Ankit Bhattacherjee

Romance Classics Thriller

4  

Ankit Bhattacherjee

Romance Classics Thriller

ডিডাকসান (Deduction)

ডিডাকসান (Deduction)

9 mins
210


“এত কিছু যে আমার সম্পর্কে বলে দিলেন, অথচ আপনার সম্পর্কে তো কিছুই জানা হল না। তা যাওয়ার আগে অন্তত আপনার নামটা জানতে পারি?” – শেয়ার ক্যাব-এর ভাড়া মেটাতে মেটাতে পিয়ালি জিজ্ঞাসা করল গাড়ির ভেতরে বসে থাকা অপরিচিত ব্যাক্তিটিকে। তিনি হাসি মুখে শুধু বললেন “অনির্বাণ, অনির্বাণ সরকার।” নামটা শুনেই পিয়ালির ভুরু দুটো কুঁচকে গেলো। নামটা যেন তার বড্ড চেনা। কিন্তু কোথায় যে শুনেছে, কিছুতেই এখন মনে পড়ছে না। যাই হোক, এরপরই সেই ব্যাক্তির একটা ফোন কল আসে আর সাথে সাথেই ক্যাবটাও ছেড়ে দেয়। তাই আরও কিছু জানার ইচ্ছে থাকলেও, পিয়ালি সেটা জিজ্ঞাসা করার সুযোগ পায় না। 

রাস্তার উল্টো দিকে তাকিয়ে দেখল সুপর্ণা দাঁড়িয়ে আছে। দেখা হতেই সুপর্ণা বলে উঠলো “কীরে, প্রথমবার শেয়ার ক্যাবে আসতে কোন অসুবিধা হয়নি তো? তোকে দ্বিতীয়বার ফোন করলাম যখন, তখন শুধুই বললি যে দেখা হলে সব বলবি। তারপর তোকে হোয়াটস্যাপ করলাম। কিন্তু তুই তো আর অনলাইনও হলি না। তাই একটু চিন্তাই হচ্ছিল।” পিয়ালি বলল “আরে না না। সেরকম কিছুই না। আসলে আজ গাড়িতে এমন একটা ইন্টারেষ্টিং ব্যাপার হল যে তখন ফোনে বলার সুযোগ ছিল না। চল, অটোতে বসে যেতে যেতে সবটা বলছি।” দুই বন্ধু শিয়ালদহ থেকে অটো ধরল কলেজ স্ট্রিট যাওয়ার জন্য।

“তাহলে প্রথম থেকে বলি শোন।” – সুপর্ণাকে বলতে শুরু করলো পিয়ালি। “অনেকক্ষণ থেকে চেষ্টা চালিয়েও যখন এমনি ক্যাব পেলাম না, তখন বাধ্য হয়েই শেয়ার ক্যাব বুক করলাম। গেট খুলে ঢোকার সময়ই একবার তাকিয়ে দেখে নিলাম ভেতরে বসে থাকা লোকটিকে। দেখে মনে হল ওই ধর ২৮-২৯ বছর বয়স হবে। তাই ওকে লোক না বলে ছেলে বলা-ই চলে। আর চোখ মুখ দেখে বোঝাই যায় যে ভালো ভদ্র বাড়ির পড়াশোনা জানা ছেলে। তাই মনের মাঝে চলতে থাকা অস্বস্তি ভাবটা একটু হলেও কাটল। এরপর আমি সোহমের লেখা বই দুটো একটু উল্টে পাল্টে দেখছিলাম। তার কিছুক্ষণ পরই তুই প্রথম কল-টা করলি। এখন ব্যাপারটা হল, আমি প্রথম থেকেই লক্ষ্য করছি যে ওই পাশে বসে থাকা ছেলেটা আমার দিকে মাঝে সাজেই তাকাচ্ছে। মানে কোন যে খারাপ ভাবে, সেটা বলছি না। তবে ওই আর কি।“

এতটা শুনে আবার সুপর্ণা বলে উঠলো “তা তুই ওকে কিছু বলিস নি?” পিয়ালি জানাল “আরে দাড়া, সবে তো ভোর হল। আসল গল্প এখনও শুরুই হয়নি। আরও কিছুক্ষণ দেখার পর আমি কিছুটা বিরক্ত হয়েই জিজ্ঞাসা করলাম যে – তখন থেকে আমার দিকে তাকিয়ে আপনি কি দেখছেন বলুন তো? আপনি কি আমায় চেনেন?। ছেলেটি কিন্তু একটা হাল্কা হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়েই বলল – ডিডাকসান ম্যাডাম। আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, বার বার আপনার দিকে তাকানোর জন্য। আমি আপনার দিকে চেয়ে, আপনার সম্পর্কে কি কি তথ্য জানা যায়, সেটাই আন্দাজ করার চেষ্টা করছিলাম আর কি। কোন অসৎ উদ্দেশ্য আমার মনে নেই, বিশ্বাস করুন। তখন আমি বললাম যে – তা আপনি কি Sherlock Holmes? তখন ছেলেটি বলে – না ম্যাডাম। আমি হলাম ওই ভেতো মধ্যবিত্ত বাঙালি। তাই এসব ব্যাপারে ওই ফেলুদা আর ব্যোমকেশই আমার গুরু। আমার সত্যি বলতে তখনও রাগ-ই হচ্ছিল জানিস। তাই একটু গম্ভীর হয়েই বললাম – তা আপনি কি সব সময়ই এরকম করে থাকেন? মানে যে কোন অচেনা মেয়ে দেখলেই তাকে নিয়ে ডিডাকসান করতে থাকেন নাকি? ছেলেটা তখন বলে – এই দেখুন, আপনি আমার ওপর রেগে আছেন দেখছি। সত্যি বলতে ডিডাকসান আমি অনেকের ওপরই করি ঠিকই, তবে সেটা কাউকেই আজ পর্যন্ত বলিনি। আপনি প্রথম ব্যাক্তি যাকে কথাটা জানালাম।”


এতটা শুনে আবার সুপর্ণা বলে উঠলো “বাবা! এতো বেশ ইন্টারেষ্টিং কেস দেখছি। তো তারপর কি বলল সে?” পিয়ালি আবার বলতে শুরু করলো “তখন আমি বললাম যে – তাহলে আমি খুব লাকি বলতে হবে। তা ডিডাকসান করে আমার সম্পর্কে কি কি জানতে পারলেন একটু শুনি। ছেলেটির চোখে মুখে তখন যেন একটা বুদ্ধিদীপ্ত এক্সপ্রেশন ফুটে উঠলো। অদ্ভুত শান্ত অথচ কনফিডেন্ট ভাবে বলে উঠলো – মিস চ্যাটার্জী, আজ আপনি জলদি ঘুম থেকে উঠলেও বাড়ি থেকে বের হবার সময় তাড়াহুড়ো লেগে যায়। এইটুকু শুনেই আমি জাস্ট অবাক জানিস তো। সঙ্গে সঙ্গে বললাম – আপনি আমার নাম কি করে জানলেন? ছেলেটি বলে – আসলে আপনি গাড়িতে বসার পরই আপনার হাতের ব্যাগটা খোলেন এবং আপনার এটিএম কার্ডটা তখন অনেকটাই বেড়িয়ে ছিল। আমি নামটা ভালো করে দেখতে না পেলেও, আপনার সারনেমটা বুঝতে অসুবিধা হয় না। আপনার পোশাক, চোখে কাজল, লিপস্টিক আরও যা যা সাজগোজ আপনি করেছেন, তাতে কোথাও কোন খুঁত নেই। বোঝাই যায় যে আপনি অনেকটা সময় নিয়ে, যত্ন নিয়ে সেজেছেন। কিন্তু আপনার ডান পায়ের জুতোর পিছনের দিকে যে অনেকটা কাদা লেগে শুকিয়ে আছে, সেটা বোধহয় আপনি খেয়াল করেন নি। তাড়াহুড়োই বেড়িয়ে এসেছেন তাই, না হলে জুতোর ব্যাপারে এতোটা অনীহা হয়তো আপনি দেখাতেন না। তাই না? 

– বেশ, বলতেই হবে গুড অবসেরভেশন স্কিল। তা আরও কিছু আন্দাজ করেছেন নাকি?


– হ্যাঁ, আরও অনেক কিছুই করেছি। এই যেমন আপনি খুব সম্ভবত এখন কলেজ স্ট্রিট যাচ্ছেন। তবে আপনি একা যাবেন না। আপনার বন্ধু সুপর্ণা শিয়ালদহ-তে আপনার সাথে মিট করবে, যে সম্ভবত যাদবপুর ইউনিভার্সিটি পড়ছে। কারণ একটু আগেই সে যখন আপনাকে ফোন করেছিল, আপনার ফোনটি সিট-এর ওপর রাখা ছিল। রিং হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমার চোখ সেদিকে যায় এবং স্ক্রীনে লেখা ওঠে “Suparna, JU”। এরপর আপনি ফোনে তাকে বলেন ব্রিজের নীচে দাঁড়াতে। তাই আর কি।

– আবারও আপনার অবসেরভেশন ক্ষমতার তারিফ না করে পারছি না। কিন্তু আপনি এটা কি ভাবে বললেন যে আমরা হয়তো কলেজ স্ট্রিট যাব।

– গুড প্রশ্ন। আপনি এখনও হাতে যে বইটা নিয়ে আছেন সেটা এবং যে বইটা আপনার ব্যাগ থেকে অল্প উঁকি দিচ্ছে, সেই দুটো বই-ই আমার পড়া। লেখক সোহম দাসগুপ্ত-র লেখা ওই দুটি বই আমারও খুব প্রিয়। যেটা উল্টে পাল্টে দেখছেন, ওটা ওনার লেখা প্রথম বই, ভৌতিক গল্পের একটা সংকলন। আসলে আপনি পাতা ওল্টানোর সময় একটা ইলাস্ট্রেশন দেখেই বইটি চিনতে পারি। আর ওনার লেখা দ্বিতীয় বইটার কভারটা ভীষণই ইউনিক ছিল। তাই আপনার ব্যাগ থেকে যেটুকু অংশ বেড়িয়ে আছে, ওটা দেখেই বুঝতে পারলাম যে এটা সোহম দাসগুপ্ত-র লেখা দ্বিতীয় বইটা যেটা একটা প্রেমের উপন্যাস। এখন বই দুটোই বেড়িয়েছে প্রায় ছয় মাস আগে। আর আপনার হাতে থাকা বইটার দিকে তাকালে বোঝাই যায়। ওটা আপনার পড়া হয়ে গেছে। ফেইসবুকে আমিও সোহম দাসগুপ্ত-কে ফলো করি। তাই আমি জানি যে আজ ওনার লেখা তৃতীয় বইটি রিলিজ করবে। তাই দুই-য়ে দুই-য়ে চার করে দিলাম আর কি। তাই আপনি সম্ভবত সেই বইটি আজই সংগ্রহ করতে যাচ্ছেন এবং শুধু তাই নয়, সাথে ওনার লেখা আগের দুটো বইও নিয়ে যাচ্ছেন ওনার থেকে সই করাবেন বলে। আসলে আজ ওই অনুষ্ঠানে আমার নিজেরও খুব যাওয়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু সময় বের করে উঠতে পারলাম না। এবার বলুন দেখি, যতটা আমি বললাম, তার কত পার্সেন্ট ঠিক?

এতটা চুপ করে একটানা শোনার পর আবার সুপর্ণা বলে উঠলো “কি বলছিস ভাই? এতো সত্যি কারের ফেলু মিত্তির। তারপর আরও কিছু বলেছে নাকি?”। পিয়ালি বলল “আরে আমি তো তখন যেন আকাশ থেকে পড়ছি। তো আমি ওকে বললাম যে – সত্যি আপনার ডিডাকসান ক্ষমতাকে কুর্নিশ জানাই। আপনি ১০০% সঠিক ভেবেছেন। আর কিছু?”


– আমি যদি এতটা ঠিক বলেই থাকি, তাহলে পরের টুকু আশা করি ভুল হবে না। যদিও সেটা বলতে পারেন একটা ওয়াইল্ড গেস, তাও বলছি। দেখুন আমি যতদূর জানি, সোহম দাসগুপ্ত একজন অদ্ভুত মানুষ। তাকে কোন পাঠকই চেনে না। কারণ সোশ্যাল মিডিয়াতে তাঁর কোন ছবি পাওয়া যায় না। অথচ পাঠক মহলে তাঁর লেখা নিয়ে বেশ চর্চা হয় শুনেছি। তাই তিনি বলেছিলেন যে এই তৃতীয় বই রিলিজের দিন তিনি কলেজ স্ট্রিটে প্রকাশনীর স্টলে উপস্থিত থাকবেন কিছু সময়ের জন্য। এখন সোহম দাসগুপ্তের সাথে আপনার আগে দেখা হয়নি। কারণ সেটা হলে আপনি তাঁর সই আগেই পেয়ে যেতেন। অর্থাৎ, এটা আপনার প্রথম সাক্ষাৎ হবে লেখকের সাথে। তাছাড়া আপনি আপনার একজন মেয়ে বন্ধু বা বলা ভালো বান্ধবী-কে নিয়ে যাচ্ছেন আপনার সাথে। যদিও তার মানে এটা দাঁড়ায় না যে, আপনার কোন বয়ফ্রেইন্ড নেই। কিন্তু আপনার এই সুন্দর সাজগোজ-কে উপেক্ষা করেও আপনার চেহারায় যেটা বেশী করে ফুটে উঠছে, সেটা কি জানেন? একটা খুশি খুশি ভাব, একটা উৎফুল্ল ভাব, অনেকটা এক্সসাইটমেন্ট। তাই আমার ধারণা এটা শুধু বই কেনা, লেখকের সাথে দেখা করা এবং তাঁর সই নেওয়ার মধ্যে বোধহয় সীমাবদ্ধ নেই। আর সেটাও যদি ঠিক ধরে থাকি, তবে বোঝাই যাচ্ছে এটা আপনাদের প্রথম ডেট হতে চলেছে। আপাতত আমার ডিডাকসান এখানেই বন্ধ করলাম। এবার আপনার বলার পালা।

“বিশ্বাস কর আমি না মন্ত্র মুগ্ধের মত ছেলেটির কথাগুলো শুনছিলাম আর অবাক হচ্ছিলাম। এতটা সঠিক গেস কিভাবে কেউ করতে পারে, সেটাই ভেবে যতটা না অবাক হচ্ছিলাম, তার থেকে অনেক বেশী ছেলেটির ডিডাকসান ক্ষমতার প্রতি ইমপ্রেস হয়ে যাচ্ছিলাম। এরপর আমি ছেলেটিকে বললাম,

– সত্যি বুঝতে পারছি না যে আমার কি বলা উচিত। এতদিন আমি গল্পের বইতে এরকম পড়তাম। কিন্তু কোনদিনও রিয়েল লাইফ এক্সপেরিয়েন্স করবো সেটা ভাবিনি। যাই হোক, সাধারণত আমি এরকম ভাবে সম্পূর্ণ অচেনা কাউর সাথে কোন রকম কথা বলতেই স্বচ্ছন্দ বোধ করি না। কিন্তু আপনি সত্যি আমায় অবাক করে দিলেন। তাই আপনাকে বলছি। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন আপনি। সোহম দাসগুপ্ত-র সাথে আমার পরিচয় এই ধরুন ৪-৫ মাস আগে থেকে। ফেসবুকেই আলাপ যদিও। তারপর টুকটাক কথা হতে হতে আমাদের মধ্যে একটা ভালো বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। সেটাকে প্রেম হয়তো ঠিক বলা চলে না। যাই হোক, উনি বলেছিলেন আমরা একেবারে আজ দেখা করব। তাই উনি আমাকে ওনার একটা ছবিও আজ পর্যন্ত পাঠান নি। আজ তাই আমাদের প্রথম সাক্ষাৎ হবে। শিয়ালদহ এসে গেছে। এবার আমায় নামতে হবে। আর সত্যি আপনার সাথে কথা বলে খুবই ভালো লাগলো। জানিনা আর কখনও দেখা হবে কিনা। তবে দেখা করার ইচ্ছেটা মনে রাখলাম। ভালো থাকবেন।


– আমারও খুব ভালো লাগলো আপনার সাথে আলাপ করে। লেখকের সাথে আপনার প্রথম সাক্ষাৎ খুব ভালো হোক, এই আশা রাখি। ভালো থাকবেন।


“এরপর তো আমি গাড়ি থেকে নেমে যাই আর ভাড়া দেওয়ার সময় ছেলেটিকে ওর নামটা জিজ্ঞাসা করি। তারপর ওর একটা ফোন আসে আর গাড়িটাও ছেড়ে দিলো।” সুপর্ণা ভীষণ উৎসাহের সাথে জানতে চায় “কি নাম বলল রে?” পিয়ালি বলল “সেটাই তো মজার ব্যাপার। আচ্ছা একটা কথা বল তো। আমি যে তোকে এই পুরো গল্পটা শোনালাম, এর মধ্যে তোর কিছুতে খটকা লাগেনি?” সুপর্ণা জানালো “হ্যাঁ, একটা ব্যাপারে লেগেছে। সেটা হল, ছেলেটি এতো কিছু তোর সম্পর্কে বলে দিলো। তুইও ওকে তোর কথা শোনালি। সবই ঠিক আছে। কিন্তু ছেলেটি একবারের জন্যও তোর নামটা কেন জানতে চাইলো না? কারণ সে তোর পুরো নামটা তো ওই এটিএম কার্ড থেকে দেখতে পায়নি বলেছে। ছেলেটির যদি তোকে ইম্প্রেস করার ইচ্ছেই থাকতো, তাহলে সে সবার আগে নিজের নামটা বলতো আর তোর নামটাও জানতে চাইতো। কিন্তু ও সেটা করেনি। মানে এতোটাও ভালো, ভদ্র ছেলে আজকাল হয় বলে তো আমার জানা ছিল না।”


কলেজ স্ট্রিট এসে যাওয়ায় দুজনে অটো থেকে নামল এবং ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে পিয়ালি বলল “সাবাশ তোপসে। একদম সঠিক পয়েন্টটা ধরেছিস। প্রথমেই তোকে বলি, ছেলেটি যখন আমায় বলল ও নাকি এটিএম কার্ড থেকে আমার সারনেমটা দেখতে পেয়েছে, সন্দেহটা তখনই আমার হয়েছিল। কারণ এটিএম কার্ডের একদম নীচের দিকে নাম থাকে। তাই বারবার মনে হচ্ছিল যে কার্ডটা কি সত্যি ওতটা বেড়িয়ে ছিল? কিন্তু তারপর ও যা যা বলতে থাকলো, তারপর এটিএম-এর কথাটা ভুলেই গিয়েছিলাম। কিন্তু শেষে ও যে ভাবে একটা জাম্প মেরে সোজা একটা কনক্লুশনে গেলো, সেটা আমার অবিশ্বাস্য লাগছিলো। মানে আমি আজকে সোহম দাসগুপ্তর সাথে ফার্স্ট টাইম ডেট করতে যাচ্ছি, এতটা সঠিক তির চালানো কি এতই সোজা? ঠিক যেন হজম হচ্ছিল না। কিন্তু তারপর ও যখন ইচ্ছে করেই নিজের মিথ্যে পরিচয়টা দিল, তখন আস্তে আস্তে আমার কাছে ব্যাপার গুলো একটু পরিষ্কার হতে থাকলো।”


এবার সুপর্ণাও যেন আকাশ থেকে পড়লো। সে প্রচণ্ড অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো “মানে? তুই কি করে বুঝলি ও মিথ্যে পরিচয় দিয়েছে।” পিয়ালি জানালো “আমি প্রথম থেকে ছেলেটির দিকে ভালো করে নজর না দিলেও, গাড়ি থেকে নামার পর যখন ওর নাম জানতে চেয়েছিলাম তখন ভালো করে ওর ড্রেসটা দেখি। একটা নীল জিন্স আর কালো কুর্তা। আর বুকপকেটে একটা ফাউন্টেন পেন। ঠিক যেমনটা সাজার কথা আজ সোহম দাসগুপ্তের। গতকাল রাতে আমি ওকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। ও নাকি আজ ফাউন্টেন পেন আনবে অটোগ্রাফ দেওয়ার জন্য। আর অনির্বাণ সরকার – সেটা ওর লেখা ওই প্রেমের উপন্যাসটার নায়কের নাম। তাই আমার এতো চেনা চেনা লাগছিলো।“


সুপর্ণা আবার বেশ উত্তেজিত হয়েই বলে উঠলো “তার মানে? কি বলতে চাইছিস তুই?” পিয়ালি বলল “ঠিকই ধরেছিস তুই। এবার আমার দুই-য়ে দুই-য়ে চার করার পালা। খুব ভুল যদি না করি, তাহলে সোহম দাসগুপ্তের সাথে আমার প্রথম সাক্ষাৎ-টা অলরেডি হয়ে গেছে। তাহলে এবার দ্বিতীয় সাক্ষাৎ করার পালা। দ্যাখ, আমি ওকে না চিনলে কি হবে, আমার প্রোফাইলে তো আমার নিজের ছবি অনেক আছেই। ফলে গাড়িতে ঢোকার পরই ও আমায় চিনতে পারে এবং এই কারণেই নাম, ঠিকানা জানার প্রতি ওর কোনই আগ্রহ ছিল না প্রথম থেকেই। ভালোই মজা করে গেলো আমার সাথে। এখন আমার ডিডাকসান ক্ষমতা কতটা ভালো, সেটা জানতে জলদি পৌঁছাতে হবে বইয়ের ষ্টলে। চল পা চালা তাড়াতাড়ি। দেখা যাক কি হয়।”



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance