Manab Mondal

Abstract Classics

4.6  

Manab Mondal

Abstract Classics

উবের ডাইভার

উবের ডাইভার

4 mins
696


শেষ মেষ ও নিজে ছেড়ে দিয়ে গেলো আমায় বিমান বন্দরে। যাওয়ার সময় ওর চোখে জল ছিলো । জল গোপন করে বললো। রাতের দিকে ফোন করো , অসুবিধা নেই আমি ধরবো। শুধু আগে থেকে মেসেজ করো যাতে online থাকি।যাবার সময় ও দুই বার পিছনে তাকালো। জানি না ওর সাথে আর দেখা হবে কিনা। 

চুক্তিতে লেখা আছে six month on one month off, সহজ ভাষায় বললে ছয় মাসে কাজ করে এক মাসের ছুটি পেয়ে ফিরবো। কিন্তু নতুন কোম্পানি, ট্রেনিং , work parmit, ekama ও সব করতে ই দুমাস লাগিয়ে দেবে। ছয়মাস টা নয় মাস নিয়ে নেবে , ছুটি দিতে। বিদেশে চাকরি মানে আমি তো আর white colour job করতে যাচ্ছি না, বরং চাকুরী টা খুব জরুরী ছিলো বলে , পদঅবনতি করেই যাচ্ছি। এক কথায় গত খাটিয়ে পয়সা আয় করতে যাচ্ছি , যারা মেধা খাটিয়ে আয় করে তাদের সাথে আমদের অনেক পার্থক্য। 


দেখুন না দেশ ছাড়ছি টুরিস্ট ভিসায়। ইমিগ্রেশন অফিসার আটক দিতেই পারে ইচ্ছে করলে। হোটেল বুকিং দেখাও রিটার্নি টিকিট দেখাও এই দুই একটা কথা বলেই। ও দেশে গিয়ে গরু ছাগল এর মতো লেবার ক্যাম্পে দিন কাটাতে হবে যতোদিন না দরকারি কাগজ পত্র বানায়। গ্রাম বাংলার বহ ছেলে আজকাল মধ্যে প্রাচ্য দেশ গুলো তে কাজ করতে যায়। দূর থেকে দেখ মনে হবে ওদের সোনার টুকরা ছেলে কিন্তু আসলে, এদের জীবন টা সোনার মতো দামী নয়। হয়তো এই লড়াই নাম জীবন।

আর মূত্য এই যে আমাদের স্বপ্নটা ভেঙে যাওয়ার পথে, ভেঙে গেলেই তো আসলে আমার মূত্য হবে। আসলে ভালো থাকাই তো জীবন, ওকে ছাড়া তো আমি ভালো থাকতে পারবো না।ওর সব বন্ধুদের বিয়ে হয়ে পাঁচ ছয় বছরের বাঁচা হয়ে গেছে। অনেক সময় ওর বাবা মা। উনার ঠিক কোন ভাবে জেনে গেছিলো আমি বিদেশে গিয়ে রান্না বান্না র কাজ করি । আর তাও আবার সমুদ্র এ মাঝে তেলের খনি তে, মহুর্তের মধ্যে মৃত্যু আমাদের আপন করে নিতে পারে। তাই শর্ত দিয়ে ছিলো বিদেশে নয় , এখানেই থেকে ই একটা সন্মান জনক আয় করতে হবে। 

এমনি তো চাকুরী বাজার খারাপ। তার উপর বয়স হয়ছে তাই জমানো টাকায় ব্যবসা করার চেষ্টা করলাম , আর সখ করে কেনা গাড়িটা ওলাতে ভাড়া দিলাম। ডাইভার আমার বন্ধু। ও আমাকে বলেছিলো" নিজে গাড়ি না চালালে তুই পয়সার মুখ দেখতে পারবি না।"

ব্যবসাও চলছে না। মুদি দোকান ধার বাকি দিতে হয় , ফলে নগদ লাভটা কি হচ্ছে বুঝতে পারিনা তাই রাত বেলায় গাড়ি নিয়ে দুই একটা ট্রিপ মেরে দিয়ে থাকি আরকি। বিশেষ করে এয়ারপোর্টে একটা ভাড়া পেয়ে গেলেই কেল্লা ফতে। আমার বন্ধু অবশ্য বারন করে দিয়েছে অচেনা জায়গায় যাবি না। জিনকির হাটের একটা ভাড়া বার বার ক্যান্সেল করে দিচ্ছি তবুও আসছে। আমি এবার ক্যান্সেল করলাম না। দেরি যদি করি তাহলে ওরা নিজেরাই ক্যান্সেল করে দেবে ‌। আমি বার বার ক্যান্সেল করলে কোম্পানি থেকে ফাইল করতে পারে। কিন্তু হঠাৎ ফোন এলো একটা মেয়ের গলা,"ভাই খুব বিপদে আছি একটু আসবেন, তাড়াতাড়ি। ভাড়ার চেয়ে দুই তিনশ টাকা বেশি দিয়ে দেবো"

অগ্যতা হাজির হলাম , টাকা জন্য নয়, মহিলার আকুতি তে।টালিগঞ্জ, একটা মাঝারি বয়সের লোক, গর্ভবতী কমবয়সী হিজাব পড়া মেয়ে আর একটা ছেলে। আমি নিশ্চিত হলাম। এরা নিশ্চয়ই গাড়ি চোর নয়।

কবর ডাঙ্গা পর থেকেই রাস্তা টা আরো ফাঁক, অন্ধকার চিরে গাড়ি বেরিয়ে যাচ্ছে, হঠাৎ গাড়িতে থেমে গেল কিন্তু ব্রেক তো আমি মারি নি, ওর আমাকে গালাগালি দিতে যাবে তখন দেখি মিস্ মিসে কালো বিড়াল রাস্তা পার হচ্ছে , ওর চোখ গুলো বড় বড় বেশী জ্বল জ্বল করছে। হঠাৎ খেয়াল করলাম , আমার পাশে সিটে কেউ যেনো বসে আছে, সে যেনো কানের কাছে ফিস ফিস করে বলল "তোর কোন ভয় নেই ।"


ভয় নেই শব্দটাই আমাকে আরো ভয় পাই দিলো। লুকিং গ্লাসে ওদিকে তখনই দেখি, একটা পুলিশের বাইক আসছে, আমি গাড়ি স্টার্ট না নেওয়ায় মেয়েটা বললো " ভাই জান বিড়াল তো চলে গেছে" 

আমি বললাম "পুলিশ পিছনে, " 

কথাটা শুনে ওদের রূপ বদলে তিনজনে তিন টে চ্যম্মার মানে বন্দুক ঠেকিয়ে দিলো আমার মাথায়। বললো গাড়ি" চালা বাইনচোদ কোথাও দাঁড়াবি না" 

আমি গাড়ি চালানো শুরু করা আগেই গাড়ি চলতে শুরু করে দিলো, আমি যতো বুঝতে পারছি এ গাড়ি চালানোর ওপর আমার নিয়ন্ত্রণ নেই ততোই আমার আত্মারাম খাঁচা ছাড়া হয় যাচ্ছে। হঠাৎ তখন ই গাড়ির সামনে উপর থেকে পড়ল একটা পুলিশের লাশ গাড়ি থেমে গেলো। ওরা দেখেছে , কিন্তু ওরা যে ভয় পেয়েছে সেটা বুঝতে দিলো না আমাকে। ওরা বললো " প্রাণে বাঁচতে চাইলে পালা এখান থেকে" 

আমি দরজা খুলে দৌড়ে দিলাম। মিনিট দশেক দৌড়নোর পরে চোখে পড়লো একটি পুলিশ ভ্যানে, আমি সব কিছু বললাম। ওরা তাড়াতাড়ি গেলো । গিয়ে আমরা যা দেখালাম। তা অবাক করার মতো, আমার গাড়িটা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেটা আর মেয়েটাকে অদৃশ্য কেউ গলা টিপে ধরে রেখেছে। আর ঐ ভদ্রলোক মাটিতে শোয়ানো একটা ইট দিয়ে অনবরত আঘাত করে যাচ্ছে কেউ। আমার জীবনটা বেঁচে গেলেও চোখের সামনে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে দেখলাম তিনটি জীবন্ত মানুষ কে । যদিও গত সপ্তাহে ওরাই নাকি গাড়ি চুরি করতে গিয়ে একটা ডাইভার আর পুলিশকে মেরে ফেলে ছিলো। 

এ গল্পটা শোনার পর ও বলে দিলো "প্রয়োজনে আইবুড়ো হয়েই শ্মশান ঘাটে যাবো তবু গাড়ি চালাতে আর দেবো না।" মৃত্যু কে সেই দিন অনেক কাছে থেকে দেখেছি তাই একটা ভালো জীবনের আশা ছাড়তে পারলাম না।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract