স্বীকৃতি
স্বীকৃতি


ভালোবাসা কোনো বাধা মানে না, ভুল ঠিক বিচার জানে না, আজকে সব কিছু হারিয়ে ও যেন নিজেকে সব থেকে সুখী মনে করছে আকাশ। আকাশটাকে যেন আরো সুন্দর আরো মুক্ত লাগছে আজকে তার। এতদিন যেন বন্ধ হয়ে ছিল তার সব ভাবনা চিন্তা গুলো। হঠাৎ করে যেন তার সব নতুন করে শুরু করতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু পারবে কি সে আর পুরোনো দিন গুলো ফেরত ।
গল্পের শুরুটা একটু অন্য রকম ভাবেই হয়েছিল। আকাশ আর নীলিমার বিবাহিত জীবন সাত বছরে পা দিয়েছে। নানা উত্থান পতন এর মাঝখানে দুজনে সংসার টাকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে আছে । এর মাঝে আকাশ এর জীবনে শুরু হলো এক নতুন অধ্যায় মেঘা স্মার্ট , সুন্দরী , অবিবাহিতা মেয়েটি আকাশ এর অফিস এ নতুন জয়েন করেছে, মিষ্টি স্বভাব এর মেঘা খুব অল্প সময় এই অফিস এর সবার মন জয় করে নিয়েছে, অবশ্য আকাশ এর একটু বেশি মেঘা র মধ্যে আকাশ জীবনে না পাওয়া আকাঙ্খা গুলো খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করতে থাকে । ক্রমশ এই বন্ধুত্ত ঘনিষ্ট তরো হতে থাকে, আকাশের বাড়িতে সময় দেওয়া কমতে থাকে, আকাশ আর নীলিমা র এক কন্যা সন্তান। মেয়ের সঙ্গে বাবার সম্পর্ক ছিল বন্ধু র মতো, বছর ৪৫ এর আকাশ এখন তার ৬ বছরের মেয়েকেও সময় দেওয়া ভুলে যায়। ওর মন জুড়ে শুধু ই মেঘা, তবে মেঘা র থেকে আকাশ এই এই সম্পর্কে বেশি সিরিয়াস ছিল।
আকাশ এক মুহূর্ত মেনে নিতে পারতো না যদি মেঘা ওকে অবহেলা করতো। নীলিমা অল্প অল্প বুঝলে ও কিছু বলছিলো না কারণ সে আকাশ কে হারাতে চাইনি।
আকাশের এর একতরফা পাগলামি ক্রমেই তাকে এক কল্পনার জগৎ এ নিয়ে যায়। যা শুধু তার ই আকাঙ্খিত ছিল। মেঘা শুধু আকাশ কে তখন এই সময় দিতো যখন মেঘা র নিজের প্রয়োজন হতো। নাহলে সে আকাশের দিকে ফিরে ও তাকাতো না। তাও আকাশ কিছুতেই বুজতে চাচ্ছিলো না সত্যি টা সামনে দেখে ও ।আকাশ কখনো বিশ্বাস করেনি যে মেঘা আকাশ কে শুধু ব্যবহার করছিলো। কিন্তু অনেকটা দেরি হয়ে গেছিলো , নীলিমা মুখে কিছু না বললে ও বুঝতে পারছিলো সব। সে মেয়ে কে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে । আকাশ বাধা দেয় না ভাবে মেঘা কে নিয়ে সে সব নতুন করে শুরু করবে। কিন্তু বিধাতার তো অন্য কিছু ই পরিকল্পনা ছিল. সব সম্পর্ক শেষ করে মেঘা র কাছে যাবে বলে স্থির করে আকাশ । মনে একরাশ আসা নিয়ে যখন মেঘা র বাড়ি পৌঁছায় আর আলতো করে কলিং বেল এ হাত রেখে আবার সরিয়ে নেয় আর মেঘা কে চমকে দেবার জন্য আকাশের কাছে থাকা ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খোলে। কিন্তু ঘরে ঢুকে আকাশ যা দেখতে পায় তাতে মেঘা কে চমকে দেবার বদলে সে নিজেই চমকে ওঠে। মেঘ তখন এক অন্য পুরুষের সাথে অন্তরঙ্গ অবস্থায় ছিল। আকাশ আর এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে বেরিয়ে আসে , আকাশের মাথার উপর নীল আকাশ টাকে দেখে আরো যেন মুক্ত বলে মনে হয় সে ঠিক করে আবার নীলিমার সাথে সব নতুন ভাবে শুরু করবে।
বাড়ি ফিরে নীলিমা র কাছে ক্ষমা চাইবে বলে স্থির করে আকাশ । কিন্তু ক্ষমা চাইবার অবকাশ আর নীলিমা তাকে দেয় না। সে বলে সত্যিকারের ভালোবাসার কোনো স্বীকৃতি র প্রয়োজন হয় না, সমাজের বেশির ভাগ মেয়েরা এই ভেবে সারা জীবন অন্যায় মেনে নেই যে স্বামী র দেওয়া স্বীকৃতি যেন আমরণ তাদের সঙ্গে থাকে। তাই তারা সমস্থ অন্যায় অত্যাচার মুখ বুজে মেনে নেই, কিন্তু নীলিমা শুধুমাত্র স্বীকৃতি র আশায় এমন কোনো বন্ধনে জড়িয়ে থাকতে চায় না যাতে কোনো ভালো বাসা নেই । এমন স্বীকৃতি তার কাছে অপ্রয়োজনীয় যেখানে ক্ষনে ক্ষনে তার আত্মসম্মান বিসর্জন দিতে হয়।
নীলিমা মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। আকাশ নির্বাক ভাবে তাকিয়ে থাকে তাদের চলে যাওয়ার দিকে আর সব পুরানো স্মৃতি গুলো তাকে ঘিরে ধরতে থাকে।