স্মরণে নজরুল
স্মরণে নজরুল


প্রাতঃ স্মরণীয় যে সকল মহাপুরুষের কথা আমরা জানি তাদের মধ্যে এক অন্যতম মহাপুরুষ হলে কাজী নজরুল ইসলাম। তার রচিত গান আর কবিতা আমাদের প্রত্যেকের চলার পথের পাথেয়। কবি বরেণ্য এই মানুষ টিকেই স্মরণ করে দিনের শুরু করেন বরেণ বাবু। ডাকাবুকো ধরনের এই মানুষটির পূর্বপুরুষ গণ দেশভাগের শিকার।একরকম নিঃস্ব হয়েই ওপর বাংলা থেকে এপার বাংলা এ চলে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন তারা।
রক্তে স্বাধীনচেতা ভাবটা বরেন বাবুর বংশগত। ৫ ০ উর্ধো ভদ্রলোক কোথাও কোনো অন্যায় সহ্য করতে পারেন না। দুই পুত্র ও স্ত্রী নিয়ে সুখের সংসার তার। তবুও যেন অতীত এর দেশ ভাগ, মানুষের ভিটে মাটি ছেড়ে অচেনা অজানা দেশ এ পারি দেওয়া এই সব এ যেন তাকে ভিতর থেকে নাড়া দিয়ে যায় । বাবা, কাকা দের মুখে শুনেছেন তাদের পরিবার এর ইতিহাস, শুনেছেন তাদের পরিবারের বনেদিয়ানা। বরেণ বাবুর দাদু ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী।তাই স্বদেশীয়ানা ছোট থেকেই তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে।আজ ও তিনি যত দূর সম্ভব এড়িয়ে চলেন বিদেশির দ্রব্য । এ নিয়ে ছেলেদের কাছে কথা শুনতে হয় মাঝে মাঝে। কিন্তু বরেণ বাবু তার জায়গায় অটল। সারাজীবন ধুতি পাঞ্জাবি ছাড়া তিনি কখনো প্যান্ট শার্ট পড়ার কথা কল্পনা তেও আনেননি। কখনো কখনো ভাবেন ওপার বাংলা এ গিয়ে দেখে আসবেন তাদের ভিটে মাটি আজ ও কিছু অবশিষ্ট আছে কিনা। কিন্তু যাওয়া হয়নি জীবনের নানান ব্যস্ততায়।
বরেণ বাবু র বড়ো ছেলে নাম জাদা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি র উচ্চ পদস্থ কর্মচারী। তার মধ্যে বরেণ বাবুর মানসিকতা কতটা জন্ম সূত্রে স্থানান্তরিত হয়েছে জানা নেই কিন্তু তার আদপকাইদা আপাদমস্তক সাহেবি। যা বরেণ বাবু র কখনোই পছন্দ হয়নি। ছোট ছেলে ও তার দাদা কেই অনুসরণ করছে আস্তে আস্তে । ইঞ্জিনিয়ারিং এর দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সে।
সাম্প্রতিক কালে বরেণবাবু খবরের কাগজ খুললেই সেটা বন্ধ করে দেন। খবরের কাগজের রোজকার মারামারি, কাটাকাটি আর মেয়েদের অসম্মানের খবর তার বিরক্তির কারণ হয়ে উঠেছে। এ কিসের স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতার কল্পনা তো করেন নি আমাদের দেশের মহান সংগ্রামীরা। তাদের দেশের জন্য প্রাণ উৎসর্গ করা কে আমরা কি সত্যি যথাযথ সম্মান দিতে পেরেছি।তাহলে যে কাজী নজরুল ইসলাম বলে গেছেন "সাম্যের গান গাই-
আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই!"
সত্যি কি ভেদাভেদ বিহীন সমাজ আমরা নারীদের আজ ও দিতে পেরেছি, পেরেছি কি সমাজের মধ্যে সাম্যতা আনতে। আজ ও তো ধনী দরিদ্র এর মধ্যে ভেদাভেদ প্রবল। এসব চিন্তায় আজকাল ঘুম আসেনা বরেণ বাবু র। তার ছেলেদের মধ্যে ও সেই প্রতিবাদ এর আগুন দেখতে পান না তিনি।
সকল বেলা মর্নিং ওয়াক এ যাওয়া বহুদিনের অভ্যাস বরেণ বাবু র। খুব সকালে তাই বেরিয়েছিলেন প্রতিদিনের মতো। কিন্তু বাড়ি থেকে মোড়ের মাথায় পৌঁছে হলো আরেক বিপত্তি। একটি সতেরো আঠারো বছরের মেয়ে ছুটে আসছে বরেণ বাবুর দিকে। এত সকালে রাস্তায় লোকজন ও কম। মেয়েটা হাপাতে হাপাতে আসে আর বরেণ বাবুর সাহায্য প্রাথনা করে. আশেপাশে যে দুএকজন রাস্তায় ছিল তারা বেগতিক দেখে কেটে পরে।কয়েকটি ছেলে মেয়েটির পিছু নিয়েছে। কদিন যাবৎ ই তারা বিরক্ত করছিলো রাস্তায় মেয়েটিকে কিন্তু আজকে পিছনে ধাওয়া করেছে। বরেণ বাবু ছেলে গুলো কে চলে যেতে বলেন কিন্তু তারা চলে না গিয়ে তার সাথে বচসা শুরু করে। তাদের মধ্যে একজন বরেণ বাবু কে মাটিতে ঠেলে ফেলে ও দেয়। পাড়ার ই একটি ছেলে এসকল ঘটনা দূর থেকে লক্ষ করছিলো।সে বরেণ বাবু র বাড়ি তে খবর দেয়। বরেণ বাবুর ছেলে রা ছুটে আসে আর যে ছেলেটি বরেণ বাবু কে মাটিতে ফেলে দিয়েছিলো তাকে আর তার সঙ্গীদের ধরে ফেলে, পুলিশ এর হাতে তুলে দেয়। শুধু তাই নয় মেয়েটিকে বাড়ি পৌঁছে দেয় আর লিখিত অভিযোগ জমা দেয় পুলিশ স্টেশন এ।
বরেণ বাবু আজ সত্যি খুব অবাক হয়ে যান এই দেখে যে তার ছেলেরা তার মতোই প্রতিবাদ করতে জানে। আজ বরেণ বাবু সত্যি তার ছেলেদের জন্য গর্ব অনুভব করছেন।বাড়ি এসে কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর ছবির দিকে তাকিয়ে গুন্ গুন্ করে গাইতে লাগলেন " আমারে সকল ক্ষুদ্রতা হতে বাঁচাও প্রভু উদার।
হে প্রভু! শেখাও – নীচতার চেয়ে
নীচ পাপ নাহি আর।"