Drishan Banerjee

Thriller

3  

Drishan Banerjee

Thriller

সিল্ক-রুট সরগরম ৪

সিল্ক-রুট সরগরম ৪

5 mins
9.6K


অন্যজন বোধহয় ওর দিদি রিঙ্কি, একটু লম্বা, মুখের মিল আছে। ওদের জিনিস সহ ওদের রুমে নিয়ে গেল। বেশ বড় কাঠের ঘর। সামনের বারান্দার শেষ প্রান্তে বিশাল খাদ। একটা ছোট্ট ঝরনা এদের বাগানের ভিতর দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে চলেছে সেই খাদের পানে। কত যে ফুলের গাছ আর নাম না জানা ফুলের সমারোহ না দেখলে বোঝানো যাবে না। হাওয়ায় শীতের কামড়। দিঠি আর অয়ন আগেই জ্যাকেট পরে নিয়েছিল। তবু ঠাণ্ডা হাওয়ার ঝাপটা লাগে চোখে মুখে। একদল মেঘ জড়ো হচ্ছিল এক কোনে। হঠাৎ সাদা মেঘের দল সব কিছু ঢেকে দিল। আর কিছু দেখা যায় না। কোনো বাচ্চা ছবি আঁকতে আঁকতে সব মুছে দিল যেন।

 

ওদের লাঞ্চের জন্য ডাকতে এসেছিল পিঙ্কি। গরম ভাত,স‍্যালাড্,ডাল,ভাজা,পাহাড়ি সবজি আর ডিমের ঝোল, সঙ্গে পাঁপড়, আচার। অসাধারণ ঘরোয়া খাবার। রাতের খাবার জিষ্ণুর লোকে বানাবে। তক্ষুনি বৃষ্টি নামলো আকাশ জুড়ে। আবার ওরা খেয়ে উঠতে উঠতে ঝলমলে রোদ। শালু বলল এখানে এমন হয়। এই মেঘ উড়ে এলে বৃষ্টি, আবার ভেসে গেলে রোদ।

 

দিঠি আর অয়ন ক্যামেরা হাতে বাগান পেরিয়ে হ‍েলিপ‍্যাডের দিকে এগিয়ে গেল। কয়েকটা পাহাড়ি কুকুর শুয়ে ছিল। বৃষ্টির পর চারদিক পরিষ্কার। চারদিকে বরফের চুড়া ঝকঝক করছে। ওধারে একটা সবুজ সাদা কটেজ্ দেখে হোটেল মনে হচ্ছে। একটা ইনোভা এসে দাঁড়ালো, দিঠি দেখে জারিনা আর প্রকাশজি আর একজন নেমে এলো। ঐ কটেজে ঢুকে গেলো।

 

সন্ধ্যার একটু পরে প্রায় বিধ্বস্ত জিষ্ণুরা এসে পড়লো। সবাইকে বেশ টায়ার্ড মনে হচ্ছিল। এর মধ্যে আবার ওদের একটা গাড়ি নাকি এ্যাক্সিডেন্ট করেছে আজ। এই পাহাড়ে ব্রেক ফেল করেছিল। কিন্তু ড্রাইভারের তৎপরতায় বেঁচে গেছে। নায়িকা আর নায়কের ঐ গাড়িতে থাকার কথা, কিন্তু কি এক দরকারে জৈন একাই গাড়িটা নিয়ে আগে বেরিয়ে এসেছিল ওর সহকারীর সাথে। তারপর গাড়ি এ্যাক্সিডেন্টে আটকে যায়। তবে নায়ক নায়িকা বেঁচে গেছে।

 সন্ধ্যায় দিঠি নিজের ঘরে বসে ভাবছিল আজ যেটা শুনল সেটা কি সত্যি দুর্ঘটনা, নাকি কেউ নায়ক নায়িকাকে বিপদে ফেলতে চেয়েছিল!! আসলে জারিনার ঘটনাটা ওর মাথায় ঘুরছে। আজ মৌ ওর পাশের ঘরে। দিঠি একা ওকে দেখতে পেয়ে ঢুকেই পড়লো আজ।

-"আসতে পারি, তোমায় একা দেখে এলাম " একটু হেসে দিঠি বলে।

-"আসুন আসুন, আপনার লেখার আমি ভক্ত।" মৌ হেসে বলে।

-"তাহলে তো ভালোই হল, এখন কেমন আছো ?"

-"বাপরে, মনে পড়লে এখনো কেঁপে উঠছি দিদি, ওটা যে কি ছিল!!!"

-"একটা প্রশ্ন করি, অত রাতে তুমি ওখানে কেন গেছিলে?"

একটু চুপ করে থাকে মৌ। কি যেন ভাবে। তারপর বলে -" একজন আসতে বলেছিল ওখানে। তবে নামটা বলতে পারবো না, এই ইউনিটের একজন।"

-" আচ্ছা, সে কি তোমার ভাল বন্ধু?"

একটু চুপ করে মৌ বলে -"সরি, এ ব্যাপারে কিছু বলবো না দিদি।"

-"আচ্ছা, তা কি হয়েছিল ওখানে? সে এসেছিল?" দিঠি একটু ঘুরিয়ে জানতে চায়।

-" আমি সবে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। একটা খসখস শব্দ শুনে ওদিকে তাকাতেই দেখি কি একটা উড়ে উড়ে আসছে।" ওর চোখে মুখে ভয় ফুটে ওঠে। ও বলে চলে -" বাপরে, কি ভয়ঙ্কর একটা ভুত। চোখ দিয়ে আগুন বের হচ্ছিল। আর একটা খ্যানখ্যানে হাসির শব্দ। অসহ্য...." ও কানে হাত দিয়ে চোখ বুজে ফেলে। দিঠি ওর হাতের চাদর সরে যেতে দেখতে পায় একটা উল্কি এম্+আর।

দিঠি বলে -" আচ্ছা, কেউ তোমার সাথে মজা করতেও তো পারে?"

-" তেমন কেউ এখানে নেই যে এমন মজা করবে। আর ওটা মজা ছিল না, ভুত ছিল দিদি"

ও একটু গম্ভীর হয়ে বলে।

দিঠি এবার বলে -" এই ইউনিটে কতদিন আছো? "

-"আগের ছবি থেকে। এই একবছর। তার আগে সহকারী হিসাবে অন্য গ্ৰুপে ছিলাম।"

-"এখানে সবাই কেমন? কোনো শত্রু আছে?"

-"না দিদি, আমি সামান্য ড্রেসের লোক, নায়িকা কি পরছে কোন সিনে, টিপ নেল-পালিশ আর জামাকাপড় সে সব মিলিয়ে রাখি। ওকে সাহায্য করি। অঙ্কনা দি খুব ভাল। "

-" না, মানে কেউ হিংসা করে ..... তোমার ক্ষতি হলে যার লাভ?"

-'' আমি তো ক্যামেরার পিছনের লোক। ও সব হয় যারা পর্দায় মুখ দেখায় তাদের সাথে। আর যাদের গুরুত্ব বেশি তাদের সাথে।"

সাদামাটা দেখতে মেয়েটা , চোখ দুটো সুন্দর। চাপা গায়ের রঙ। ওকে পর্দায় মানাবে না তেমন,ও নিজেও জানে। দিঠি উঠে পড়ে, বলে -"খেতে যাবে না?"

-" ঐ আমার বন্ধুরা আসুক, যাবো। আপনি যান।" হেসে বলে মৌ।

 

দিঠি বাইরে এসে দাঁড়ায়, সামনেই পূর্ণিমা, চাঁদের আলোয় আশেপাশের বরফের চুড়া ঝকঝক করছে।বেশ লাগছে দেখতে। কিন্তু ঠাণ্ডায় চোখ মুখ কেটে যাচ্ছে। ওধারে বড় ঘরে জিষ্ণু,অয়ন,জৈন সব বসেছে আড্ডায়।

 

দিঠি নিজের ঘরে ফিরে ভাবে মৌ এর উল্কির আর্ টা কে? সে কি এই টিমের কেউ? ওকে দেখাই বা কে করতে বলেছিল রাতে? ওর কল্পনা প্রবণ মন জাল বুনে চলে। জারিনা থেকে আজ জৈনের এ্যাক্সিডেন্ট সব ঘুরে ঘুরে আসে ।

 

যে হোটেলে ওরা আছে এটার মালিক ওদের ড্রাইভার শালুর এক মাসি। ঐ মেয়ে দুটো ওর মাসতুতো বোন। খেতে গিয়ে দেখলাম ওর মাসিকে, বেশ দেখতে, এই বয়সেও সুন্দরী। দুই মেয়ের মা নয়,ওনার দুই বোন মনে হয়। আগেই জিষ্ণু সবাইকে বলে দিয়েছিল এই পাহাড়ে খাবার নিয়ে প্রবলেম। ওর ইউনিটে ভাল রাঁধুনি আছে, কিন্তু বাজার হাট নেই। যা রান্না হবে খেতে হবে। খেতে গিয়ে দেখলাম সুপ, নুডুলস, রুটি , চিকেন আর একটা তরকারি। সাথে মিষ্টি। সবাই ছড়িয়ে থাকলেও খাওয়াটা এক জায়গায়। এই পাহাড়ে এ-তো প্রচুর আয়োজন! যে যার কটেজ্ থেকে এসে খেয়ে যাচ্ছে এখানে। নায়ক নায়িকারা ঠাণ্ডায় ঘরের বাইরে এলোনা। অঙ্কনা আর ওর এক বান্ধবী আছে দিঠির দুটো ঘর পরে। ওরা সুপ আর স্যালাড্ খাবে, রিঙ্কি নিয়ে গেলো। নায়ক দুটো রুটি আর চিকেন। শালু দিয়ে এলো। দিঠিরা খেয়ে যে যার মতো ঘরে চলে গেল। অয়ন আবার আড্ডা মারার প্ল্যানে ছিল, কিন্তু সঙ্গী পেলো না এত রাতে। বাধ্য হয়ে শালুকেই পাকড়াও করলো।

 

দিঠি তার ডাইরি নিয়ে পড়লো। সব লিখে না রাখলে ফিরে মনে পড়বেনা । এবার এই রেশম পথের উপর একটা উপন্যাস লিখবে ফিরেই। এখন পর্যন্ত প্রচুর মাল মশলা পাওয়া গেছে।

 

পরদিন সকালে জুলুখের বিখ্যাত জিগজ্যাগ্ রোডে শুটিং, একটা গানের কিছুটা, আবার ফাইটিং এর কিছুটা। দিঠি আর অয়ন আশেপাশে ঘুরে দেখবে, আর শুটিং দেখবে ভেবেছে। পরদিন ওদের নাথাং ভ‍্যালীতে থাকার কথা। ওখানে ভাল হোটেল নেই, সব সাধারণ হোম-স্টে। একেবারেই সাধারণ , নায়ক নায়িকারা তাই এই জুলুখেই থাকতে চাইছে। পরদিন নাথাং এ শুটিং করে কুপুপ বাবা-মন্দির হয়ে ছাঙ্গু, আবার রাতে গ্যাংটক। অঙ্কনা একবার হেলিকপ্টারের বায়না করেছিল।জিষ্ণু বলেছে শুটিং হবে রাস্তায় রাস্তায়। সব জায়গায় হেলিপ‍্যাড নেই। গাড়িতেই ঘুরতে হবে। তাতে চুপ করেছে।(চলবে)


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Thriller