Sandip Ghosh

Tragedy Inspirational Others

3  

Sandip Ghosh

Tragedy Inspirational Others

শিবানীর বড়দিন

শিবানীর বড়দিন

3 mins
286



আজ ফিরতে একটু দেরী হয়েছে শিবানীর | গুটি গুটি পায়ে বাড়ির দরজার দিকে এগিয়ে যায় | একটু একটু করে পাল্লা দুটোকে ঠেলে যেই চৌকাঠের ভেতরে পা ফেলেছে , মায়ের গম্ভীর আওয়াজ--------" এতক্ষণে আসা হোল ? আর একটু আগে ফেরা যায় না ?" শিবানী কোন উত্তর করে না | হাত পা ধুয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে নেয় | তারপর পড়ার টেবিলে গিয়ে বসে | শিবানী ক্লাস সেভেনে পড়ে | মেধাবী ছাত্ৰী | পড়াশুনায় বড্ড নেশা তার | ওদের ক্লাসের কয়েকজন পিছিয়ে পড়া আদিবাসী মেয়েকে নিয়ে পড়াশুনার চর্চাটা বেশ ভালোই শুরু করেছে | মেয়েগুলোও খুব আগ্রহী | শান্তিমণি, শম্বরী, দুলালী, গোলাপী আর কানালী---এই পাঁচজন শিবানীর যেমন বেস্টফ্রেন্ড তেমন বাধ্যছাত্রীও বটে | শিবানীর মা মেয়ের স্কুলেরই অশিক্ষক কর্মী | ক্লাস শুরু হওয়ার আধঘন্টার বেশি আগে থেকে স্কুলে পৌঁছতে হয় | সেই সুবাদে শিবানী আদিবাসী বন্ধু-ছাত্ৰীদের নিয়ে রোজ একটা করে ক্লাস নিয়ে নেয় | সবটাই ঘটে ভালোবেসে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে | ওদের গ্রামে তার বয়সী কয়েকজন থাকলেও জ্ঞান হওয়ার পর থেকে শিবানী ওদের বন্ধুত্বের স্বাদ নিয়েই বড় হয়ে উঠছে | খেটে খাওয়া পুঁথিবিদ্যায় অশিক্ষিত পরিবারের মেয়েগুলোর অসহয়তা ছোট্ট শিবানী উপলব্ধি করেছিল | তাদের চোখের ভাষায় সে দেখতে পেত এক জানা-বোঝার ব্যাকুল আর্তি | ভীষণ আন্তরিক প্রবণ এই মেয়েটি ক্লাসে বরাবরই প্রথম | শিবানীর চেষ্টায় ওরা আজ লিখতে, পড়তে শিখেছে, বোঝবার ক্ষমতা তৈরী হয়েছে | তার পাশাপাশি স্কুলের বাত্সরিক পরীক্ষায় (মানে সিক্স থেকে সেভেন) মাঝারিমানের রেজাল্ট করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে ! এ যে কেবল সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র শিবানীর সৌজন্যে তা সকলেই জানে এবং তাকে ভালোওবাসে | সে বড় আদরের ছাত্ৰী স্কুলের হেডমিস্ট্রেসের |


এই পাঁচজনের মধ্যে শম্বরী পড়াশুনায় একটু এগিয়ে | শিবানী যা বলে- বোঝায়, বোঝে সবার আগে | ওর জন্য আজ শিবানীর মনটা খুব খারাপ হয়ে আছে | আজকে ওকে দেখে খুব একটা ভালো আছে মনে হয়নি শিবানীর | জিজ্ঞেস করেছিল ; -------"শম্বরী তোর কি শরীর খারাপ ?" শম্বরীর আড়ষ্ট গলায় উত্তর ছিল ; -----"কই, না-তো, আমার কিছু হয় নাই |" তবে দুলালী জানিয়েছিল ; ওর নাকি আজ ক'দিন ধরে বেশ জ্বর আসছে , ছাড়ছে আবার হচ্ছে ! শুনে শিবানী আর চুপ থাকতে পারেনি | সোজা শম্বরীকে বলেছিল ; ----- " তুই বাড়ি যা বিশ্রাম নিবি , আর ডাক্তার দেখিয়েছিস ? কাল ডাক্তার অবশ্যই দেখাবি | শম্বরী কাঁদতে শুরু করে---আনন্দের মুহূর্ত সেও-তো গায়ে মাখতে চায় | আসলে বড়দিন ঠিক কি ? বড়দিনের তাত্পৰ্যই বা কি ? ওর আদিবাসী বন্ধুরা জানে না | এই প্রথম ওরা বড়দিনের স্বাদ পেতে চলেছে | তাছাড়া ওরা চায় আজ বড়দিন উত্সবের আয়োজনের প্রস্তুতি সেরে ফেলতে | কে কি কার্ড বানাবে ? কে কি করবে এইসব নিয়ে শিবানীর দেওয়া টিপস শুনে সেই মতো ওরা নিজেদের তৈরি করবে | কি হোল শম্বরীর ! কাল ডাক্তারের কাছে ওকে পাঠাতেই হবে | একটা অব্যক্ত উদ্বেগ নিয়ে শিবানী এইসব বন্দোবস্ত করেই বাড়ি ফিরে আসে |

   আজ বড়দিন | উত্সবের মেজাজ | শান্তা - উপহার - কেক-চকলেট | ওহ্ দারুন একটা ঝকঝকে শীতের সকাল | আকাশে-বাতাসে নলেন গুড়ের ম-ম গন্ধ | সত্যিই মনপাগল করা একখানা দিন | শিবানী সকাল থেকেই তার বাইরের উঠোন রঙিন কাগজ দিয়ে সাজাতে ব্যস্ত | কিন্তু কেউ যে এলনা এখনো ?হয়ত একটু পরেই সবাই একে একে এসে পড়বে | ঠিক তাই, একটু পরেই দুলালী এল, তবে একা | শিবানী বিস্মিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে ; --------"তুই একা ? বাকিরা কোথায় ? ওরা এলনা কেন এখনও ? কত কাজ আছে আমাদের |" -----টেবিল বার করতে হবে, কেকটা সুন্দর করে সাজিয়ে টেবিলের উপর রাখতে হবে তো ! এবার দুলালী চুপ থাকতে না পেরে জোরে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে | "কি হোল-কি হোল ?"--- বলতে বলতে ঘর ছুটে বেরিয়ে আসে শিবানীর মা | শিবানী কয়েক সেকেন্ড চুপ | তারপর দ্রুত বাড়ির বাইরে বেরিয়ে যায় | মিনিট খানেকের মধ্যে পৌঁছে যায় শম্বরীদের বাড়ির দোরগড়ায় | বুক চাপড়ে কেঁদে চলেছে শম্বরীর বাবা-মা | শিবানীর বোবা-বাকরুদ্ধ অপলক দৃষ্টি শম্বরীর নিথর দেহের মধ্যে প্রাণবন্ত শম্বরীকে খুঁজে চলেছে |



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy