Nityananda Banerjee

Classics Inspirational

4  

Nityananda Banerjee

Classics Inspirational

সংশপ্তক ( চতুর্বিংশ অধ্যায় )

সংশপ্তক ( চতুর্বিংশ অধ্যায় )

5 mins
320


চতুর্বিংশতিতম অধ্যায় 


দেখতে দেখতে মাস ঘুরে নতুন বছর শুরু হল । জানুয়ারীতে দীপুর বেশ কয়েকটি রক্তপরীক্ষা করাতে হবে। তার মধ্যে এবার আর RT-PCR নয় ; এবার করতে হবে RQ-PCR. কারণ RQ-PCR রক্তের একটি এমন পরীক্ষা যা Reliable এবং High-throughput method. এতে level of treatment response assessment এবং Drug Resistance assessment ও accurately measure করা যায় । একটু বেশি খরচ সাপেক্ষ কিন্তু খুবই বিশ্বসনীয় ।

এছাড়া, আরও কয়েকটি পরীক্ষা যেমন Complete Blood Count, Liver Function Test, Renal Pannel, Sugra, Thyroid এবং Lipid Profile যেমন Cholesterol, Triglycerides etc.

RQ-PCR Test সাধারণত কুড়ি থেকে পঁচিশ দিন সময় নেয় রিপোর্ট আসতে। তবে বাকিগুলো একদিনেই হয়ে যায় । 

দিন সংখ্যার সঠিক হিসেব করে দীপু এবার একলাই গেল রক্ত দিতে। Counterএ প্রায় পঁচিশ হাজার টাকা জমা দিয়ে বিল নিয়ে গেল Sample Collection Unitএ ।

প্রায় ১২টি vialএ পাঁচ এম এল করে রক্ত নিল। তারপর ছেড়ে দিল । দীপু বাইরে বেরিয়ে আসতেই মাথা ঝিমঝিম করতে লাগল । আবার হাসপাতালের ভেতরে গিয়ে একটা চেয়ারে বসে পড়ল । বেশ কিছু সময় বসে থাকার পর তার মনে হল বুকটা ধড়ফড় করছে। কালবিলম্ব না করে একজন securityকে ডেকে বলতেই লোকটি ওকে ইমার্জেন্সিতে নিয়ে গেল । পরীক্ষা করে ইমার্জেন্সিতে বলল - তেমন কিছু হয়নি। আপনি ভরপেট খাবার খেয়ে একটু বিশ্রাম নিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে । Security কে বলে দিলেন হসপিটাল ক্যান্টিনে নিয়ে গিয়ে ওকে কিছু খাইয়ে দিতে। Security সেইভাবে তাকে খাইয়ে দাইয়ে, এসিতে বিশ্রাম করিয়ে ওলা ডেকে তুলে দিল।

হাওড়া স্টেশনে ট্রেনে চেপে কোনমতে গন্তব্যে নেমে পড়ল। নীলেশবাবু স্টেশনেই ছিলেন। দীপুকে ধীরে ধীরে হাঁটতে দেখে দৌড়ে গিয়ে ওকে ধরে নিলেন। 

- কি অসুবিধা হচ্ছে দীপু ?

- তেমন কিছু না। একটু মাথা ধরেছে। মনে হয় রক্ত আজ একটু বেশি নিয়েছে বলে এমন হচ্ছে। 

তারপর হাসপাতালের ঘটনা জানাতে নীলেশবাবু বললেন - এই দেখ, এইজন্য একলা যেতে নেই। কিন্তু তুই এমন জেদ করলি আমরা আর কিছু বলতে পারিনি। এরপর থেকে একলা যাওয়া চলবে না। যাক, এপয়েন্টমেন্ট করে এসেছিস তো ?

- ও সব হয়ে গেছে। একুশে জানুয়ারি সকাল এগারোটায়।

- ঠিক আছে, চল একটা অটো বুক করে রেখেছি। আস্তে আস্তে ওঠ।

বাড়িতে এসে দীপু হাত পা ধুয়ে বসল । নীলেশবাবু বললেন - বাড়িতে কিন্তু সব বলবি !

রূপসা ঐন্দ্রিলাদেবী বেরিয়ে এলেন । দীপুকে দেখে রূপসার কেমন যেন মনে হল। ঐন্দ্রিলাদেবীও প্রশ্ন করলেন - দীপু কি হয়েছে বাবা? অমন গা এলিয়ে পড়ে দিয়েছিস কেন ?

তখন দীপু জড়িয়ে জড়িয়ে কথা বলছে। নীলেশবাবু আতান্তরে পড়লেন। যদিও সবে সন্ধ্যে হয়েছে । এখন রাস্তার মোড়ে দু'চারটে অটো পাওয়া যাবে ভেবে বেরিয়ে গেলেন। এদিকে দীপুর মুখ দিয়ে ফেনা বেরোতে লাগল । দীপুর মা , রূপসার দৃঢ় ধারণা হল দীপুকে সাপে কেটেছে। বাড়িতে কান্নার রোল উঠে গেল । নীলেশবাবু অটো এনে দীপুকে চাপিয়ে চললেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। কপাল গুনে ডাক্তারও পাওয়া গেল । তিনি সব শুনে গোটা শরীর চেক করলেন ।

নীলেশবাবু বললেন - ডাক্তারবাবু ! সাপে টাপে কাটেনি তো?

- না না । ওসব কিছু নয় !

নীলেশবাবু বললেন - যাক বাবা । 

- ডাক্তারবাবু বললেন - সকাল থেকে কোন কোন মেডিসিন খেয়েছেন ?

দীপু সব ওষুধগুলোর নাম একে একে বলে গেল। কিন্তু ভিটামিন ডি থ্রী (CCM) ভুল করে দুটো খেয়েছি মনে পড়ছে।

- ওই জন্যই এরকম হচ্ছে। যাক আমি একটা ওষুধ খাইয়ে দিচ্ছি ; আধ ঘন্টার মধ্যে ঠিক হয়ে যাবেন । ঐ সব রোগে কোনটাই ডবল ডোজ খাবেন না। বরং মিস হলে সেদিনের মত ছেড়ে দেবেন।

ওরা বাড়ি আসতেই দীপু ঠিক হয়ে গেল । বাড়িতে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়ল ।

স্বাভাবিক ভাবেই রূপসার উৎসাহ বেড়ে গেল । শাশুড়ি মাকে বলল - মা, তুমি এখানে বসে গল্প কর , বাচ্চাটা তো খেলছে, আমি রান্নাটা সেরে নি।

এমন সময় সর্বেশ্বর এলেন। নীলেশকে ডেকে নিয়ে গেলেন । মা ও ছেলে ছোট বাচ্চাটার সঙ্গে রঙতামাশা করতে লাগল ।

সর্বেশ্বর বললেন - নীলু , আয় তোকে একজনের সঙ্গে পরিচয় করে দি। ওকে বসিয়ে রেখে তোকে ডাকতে এসেছি।

- দূর থেকে দেখাব কিন্তু। সামনে যাওয়া যাবে না। 

বলে যাকে দেখালেন সে পিছু ফিরে বসেছিল তাই কাউকে দেখতে পেল না ।

সর্বেশ্বর বললেন - চিনতে পারছিস ?

- আবছা লাগছে তো ; দাঁড়া, ভালো করে দেখি।

লোকটা একটু নড়েচড়ে বসল ।

অমনি নীলেশ বললেন - সর্বনাশ ! এ যে দেখছি কালাচাঁদ বাবু ! তোর ঘরে হঠাৎ ?

- আমিও তো ভেবে পাচ্ছি না। আসা'খন থেকে আমাকে নীলু নীলু বলে ডাকছে।

- তার মানে ভদ্রলোকের স্ক্রু ঢিলে হয়ে গেছে। আচ্ছা দাঁড়া, আমি যেয়ে দেখি কি বলে !

নীলেশরঞ্জন সামনে এসে দাঁড়ালেন। কালাচাঁদ বাবু তাকে দেখেও যেন দেখলেন না। মনে হল চিনতে পারছেন না। 

এবার সর্বেশ্বর আসতেই বললেন - নীলু, আমি এবার উঠব। অনেকটা পথ যেতে হবে। ইন্দু ( ঐন্দ্রিলা ) তো আমার মুখ দেখবে না বলেছে। থাক ওকে বিরক্ত করব না।

তিনি চলে যাচ্ছেন। নীলেশের কেমন যেন একটা মায়া পড়ে গেল। সর্বেশ্বরকে বললেন - বৌঠানের বড়দা। ভাগ্যের ফেরে আজ এই দশা।

কালাচাঁদ বাবু বললেন - কই হে নীলু, আজ তো কিছুই দিলে না ? 

সর্বেশ্বর বললেন - আপনি আসুন বৌঠান ডাকছে। একবার দেখা করে যান। 

- ওরে বাপ রে ! কাজ নেই দেখা করার । তুমি আমার পাওনাটা দিলেই চলে যাই।

নীলেশবাবু সর্বেশ্বরকে বললেন - বন্ধু, তুই কোন ভাবে ওনাকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে চল । এই অবস্থায় রাতে ওনাকে ছেড়ে দেওয়া ঠিক নয় । বয়স হয়েছে, কখন কি হয়ে যায় !

সর্বেশ্বর কালাচাঁদের হাত ধরে চললেন। বললেন - চলুন আপনার পাওনা দিয়ে দেব। 

তিনি খুশি হলেন । বললেন - ইন্দুটা আবার রাগারাগি না করে !

- না না, রাগ করবেন কেন ! যতই হোক নিজের বোন তো !

- তাতে কি ? আমি যা ব্যবহার ওর সঙ্গে করেছি ; তোমার সঙ্গেও, তাতে ও ঠিক কাজই করেছে। তখন লোক চিনতে পারিনি। ছেলের অঢেল রোজগারে মনুষ্যত্বটুকুও নষ্ট করে ফেলেছি।

সর্বেশ্বর সেজে নীলেশ বললেন - তার আগে থেকেই আপনি অমানুষ ছিলেন। নইলে বৌঠান আর আমার সঙ্গে ও রকম দুর্ব্যবহার করতে পারতেন না।

- ঠিক বলেছ। আমি বরাবরই ওই রকম। 

ওরা নীলেশদের বাড়িতে ঢুকলেন । ঐন্দ্রিলাদবী দাদার এই হাল দেখে কষ্ট পেলেন । আজ আর কোন কটু কথা না বলে সাদরে ওকে ভেতরে নিয়ে গেলেন।

বললেন - দাদা ! তুমি! হঠাৎ আবার এলে যে ! 

কালাচাঁদের মুখে কোন কথা নেই। শুধু হাউহাউ করে কেঁদে বললেন - ছেলেটা রেলে মাথা দিয়েছে, জানিস ?

মাতৃহৃদয়ের যাবতীয় যন্ত্রণা একযোগে বৌঠানকে আক্রমণ করল। সে কি অম্বরীশ ----

- হাঁ, গত পরশু রাতের ট্রেনে --

কেউ আর কোন কথা বলতে পারলেন না। শুধু সাগর ভরা প্লাবণ বয়ে গেল সবার চোখে ।

( ক্রমশ )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics