Abanti Pal

Classics Inspirational Others

4.6  

Abanti Pal

Classics Inspirational Others

ঠাকুরমশাই

ঠাকুরমশাই

7 mins
593



‘ঠাকুরমশাই, ও ঠাকুরমশাই… আমাদের বাড়ীর পূজোটা একটু করে দেবেন দয়া করে! নাতনী আমার সেই ভোরবেলা থেকে উপোস করে রয়েছে’ হন্তদন্ত হয়ে নদীপাড়ে এসে বললেন একজন সত্তরোর্ধ বয়স্কা বৃদ্ধা। 


 আকুল বেগে বয়ে চলেছে মহানন্দা; সুদূর পর্বতরানি দার্জিলিংয়ের পাদদেশ থেকে প্রবাহিত হয়ে এসে কোথাও দু-দন্ড দাঁড়ানোর ফুরসত নেই তার, অধীর আগ্রহে ধেয়ে চলেছে মহাগঙ্গায় মিশে যাওয়ার উদ্দীপনায়। নদী কখনও শষ্পহীন, জৈষ্ঠ্যের রৌদ্রদগ্ধে পিপাসার্ত, তো কখনো বা আষাঢ়ে উচ্ছ্বসিত জলরাশিতে পরিপূর্ণ। বেখেয়ালি স্রোতস্বীনি এই নদীর কিনারে, এক ছোট্ট গ্রামে থাকেন মাস্টারমশাই। রায়গঞ্জ থেকে বেশ খানিকটা বাইরের দিকে এই গ্রাম, এখান থেকে অগ্নিকোণস্থ হয়ে নদী দেশান্তরণ করেছে বাংলাদেশে। নাহ, নদীর অবশ্য কোনো দেশ হয় না। যেমন মাস্টারমশাইয়ের নেই কোনো স্থির ঠিকানা।


আজ সরস্বতী পূজো। গ্রামের সবাই মেতে উঠেছে বসন্ত পঞ্চমী পার্বনে। মৃত্তিকা আজ পুষ্পময়ী, প্রাণবন্ত। শীতের আবরণ থেকে উন্মুক্ত হয়ে, আজ ঝলমলিয়ে হাসছে সে নব-প্রণয়ীনীর বেশে। ঘরে ঘরে পূজিত মৃন্ময়ী সরস্বতী আজ রূপ নিয়েছেন চিন্ময়ী সদা-হাস্য বালক-বালিকাদের মধ্যে। তাদের উত্তেজনা মহানন্দার স্রোতের মতই, তরঙ্গায়িত হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে বসন্তের বাতাসে। 


নিত্যদিনের মতন স্নান-ঘাটে নেমেছিলেন মাস্টারমশাই। স্নানশেষে ওনার সংস্কৃত-শ্লোকের মন্ত্রোচ্চারণে স্পন্দিত হয়ে, আরো সুনির্মল হয়ে উঠছিল পরিবেশ। এমন সময় শুনলেন বৃদ্ধার কণ্ঠস্বর। সূর্যপ্রনাম সেরে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখলেন যে বৃদ্ধা অত্যন্ত ব্যাকুল প্রত্যাশায় দাঁড়িয়ে আছেন ঘাটে, ওনার অপেক্ষায়।

‘আপনাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না মাসিমা? আপনি কি এই গাঁয়ে নতুন এসেছেন?’ বললেন মাস্টারমশাই।

‘না না বাবা, আমি পাশের রায়পাড়ায় থাকি‘ একটু দম নিয়ে বললেন বৃদ্ধা। 


‘কি কান্ড বলো দিকিনি, আমাদের পাড়ার ঠাকুরমশাই সেই ভোর পাঁচটায় আসবেন বলে তারপর ওনার আর দেখা নাই। এদিকে বেলা বয়ে যায়, আমার আট বছরের নাতনীটা যে বায়না ধরেছে এই বছর নির্জলা উপোস করে অঞ্জলি দেবে। বাবা… ঐটুকু মেয়ে এতো বেলাবেলি উপোস করে কি আর থাকতে পারে…’ হাপিয়ে পড়লেন উনি।

‘মাসিমা, আমি যে পূজো করি না…’ অপ্রস্তুতে পড়লেন মাস্টারমশাই।


‘আমি যে খুব অসুবিধায় না পড়লে তোমায় বলতুম না বাবা, এতদূর ছুটে ছুটে ঠাকুরমশাই খুঁজতেও বেরুতাম না… কিন্তু কি করি বল। তুমি একবারটি চলো না বাবা.. আমার ছোট নাতনীটার কথা ভেবে চলো… আর তাছাড়া, তোমার অসাধারন মন্ত্রোচ্চারনে মুগ্ধ আমি, এতো সুন্দর স্তব-পাঠ কিন্তু আমি আজ পর্যন্ত কক্ষনো শুনিনি কোনো ঠাকুরমশাইের থেকে’ ব্যাকুল ভাবে বললেন বৃদ্ধা।


আর বাধা দিতে পারলেন না মাস্টারমশাই। বৃদ্ধার যন্ত্রনাকাতর মুখমন্ডলী দেখে পথ ধরলেন ওনার সাথে।


সরু আলপথ পার হয়ে যেতে যেতে, দেখা হল বকুলমাস্টারের সাথে। সক্কাল সক্কাল পূজোর আয়োজনে উনি স্কুলের পথে রওনা হচ্ছিলেন। দেখা হতেই বললেন 

‘মাস্টারমশাই, আপনি এদিকে?’ অবাক হয়ে বকুলমাস্টার দেখলেন যে ওনাদের স্কুলের অধ্যক্ষ, ওনাদের গণমান্য সংস্কৃত শিক্ষক, সকল ছাত্রছাত্রীদের প্রিয় মাস্টারমশাই, বিনম্রভাবে ধীর পদক্ষেপে চলেছেন অন্য গাঁয়ে, একজন সম্পূর্ণ অপরিচিত বয়স্ক ভদ্রমহিলার সাথে। 


‘বিশেষ দরকারে যাচ্ছি ওনার সাথে, আপনি স্কুলের আয়োজন সামলে নেবেন ভালোভাবে.. আমার তো আজ ওদিকে কাজ নেই’ মাস্টারমশাইয়ের প্রত্যুত্তর এলো। 

‘এভাবে বলবেন না… আপনি আমাদের স্কুলের গণ্যমান্য ব্যক্তি’ অনুনয়ের সুরে বললেন বকুলমাস্টার।


ম্লান হাসলেন মাস্টারমশাই, কিন্তু আর দাড়ালেন না। অনেক বেলা হয়ে যাচ্ছে। এক উচ্ছ্বসিত কিশোরীর মুখ ভেসে উঠলো ওনার চোখের সামনে। সেই মরীচিকার দিকেই এগিয়ে চললেন উনি।


রায়পাড়া যখন পৌঁছলেন, তখন ওখানে বেশিরভাগ বাড়িতে পূজা আরম্ভ হয়নি। পথে পড়ল এই গ্রামের বিদ্যালয়। সেখানে কচিকাঁচাদের দল ভিড় করে আছে। স্কুলের বিশাল মাঠে পূজোর আয়োজন চলছে ওদের। শিক্ষার্থীরা বাসন্তী রঙের আর শিক্ষয়িত্রীরা লাল-পাড় সাদা শাড়ী পরণে, বড্ডো ব্যস্ত পূজোর প্রস্তুতিতে। 

মাস্টারমশাই এগিয়ে চললেন নিজের গন্তব্যে। এখানে দাঁড়িয়ে পড়া ওনাকে মানায় না। উনি যে বড়ই

অনাহূত, বড়ই বেমানান এখানে। ওনার কুণ্ঠালঙ্ঘন করতে পারে একমাত্র সেই আট-বছরের চিন্ময়ী।


শেষে পৌছলেন বৃদ্ধার কুটির-ঘরের সামনে।


উঠোনে কোমল হাতে অল্পনা দিচ্ছিলো ছোট্ট এক কিশোরী। উঠোন সুদৃশ্য ভাবে পরিবেষ্টিত ভিন্নপ্রকার রঙ্গীন ফুলের গাছ, বাহারিপাতার গাছ, এমনকি লাউয়ের মাচাতেও। চারিদিকের বাতাস সৌরভিত সদ্য-প্রস্ফুটিত রাশি রাশি বেলফুলের সুগন্ধিতে। 


অনতিদূরের কোনো বাড়ির পূজা থেকে কুমণ্ডলিত হোমের ধোয়া ভেসে আসছে বাতাসে, ধোঁয়ায় পলকের জন্য দৃষ্টি আর্দ্র হয়ে ক্ষীণ হয়ে গেল মাস্টারমশাইের। মানসচক্ষে দেখলেন সামনে দাঁড়িয়ে ওনাকে আহ্বান করছেন মা সরস্বতী। জ্ঞানের পূজারী মাস্টারমশাই, সেই ডাকে সাড়া না দিয়ে পারলেন না। প্রবেশ করলেন ঘরে, যেখানে সমস্ত পূজার আয়োজন করা হয়েছে। 


ঘরে ঢুকেই ঘোর ভাঙলো উনার, বৃদ্ধার কথায়।

‘বানী! ঠাকুরমশাইকে নিয়ে এসেছি রে, যা দৌড়ে গিয়ে সতরঞ্চিটা নিয়ে আয়, জল নিয়ে আয়। অনেক দূর থেকে বিনাদ্বিধায় এসেছেন আজ আমার এক ডাকেই’ 

‘এক্ষনি নিয়ে আসছি ঠাম্মা’ এক-ছুটে বেরিয়ে গেল কিশোরী।


যাকে এতক্ষন স্বয়ং জ্ঞানদা-দেবী ভেবে ভ্রম হয়েছিল, সে আর কেউ নয়, আট বছরের কিশোরী বানী। কিভাবে যেন মাস্টারমশাইকে এই মুখটাই এতটা পথ অতিক্রান্ত করিয়ে নিয়ে এসে, ভেসে উঠেছিল ওনার সামনে, এই একই মুখ। তাকিয়ে দেখলেন, ঘরের এক কোনায় সুসজ্জিত অলংকৃত মা সরস্বতী ধীরস্থির হয়ে অপেক্ষারত, ওনার পূজা নেওয়ার জন্য।


কিন্তু এত বছরের সংযম এক-মুহূর্তে ধুলিস্যাৎ করে দিলে, এই নিষ্পাপ ঠাম্মা-নাতনীর জীবনে না কালমেঘ নেমে আসে সমাজের। উনি নিজে নাই বা বিবেচনার মধ্যে আনতে পারেন সমাজের রোষ, কিন্তু সেটা নিজের কারনে অন্য কারুর ওপর গিয়ে পড়লে, মাস্টারমশাইের আক্ষেপের শেষ থাকবে না। এই পূজা শুরুর আগেই ওনাদের সম্মতি নেওয়া অতন্ত্য প্রয়োজন।


 ‘মাসিমা, একটা জরুরী কথা আপনাকে জানানো উচিত… না হলে আমি কিছুতেই এই পূজো শুরু করতে পারব না’ উনার গম্ভীর দৃঢ়কণ্ঠ কোথায় যেন একটু কেঁপে উঠলো।


‘তোমার সব কথা শুনবো বাবা, তবে মায়ের পূজো আর ফেলে রেখোনা, অনেক বেলাবেলি হয়ে গেল। বানী এসে পড়লেই শুরু করে দাও’ অনুরোধ বৃদ্ধার।

‘আর হ্যাঁ, আমার আরেকটা আর্জি আছে তোমার কাছে। আমার নাতনী আট বছরের হলে কি হবে, ওর যে এখনো হাতেখড়ি হয়নি। অনাথ শিশুটিকে আগলে রাখতে রাখতে, বড়োই দুশ্চিন্তায় আছি আমি। এবছর ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ওর বায়নাতেই বিদ্যাদেবীর পূজার আয়োজন করেছি। পূজাশেষে ওর হাতেখড়িটাও তুমিই করে দিও বাবা, না বলো না এই বৃদ্ধাকে।’


মাস্টারমশাই ভেবে পেলেন না ওনার কি করা উচিত। সর্বধর্মের ওপর মানবধর্মই সত্য, এটাই উনি মেনে এসেছেন সর্বদা। নিজের মনেই প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করছেন যথাযোগ্য যুক্তি দিয়ে, যে উনি মঙ্গল ব্যতীত অমঙ্গল তো করছেন না কারুর, এমন সময় উঠোনের ওপাশ থেকে শোরগোল শোনা গেল।

‘রহমন্ভাই আছেন না কি?’ কয়েকজনের মিলিত কণ্ঠস্বর।


বৃদ্ধা বেরিয়ে এসে দেখলেন, গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান আরো পাঁচজন লোক সমেত এসেছেন ওনার কুটিরে। অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন

‘তোমরা এখানে? কোনদিন তো আমার এদিকটাই আসোনি, আজ কি ব্যাপারে?’


একজন লোক বললেন ‘আমরা রহমন্ভাই খুঁজতে এসেছি। খবর পেয়েছি, উনি নাকি এই গ্রামে পূজো করতে এসেছেন? এরকম ম্লেচ্ছাচার আমরা হতে দেব না!’

আরেকজন গলা মিলিয়ে বললেন ‘যুগ যুগ ধরে ব্রাহ্মণ পন্ডিতেরা পূজো করে আসছেন আমাদের দেব-দেবীদের। এর বিকৃতি আমরা কিছুতেই ঘটতে দেবো না’

বেরিয়ে এলেন মাস্টারমশাই উঠোনে।


‘মাসিমা, আমাকেই খুঁজতে এসেছেন ওনারা। আমি আপনাকে শুরু থেকেই বলতে চেয়েছিলাম, আমার পূজো দেওয়া নিষিদ্ধ। মনেপ্রাণে আমি চাইলেও, আমার আরাধ্য দেবীকে আমি দু-হাথে পূজো দিতে পারিনা। আমার নিজের স্কুলেও নয়। এই পূজোর দিনগুলোয় আমার স্কুলে যাওয়া নিষিদ্ধ। অথচ, আমি কিন্তু মানব-ধর্মে বিশ্বাসী। সকল দেবতাই আমার কাছে সমান।‘

‘তোমার পরিচয় আমি জানি বাবা, তুমি যে কত বড়ো বিদ্বান্, আর যথার্থ মানুষ, সেইটা আমার অজানা নয়। তুমি ওই গ্রামের উচ্চবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ, সংস্কৃতের মাস্টারমশাই আর সকালের ভালোবাসার রহমন্, এটা আমি বহুদিন আগে থেকেই জানি’ এতোটা বলে একটু থামলেন বৃদ্ধা।


‘আপনি জেনেশুনে ওনাকে এখানে ডেকে এনেছেন? আপনি জানেন এর পরিণাম কি হতে পারে? আপনাকে এক-ঘরে হতে হবে আপনার নাতনীকে নিয়ে। কে দেখবে তখন আপনাদের?’ এবার ঝাঝিয়ে উঠলেন পঞ্চায়েত প্রধান।


‘দরকারে তো কোনোদিন আসোনি তোমরা’ বললেন বৃদ্ধা, ‘আজ অদরকারে যখন এসেই পড়লে, তখন তোমাদের বলে রাখি ভাই, আমরা একাকী হলেও পরমুখাপেক্ষ নই, কারুর খাইনা, পরিনা। যে সমাজের ভয় দেখাচ্ছ আজ, তার চেয়ে ঢের রক্ষণশীল সমাজে বড় হয়েছি আমি। আজ আমার ঘরে, কে আমার দেবীর আরাধনা করবে, সেইটা আমিই ঠিক করব’ বৃদ্ধার কণ্ঠে ঝরে পড়ছে নির্ভীকতা।


‘শুধুশুধু কেন নিজেকে ঝামেলায় জড়াচ্ছেন মাসিমা’ বললেন অন্য একজন। 


‘এরপর কি আর গ্রামে থাকতে পারবেন ভেবেছেন? রহমন্ভাই নিজের স্কুলে পর্যন্ত পূজোর দিনে পা মাড়ান না, সেখানে আপনি ওনাকে নিজের ঘরে তুলে এনেছেন!’


‘হ্যাঁ এনেছি বৈকি, কারণ ওনার থেকে শ্রেষ্ঠ পূজারী আমি আমার আজ অবধি জীবদ্দশায় দেখিনি। এমন নিষ্ঠাবান পূজারীকে ধর্মনিরপেক্ষ ভাবেই বাছাই করা উচিত। আজ যদি আমার ঘরে কেউ পূজা করেন, তাহলে উনিই করবেন। তোমরা এবার আসতে পার’ এই অযথা তর্কাতর্কির নিষ্পত্তি ঘটানোর চেষ্টা করলেন বৃদ্ধা।

দলবল সমেত প্রস্থান করতে উদ্যত হলো লোকগুলো। যতই হট্টোগোল করুক, এরা মনে মনে সকলেই শ্রদ্ধা করে এই বৃদ্ধা মানুষটাকে। তাই কোনোদিন হাজার ঝামেলা হলেও, জড়ায় না ওনাকে। আজও বুঝে গেল, ওনাকে তথাকথিত সমাজের বেড়াজালে আটকানোর অভিপ্রায় বৃথা।


‘দাঁড়াও দাঁড়াও তোমরা, আমার পূজার প্রাসাদ নিয়ে যাবে’ দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসছে বানী।


অভিভূত হয়ে শুনছিলেন বাকরুদ্ধ মাস্টারমশাই, তেজস্বীনি এই বৃদ্ধার কথা। আজ যে কে কার পূজোর চরিতার্থতা বহন করে আনলো, তা ওনার সঠিক বোধগম্য হল না। স্বয়ং বিদ্যা-দেবী আজ ডেকে এনেছেন ওনাকে, ওনার বহু আকাঙ্খিত স্বপ্নপূরণে। পূজার আসরে ফিরে, গভীর নিষ্ঠায় পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে সমাপন করলেন পূজা। ওনার মন্ত্রপাঠে, ওনার অর্চনার মাধুর্যে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গেল সকলে।


হ্যাঁ উপস্থিত সকলেই। ওনার শ্লোকবাণী অভিহিত করে এনেছিল অনতিদূরের স্কুলের মাঠের ছোটো ছোটো কতগুলো বাচ্চাকে। পূজাশেষে, উনি দেখলেন উঠোন ভোরে, করজোড়ে দেবী-প্রনামে নিমগ্ন তারা সকলে। হোম-শেষে সকলে একে-একে এসে ওনার থেকে হোমের তিলক নিয়ে গেল। 


বানীর হাতেখড়ি হয়ে গেলে, সর্বশেষে এগিয়ে এলেন স্কুলের উপাধ্যক্ষ দিদিমনি, যিনি একটু দূরে দাঁড়িয়ে সমস্ত কিছু লক্ষ্য করছিলেন। 


‘আমাদের স্কুল এর পূজো আপনি করে দেবেন মাস্টারমশাই? এই দেখুন, এতগুলো ছোটো ছোটো সরস্বতী আপনার আহ্বানে ছুটে এসেছে এখানে দেবী-আরাধনায়’

‘কিন্তু আপনাদের পূজা এখনো হয়নি?’ জিজ্ঞাসা করলেন মাস্টারমশাই


‘অসম্পূর্ণ হয়েছে, আপনি দিলে, তবেই সম্পূর্ণ হবে আজ পূজো। আমাদের স্কুলে যে এমন নিষ্ঠাবান পূজারীর বড় প্রয়োজন’

‘এর থেকে বড় প্রাপ্তি বোধহয় আর কিছু হয়না আমার জীবনে’ অনাবিল হাসলেন মাস্টারমশাই।

‘আমার পূজো দিলে, এবার প্রসাদ গ্রহণ কর’ মিষ্টি হাসছে বানী, হাতে একথালি প্রসাদ নিয়ে।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics