Bivas Chakraborty

Abstract Classics Inspirational

4.9  

Bivas Chakraborty

Abstract Classics Inspirational

স্নেহলতা

স্নেহলতা

2 mins
453


আজ দিন দশেক হলো তারা ত্রাণ শিবিরে শরনার্থী হিসাবে আছে। ঝড়-জল যেদিন শুরু হয় সেদিনই রাতে প্রশাসন তাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে আসে। যদিও এবারই প্রথম নয়, ঝড়-জল-বন‍্যা -ত্রাণ শিবির সবই ওদের জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে। আসলে ওদের "নদীর পাড়ে বাস ভাবনা চিরমাস।" চোখের সামনে দেখল নদীর বিদ্রোহ।চির পরিচিত শান্ত নদী খেপে গিয়ে উঠে এল গ্রামে।তারপর একটার পর একটা বাড়ি খেতে খেতে এগিয়ে গেল---হাঁস গরু ছাগল মুরগি মানুষ জন সব জলের তলায় তলিয়ে যাচ্ছে--বড়ো বড়ো গাছকে স্রোতে খড়কুটোর মতো ভাসিয়ে নিয়ে চলে যাচ্ছে। তার বাড়ির শেষ চিহ্নটুকুও আর নেই-- এসব সাত পাঁচ বসে বসে ভাবতে থাকে হারুনের মা পদ্মা। ঘরের কথা মনে পড়তেই তার দু'চোখ নোনাজলে ভরে ওঠে। নদী তাদের সর্বস্ব কেড়ে নিলেও তার প্রতি পদ্মার কোনো রাগ নেই,কারণ যা কিছু ছিল তা তো নদীর দৌলতেই।পদ্মার রাগ মানুষের উপরে। তাদের জন্যই তো নদী খেপে গেল। নিয়ম না মেনে বালি তুলল, পাড়ের বড়ো বড়ো গাছ কেটে দিল, ইঁট ভাটার জন্য মাটি কেটে নিল, নদীতে বাঁধ দিল---এতো অত‍্যাচার নদী সহ‍্য করবে কেন? তাই সেও সুযোগ পেলেই প্রতিশোধ নেই। কিন্তু এসব কী ছাইপাশ ভাবছে বসে বসে!

কাল সকাল থেকে এখনও পেটে একটা দানাপানি জুটেনি। প্রথম কয়েকদিন প্রশাসন থেকে খিচুড়ি দিলেও বৃষ্টি ছাড়ার সাথে সাথে তা বন্ধ।অনেকে শিবির ছেড়ে চলে গেলেও তারা যেতে পারেনি। আর তাদের মতোই শিবিরে রয়ে গেছে আয়েশা বিবি দুটো ছোটো ছেলে-মেয়েকে নিয়ে। ওর স্বামী ওকে ছেড়ে দিয়েছে। ছোটো ছেলে মেয়ে দুটো খিদেতে কাঁদছে। ওদের কথা ভেবে খুব কষ্ট হয় পদ্মার।

দুপুরের দিকে কোথা থেকে গামছায় বেঁধে একটা বাটিতে করে খিচুড়ি নিয়ে আসে পদ্মার স্বামী। খিদের চোটে অন্ধকার দেখা পদ্মা সেটুকু মুখে দিতে যাবে এমন সময় আয়েশার বাচ্চা দুটোর মুখ ভেসে উঠলো চোখের সামনে। সে খিচুড়ির বাটিটা ওদের দিয়ে দেয় আর দু'চোখ ভরা জল নিয়ে দেখে ছেলেমেয়ে দুটোর মুখে খুশির হাসি। পদ্মার মনে পরে এরকমই এক শিবিরে খেতে না পেয়ে তার হারুন তাদের ছেড়ে চলে যায়---পদ্মার দু'চোখ নোনাজলে ভরে ওঠে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract