Akash Karmakar

Romance Tragedy Crime

3  

Akash Karmakar

Romance Tragedy Crime

উপহার

উপহার

3 mins
236


রিপোর্ট তো এইচ আই ভি পজিটিভ; এখন তো আর ডিভোর্স নিতে কোনো বাধা রইল না। 


     বিয়ের একবছর অতিক্রান্ত। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই অরবিন্দ্ আর সোনিয়ার মধ্যে অশান্তি লেগেই থাকক। ঠিক কী কারণে নবদম্পতির মধ্যে সম্পর্কের তিক্ততা বাড়ছিল তা বুঝে ওঠা বেশ কষ্টসাধ্য ছিল তা বলাই বাহুল্য। ২০১২ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি সেন্ট্রাল সিকিউরিটি এজেন্সির মেডিকেল ল্যাব টেকনিশিয়ান পদে কর্মরত অরবিন্দ্ এর সাথে সোনিয়ার বাবা নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী ভালোভাবেই বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছিলেন। দুই পরিবারে তেমন কিছু সমস্যা না থাকলেও অরবিন্দ্ সোনিয়ার মধ্যে যেন শুরু থেকেই ঘটেছিল ছন্দপতন। যাইহোক এভাবে ঠোকাঠুকি লাগতে লাগতেই আজ তাদের প্রথম বিবাহবার্ষিকী। সকাল বেলা থেকেই অরবিন্দ্ -এর মুড বেশ ফুরফুরে, সোনিয়াও ভাবল হয়তো এবার দিনবদলের শুরু হল বলে! 


     মুখের মিষ্টতা কখন কিভাবে সামনের মানুষের জীবনকে করাল গ্রাসে ঠেলে দেবে তা অনুমেয় করা সহজ নয়। সোনিয়াকে আজ বিবাহবার্ষিকীতে উপহার হিসেবে কি দেবে তা প্রায় অনেক আগে থেকেই পরিকল্পনা করে নিয়েছিল অরবিন্দ্, অপেক্ষা ছিল শুধু একবার সোনিয়ার হ্যাঁ বলার। ভারতীয় সংস্কৃতিতে স্বামীকে না বলার ক্ষমতা হাতে গোণা কিছু স্ত্রীয়েরই থেকে থাকে। যথারীতি সোনিয়াও ভালোবাসার মানুষের কাছে ভালোবাসার টানেই সমর্পণ করল নিজেকে। 'তোমার মায়ের তো ডায়াবেটিসের সমস্যা আছে, তাই আমি চাইনা যাতে আমাদের সন্তানের শরীরে কোনোভাবেই ডায়াবেটিস না হয়। তারজন্য তোমাকে একটা ইনজেকশন নিতে হবে এবং একবার রক্ত পরীক্ষাও করতে হবে।' --- প্রাথমিক ভাবে এরকম উপহারের কথা শুনে সোনিয়াও থতমত হয়ে পড়ে কিন্তু অরবিন্দ্-এর জেদের কাছে সে নতিস্বীকার করতে একপ্রকার বাধ্য হয়। ল্যাব টেকনিশিয়ান হওয়ার সুবাদে ইনজেকশন দেওয়া, রক্ত নেওয়া এসব কাজে সিদ্ধহস্ত ছিল অরবিন্দ্, এবং তাই আগে থেকে বেছে রাখা এইচ আই ভি ইনফেক্টেড একটি সিরিঞ্জ সে অতি নিপুণতার সাথে প্রবেশ করায় সোনিয়ার দেহে। সেই থেকে শুরু হয় ভালোবাসার উপহারের লীলাখেলা। ক্রমাগত অসুস্থ থাকতে শুরু করে সোনিয়া, ডাক্তাররাও প্রাথমিক ভাবে রোগ নির্ণয় করতে অক্ষম হন। অন্যদিকে সোনিয়া আর অরবিন্দ্ -এর দূরত্ব বাড়তে থাকে, অরবিন্দ্ ধীরেধীরে রাতে বাড়ি ফেরাও বন্ধ করে দেয়। শারীরিক-মানসিক সমস্যায় ক্রমাগত ভেঙে পড়তে থাকে সোনিয়া। ইতিমধ্যে অরবিন্দ্ এর মনে কৌতূহল জাগে এটা জানার যে সোনিয়া সত্যি এইচ আই ভি পজিটিভ হয়েছে কিনা। তাই হঠাৎ একদিন আরেকটি ইনজেকশন দেওয়ার বাহানায় সে একটু রক্ত নিয়ে যায় ল্যাবে পরীক্ষা করে দেখবে বলে, এবং যথারীতি তার মনের ইচ্ছারই প্রতিফলন ঘটে ব্লাডরিপোর্টে-রিপোর্ট পজিটিভ। অরবিন্দ্ আর বিন্দুমাত্র দেরী না করেই তোড়জোড় শুরু করে দেয় সোনিয়ার থেকে ডিভোর্স নেওয়ার। রিপোর্ট পুরোপুরি ভেঙে দেয় সোনিয়া এবং তার পরিবারকে; কিন্তু এভাবে হঠাৎ কেউ এইচ আই ভি পজিটিভ হতে পারে না এবং রিপোর্ট আসার সাথে সাথেই অরবিন্দ্ এর ডিভোর্স চাওয়া সবমিলিয়ে সে দ্বারস্থ হয় পুলিশের। পুলিশের সামনেও পুনরায় পরীক্ষা হয় সোনিয়ার রক্তের এবং তখনও রিপোর্ট আসে পজিটিভ। তৎক্ষণাৎ তুলে আনা হয় অরবিন্দ্ কে এবং জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালীন সে স্বীকার করে নেয় সমগ্র বিষয়টি। সোনিয়ার সাথে বিয়ের আগে থেকেই অরবিন্দ্ এর জীবনে ছিল তার ভালোবাসার মানুষ, কিন্তু পারিবারিক সামাজিক চাপে সে সোনিয়াকে বিয়ে করলেও স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে পারেনি। 


    সম্পর্কের বাঁধন থেকে মুক্তির পথে কখনোই অন্যজনকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া–এরকম নৃশংস উপহার দেওয়ার পরিণামে আজ একজন কারারুদ্ধ আর একজন মৃত্যুর সাথে লড়ছে। মানুষ ভালোবেসে ভালোবাসার মানুষের জন্য উপহার আনে; আবার কখনো সেই উপহারের রঙীন মোড়কেই সাদা ধবধবে মৃত্যু এঁকে দেয়। 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance