STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Classics Inspirational

4  

Nityananda Banerjee

Classics Inspirational

সংশপ্তক ( একবিংশ অধ্যায়)

সংশপ্তক ( একবিংশ অধ্যায়)

5 mins
350

একবিংশতিতম অধ্যায়

সপ্তর্ষি ওরফে দীপু এবং ওর বন্ধুপ্রতীম কাকাবাবু নীলেশরঞ্জন এসেছে ডক্টর রাধাকৃষ্ণণের চেম্বারে। ডাক্তারবাবু কম্প্যুটার থেকে দীপুর blood report বের করে দেখে নিলেন আর খুশি হয়ে বললেন - The most remarkable achievement so far. You are on the verge of complete cure. But let us wait for its zerorising.

নীলেশবাবু বললেন - স্যার ভালো না খারাপ। Good or bad ?

ডাক্তারবাবু নীলেশের মুখের দিকে চেয়ে বললেন - ভেরি ভেরি গুড। তারপর বলুন তো ; সেদিন যে পেশেন্টটি এনেছিলেন তিনি কি বেঁচে আছেন ?

নীলেশবাবু বললেন - এখান থেকে যাবার পরের দিনই গত হয়েছেন ।

- I feared so. Because he was in acute phase and his aplastic aenemia was duly turned into acute aplastic Leaukomia . এতে কেউ একদমই বাঁচে না। ভীষণ রক্তক্ষরণ হয় এবং মারা যায়। ওনারও তাই হয়েছিল। সেইজন্য এডমিট করিনি।

আপনাদের রিপোর্ট তো ভীষণ ভালো। এমনই চলুক। এবার এখন আর আসতে হবেনা। একবছর পর আবার RtT-PCR করিয়ে জানুয়ারী ১৬ তারিখে আসবেন।

দীপু বলল - স্যার এতদিন যে যে খাবারগুলো বন্ধ ছিল সে রকমই থাকবে নাকি -

- যা সহজে ডাইজেস্ট হবে সবই খাবেন শুধু Grapefruit আই মিন বেঙ্গলিতে বলে বাতাপী লেবু , কচু, ওল ইত্যাদি খাবেন না।

- স্যার রেড মিট ?

ডাক্তারবাবু হাসলেন। যতটা কম খাবেন ততই ভালো।

আর একটা কথা, এই একবছরে প্রতি তিন মাস অন্তর কিডনী, লিভার, হার্ট, চোখ, ইত্যাদি লোকালি চেক আপ করিয়ে নেবেন। ট্রাইগ্লিসারাইড কোলেস্টোরেল এবং থাইরয়েডও চেক করাবেন ছয় মাসে একবার। সব লিখে দিয়েছি। একটু সাবধানে থাকলে কোন অসুবিধা হবে না। 

নীলেশবাবু নমস্কার জানিয়ে বেরিয়ে এলেন ।

দীপু বলল - স্যার একটা লাস্ট কোশ্চেন প্লীজ।

- Glivec medicine মাঝেমধ্যে পাওয়া যায় না। যদি অল্টারনেটিভ কোন মেডিসিন ---

- ও সিওর । মার্কেটে ওরকম প্রচুর ওষুধ আছে। প্রেসক্রিপশনটা দিন আমি লিখে দিচ্ছি। 

বলে লিখলেন - Veenat 400 mg/imatib 400 mg 

একটা না একটা পাবেনই। আর এক কাজ করবেন । Max Foundation দিল্লীতে ইমেইল করে জেনে নেবেন ওরা মেডিসিন সাপ্লাই দিতে পারবে কি না। যারা ওষুধ কিনে খেতে অপারগ Max Foundaton তাদের ফ্রিতে ওষুধ দেয়। আমার এই প্রেসক্রিপশন এটাচ করে লিখবেন আপনার অক্ষমতা জানিয়ে। যদি ওরা মনে করে ইউ আর এলিজিবল তবে আপনিও ফ্রিতে ওষুধ পেয়ে যাবেন ।

খুশিমনে ওরা হসপিটাল থেকে বাড়ি গেল ।

বাড়ি ফেরার পথে চৌমাথায় যেখানে একটা বিশাল বটগাছ রাস্তাটিকে চারিদিকে ঘিরে রেখেছে তার মাঝখানে অন্ধকারে কাউকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছে দীপু। প্রথমে ভাবল মনের ভুল । তারপর দেখে একটা মেয়ে পা ছড়িয়ে বসে বসে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। দীপু বলে -

কাকাবাবু শুনতে পাচ্ছ ?

- পাচ্ছি তো, কিন্তু কিছুই তো দেখতে পাচ্ছি না।

- আমি কিন্তু দেখছি। 

থমকে দাঁড়াল ওরা । ব্যাগ থেকে টর্চটা বের করে সেখানে আলো ফেলে দেখে বিমলা কাঁদছে।

- কি হয়েছে বিমলাদি ? নীলেশ বলেন।

দীপু বলে - ও মাসি! কাঁদো কেন? কি হয়েছে ?

বিমলা তখন ওদের দিকে তাকিয়ে বলে - কেন তোমরা আমাকে কাজে বহাল রাখলে না দাদাবাবু । তাহলে আজকে এই দিন দেখতে হত না।

নীলেশবাবু বললেন - হয়েছেটা কি বলবে তো ! 

বিমলা তখন আরও উচ্চৈ:স্বরে কেঁদে কেঁদে বলল - ছেলে আমাকে ঘর থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে গোওওও-

এখন আমি কি নিয়ে থাকবোওওও - কোথায় যাবো গো।

দীপু বলল - ঠিকই তো করেছে। যা হবার তাই হয়েছে। তুমি কি জানো কত পাপ তুমি করেছ?

- ও বাবাগো , অমন করে বল না গো। 

নীলেশবাবু বললেন - চল চল ওঠো। বৌঠানকে বলে দেখি কিছু হয় কি না।

বিমলা কাঁদতে কাঁদতে পিছু পিছু চলল। বাড়িতে ঢুকে দীপু রূপসাকে বলল - মা কি শুয়ে পড়েছে?

রূপসা বিমলাকে দেখে অবাক হয়ে বলল - একে কোথায় পেলে ? আর বাড়িতেই বা তুললে কেন ? মা দেখতে পেলে ভীষণ বকবেন !

নীলেশবাবু বলল - বৌঠানকে ডাকো দেখি বৌমা। 

ঐন্দ্রিলাদেবী ততক্ষণে এসে গেছেন।

- বিমলা ? তুই?

- হাঁ গো দিদি ! আমাকে পায়ে একটু ঠাঁই দাও দিদি।

নীলেশবাবু বললেন - বৌঠান যা হয়ে গেছে সে তো পাস্ট ! অতীতকে আঁকড়ে রেখে অমানবিক কিছু না করাই ভালো। বিমলাদি চৌমাথায় গাছের নীচে বসে কান্নাকাটি করছিল । ওর ছেলে ওকে তাড়িয়ে দিয়েছে। 

- তাই তোমার দয়ার শরীর; নিয়ে এলে দাক্ষিণ্য দেখাতে !

নীলেশবাবু মাথা নীচু করে রইলেন। বৌঠান যদি রাজি না হন তাহলে তো কিছু করার নেই।

বৌঠান বললেন - বেশ করেছ। যা বিমলা হাত পা ধুয়ে আয় । রাতটা তো থেকে যা। কাল দেখা যাবে কি করা যায় ।

এমন সময় - রাত তখন সাড়ে এগারোটা হবে - দরজায় মৃদু টোকা পড়ল । 

আবার কে এল ? অম্বরীশ তো হতে পারে না। কারণ সে এখনও জেল থেকে ছাড়া পায়নি। হরিপদ মোড়ল তো মারা গিয়েছে ? তবে চোর ডাকাত নয়তো ?

নীলেশবাবু জোর গলায় হাঁক দিলেন - কে ?

দরজার ওপার থেকে উত্তর এল - কাকু আমি ।

- আমি কে ? নামটা বল !

- আমি শঙ্কর ।

বিমলার কান খাড়া হয়ে গেল। তারই ছেলে তো !

নীলেশবাবু বিমলাকে আড়ালে চলে যেতে বললেন। ও চলে গেলে দরজা খুলে জিজ্ঞেস করলেন - এত রাতে তুই ?

- কাকু, মা কি তোমাদের বাড়ি এসেছে ? রাগের মাথায় বাড়ি থেকে চলে যেতে বলেছিলাম; সেই যে চলে গেল গোটা গাঁ ঘুরে তার কোন খবর পেলাম না। বাড়ি বাড়ি জিজ্ঞেস করেছি। ভাবলাম তোমাদের বাড়িতেও খোঁজ নিয়ে নিই।

- তা, ওর সাথে রাগারাগী হল কেন ?

- দেখ কাকু, তোমরা তো সবই জানো ! মোড়লের সঙ্গে ওর মেলামেশাটা আমি একদমই পছন্দ করতাম না। কিন্তু যখন কোন কথাই শুনলো না; আমিই বাড়ি ছেড়ে চলে গেলাম শহরে। কাজও জুটিয়ে নিলাম । মাকে চলে আসতে বললাম। তাও শুনল না। তখন আমি বাড়ি থেকে চলে গেলাম । তারপর যখন শুনলাম মোড়ল নেই, মাকে নিতে এসেছি। কিন্তু রাজী হচ্ছে না দেখে মাথা গরম হয়ে গেল । ওকে বের করে দিয়ে ঘরে তালা ঝুলিয়ে দিলাম ।

- বেশ, ভাবনাটা তোর মন্দ ছিল না। 

তারপর বিমলাকে ডেকে বললেন - বিমলাদি এস, ছেলের সঙ্গে কথা বল ।

বিমলা বলল - আমার ছেলে নয়। আমার ছেলে মরে গেছে। আমাকে পথে বসিয়ে ভাবছে চাপ দিবে। আমি কিছুতেই গাঁ ছেড়ে যাব না।

শঙ্কর বলল - এখানে থেকে না খেয়ে মরবি তো ! মর তা হলে। আমি চললাম।

এরপর আসরে নামতেই হল ঐন্দ্রিলাদেবীকে। বিমলাকে বললেন - ছেলে তোর ঠিক কথাই বলেছে। আমিও বলছি তুই তোর ছেলের সাথে শহরে চলে যা। এখানে কলঙ্ক মাথায় নিয়ে পোড়ামুখ তোর কে দেখবে ?

- ও দিদি গো , তুমিও তাড়িয়ে দিও না দিদি। নইলে আমাকে আত্মহত্যা করতে হবে।

- সে তোর ব্যাপার। এখন আমার বাড়ি থেকে পাপ বিদেয় হোক। ছেলে নিতে এসেছে উনি যাবেন না। 

মুখ ভেঙচে বললেন ঐন্দ্রিলাদেবী।

নীলেশবাবু বললেন - বৌঠান !

- তুমি চুপ কর ঠাকুরপো । ওই পাপ আমি সংসারে রাখতে পারব না । ও আমাদের যা ক্ষতি করেছে বলার নয় ।

- আমি কোন ক্ষতি করিনি দিদি !

- থাক আর সাফাই দিতে হবে না। সে কথা পুলিশও জানে। নেহাৎ সরাসরি কোন প্রমাণ পায়নি বলে জেলের ঘানি টানতে হয়নি।

একরকম জবরদস্তি করে শঙ্কর বিমলাকে নিয়ে গেল। ঐন্দ্রিলাদেবী নীলেশকে বললেন - তুমি তোমার ভালোমানুষী কমাও ঠাকুরপো। না হলে তুমিও কোনদিন ভীষণ বিপদে পড়ে যাবে - বলে দিলাম।

দীপু রূপসা দুজনেই তাতে সম্মতি জানাল। শুধু নীলেশবাবু হেসে উঠলেন ।

- ওটাই যে আমার বিশেষত্ব , বৌঠান। কারও কষ্ট আমার সহ্য হয় না । এ তো প্রথম থেকেই আপনি দেখছেন ।

- সে যাই হোক, এবার একটু সাবধান হয়ো। এই বিমলার মত মেয়েরা অনেক কিছুই করতে পারে। তা না হলে দেখলে তো ! যার খাই তারই দাড়ি উপড়াই স্বভাবের মেয়ে সে। ওকে এত দরদ দেখানোর ধরকার কি ?

( ক্রমশৎ)



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics