ত্রিবেণী
ত্রিবেণী
বাংলার হুগলীর ত্রিবেণী কেন মুক্তবেনী ? এর গুরুত্ব কি?
কুম্ভ সংক্রান্তির কি?
সূর্য প্রতি মাসে তার রাশি পরিবর্তন করে ।সূর্য যে রাশিতে গমন করে তাকে সেই রাশির সংক্রান্তি বলা হয়। ফলে সারা বছরে বারো মাসে ১২টি সংক্রান্তি হয়ে থাকে। তবে মকর ও কর্কট সংক্রান্তি ৬ মাসের ব্যবধানে ঘটে থাকে। সূর্য তখন মকর রাশি ছেড়ে কুম্ভ রাশিতে প্রবেশ করে তখন একে বলা হয় কুম্ভ সংক্রান্তি।
কুম্ভ সংক্রান্তিতে নদীর সঙ্গমে কুম্ভ মেলার আয়োজন করা হয়, যা একটি বিশ্ব বিখ্যাত মেলা। ভারতীয়দের বিশ্বাস এই দিনে স্নান, দান ও সূর্যদেবের পুজোর গুরুত্ব অপরিসীম । ব্রহ্ম মুহুর্তে ঘুম থেকে ওঠার পরই মানুষ নদীতে স্নান করে।
জাফর খাঁ গাজী আজ থেকে ৭০৪ বছর আগে বাংলার ত্রিবেণীতে বিষ্ণু মন্দিরকে মসজিদে রূপান্তরিত করেছিলো। তখন থেকে কুম্ভস্নান ও মেলা বন্ধ হয়ে গিয়ে ছিলো। ১৩১৯ খ্রিষ্টাব্দের পর আবার কিছু বছর হলো ত্রিবেণীতে কুম্ভস্নান। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ত্রিবেণী ‘মুক্ত বেণী’ আর প্রয়াগ ‘যুক্ত বেণী’।
মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেব ত্রিবেণীর ঘাটে পদার্পণ করেছিলেন কথিত আছে । ত্রিবেণীর কালীতলায় সনাতন ধর্মের দেবী মা কালীর একটি প্রাচীন মন্দির রয়েছে । লোককথা অনুযায়ী বিখ্যাত দুই ভাই রঘুনাথ সর্দার ও বিশ্বনাথ সর্দার (রঘু ওবিশে ডাকাত) যারা নীল বিদ্রোহে(১৮৫৯-১৮৬০) যোগ দিয়েছিলেন, তাঁরা এই এলাকার বাসিন্দা ছিলেন আর কালীমন্দিরে পূজা দিয়ে ডাকাতির করতে যেতেন ।
জেমস রেনেলে ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে বাংলার মানচিত্র প্রকাশ করেছিলেন "টেরবোনি" নামে ত্রিবেণী উল্লেখ রয়েছে। আসলে সপ্তগ্রামের দক্ষিণ-পশ্চিমে সরু নদীখাতে প্রবাহিত হত সরস্বতী নদী যা ছিল । তবে পরে এই নদীপথ ছেড়ে গঙ্গা নদী হুগলি বা ভাগীরথী নামে পরিচিত সবার কাছে। ত্রিবেণী ঘাটটি মহারাজা রুদ্রনারায়ণ রায়মুখুটি নির্মাণ করেছিলেন, এই ঘাটের কাছাকাছি ত্রিবেনীর মন্দিরগুলিতে গৌড়ীয় রীতির প্রভাব দেখা যায়। য়ামুনা, বা যমুনা হিসাবে উল্লিখিত, আগে নদীটি গঙ্গার (হুগলি নদী) শাখা হিসাবে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হতো কিন্তু বর্তমানে নদীটি গঙ্গা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
ব্যাণ্ডেল জংশন থেকে মাত্র ৫ মাইল দূরে ত্রিবেণীকে মুক্তবেণী কেন বলা হয় ? এলাহাবাদ বা প্রয়াগে গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতী একধারায় মিলিত হয়েছে আর এখানে আসে আবার পৃথক ধারায় প্রবাহিত বলেই এই স্থানকে মুক্ত বেণী বলা হয়। ত্রিবেণীতে গঙ্গাস্নান হিন্দু মাত্রেরই কাম্য। এটি অনেক প্রাচীন স্থান। দ্বাদশ শতাবদীতে রচিত ধোয়ী কবির “পবন দূতম ” নামক কাব্যে এর উল্লেখ আমরা দেখতে পাই।