স্মৃতির অন্তরালে
স্মৃতির অন্তরালে


“মোবাইলের রিংটোনের শব্দে ঘুমটা ভাঙল তনুজার। রাত্রি তিনটে পনেরোয় চৈতির ফোন! ঘুমচোখে রিসিভ করল, “কী রে! এত রাতে ফোন কেন?” বিপরীতে ভেসে আসা কথাগুলো শুনে মুহূর্তের জন্য ওর পায়ের তলার মাটিটা যেন সরে গেল!”
সুদীপ আর নেই। মানে একমুহূর্তে চোখের সামনে যেন অন্ধকার হয়ে গেলো তনুজা র।চোখের সামনেই যেন ভেসে উঠলো সব। কলেজ এর সেই হাসি খুশি ছেলেটা তনুজা র জন্য পাগল ছিল। ভালো কবিতা লিখতো গান করতো।অথচ কোনো অহংকার ছিল না ছেলেটার।বাড়িতে বিধবা মা আর ছোট বোন । তনুজা ও কেমন আস্তে আস্তে ভালোবেসে ফেলেছিলো ছেলেটাকে। এত সৎ সাহসী ছেলে কঠোর পরিশ্রমী সহজেই মন জয় করে ছিল তনুজা র। কিন্তু বাধ সাধলো তনুজার পরিবার। তনুজার বাবা একজন জাদরেল উকিল। আর পসার ও জমিয়েছেন ভালো। মেয়েকে কোনো বনেদী পরিবারের বৌ করবেন এটাই ইচ্ছা তার। সুদীপ কে মেনে নিতে পারেন নি। এক নিম্ন বিত্ত ঘরের ছেলে তার জামাই হবে এটা মানা যায় একরকম জোর করেই তনুজার বিয়ে দিয়ে দিলেন অন্যত্র। এদিকে সুদীপ পড়াশোনা শেষ করার পর সেভাবে ভালো কোনো চাকরি জোগার করতে পারেনি।
সে একটা ছোটো খাটো পাবলিশিং অফিস এ প্রিন্টিং এর কাজ করে। তনুজা বিয়ের দু বছর পর সুদীপ কে দেখেছিলো রাস্তায়। কিরকম শীর্ণকায় হয়ে গেছে ছেলেটা। নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয় তনুজা র। তার জন্য এই হয়তো ছেলেটার জীবন শেষ হয়ে গেল।
ফোন টা রেখে তনুজা ঠিক করে সুদীপ এর বাড়ি যাবে। সেই মতো পর দিন সুদীপ এর বাড়ি পৌঁছে যায় তনুজা সুদীপ এর মা র সাথে দেখা করে। এক মুহূর্তে কি তার মনে হলো যে সে সুদীপ এর মা কে কথা দিয়ে বসলো যে সুদীপ না থাকলেও তনুজা আছে আর সারাজীবন তনুজা ই তার এবং সুদীপ এর ছোট বোনের দেখাশোনা করবে। আজ যেন সে নিজেকে অনেকটা হালকা অনুভব করছে একদিন তনুজা যে মানুষ তার হাত ধরতে পারেনি সারা জীবন এর জন্য আজ তার দায়িত্ত্ব গুলো সে পালন করার সুযোগ পেয়েছে।