সুধাময়ীর সংসার
সুধাময়ীর সংসার
#বড়ো_গল্প
#সুধাময়ীর_সংসার
#সংঘমিত্রা_রায়চৌধুরী
-----------------------------------
আজ বিকেলে হঠাৎ করেই মারা গেলো সুধাময়ী। বেশ ক'দিন ধরেই শরীরটা ওর একটু খারাপই যাচ্ছিলো। তবুও নিজেই নিজের সব কাজ ঠিক করেই নিচ্ছিলো সে। আর কিইবা করবার আছে? আজকাল তো এমনিধারাই জীবন। সন্তানদের বড়ো করে, মানুষ করে, নিজের পায়ে দাঁড় করিয়ে, তাদের বিয়ে-থা দিয়ে, সংসার ধর্মে থিতু করাতে গিয়ে মায়েরা আর খেয়ালই রাখতে পারে না, কখন যে একটা দু'টো করে বছর গড়িয়ে গড়িয়ে বয়স বেড়ে যায়। আর ছেলেপুলেরা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত হতে হতে কখন যেন ভুলেই যায় মা বৃদ্ধা হয়েছে, বয়স বেড়েছে, আর সন্তান হিসেবে তাদের দায়িত্বও কয়েকগুন বেড়েছে।
"মা চিরকাল কর্মক্ষম, মায়ের আবার কিসের অসুবিধা, এইসব কাজকর্ম তো মায়ের কর্তব্য.... স্বেচ্ছায় সব করে, মায়ের কেন মন খারাপ হবে?" এরা, মানে এই ছেলেমেয়েরা এভাবেই মনে করে। জীবনের শুরুতে সুধাময়ী যখন শুভেন্দুর সাথে সংসার করতে এলো, সেই প্রথম সুধাময়ীর কোনো পুরুষের সাথে পরিচয়। দু'জনের ভাব হয়েছিলো, ক্রমশঃই সেই ভাব ভালবাসায় পরিণত হয়েছিলো। কিন্তু মাত্র সাত বছরের মাথায় ছাড়াছাড়ি। তিন ছেলেমেয়ের জন্মের পরে একদিন অফিসে গিয়ে আর ফিরে এলো না শুভেন্দু। একদিন গেলো, দু'দিন গেলো, তিনদিন গেলো। ফিরলো না শুভেন্দু। খুব ভয় পেয়ে গেলো সুধাময়ী। এতো খোঁজাখুঁজি, থানা পুলিশ, সব কী বৃথাই গেলো? বেসরকারি সওদাগরি অফিস, সেখান থেকে কোনো সুযোগ সুবিধাই পাওয়া গেলো না। শুরু হোলো সুধাময়ীর নতুনরকম সংসার-সংগ্রাম।
সুধাময়ী ভাবে, তার শাঁখা সিঁদুরের জোর, তার ভালোবাসার টান, তিন ছেলেমেয়ের বন্ধন, নিজের বুড়ো বাপ-মায়ের ওপর দায়িত্ব কর্তব্যের দায়, এসব কী এতোটাই ঠুনকো ছিলো শুভেন্দুর কাছে? ভেবে ভেবে কূলকিনারা পায় না সুধাময়ী।
ব্যক্তিগত জীবনে একাই ছিলো তারপর সুধাময়ী, ছেলেমেয়েদের আঁকড়ে। অশক্ত অসমর্থ, পুত্রশোকে কাতর, বার্ধক্যের ভারে ন্যুব্জ শ্বশুর-শাশুড়িকে আর এই মস্ত বড়ো বাগান ঘেরা বাড়ীটাকে আগলে।
নীরবে নিশ্চুপে নিজের সাধ্যকে অতিক্রম করে, শুভেন্দুর হেলায় ফেলে যাওয়া সংসারকে নিজের মতো করে সুষ্ঠুভাবে টেনে নিয়ে এগিয়েছে, থামেনি কোথাও, থামতে পারেইনি। একেএকে সব দায়িত্ব কর্তব্য পালন করেছে সুচারুভাবে, সেলাই করে, ঠোঙা বানিয়ে, বাগানে ফলানো কলাটা মূলোটা বেচে আর একটি একটি করে নিজের গয়না বিক্রি করে, শ্বশুরের জীবদ্দশায় তাঁর সামান্য পেনশনকে সম্বল করে।
বয়স তো আর চলার পথে থেমে থাকেনি। একা একাই একদিন সুধাময়ী সত্তরের কোঠায় প্রবেশ করেছে, একদম একা, সেই বিশাল বাড়ীটায়। পালে পার্বণে, ছুটি ছাটায় ছেলেমেয়েরা তাদের নিজেদের মহামূল্যবান সময় থেকে দু-একঘন্টা বার করে কদাচিৎ সুধাময়ীর এই কোলকাতার উপকন্ঠের বিশাল প্রায় পোড়ো বাড়ীটা থেকে ঘুরে যায়। কখনো বা হাতে দুশো-পাঁচশো টাকা গুঁজেও দিয়ে যায়। কিন্তু ব্যাস্, ঐ পর্যন্তই, আবার সুধাময়ী একা, একদম একা, সেই গিলে খেতে আসা তিক্ত অম্ল মধুর রাশিরাশি স্মৃতিদের ভিড়ে প্রায় অসহায়।
বিকেলটা সুধাময়ী গঙ্গার ঘাটে গিয়ে বসে, অনেকেই এসে বসে, পরিচিত বা অপরিচিত। তবে সুধাময়ী পরিচিত কারুর সাথে গল্পগাছা করতে অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। সুধাময়ী জানে গল্পের ছলে খানিক পরেই উঠে আসবে শুভেন্দুর কথা, ছেলেমেয়েদের কথা, ঐ বিরাট বাড়ীর বিলি-বন্দোবস্তের কথা। সুধাময়ী চায় না এসব আলোচনায় অযথা বুকের নিঃশব্দ রক্তক্ষরণ বাড়াতে। অন্য সবকিছু কথা যেমন তেমন, শুভেন্দুর কথার উত্থাপন সে মোটেই চায় না। সেবার ছোটছেলে চাকরি পেয়ে সুধাময়ীকে নিয়ে হরিদ্বার হৃষিকেশ ঘুরতে গিয়েছিলো। মা আর ছেলেই ছিলো তখন, বড়োছেলে আর মেয়ে সংসার নিয়ে ব্যস্ত খুব তখন। সুধাময়ীও বড়ো আনন্দে তীর্থদর্শণ করতে গিয়েছিলো।
হরিদ্বার থেকে ফেরার ঠিক দু'দিন আগে, গঙ্গারতি দেখে ফেরার পথে সুধাময়ী ছোটছেলেকে নিয়ে থামলো বাজারে। আসলে বাজারের মধ্যে দিয়েই পথ। কত সুন্দর সুন্দর জিনিসে ঠাসা দোকানপাট, ছেলেদের, বড়োবৌমার, মেয়ে-জামাইয়ের, নাতি-নাতনিদের জন্য কিছু কেনবার সাধ হোলো। রকমারি জিনিস নেড়েচেড়ে, শেষে সবার জন্য কিছু না কিছু কিনে দাম হিসেব করবার সময় পেছনে ঘুরে তাকালো একটা খুব চেনা গলার আওয়াজে। সুধাময়ীর চোখদুটো চঞ্চল হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে গলার স্বরের মালিকটিকে তখন। অবশেষে চোখ যখন তার আটকালো ঠিক উল্টোপিঠের দোকানির দিকে, তখন সুধাময়ীর পায়ের তলার মাটিটুকুতেই শুধু খুব জোরালো ভূমিকম্প হোলো, থরথর করে কেঁপে উঠলো সুধাময়ী।
সেই উল্টোপিঠের দোকানিটি শুভেন্দু, বয়স তার বাড়লেও সুঠাম এখনও। প্রত্যাশিত হলেও খুব চমকালো, পাশে প্রায় সুধাময়ীর সমবয়সীই, সিঁথিতে ডগডগে সিঁদুর আঁকা মহিলাও সুধাময়ীর চেনা। তাদের পাড়ার দু'পাড়া পরের ঘোষবাড়ীর অকাল বিধবা নির্মলা। কানাঘুষো শুনেছিলো, তবে সে নাকি তাদের বিয়ের আগেকার। বিয়েকে অস্বীকার করে, সুধাময়ীকে অস্বীকার করে, সন্তানদের অস্বীকার করে যদি এই সম্পর্ক বজায় রাখলো শুভেন্দু, তবে বিয়ে কেনই বা করেছিলো সুধাময়ীকে?
তবে সুধাময়ী তিলতিল করে নিজেকে শক্ত করেছে। আর শুভেন্দু নিরুদ্দেশ যখন এতো বছর, তখন তাই ছোটছেলেকে বলে পরের সকালেই হরিদ্বারের গঙ্গার ঘাটে বসে শুভেন্দুর আদ্যশ্রাদ্ধ করেছে, মা ছেলেতে বসে। তার আগে সুধাময়ী গঙ্গায় ডুব দিয়ে নিজের সিঁথি সাদা করেছে, ক্ষীণতম যে আশা ছিলো শুভেন্দু ফিরে আসার, তাকে চিরতরে বিসর্জন দিয়েছে। তারপর কালের নিয়মে সুধাময়ী আবার ছেলেমেয়েদের নিয়ে, বাড়ীঘর বাগান নিয়ে জীবনের পথে সামনেই এগিয়েছে।
এইরকম এক বিকেলে তাদের এলাকার গঙ্গার ঘাটে বসে থাকতে থাকতেই একদিন ভাগ্যক্রমে আলাপ হলো বিমলের সাথে। সুধাময়ীর মনে হোলো এই বুঝি সে, যাকে সে এতোদিন ধরে খুঁজছিলো। আর তাই তো গাঁটছড়া বাঁধা হোলো, বন্ধুত্বের গাঁটছড়া, সুনির্মল সে বন্ধুত্ব। কখনো ভাই, কখনো ছেলে, কখনো বাবা হয়ে বিমল রইলো সুধাময়ীর জীবনের বিকেলের ঐ মাত্র দুটি ঘন্টা জুড়ে, গঙ্গার ঘাটে। তবে কানাকানি থেমে থাকেনি, ছেলেমেয়েরা ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। লজ্জিত হয়েছে নিজের নিজের সংসারে নিজের মায়ের এই বুড়ি বয়সের ভিমরতিতে। সুধাময়ী সব সহ্য করেছে নীরবেই, কোনো অভিযোগ, কোনো অনুযোগ, কোনো সাফাই দিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন, কিচ্ছু করেনি। তবে নিজে অবিচল থেকেছে বন্ধুত্বে, কারণ এটুকুর তার যে বড়ো প্রয়োজন ছিলো।
তারপর কোথা দিয়ে যে চোদ্দোটা বছর কেটে গেলো, কেউ যেন তা টেরটিও পেলো না। আশির কোঠা পেরিয়ে সুধাময়ী নব্বইয়ের কোঠায় ঢুকবে ঢুকবে। রোগবালাই তার তেমন নেই। তবে বছর তিনেক আগে বিমলের মৃত্যু সুধাময়ীকে একেবারে বিধ্বস্ত করে দিয়েছে মনে মনে। বিমলের দুই ছেলেমেয়ের সৌজন্যে শেষ দেখাটুকুও করতে যেতে ভরসা পায়নি সুধাময়ী।
তারপর থেকে আর একদিনও গঙ্গার ঘাটে যায়নি সুধাময়ী। আজকাল বাড়ী থেকেও তেমন বেরোয় না। মাঝেমধ্যে ঐ পাড়ার মুদি দোকানে যায়, চাল তেল নুন ডাল কিনতে, যাহোক পেটে তো দিতে হবে। নিজের জন্য না হোক, পোষ্য ক'টি আছে যে।
রাস্তা থেকেই তুলে আনা তাদের সকলকে, তাদের নিয়েই সুধাময়ীর সংসার। চলে যায় একরকম করে তাদের নিয়ে, বাগানের নারকেল, সুপারি, কলা, মোচা, পেঁপে, ডাঁটা, এঁচোড়, আম-কাঁঠাল বিক্রিবাটা করে। জমানো সামান্য কিছু পোস্টাফিসে, তার অতি সামান্য সুদ। ছেলেমেয়েরা মাঝে মাঝে আসে বটে খানিকক্ষণের জন্য, প্রোমোটার সঙ্গে করে নিয়ে এসে জোরজুলুম করে, বাড়ী তাদের নামে লিখে দেবার জন্য। হাজার হোক তাদের পৈতৃক সম্পত্তির অধিকার তো তারা ছেড়ে দিতে পারে না, কয়েকটি রাস্তার নেড়ি কুকুর, ক'টা ঘেয়ো খোঁড়া বেড়াল আর ঐ কোথাকার কোন এক পাগলীর জন্য!
হ্যাঁ, গত ক'বছর ধরে এরাই সুধাময়ীর আনন্দ। বিমলের পরামর্শে কুড়িয়ে আনা রাস্তা থেকে, পোষা তাদের সন্তানস্নেহে। লালু, ভুলু, কালু, বাঘা কুকুর। ইনু, মিনু, বিনু, পুনি বেড়াল। আর মামণি পাগলী, পাড়ার মোড়ের মাথা থেকে একদিন সুধাময়ীর সঙ্গ নিয়েছিলো। নামধাম বলতে পারেনি, হাত দিয়ে ইশারায় ক্ষিদে বোঝাতে পেরেছিলো শুধু। পারেনি সুধাময়ী ওকে ফেরাতে, ভরসন্ধ্যায়, ভরা যুবতী মেয়েটাকে। সেদিন থেকে সেও ঠাঁই পেলো মামণি নামে সুধাময়ীর সংসারে। বিমলের পরামর্শে ওকে পাগলের হাসপাতালেও দেখিয়েছিলো কয়েকদিন।
তারপর থেকে আর পেরে ওঠেনি, তবে মামণি সুধাময়ীর কাছেই থেকেছে লক্ষ্মীমেয়ে হয়ে। ডাকেও মামণি বলে, তবে আর কিছু বলে না। সুধাময়ীর হাতে হাতে এটাসেটা করে আর পায়ে পায়ে ঘোরে।
হ্যাঁ, এরাই সবাই সুধাময়ীর সংসারে সন্তান সন্ততি হয়ে আছে, পেটের ছেলেমেয়েদের কাছে তাই সুধাময়ী দিনে দিনে আরো অসহ্য হয়েছে। বাড়ীর ভাগ আদায় ছাড়া তাদের আর কোনো দায় নেই।
আমি সুধাময়ীর বাড়ীর পাশের নতুন ফ্ল্যাটে আসা অব্দি আমিও তাদের দেখতাম রোজই। কখনো তাদের বিরাট বাগানে, কখনো রাস্তায়, কখনো দোকানে আবার বাড়ীর পথে কখনোবা। সুধাময়ীর সাথে মামণি, বা বাঘা, আবার কখনো সবাইকে একসাথে। যখন গঙ্গার ঘাটে যেতো, বন্ধুদের সাথে গল্পগুজব করে ঘুরে ফিরে ওদেরকে নিয়ে ঘরে ফিরতো সুধাময়ী, পরম নির্ভরতায়। যেন এক বিরাট বিশ্বাসের সঙ্গীরা তো আছে তার সাথে, তাকে ঘিরে। পাড়ার সবাই সুধাময়ীকে এড়িয়ে চলতো, কারণ সুধাময়ীও তো তাদের এড়িয়েই চলতো! সুধাময়ীর পোষ্যরা তার কাছে এক নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে আছে। উভয়পক্ষের জন্যই বোধ হয় এই নির্ভরতা।
আমার সাথে সুধাময়ীর আলাপ শুরু হয়েছিলো হাসি বিনিময় দিয়ে, তারপর গড়ালো ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আর সুধাময়ীর বাগানে পায়চারী করার সময়ে দু-চারকথার আদান-প্রদানে। ক্রমে ক্রমে সুধাময়ীর মুখেই শোনা তার জীবনের এই বিরাট ঘটনাবহুল কাহিনী। ইদানিং সুধাময়ী শুনিয়েছিলো তার এক স্বাধীন ইচ্ছের কথা, ছেলেমেয়েরা চায় না তার এই একান্ত ইচ্ছের কোনো মান্যতা দিতে। তাই অশান্তি, তাদের সুধাময়ীর বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ। বড্ড মনমরা ছিলো সুধাময়ী গত কয়েকদিন ধরে।
সুধাময়ী চেয়েছিলো তার এই বাড়ীটাতে একটি অনাথালয় করতে। তার মতো সহায়-সম্বলহীন, স্বামী পরিত্যক্তা, ছেলেমেয়েদের কাছে অবাঞ্ছিত বোঝাস্বরূপ, মানসিক ভারসাম্যহীন আর পথশিশুদের ও পথপশুদের সবার থাকার ব্যবস্থা হবে সেখানে। স্বাধীন ভাবে থাকবে তারা, বাগানে ফসল ফলাবে, হাতের কাজ করবে.....আর শেষজীবনে এসে সুধাময়ী চেয়েছিলো এই একটু প্রকৃত স্বাধীনতার আস্বাদ। নিজের ইচ্ছের স্বাধীনতা। সারাটা জীবনই তো সুধাময়ীর কেটেছে পরাধীনতার শৃঙ্খলে, নিজের ব্যক্তিস্বাধীনতা একপাশে সরিয়ে কেবলমাত্র অন্য একজনের অবহেলিত দায়িত্বপালনের দুর্ভার শৃঙ্খলের পরাধীনতায়। আমার সাথে এতো কিছু আলোচনা সুধাময়ী করেছিলো শুধু আমি যুক্ত এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাথে, এই কথাটুকু জেনে।
মামণির গলা ফাটানো চিৎকার, "মামণি, মামণি", শুনে আমি বুঝেছিলাম, খারাপ কিছুই ঘটেছে হয়তো। ছুটেই এসেছিলাম একরকম। এসে দেখি, আজই সুধাময়ী চলে গেছে না ফেরার দেশে। সুধাময়ীর সংসারের পোষ্যরা নিশ্চয়ই কিছু বুঝতে পারছে। তবুও তারা চোখের দৃষ্টিতে সুধাময়ীর নিস্তব্ধ নিস্পন্দ মুখের দিকে নীরবে চেয়ে যেন খুঁজছে সেই পরম নির্ভরতার সুখ, তাদের একান্ত আপন বন্ধুটির কাছে। তবে কি সঙ্গে থেকেও, এক রক্তের হয়েও মানুষেরা..... সুধাময়ীর সন্তানেরা ততটা নির্ভরযোগ্য বিশ্বাসী হতে পারেনি নিজের মায়ের কাছে? পোষ মানা পশুগুলি, এক মানসিক ভারসাম্যহীন পাগলী তাদের পরম বিশ্বাস নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছিলো, সুধাময়ীকে ঘিরে, তার জীবনের অন্তিমক্ষণটিতেও। তাইতো আজ তারা তাদের বন্ধুবিয়োগ ব্যথায় কাতর! পাড়ার লোক মারফত খবর পেয়ে রাতেই কিন্তু সুধাময়ীর ছেলেমেয়েরাও এসে হাজির হয়েছে, তবে সঙ্গে তাদের সেই প্রোমোটারও আছে। আর সুধাময়ীর ছেলেমেয়েদের ঠোঁটের ফাঁকে লুকোনো হাসিটা আমার কাছে অগোচর রইলো না।
তবে সুধাময়ীর আশ্রয়াধীন তার পোষ্য রাস্তার প্রাণীগুলিকে যাতে আবার রাস্তাতেই ফিরে যেতে না হয়, তার একটা পাকাপাকি বন্দোবস্ত আমি করে দিয়েছি, আমার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহায়তায়।
তবুও মনটা আমার ভারাক্রান্ত।
আমার আক্ষেপটা রয়েই গেলো। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে সুধাময়ীর যে ইচ্ছেরা স্বাধীনতার ডানা মেলে উড়তে চেয়েছিলো, তা সুধাময়ীর সঙ্গে সঙ্গেই পরাধীনতার শৃঙ্খলে বাঁধা পড়ে কোন অতল গহ্বরে হারিয়ে গেলো। এক চিরদুঃখী পরাধীন গৃহবধূর স্বাধীনতার ইচ্ছেরা আর কখনো উড়ান পাবে না।
সুধাময়ীর একটি মোক্ষম প্রশ্ন গুঞ্জরিত আমার কানে, "স্বাধীন দেশে আমি কি স্বাধীন?"
উত্তর দেওয়াহয় নি, আমিও যে খুঁজে চলেছি প্রকৃত উত্তরটা..............!
#আমার_লেখনীতে
---------------------------------
© সংঘমিত্রা রায়চৌধুরী