The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW
The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW

Sonali Basu

Classics

3  

Sonali Basu

Classics

স্মৃতি

স্মৃতি

6 mins
1.0K


ঝপ নাকি ধপ করে আওয়াজ উঠতেই শরণ্যা চেঁচিয়ে উঠলো রান্নাঘর থেকে “এই কে রে শোয়ারঘরে? কে পড়ে গেলো? তিন্নি? তোর ছেলে বুকুন কোথায় রে? ও’ই পড়ে গেলো নাকি?” আপনমনে বিড়বিড় করলো ‘যা চঞ্চল ছেলে, কোথাও যদি এক মুহূর্ত স্থির বসে’ কিন্তু আর কোন আওয়াজ পাওয়া গেলো না এমন কি মেয়ে বা নাতি কারো কোন উত্তরও পাওয়া গেলো না। পর পর প্রশ্নের কোন উত্তর পাওয়া গেলো না যখন তখন শরণ্যা আটা মাখা হাতটা কোন মতে ধুয়েই চলে এলো শোয়ারঘরে। ও ধারণা করেই নিয়েছে ততক্ষণে ঘরে কিছু একটা অঘটন ঘটেছে যার কারণে এই শ্মশানের স্তব্ধতা। কিন্তু শোয়ার ঘরে পা দিয়েই ও দাঁড়িয়ে পড়তে বাধ্য হল। কারণ সারা মেঝেতে তখন ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে ছবি আর পাশে একটা পুরনো এ্যালবাম, হাত পা ছড়িয়ে উপুড় হয়ে, যেন আলমারি থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছে। ও এসে দাঁড়ালেও মেয়ে বা নাতি কেউই ওকে খেয়াল করলো না, দুজনেই উপুড় হয়ে ছবি দেখতে ব্যস্ত। একবার নাতিকে বলতেও শুনলো এটা কে মা?” তিন্নির উত্তর “আমার প্রিয় বান্ধবী রেখা। ওর সঙ্গে কত না মজার সময় কাটিয়েছি” খানিকক্ষণ ব্যাপারটা লক্ষ করার পর শরণ্যা বলল “তোদের ব্যাপার কি রে? ছবিগুলো এরকম ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কেন? গুছিয়ে তোল তারপর নাহয় দ্যাখ”

তন্নিষ্ঠা ওরফে তিন্নি বলল “হ্যাঁ মা এখনি তুলছি। আমি আজ তোমার আলমারিটাই গুছিয়ে রাখছিলাম। আর বুকুন ওদিকে খেলছিল। ওপরের তাকটা গুছাতে গিয়েই এই বিপত্তি ঘটেছে। শাড়ির ভাঁজে ঢুকে থাকা এ্যালবামটা স্লিপ কেটে নীচে পড়ে গেলো। ছবিগুলো ছড়িয়ে পড়তেই বুকুন দৌড়ে এসেছে। তারপর থেকে ওর একের পর এক প্রশ্ন শুরু হয়েছে যার উত্তর দিচ্ছি আমি”

মায়ের কথা শেষ হতেই বুকুন বলে উঠলো “জানো দিদুন মা আমাকে মায়ের স্কুলের বন্ধুদের ছবি দেখাচ্ছিল”

শরণ্যা বলল “তাই নাকি দাদু। তা তোমার বন্ধুদের ছবি নেই তোমার কাছে”

“না নেই তো। তবে মিস বলেছে এবার যখন ক্লাস ফটো তুলবে তখন এক কপি করে ছবি দেবে”

“বাহ। ছবি দিলে আমাকে তোমার বেস্ট ফ্রেন্ডের ছবি দেখাবে তো”

“হ্যাঁ দেখাবো” তারপরই তার প্রশ্ন “দিদুন তোমার কোন বেস্ট ফ্রেন্ড নেই?”

“হ্যাঁ আছে তো কিন্তু বহু বছর হল দেখা সাক্ষাৎ নেই”

“কেন?”

“কেন আবার। মেয়েরা বড় হয়ে যাওয়ার পর তো আর সেই পুরনো জায়গাতে থেকে যায় না, তাদের বিয়ে হয়ে যায় আর তারা নতুন জায়গায় চলে আসে। তারপর সেই পুরনো বান্ধবীদের কথা মনে থাকলেও আর সেরকম যোগাযোগ হয়ে ওঠে না”

“ও তাহলে সুদিপ্তা প্রীতি এদের সঙ্গেও বড় হওয়ার পর আমার আর দেখা হবে না?”

শরণ্যা এক পলক মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল “না সোনা, তোমাদের দেখা হবে কারণ এখন দিন বদলেছে অনেক, মেয়েরাও এখন অনেক পড়াশোনা করছে চাকরি করছে তাছাড়া মোবাইলের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখতে পারছে তাই তোমাদের বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রাখা সহজ হবে”

“তাহলে তুমিও তো তোমার বন্ধুদের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ রাখতে পারো”

“সম্ভব নয় দাদু। আমি পুরনো দিনের মানুষ, মোবাইলের মাধ্যমে ওই ফোন ধরা আর ফোন করা এই কাজগুলোই পারি”

এবার তিন্নি বলল “হ্যাঁ, তাই তো মা, তুমি তো তোমাদের বান্ধবীদের ফেসবুকে খুঁজে বের করে আবার গল্পসল্প করতেই পারো”

“তুইও দেখছি তোর ছেলের সাথে মিলে একই সুর ধরলি। জানিস না এইসব মোবাইলে আমি সেরকম সড়গড় নই, কেন যে এইসব কথা তুলিস? তাড়াতাড়ি এগুলো গুছিয়ে তুলে রান্নাঘরে আয়। জামাই একটু পরেই এসে উপস্থিত হবে তার সাথে তোর বাবাও বাজার নিয়ে ঢুকবে”

তন্নিষ্ঠা বলল “হ্যাঁ মা, এই যাচ্ছি” শরণ্যা ফিরে গেলো রান্নাঘরে। সারাদিন হৈচৈয়ের মধ্যে কেটে গেলো। তন্নিষ্ঠারা পরেরদিন সকালে চলে যাবে। বিকেলে চায়ের আসরের পর সামান্য অবসর যাপনের সময় তিন্নি মায়ের মোবাইল নিয়ে মায়ের পাশে বসলো তারপর বলল “মা তোমার ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়েছি। তোমার বান্ধবীদের মধ্যে শুধু বিভা মাসি আর রানু মাসির চেহারা মনে ছিল। খুঁজে পেতে ওদের বন্ধু হওয়ার রিক্যুয়েস্ট পাঠিয়ে দিয়েছি। আশা করি মাসিরা একসেপ্ট করে নেবে। তারপর তোমরা এর মাধ্যমে গল্প করতে পারবে। যদি জানতে পারো কাছাকাছি কেউ থাকে তার বাড়িতে ঘুরে আসতে পারো, তাকেও বাড়িতে নেমতন্ন করতে পারবে। বাংলা ভাষা সেট করে দিয়েছি, তাই যে কোন লেখা পড়তে বা কমেন্ট করতে অসুবিধা হবে না”

শরণ্যাকে কিভাবে সব করতে হয় তিন্নি খুব মন দিয়ে শিখিয়ে দিলো। শরণ্যার একটাই কথা “বেকার শেখাচ্ছিস। আদৌ কিছু করতে পারবো কিনা সন্দেহ”

“পারবে পারবে” মেয়ে জামাই এমনকি নাতিও বলল। আর বিভাস বসে বসে মজা দেখলো তারপর বলল “ভালো জিনিস শেখাচ্ছিস তোর মাকে। শেষে বাড়ির কাজ সময়মতো হবে কিনা সন্দেহ”

“তুমি আর বেশি বলো না বাবা” তিন্নির মন্তব্যে বিভাস হেসে চুপ করলো।

পরেরদিন সকালে তিন্নিরা চলে যাওয়ার পর শরণ্যার বেশ মন খারাপ করছিলো। প্রায় সপ্তাহ দুই বাড়িটা বেশ ভরাভরা লাগছিলো এখন আবার সেই দুটি প্রাণী। বিভাস ওর নিজের কাজেই ব্যস্ত থাকে বেশি, বাড়িতে থাকে কম। শরণ্যা শেষ অব্দি কাজের শেষে মোবাইল খুলে বসলো। তারপর মেয়ের দেখানো পদ্ধতিতে খুলে অবাক হয়ে দেখলো বিভা আর রানু দুজনেই বন্ধু হয়ে গেছে। দুজনকেই শুভ সকাল লিখে পাঠানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই রানু উত্তর দিলো “শুভ সকাল। ... কেমন আছিস?”

“ভালো... তুই? কতদিন পর আবার তোর সাথে কথা হল”

“আমি আর বিভা অনেকদিন থেকেই ফেসবুকে আছি, তুই নতুন এলি”

“আমি আসতাম কিনা সন্দেহ। মেয়ে কাল জোর করে খুলে দিলো তাই। আমি এগুলো ভালো বুঝি না যে”

“আরে আমরাও বুঝতাম নাকি। মেয়ে জামাই ছেলে বৌমা বা নাতি নাতনির পাল্লায় পড়ে শিখতে হয়েছে। ওরা বলে শরীরের কারণে তো বাড়ি বন্দি, তাহলে মোবাইলের মাধ্যমেই নাহয় এর তার সাথে যোগাযোগ রাখো যা ভালো লাগে পড়। তাই সংসারের কাজ শেষ হয়ে গেলেই এখন এটাই খুলে বসি, বেশ সময় কেটে যায়”

প্রথমদিন ভালোই গল্প হল তারপর আবার যে যার কাজে। তারপর থেকে শরণ্যাও সময় পেলেই খুলে বসে মোবাইল। দেখে নতুন কোন লেখা কেউ পোষ্ট করেছে কিনা খোঁজে পুরনো বান্ধবীদের মধ্যে নতুন করে কেউ এই দুনিয়ায় পা রেখেছে কিনা। হঠাৎ একদিন একটা চেহারা আর নাম দেখে বেশ অবাক হল ও, শর্মিষ্ঠা চৌধুরী। সেই ভদ্রমহিলাই বন্ধু হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ও এ্যাকসেপ্ট করার পর ওর সম্পর্কে দেওয়া তথ্য দেখলো। ভালো করে পড়ে বুঝতে পারলো এ ওর সেই খুব পরিচিত, মনের খুব কাছের বান্ধবী, ওর বেস্ট ফ্রেন্ড। ছোটবেলায় কত খেলাধুলা কত খুনসুটি মান অভিমানের পালার মাঝে ওদের বড় হওয়া। একই গ্রাম হলেও আলাদা পাড়ায় থাকতো দুজনে। ও উত্তর পাড়া আর শর্মিষ্ঠা মুসলমান পাড়ায়। তবে একই সরকারি স্কুলে পড়তো ওরা, বন্ধুত্বও ছিল গলায় গলায়। দুই বাড়ির লোকজনও জানতো ওদের বন্ধুত্বের কথা তবে আপত্তি ছিল না কোন দিক থেকেই এই বন্ধুত্বের বন্ধনে। স্কুলে আর স্কুলের বাইরে সব সময়ই ওদের জোড়ায় দেখা যেত। কাঁচা মিঠে আম মাখা কূল মাখা পেয়ারা মাখা হয় এ নয় ও বানিয়ে নিয়ে আসতো দুজনে মিলে খাবে বলে। ক্লাসের বান্ধবীরাও অল্পসল্প প্রসাদ পেতো। পিঠের দিনে ও শর্মিষ্ঠার জন্য নিয়ে যেতো মায়ের বানানো গকুল পিঠে আর ওদের উৎসবের দিনে ও আনতো চাচিজির বানানো ফিরনি নিয়ে। কি আনন্দেই না কাটছিলো দিনগুলো। পরীক্ষার সময় দুজনে একসাথে অনেকক্ষণ বসে পড়তো। দুজনে রেজাল্টও করতো দারুণ, কোনবার এ প্রথম ও দ্বিতীয় তো পরের বার এ দ্বিতীয় ও প্রথম।

বেশ চলে যাচ্ছিলো দিনগুলো, মাধ্যমিক পেরলো কিন্তু তারপর শর্মিষ্ঠা আর পড়ার সুযোগ পায়নি। চাচাজি ভালো সম্বন্ধ দেখে ওর বিয়ে দিয়ে দেন। কি সুন্দর লাগছিলো সেদিন শর্মিষ্ঠাকে বিয়ের কনের সাজে কিন্তু ততটাই অচেনা মনে হচ্ছিলো ওকে বরের পাশে। মেয়েদের এক রূপ থেকে আরেক রূপে পা পড়লেই কত পরিবর্তন চোখে পড়ে। শর্মিষ্ঠা শ্বশুরবাড়ি চলে যাওয়ার পর শরণ্যারও জীবনে অনেক পরিবর্তন চলে এলো। কলেজে পড়তে পড়তেই ওর জন্য ভালো ভালো সম্বন্ধ আসাতে ওর বাবাও শুভ কাজে বেশি দেরী করেননি। ওর পরে আরও দুই বোনের বিয়ে বাকি। সংসার জীবন একরকম পেরিয়ে গেছে। আর এই এতো বছরে ওদের আর দেখা সাক্ষাৎও হয়নি।

আজ ওকে পেয়েই শরণ্যা খুশি মনেই লিখলো “সুপ্রভাত... কেমন আছিস?”

ওপাশ থেকে সাথে সাথেই জবাব এলো “ভালো। তুই?”

“আমিও ভালোই। তুই এখন কলকাতায়?”

“হ্যাঁ রে, কদিনের জন্য এসেছি কানাডা থেকে। আমার এক দূর সম্পর্কের ননদের বিয়ে। সপ্তাহ খানেক থেকে আবার নিজের জায়গায়”

কত গল্প দুজনের মনে, এক দু ঘণ্টা যে কিভাবে কোন ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে গেলো দুজনের কেউই টের পেলো না। শেষে শর্মিষ্ঠা লিখলো “কাল বিগ বাজারে আয় না, সামনা সামনি দেখা করবো গল্প হবে”

“হ্যাঁ আমার মনের কথাই তুই বলে দিলি। অবশ্যই আসবো, বিকেল চারটে। তুই সময়মতো পৌঁছে যাস”

“একটা রিক্যুয়েস্ট। এখন তো আমের সময় একটু আম মাখা নিয়ে আসিস। সেই ছোটবেলার স্মৃতি একটু চেখে দেখবো দুজনে”

“আনবো রে, অবশ্যই আনবো... পুরনো দিনের স্মৃতি গুলো তো চেখে দেখাতেই সুখ”


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics