Ankit Bhattacherjee

Horror Crime Thriller

3  

Ankit Bhattacherjee

Horror Crime Thriller

সিরিয়াল কিলার

সিরিয়াল কিলার

3 mins
329


পাশের কোন বাড়ি থেকে অনেক লোকজনের আওয়াজ শুনে আজ ভোরে ঘুমটা ভাঙল অশোক বাবুর। কি হয়েছে সেটা দেখতে যাওয়ার আগেই তাঁর মনে পড়লো রাতের ঘটনা এবং উর্দ্ধশ্বাসে ছুটে গেলেন ছাদে ভাড়াটিয়ার ঘরে। ঘর ফাঁকা, জিনিসপত্র সব নিয়ে পালিয়েছে সে। পাশের বাড়ি গিয়ে শুনলেন, গতকাল রাতে খুন হয়েছেন বাড়ির মালিক। পুলিশ এসেছে, বডি এখনও ঘরেই আছে। থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে অশোক বাবু একজন পুলিশকে ডেকে বললেন “আমার কিছু বলার আছে।“


ছাদের সেই ঘর দেখিয়ে অফিসারকে তিনি বললেন “এই ঘরটি দু-সপ্তাহ আগে ভাড়া নিয়েছিল ২৫-২৬ বছরের পার্থ নামে একটি ছেলে। এমনিতে চুপচাপ নিজের মতই থাকতো। তবে কয়েকদিন আগে অনেক রাতে আমি বাথরুমে যেতে গিয়ে পার্থর গলার আওয়াজ পাই। পরিষ্কার শুনতে পেলাম, ও যেন কার সাথে কথা বলছে। প্রচণ্ড রেগে খসখসে একটা গলায় ওকে কেউ বলছে – মাথায় আমার রক্ত উঠে যাচ্ছে, এরপর আর নিজেকে সামলাতে পারবো না। খুন করে ফেলব। তখন পার্থ তাকে শান্ত হতে বলে। এরপর আর সেরকম কিছু শুনিনি। পরের দিন সকালে যখন আমি জিজ্ঞাসা করি যে রাতে ওর ঘরে কে এসেছিল, তখন পার্থ ব্যাপারটাকে এড়িয়ে যায় এবং বলে ও নাকি ফোনের স্পিকারে কথা বলছিল। অথচ আমি নিশ্চিত যে ওই ঘরে অন্য কেউ ছিল। আবার ২-৩ দিন সব ঠিকই ছিল। আমি রাতে উঠে আর কিছু শুনতে পাইনি। গতকাল রাতে অবশ্য ঘুমটা ভাঙ্গে অন্য কারনে। পাশের বাড়িতে যে খুন হয়েছে, প্রায়ই মদ্যপ অবস্থায় গভীর রাতে বাড়ি ফিরত এবং তাঁর স্ত্রীকে মারধর করতো। গতকাল রাতেও সেই একই জিনিস হয় এবং সেই চিৎকারেই ঘুমটা ভেঙে যায়। তখনই আবার পার্থর রুম থেকে সেই গলা শুনতে পাই। সে পার্থকে বলছে – অনেক সহ্য করেছি। আজই এর শেষ দিন। সমাজে এদের বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই। পার্থ আবারও তাকে বোঝানোর চেষ্টা করতে থাকে। কিন্তু সেই লোকের গলায় ক্রোধ যেন ফেটে পড়ছে। এখন দেখতেই পারছেন যে পার্থর ঘরে যেতে হলে আমাদের বাড়ির সদর দরজা দিয়েই ঢুকতে হবে। তা এতো রাতে কে আসছে আর কেনই বা এতো গোপনীয়তা, এসব ভেবে বেশ ভয়ই লাগলো আমার। কিছুক্ষণ পর কথা থেমে যায়। কিন্তু ভারী আশ্চর্যের ব্যাপার হল আমি কাউকেই বাড়ির বাইরে বের হতে দেখলাম না। ওত রাতে পার্থর ঘরে ঢোকার আর সাহস হল না আমার। তাই ভেবেছিলাম সকালে উঠেই পুলিশে খবর দেব। কিন্তু উঠেই দেখলাম পার্থ পালিয়েছে।“


শেষ দুই মাসে এরকম তিনটে খুন হল। গোয়েন্দা বিভাগ বুঝল এটা সম্ভবত একটা সিরিয়াল কিলিং-এর কেস। খুনগুলির মধ্যে কিছু সাদৃশ্য লক্ষ্যণীয়। তিন জনেই পুরুষ, তিন জনেই মদ্যপান করে এসে বাড়ীতে অত্যাচার করতো, তিনটি খুনই হয় মাথায় ভারী কিছুর আঘাতে এবং তিনটে লাশের পাশেই লেখা ছিল একই কবিতা। আর একটা অদ্ভুত ব্যাপার কবিতাটা পড়ে লক্ষ্য করা গেছে যে তিনটে খুনই হয়েছে পূর্ণিমার রাতে।


গোয়েন্দার লোক গ্রামের বস্তি এলাকায় একটি বাড়ীতে কিছুদিন ধরে থাকতে শুরু করে এবং প্রতিদিন রাতে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের অভিনয় করতে থাকে। আর ঠিক পরের পূর্ণিমার দিনই খুনি তার শিকার ধরতে এসে নিজেই গোয়েন্দাদের জালে ধরা পড়ে।


খুনি জানায় “বাবা প্রতি রাতে মদ খেয়ে এসে মাকে মারধর করতো। আমার একদম ভালো লাগতো না। একদিন মায়ের মাথায় শিলনোড়া তুলে মারল। চোখের সামনে মায়ের রক্তাত্ত দেহটা লুটিয়ে পড়লো। সেই দিনও ছিল একটা পূর্ণিমার রাত। তারপর বাবার জেল হয় এবং জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আর কোন দিনও বাড়ি ফেরেনি।”


ডাক্তার চেক-আপ করে পুলিশকে জানায় যে পার্থ নিজের মাকে ওই ভাবে মরতে দেখার পর তার মধ্যে একটা মেন্টাল ডিসর্ডার চলে আসে। সে সব সময় হয়তো চাইতো তার বাবাকে মেরে ফেলতে। তাই এতো বছর পর সে যখন তার চারিপাশে সেই একই রকম ঘটনা ঘটতে দেখছে, তার মধ্যে একটা ডুয়াল পারসোনালিটি দেখা দিচ্ছে। সে তখন নিজেই গলার স্বর পাল্টে নিজের সাথে কথা বলছে। একটা সত্তা তাকে খুন করতে বলছে। সমাজে এই ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের বদলা নিতে বলছে, অন্যদিকে তাকে আরেক সত্তা সেটাকে আটকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছে।


হয়তো সে আইনের চোখে একজন সিরিয়াল কিলার। কিন্তু তার এই কবিতাটা হয়তো সমাজের সেই অন্ধকারাছন্ন সত্যকে তুলে ধরছে যা সংশোধন হওয়া সত্যিই খুব প্রয়োজনীয়। 


দেখতে চাইনা আরও একটা রক্তাত্ত পূর্ণিমা,

দেখতে চাইনা আর কোন মায়ের অশ্রুভেজা বালিশ,

সেই অত্যাচারীদের বিনাশে আজ আমি হয়েছি ব্রত, তাই

এই জ্যোৎস্না মাখা রাত আমায়, তোর নামে জানিয়েছে নালিশ। 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror