মধুর পরিণতি
মধুর পরিণতি


অসামান্য প্রতিভাধর ঋষভ বসুকে শুধু নিজের বিদ্যালয়ে নয়, এলাকা ছাড়িয়ে দূর দূরান্তের শিক্ষকেরা এক ডাকে চিনত। আর নিজের বিদ্যালয়ে তো প্রশ্নাতীত জনপ্রিয়তা। ঋষভও নিজের অধ্যবসায়ের জোরে উত্তরোত্তর উন্নতির বাবা সৌরভ বসুও এলাকার নামকরা ডাক্তার। সেই সুবাদে বিখ্যাত বিজ্ঞানী সংকেত রায়ের সাথে পরিচয়। পেশেন্ট ও ডাক্তারের সম্পর্ক অবশেষে পারিবারিক বন্ধুত্বে পরিণত। সংকেতবাবুর একমাত্র সুন্দরী কন্যা সুনেত্রাও ঋষভকে চিনত ভালো ছেলে হিসেবে। পারিবারিক সখ্যতায় দু'জনের মধ্যে ঘনিষ্ঠতার সুযোগ ঘটঋষভের জীবনে সুনেত্রার গভীরতা আরও বৃদ্ধি পায় ডাক্তারি পড়ার সময়। ঋষভ এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণায় খুঁজে পায় পরশ হঠাৎই স্বপ্নভঙ্গ একটি সামান্য ঘটনায়। ঋষভের বইয়ের ভেতর সুনেত্রা আবিষ্কার ক'রে হলুদ খামের চিঠি! খামের উপর সুন্দর হাতের লেখা..."আমার প্রিয় মানুষকে - তোমার প্রিয়তমা বান্ধবী" ঋষভকে না জানিয়ে খুলে ফেলে খামটি। ঐন্দ্রিলার গভীর ভালোবাসার ছোঁয়ায় দীর্ঘ এক প্রেমপত্র!
হতবাক সুনেত্রা! কে এই ঐন্দ্রিলা? দ্বিধান্বিত মনে সংশয়ের আকাশ ভেঙে পড়ে এতদিনের প্রেমের বন্ধনে। এদিকে ঐন্দ্রিলার জন্যে বাড়ির থেকে নিউইয়র্কে বসবাসকারী বিজ্ঞানী সংলাপ সেনের বিবাহ প্রায় পাকা সুনেত্রা।
এক মুহূর্তে যেন পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেলো।তার এত দিনের ভালোবাসা সেকি তাহলে কেবল ই ক্ষনিকের ভালো লাগা ছিল। এসব ভাবতে ভাবতেই ঋষভ এর ঘর থেকে বেরিয়ে এল সুনেত্রা কোন ভাবে সবার চোখ এড়িয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো। এদিকে ঋষভ ঘরে ঢুকে সুনেত্রা কে দেখতে না পেয়ে বেশ খানিকটা অবাক হলো। টেবিলের উপর ডায়েরি টা খোলা দেখে কিছুটা আন্দাজ করতে পারলো যে কি হয়েছে। এদিকে সুনেত্রা ঋষভ এর ফোন ও ধরছে না এর দেখা ও করছে না ঋষভ এর সাথে। ঋষভ ও পড়াতে সেভাবে মন বসাতে পারছে না ।এদিকে হোস্টেল এ ফেরার সময় এসে গেছে, মেডিকেল ফাইনাল ইয়ার এ ছাত্র সে।কি করে বোঝাবে ঋষভ যে ঐন্দ্রিলা শুধু এই তার বন্ধু। ঋষভ কোনো ভাবেই সুনেত্রা কে হারাতে চায় না ।ঐন্দ্রিলা কে জানিয়েছে ঋষভ যে সে অন্য কাউকে ভালো বাসে ঐন্দ্রিলা শুধু এই তার খুব ভালো বন্ধু। কিন্তু ঐন্দ্রিলা বুঝতে রাজি এই নয় সে কথা। নানা ভাবে ঋষভ কে বোঝাতে চেষ্টা করছে যে সে ঋষভ কে ছাড়া থাকতে পারবে না। এদিকে ঐন্দ্রিলা র বাড়ি র লোক যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মেয়ের বিয়ে টা দিয়ে দিতে চায় ঋষভ এসব কথা সুনেত্রা কে বলে উঠতে পারেনি অনেক চেষ্টা করেও। তার ভয় ছিল যে সুনেত্রা তাকে ভুল বুঝবে কিন্তু পারলো কোথায়, যাই হোক একদিন সুনেত্রা র বাড়ি চলেই গেলো ঋষভ ।ঋষভ কে দেখে সুনেত্রা মনে মন এ খুশি হলেও মুখে কিছু ই বলল না । কারণ সে কিছু তেই বিশ্বাস করতে পারছিলো না যে ঋষভ তাকে ঠকাতে পারে ।ঋষভ ঠিক করে সুনেত্রা কে নিয়ে
ঐন্দ্রিলা র বাড়ি যাবে । একরকম জোর করেই সে সুনেত্রা কে নিয়ে যায় ঐন্দ্রিলা র বাড়ি। ঐন্দ্রিলা বাড়িতেই ছিল । ঋষভ কে দেখে খুব খুশি হলো । কিন্তু সুনেত্রা কে সে চেনে না ।ঋষভ ঐন্দ্রিলা কে বলে যে সে তাকে নয় সুনেত্রা কে ভালো বসে এবং তাকেই বিয়ে করবে , ঐন্দ্রিলা যেন কোন ভাবেই কোনো ভুল ধারণাই না থাকে । এই কথা গুলো ঋষভ এর বলতে ভালো লাগছিলো না কারণ যতই হোক ঐন্দ্রিলা তার বন্ধু , কিন্তু ঐন্দ্রিলা র ভুল ধারণা ভাঙাবার ও দরকার ছিল । সুনেত্রা কে নিয়ে ঋষভ ঐন্দ্রিলা র বাড়ি থেকে বেরিয়ে এল । সুনেত্রা বুঝতে পারছিলো না কি বলবে। কিভাবে ঋষভ এর থেকে ক্ষমা চাইবে ঋষভ আলতো করে সুনেত্রা র হাত টা ধরলো অশ্রু পূর্ণ চোখে ঋষভ এর দিকে তাকিয়ে ক্ষমা করার প্রশ্নই ওঠে না যেখানে ঋষভ রাগ ই করেনি। ভুল বোঝা তা খুব স্বাভাবিক ছিল সুনেত্রা র জন্য ওরকম একটা চিঠি দেখে যে কেও ভুল বুঝতে পারতো। তাই আলাদা করে এই প্রসঙ্গ টা আর তুলতে চায় না ঋষভ । সুনেত্রা কে নিয়ে ফিরে আসে সে ।বাড়ি পৌঁছে সুনেত্রা নিজেকে অনেকটা হালকা অনুভব করলো। না খুব ভুল করেছে সে এভাবে ঋষভ কে ভুল বুঝে। এরকম ভুল আর সে করবে না। এমন সময় ফোন তা বেজে উঠলো। ফোনে এরও পারে ঋষভ ছিল ।"হ্যাপি বার্থডে সুনেত্রা" ।সত্যি তো সুনেত্রা ভুলে গেছিলো আজ তো তার জন্মদিন । ঠিক বারো টা তে ফোন করেছে ঋষভ। সুনেত্রা ভাবে যে সে কি একবার ক্ষমা চাইবে কিন্তু সে কিছু বলার আগেই ঋষভ বলে যে আর দেরি নোই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সে সুনেত্রা কে বিয়ে করতে চায়। সেই মতো ঋষভ আর বাবা মা কথা বলবেন সুনেত্রা র মা বাবা র সাথে। ফাইনাল পরীক্ষা টা শেষ হলেই বিয়ে তা করে ফেলতে চায় সে। সুনেত্রা র মনে হয় যেন তার সব পাওয়া হয়ে গেছে।সে নিজেকে সব থেকে সুখী মনে করে । আর তার কিছু ই পাওয়ার বাকি নেই , জন্মদিনের শ্রেষ্ঠ উপহার তার পাওয়া হয়ে গেছে।আনন্দে তার চোখে জল আসে গেলো । সে একবার মনে মনে বললো আর কখনো তোমায় ভুল ভুঝবো না ।আস্তে আস্তে ফোন তা রেখে সুনেত্রা ঘরে চলে গেলো ।
সুনেত্রা র জীবনে তার ভালোবাসা যে এমন মধুর পরিণতি আনবে হয়তো সে নিজে ও তা ভাবতে পারেনি। ঋষভ কে জীবন সঙ্গী হিসাবে পেয়ে সে সত্যি নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে করছে।
.