STORYMIRROR

Atrayee Sarkar

Classics Fantasy Inspirational

3  

Atrayee Sarkar

Classics Fantasy Inspirational

তাঁর মাধ্যমেই ফুটে উঠল আলো

তাঁর মাধ্যমেই ফুটে উঠল আলো

8 mins
250

ইতিহাসে দেখি অনেক বড়ো বড়ো প্রাচীন সভ্যতা দেশের নদীর সঙ্গে নাড়ীর যোগে প্রাণবান। নদী দেশকে দেয় জল, দেয় ফল,, কিন্তু সব চেয়ে বড়ো তার দান— দেশকে সে দেয় গতি। দূরের সঙ্গে বাইরের সঙ্গে সম্বন্ধ শাখায়িত করে নদী, স্থাবরের মর্মের মধ্যে নিয়ে আসে প্রাণের চলৎপ্রবাহ।


 নদীমাতৃক দেশে নদী যদি একেবারে শুকিয়ে যায় তা হলে তার মাটিতে ঘটে কৃপণতা, তার অন্ন-উৎপাদনের শক্তি ক্ষীণ হয়। দেশের আপন জীবিকা যদি-বা কোনমতে চলে, কিন্তু যে অন্নপ্রাচুর্যের দ্বারা বাইরের বৃহৎ জগতের সঙ্গে তার যোগ সেটা যায় দরিদ্র হয়ে। সে না পারে দিতে, না পারে নিতে। নিজের মধ্যে সে রুদ্ধ হয়ে থাকে, বিভক্ত হয় তার ঐক্যধারা, তার আত্মীয়মিলনের পথ হয় দুর্গম। বাহিরের সঙ্গে সে হয় পৃথক, অন্তরের মধ্যে সে হয় খণ্ডিত।


 যেমন বিশেষ দেশ নদীমাতৃক, তেমনি বিশেষ জনচিত্ত আছে যাকে নদীমাতৃক বলা চলে। সে চিত্তের এমন নিত্যপ্রবাহিত মননধারা যার যোগে বাহিরকে সে নিজের মধ্যে টেনে আনে, নিজের মধ্যেকার ভেদ বিভেদ তার ভেসে যায়— যে প্রবাহ চিন্তার ক্ষেত্রকে নব নব সফলতায় পরিপূর্ণ করে, নিরন্তর অন্ন জোগায় সকল দেশকে, সকল কালকে।

ভারতের চিত্তে সেদিন মনের অন্ন নতুন করে উৎপাদন করতে পেরেছিল যেদিনে রামমোহন রায় জন্মেছিলেন সত্যের ক্ষুধা নিয়ে।



মানুষটার জন্ম ২২ মে ১৭৭২। সাবেক বর্ধমানের কৃষ্ণনগরে। বাবা রামকান্ত রায়, মা তারিণী দেবী। সাবেক পদবি বন্দ্যোপাধ্যায়। রাধানগর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম। প্রপিতামহ কৃষ্ণকান্ত ফারুকশিয়ারের আমলে বাংলা সুবিধার এর আমিনের কাজও করতেন ।সেই সূত্রে " রায়" পদ্ধতির ব্যবহার বলে অনুমান করা হয়। পিতা রামকান্ত তিন বিবাহ। মধ্যমা পত্নী তারিণী দেবীর এক কন্যা ও দুই পুত্র,, জগ্মোহন ও রামমোহন ছিল। রামমোহনের পিতা রামকান্ত ছিলেন বৈষ্ণবী এবং মাতা তারিণী দেবী ছিলেন শাক্ত। 

শোনা যায় রামমোহন ১৫, ১৬ বছর বয়সে গৃহত্যাগ করে, নানা স্থানে ঘোরেন । কাশিতে ও পাটনায় কিছুকাল ছিলেন এবং নেপালে গিয়েছিলেন।  

ছোটবেলা থেকেই নানা ঘটনায় রামমোহনক নিয়ে পরিবারে খুব দুর্বিপাক। 

রামমোহন রায়ের সঙ্গে তাঁর বাবা-মায়ের সম্পর্ক কোনও কালেই ভালো ছিল না। বরং দিনে-দিনে সম্পর্ক আরও খারাপের দিকেই এগিয়ে গিয়েছিল। এমনকী পিতার মৃত্যুর পর তাঁর মা তারিণী দেবী সম্পত্তির অধিকার থেকে ছেলেকে বঞ্চিত করতে তাঁর বিরুদ্ধে কোর্টে মামলাও করেছিলেন। সমাজে তাঁর শত্রুসংখ্যা প্রচুর ছিল, তবুও একটি বারের জন্য দমেননি তিনি। কারণ তাঁর লড়াইটা ছিল এই সব মানুষের বিরুদ্ধে নয়— তাঁর লড়াই ছিল সমাজের সব রকম অন্যায়, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে। এবং নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও শেষে তাঁরই জয় হয়েছে।


শোনা যায়, শৈশবে রামমোহন মায়ের সঙ্গে একদিন মামারবাড়ি গেছিলেন। দাদু শ্যাম ভট্টাচার্য শিশু রামমোহনের হাতে পুজোর নৈবেদ্য বেলপাতা দিয়েছিলেন। রামমোহন তা মুখে নিয়ে চিবোচ্ছিলেন। তারিণী দেবী তা দেখে প্রচণ্ড রেগে ছেলের মুখের ভেতর থেকে বেলপাতা বের করে মাটিতে ফেলে দিয়ে সজোরে এক থাপ্পড় কষালেন ও নিজের বাবাকে বাচ্চা ছেলের হাতে বেলপাতা দেওয়ার জন্য তীব্র ভর্ৎসনা করে উঠলেন। এতে ক্রুদ্ধ বাবা মেয়েকে অভিশাপ দিলেন— ‘তুই পুজোর বেলপাতা এ ভাবে ফেলে দিলি! এ ছেলেকে নিয়ে তুই কখনও সুখী হবি না। তোর ছেলে বিধর্মী হবে।’


দাদু শ্যাম ভট্টাচার্যে অভিশাপ যেন অক্ষরে অক্ষরে ফলে গিয়েছিল। রামমোহনের পিতা রামকান্ত রায় ছিলেন ধর্মপ্রাণ মানুষ। কিশোর বয়সেই রামমোহনের মাছ খাওয়াকে কেন্দ্র করে প্রবল ঝগড়া বাধে বাবা-মায়ের সঙ্গে। তার উপর তাঁর আরবি শিক্ষা, কোরান পড়া, সুফিবাদী বইপত্র অধ্যয়ন ইত্যাদি কর্মকাণ্ড একেবারেই মেনে নিতে পারেননি রামকান্ত। কিন্তু সমস্যা আর তীব্র হয় যখন ষোল বছর বয়সে রামমোহন তৎকালীন হিন্দু ধর্মের পৌত্তলিক প্রথার সমালোচনা করে একটি বই লিখে ফেলেন। নাম দেন ‘হিন্দুদের পৌত্তলিক ধর্মপ্রণালী’। রামমোহন কোন মূর্তিকে মানতেন না। হিন্দুদের কুসংস্কার মনে হতো ওনার। রামমোহনের উপর রেগে গিয়ে তাঁর সঙ্গে আর সম্পর্কই রাখতে চাইলেন না রামকান্ত। সারা পরিবারের কাছে রামমোহন তখন চোষের বিষ। বিরক্ত

রামমোহন বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যান। বেশ কিছু দিন তিব্বতে থাকার পর বাবাই তাঁকে আবার ফিরিয়ে নিতে যান।

পৌত্তলিকার বিরোধিতা করার জন্য তারিণী দেবীও ছেলেকে কোনও দিনই মেনে নিতে পারেননি। তার উপর রামমোহনের দাদার ছেলে গোবিন্দপ্রসাদ কাকার বিরুদ্ধে তারিণী দেবীর কানে ক্রমাগত ইন্ধন যুগিয়ে দিতেন। বাবা-ছেলের সম্পর্ক এমনিতেই নড়বড়ে, স্বামীকে বুঝিয়ে ছেলেকে আরও দূরে করে দিতেন তারিণী দেবী। পরিবারের সকলের সাথে মানিয়ে চলা অসম্ভব বিবেচনা করে রামমোহন আবার বাসভবন ত্যাগ করে রাধানগর থেকে কিছু দূরে লাঙলপাড়া নামক এক জায়গায় বসবার আরম্ভ করলেন।

একবার খাজনা বাকির দায়ে রামমোহনের বাবা রামকান্ত হুগলির জেলে আটক হলেন। আর 

দাদা জগন্মহনও একই কান্ডে মেদিনীপুরের জেলে বন্দি হন। 

রামমোহন তখন ঢাকায়। আচমকা শুনলেন বাবার মৃত্যুর খবর। ম্লেচ্ছ ছেলের টাকা নেবেন না ঠিক করে নিজের গয়না বন্ধক রেখে তারিণী দেবী স্বামীর শ্রাদ্ধ করেন। তাই শ্রাদ্ধানুষ্ঠান হয় তিনটে। জগন্মোহন জেলের মধ্যেই করেন, রামমোহন আলাদা ভাবে করেন। তারিণী দেবীও অন্যভাবে করেন।


এ বার আসে সম্পত্তির অধিকারের পালা। ছেলে রামমোহনকে বাপের সম্পত্তির এক কণাও দেওয়ার ইচ্ছে ছিল না মায়ের। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও তারিণী দেবীর সঙ্গে সহমত ছিলেন।


কিন্তু রামমোহনও ছেড়ে দেবার পাত্র ছিলেন না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি বার বার লড়াই চালিয়েছেন। আর এ বার তো অন্যায় তাঁর সঙ্গেই হচ্ছে। মায়ের সঙ্গে বাধল বিবাদ। 

তারিণী দেবী তাঁর নাতি গোবিন্দপ্রসাদকে সঙ্গে নিয়ে কোর্টে রামমোহনের বিরুদ্ধে মামলা করে বসেন। রামমোহন প্রথমে মায়ের বিরুদ্ধে মামলা লড়তে চাননি। পরে অবশ্য ঠিক করলেন মামলা লড়বেন। কারণ এ লড়াইটাও তাঁর মায়ের বিরুদ্ধে নয়, লড়াইটা অন্যায়ের বিরুদ্ধে। এখন তিনি মায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে মামলাটা যদি না লড়েন, তা হলে তাঁর আন্দোলন সম্পর্কে মানুষের ভ্রান্ত ধারণার সৃষ্টি হবে।


শুরু হল মামলা। ছেলের উপর বিতৃষ্ণা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে কোর্টে বিচারের সময় তারিণী দেবী বলে উঠলেন— ‘ধর্মত্যাগী পুত্রের মস্তক যদি এখানে ছিন্ন করা হয় তা হলে তা আমি অত্যন্ত পুণ্য কাজ বলে মনে করব।’ যা-ই হোক, শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও মামলায় রামমোহনেরই জয় হল। পেলেন পৈতৃক সম্পত্তিও। কিন্তু তিনি তাঁর প্রাপ্ত সম্পত্তি নিজের কাছে রাখলেন না। সমস্ত কিছু সসম্মানে ফিরিয়ে দিলেন মা’কে। হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দিলেন, তিনি আসলে সম্পত্তির লোভে মামলা লড়ছিলেন না। লড়ছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে।


রাজা রামমোহন রায়,, বিখ্যাত এই বাঙালির অবদান তৎকালীন ব্রিটিশ শাসিত ভারতে সারা ভারতবর্ষে সমান ভাবে সীকৃত, সতীদাহ প্রথা বিলুপ্তি তারই পরামর্শে ও লড়াইতে হয়েছিল।


অত্যান্ত সম্ভ্রান্ত বাঙালি পরিবারে জন্ম গ্রহণকরা এই সমাজ সংস্কারের এই মহাপুরুষ তাই প্রসারিত দূর দৃষ্টির মাধ্যমে বাঙালি সমাজ ও ভারত থেকে আরও অনেক কুপ্রথার বিলুপ্তি করেছেন।


মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় আকবর রামমোহনকে রাজা উপাধি প্রদান করেছিলেন, ভারতের সামাজিক ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন ও ব্রাহ্মসমাজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি।


রাজনীতি, জনপ্রশাসন, শিক্ষা ও ধর্মের ক্ষেত্রে তাঁর প্রভাব স্পষ্টতই ছিল, রামমোহন রায়কে “আধুনিক ভারতের জনক” এবং “ভারতীয় নবজাগরণের জনক” বলা হয়।

তৎকালীন ভারতে হিন্দু ধর্মীয় বিভিন্ন প্রথার মধ্যে প্রধান এবং ভয়ংকর একটি প্রথা ছিল সতীদাহ প্রথা, এই প্রথাটি খুবই অমানবিক এবং নির্মম একটি রীতি।


এই প্রথা কিংবা রীতির বৈশিষ্ট ছিল কোন ব্যাক্তি যদি তার অর্ধাঙ্গিনী স্ত্রীরির পূর্বেই মৃত্যুবরণ করেন তবে তার পত্নীকে ও সেই মৃত ব্যাক্তির জলন্ত চিতায় স্বেচ্ছায় মৃত্যু দেওয়া হত।


স্বামীর মৃত্যুর সময় আবেগপ্রবণ হয়ে অনেকে এই ভাবে মৃত্যু মেনে নিতেন, আবার অনেক পত্নী এই ভাবে তার মৃত্যু মানতে চাইতেননা। তাদেরকে বেঁধে জোরকরে চিতায় নিক্ষেপ করা হত। যাতে স্ত্রী পালিয়ে না যেতে পারে সেই জন্য তার বুকের দুদিকে বাঁশ চেপে রাখা হত। মেয়েটার আর্তনাদ যাতে না শুনতে পাওয়া যায়, তাই ঢাক ঢোল বাজাত, মাথায় সিঁদুর পরিয়ে চিতায় জ্যান্ত শুইয়ে দিত। 

একবার রামমোহনের বাড়িতেই এই ঘটনা ঘটে যখন ওনার দাদা জগন্মহন মারা যেতে ওনার দ্বিতীয় স্ত্রী অলকমণি দেবী সহমরণে যান।


রাজা রামমোহন রায় এই জঘন্য প্রথার বিরুদ্ধে সঙ্গবদ্ধ ঐক্য গড়ে তোলেন। উনি ঠিকই করেন নারীদের প্রতি এই অনাচার উনি বন্ধ করেই ছাড়বেন। সতীদাহ মানে ওনার কাছে ছিল " স্ত্রী হত্যা"। 

বেদান্ত-উপনিষদগুলি বের করবার সময়ই তিনি সতীদাহ "অশাস্ত্রীয় এবং নীতিবিগর্হিত" প্রমাণ করে পুস্তিকা লিখলেন 'প্রবর্তক ও নিবর্তকের সম্বাদ'। প্রতিবাদে পুস্তিকা বের হল 'বিধায়ক নিষেধকের সম্বাদ'। তার প্রতিবাদে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুস্তিকা বের হয়। সেই বছরেই ডিসেম্বর মাসে আইন করে সহমরণ-রীতি নিষিদ্ধ করা হয়। তবুও গোঁড়ারা চেষ্টা করতে লাগল যাতে পার্লামেন্টে বিষয়টি পুনর্বিবেচিত হয়। এই চেষ্টায় বাধা দেওয়ার জন্য রামমোহন বিলেত যেতে প্রস্তুত হলেন। এব্যাপারে তাকে আর্থিক সহায়তা দান করেন দ্বারকানাথ ঠাকুর। এবং তৎকালীন ব্রিটিশ শাসকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তার প্রাচ্যের ফলে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে আইন পাস্ করে। উইলিয়াম বেন্টিন্ক ১৭২৯ সালে এই কুরীতি উঠিয়ে দেন।


রামমোহন রায়ের সৌজন্যে লক্ষ লক্ষ নারীর জীবন বেঁচে যায়, পরবর্তীতে গোড়া ব্রাহ্মণদের চাপে এই আইনটি পরিবর্তনের চেষ্টা করা হলেও রামমোহনের ব্রিটিশ জনপ্রিয়তায় সেটি সম্ভব হয়নি। কিন্তু এর ফলে উনি ধর্মসভার ক্রোধে একঘরে হয়ে গেছিলেন। 


১৮১৫ থেকে ১৮১৯খ্রিস্টাব্দের মধ্যে প্রকাশিত হয় বেদান্ত গ্রন্থ, বেদান্তসার, কেনোউপনিষদ,ঈশোপনিষদ, কঠোপনিষদ ,মান্ডুক্যউপনিদ, মুণ্ডকোপনিষদ। রক্ষণশীল ব্যক্তিরা ক্রদ্ধ হয়ে তার লেখার প্রতিবাদ দেখাতে লাগলেন । এইসব কটূক্তিপূর্ণ এবং বিদ্বেষ ভাবাপন্ন রামমোহন প্রতিবাদ করলেন যুক্তি দিয়েও ভদ্র ভাষায়। প্রতিবাদকারীর মধ্যে প্রধান ব্যক্তিত্ব ছিলেন মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার এর গ্রন্থের নাম বেদান্তচন্দ্রিকা। বেদান্তচন্দ্রিকার প্রতিবাদে রামমোহন ভট্টাচার্যের সহিত বিচার লিখে প্রতিবাদীদের মুখ বন্ধ করে দিয়েছিলেন । বেদান্ত গ্রন্থ প্রকাশের সঙ্গে তিনি ব্রহ্মনিষ্ঠ একেশ্বর উপাসনার পথ দেখালেন আত্মীয়সভা প্রতিষ্ঠা করে । এই আত্মীয়সভা কে পরে তিনি ব্রাহ্মসমাজ নাম ওরূপ দেন। 

রাজা রামমোহনের প্রচেষ্টায় বিভিন্ন ভাষাভাষী ও ব্যাকরণ জানতে সমর্থ হোন। সব ধর্মের বই লিখতে শুরু করেন, তিনি ছিলেন বাংলা গদ্যের জনক। বাংলা গদ্য তখন সবে শুরু হয়েছে ।মূলত আমাদের শাস্ত্র গুলো তিনি অনুবাদ করেছিলেন। তিনি দেখাতে চেয়ে ছিলেন দেশাচার বলে যেগুলো চালানো হয় সেগুলো আমাদের শাস্ত্রে কোথাও লেখা নেই বলেছেন।

রামমোহন গবেষক ও ঐতিহাসিকরা বলেন পাটনায় আরবি ও ফারসি ভাষা শিক্ষা কালে তিনি একেশ্বরবাদের দিকে ঝুঁকে ছিলেন এবং হিন্দু ধর্মের পৌত্তলিকতা নিয়ে তার মনে প্রশ্ন জাগে। তিনি সুফি দর্শনের ব্যাপারেও আগ্রহী হয়ে ওঠেন।

মূলত রাজা রামমোহন হিন্দুধর্ম ,খ্রিষ্টাধর্ম এবং ইসলাম এই তিন ধর্মের মূল সত্য অনুধাবন করতে চেয়ে ছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন ধর্মীয় গোঁড়ামি থেকে বেরিয়ে মানুষকে সঠিক পথে পরিচালনা করতে। এর ফলে একদিকে যেমন তিনি একেশ্বরবাদের দিকে ঝুঁকে ছিলেন অন্যদিকে তেমনি এটাও উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে হিন্দুধর্ম যদি তার নিজস্ব গোঁড়ামিকে বর্জন করতে না পারে এবং কূপমন্ডুক মানসিকতাকে অতিক্রম করে যদি বিশাল জগতের সঙ্গে নিজেদের মিলিয়ে নিতে না পারে তাহলে হিন্দু ধর্ম ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়বে।

হিন্দু ধর্মের আচার ও পৌত্তলিকতা নিয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গির কারণে বাবা-মার সঙ্গে তার তীব্র বিরোধী এবং পিতা তাকে ত্যাজ্যপুত্র করে দেন।

রামমোহন রায় কলকাতায় পাকাপাকি ভাবে চলে আসেন ১৮১৫ সালে। শুরু হয় সামাজিক কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই। হিন্দুধর্মকে সংস্কার করতে তিনি আজীবন লড়াই করেছেন। দ্বারকানাথ ঠাকুরের মত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সহযোগিতায় রামমোহন রায় ১৮২৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ব্রাহ্মসমাজ যা এক সামাজিক ও ধর্মীয় আন্দোলন এবং পুনঃজাগরণের পথ প্রদর্শক হিসেবে কাজ করেছিল।

এই অনুষ্ঠান প্রচারের সময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের রিডার সুপর্ণা গুপ্ত বলেছিলেন রামমোহন রায় যে শুধু ভারতে সনাতন ধর্মীয় কিছু প্রথার বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন তাই নয় ,প্রথম আধুনিক ভারতীয় হিসেবে তাকে চিহ্নিত করেছেন ঐতিহাসিকরা এর কারণ একটাই যুক্তিবাদ ,আর দুই হচ্ছে তার সর্বজনীনতা ওই দুটি সঙ্গে মিলিত হয়েছিল তার সহনশীলতা এবং সমন্বয়ের ক্ষমতা এই চারটি মিলিয়ে তিনি এমন একজন ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন যাতে করে সব সময় তাকে আমরা আধুনিক মানুষ হিসেবে গণ্য করতে পারি । তাঁর যুক্তিবাদী আদর্শ তাকে শিখিয়েছিল প্রথারীতির চলে আসা যেকোনো সামাজিক নিয়মকে যুক্তির নিরিখে যাচাই করে কখনো সেটাকে গ্রহণ করা উচিত নয়।

রামমোহন রায় ১৮৩১ সালে মুঘল সাম্রাজ্যের দূত হিসেবে যুক্তরাজ্য ভ্রমণ করেন। দ্বিতীয় আকবরই ওনাকে রাজা উপাধি দিয়েছিল। তিনি ফ্রান্সও পরিদর্শন করেছিলেন। ১৮৩৩ সালে মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত হয়ে ব্রিস্টলের কাছে স্টেপল্‌টনে মৃত্যুবরণ করেন। ব্রিস্টলে আর্নস ভ্যাল সমাধিস্থলে তাকে কবর দেওয়া হয়। ১৯৯৭ সালে মধ্য ব্রিস্টলে তার একটি মূর্তি স্থাপন করা হয়।





Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics