে আজ আমি আর আমার স্ত্রী সম্পূর্ন অশহায় । টাকার পাহাড় গোরেও একমুঠ সুখ কিনে অনেদিতে পারলামনা আমার স্ত্রী কে । আজ নিজেকে খুব বোকা মনে হচ্ছে এই ভেবে যে সুখ কিনতে টাকা লাগেনা , ভালোবাসা কিনতে টাকা লাগেনা কিন্তু টাকার পিছনে ছুটে যখন তাকে বাস্ক বন্দি করতে ব্যাস্ত ছিলাম সেই সুযোগে এই তাকাই কেরে নিয়েছে সুখ , শান্তি আর ভালোবাসাকে , আজ আমি টাকার পাহাড়ে বোসে প্রজাহীন রাজা মাত্র । টাকাগুল আজ আমাকে দেখে তীর্জক ভাবে হাঁসে আর আমি নির্বাক হয়ে তাদের ঐ উপহাস পরিষ্কার উপলব্ধি করতে পারি কিন্তু আজ আর আমার হাতে সময় নেই ফেলে আসা কালকে ফিরিয়ে আনার , কোরে আসা ভুলকে শুধরে নেবার ।

                               সমাপ্ত


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics