Sandip Ghosh

Children Stories Action

3  

Sandip Ghosh

Children Stories Action

লাট্টু ; কলমে - সন্দীপ ঘোষ

লাট্টু ; কলমে - সন্দীপ ঘোষ

16 mins
260



চলো, আজ তোমাদের একটা গল্প বলি | গল্পটা কিন্তু জঙ্গলের ভেতরে আছে | তাহলে তো জঙ্গলের ভেতর যেতেই হবে | কি যাবে তো ? ভয় লাগছে ! আরে না-না ভয়ের কিছু নেই | আমি তো আছি নাকি ? আর তাছাড়া এই জঙ্গলে বাঘ, সিংহ , ভাল্লুক, হাতি--- এইসব ভয়ঙ্কর পশুরা থাকে না | তবে হ্যাঁ উত্তেজনা আছে বৈকি ! এবার চলো যাওয়া যাক-----দাড়াও, সঙ্গে একজনকে নিতে হবে যে ! কে বলো তো ? তার নাম হচ্ছে 'লাট্টু' | লাট্টু হচ্ছে একটি কুকুর | যাকে আমরা একটি অন্য শব্দে বলি 'সারমেয়' | আর নামটা আমারই দেওয়া | লাট্টু কিন্তু আর পাঁচটা সাধারণ কুকুরের মতো নয় | লালচে রঙের বেশ বড়সড় চেহারার ছিল | সে কিন্তু আমাদের বাড়ীর পোষা ছিল না | আর কোথা থেকে যে এসেছিল আমাদের বাড়িতে ,কেউ জানে না | একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আমিই প্রথম দেখি আমাদের মাটির বাড়ির ছোট্ট দাওয়ায় বসে থাকতে | আমি তখন সবে প্রাইমারির পাঠ শেষ করে হাইস্কুলে ভর্তি হয়েছি | আমার কৌতুহলের শেষ ছিল না সদ্য আগত কুকুরটাকে নিয়ে | আর বলছ কি পড়াশুনার পাঠ শিকেয় উঠেছিল ! নিজে মুখে চারটি কোনোরকমে গুঁজে নিয়ে বেরিয়ে পড়তাম | তারপর ওকে খাওয়ানো , খেলা করা, একসাথে সারাদিন রোদে টো-টো করে ঘুরে বেড়ানো--সবই চলত | আর দিনশেষে মায়ের বকাঝকা, পিটুনি সমানতালে চলত |


যাইহোক, লাট্টুর কয়েকটা আচরণ আমার মনে বেশ দাগ কেটেছিল ! কি বলো তো ? রাস্তার কুকুরগুলো দেখবে গৃহস্থের দরজা খোলা পেলে চুপি চুপি ঢুকে বাড়ির খাবারে মুখ লাগিয়ে দেয় নয়ত খাবার সাবাড় করে পালায় | লাট্টুর আচরণ একেবারেই উল্টো | লাট্টু ঘরের দরজার বাইরে থাকবে, লোভনীয় খাবার দেখলেও কিছুতেই চৌকাঠ পেরিয়ে ঘরে প্রবেশ করবে না | অনেক চেষ্টা করেছি ওকে ঘরে ঢোকানোর, কিন্তু বারবার ব্যর্থ হয়েছি | ও ছিল এসবের অনেক উর্দ্ধে | খুব ভালোবেসে ফেলেছিলাম ওকে | আর' বাসব নাই বা কেন বলতো ! রাত্রিবেলায় পাঁচিল ঘেরা ভিতরেই থাকত ও | স্বাভাবিকভাবেই পাঁচিলের সদর দরজা বন্ধ থাকত | কোন কোনদিন রাতের বেলায় পটির বেগ হলে কি করতো জানো, যেদিকটায় বাড়ীর পাঁচিলের বাইরে জল নিকাশির জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা আছে, ঠিক ঐ জায়গাতে মাটি খুঁড়ে পটি করে আবার মাটি চাপা দিয়ে রেখে দিত | তারপর সকালে স্নানের আগে বাড়ির বড়দের কেউ কোদালে করে তুলে নিয়ে গিয়ে বাইরে ফেলে আসত | ভাবতে পারছ লাট্টুর কান্ড ! অন্য কুকুর আমাদের বাড়ীর আশেপাশে ঘেঁসতে সাহস করত না লাট্টুর ভয়ে |


   আমাদের গ্রাম, মাঝে সদর শহরে যাবার পাকা রাস্তা আর ওপারে সেই জঙ্গল , যেখানে আমরা আজ যাচ্ছি | ওহ্ তোমাদেরকে তো এই জঙ্গলের নামটাই বলা হয় নি | শাল-মহুয়া-পলাশের জঙ্গলের নাম 'ধাদকি' | এই ধাদকি জঙ্গলে যে প্রথম যাচ্ছি তা নয় | লাট্টু কিছুতেই যাবেনা, ওকে জোর করে টানতে টানতে নিয়ে গিয়েছি অনেকবার | 

পাকা(পিচ) রাস্তায় উঠলেই কেন জানিনা বন-জঙ্গলের নেশার ঘোর আরো বেশি করে মাথায় চড়ে বসে । রাস্তার দুপাশে সারি সারি কদম,কৃষ্ণচূড়া, শিরিষ ও শিশু গাছের সমারোহ এবং চলতি পথে পাখির কিচিরমিচির আওয়াজ এসবই আমার মনকে টেনে নিয়ে যেত জঙ্গলের দিকে । তবে আজও তার ব্যতিক্ৰম হোল না | মনটা আনন্দে টগবগ করে ফুটছে , আর আমার ঠিক পিছনে গুটি গুটি পায়ে একপা-দুপা করে লাট্টু আসছে | যেন হাঁটতে কত কষ্ট | বন বাদে আর যে কোন জায়গার কথা শুনলেই হোল আনন্দে দু-পা তুলে নাচতে শুরু করে দেবে | বলতে বলতে প্রায় চার'শ মিটার পথ বাড়ি থেকে চলে এসেছি আর পিচ রাস্তা ছেড়ে ডানদিকে আদিবাসী পাড়া রেখে সোজা প্রায় দু'শ মিটার গেলেই জঙ্গলের সীমানায় ঢুকে পড়ব | সীমানায় পৌঁছেই লক্ষ্য করছি লাট্টু আজ যেন একটু বেশি সতর্ক | ওর তাকানোর ভঙ্গি, লেজ নাড়া, কানখাড়ার বহর দেখে আমি অবাক্ ! পরমুহূর্তেই আনন্দের ঘোরে কোনকিছু না ভেবে এক দৌড়ে আমার প্রিয় পলাশ গাছটার নীচের ডাল ধরে উঠে পড়লাম উপরের একটা বড় ডালে | পাতা ঝরার সময় এটা, গাছে পাতার সংখ্যা কমে এসেছে | তারই ফাঁক দিয়ে নিচে দেখলাম লাট্টু গাছটার চারপাশে গোল হয়ে পাক খাচ্ছে এবং শরীরীভাষার কোন পরিবর্তন নেই বরং আরো বেশি যেন সতর্ক | আমি উঠে পড়লাম উপরের একটা ডালে | অন্য একটা ডাল ধরে আরো উপরে উঠতে যাব, শুনতে পেলাম সামনের বড় শাল গাছটার দিক থেকে আসা একটা অদ্ভুত 'মচ্-মচ' শব্দ ! শোনবার চেষ্টা করতে লাগলাম | কয়েক সেকেন্ড বাদেই ফের শব্দ ! তবে এবারের শব্দটা যেন অন্যরকম মনে হোল | 'ঘঁ-ঘঁ-ঘঁ'--------ততক্ষণে বিষ্ময় আর কৌতুহল আমার দেহমনকে আষ্ঠেপিষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে | মুহূৰ্তে উঠে পড়েছি আরো উপরে |


তারপর পলাশপাতার ফাঁক দিয়ে যা দেখলাম একেবারে চক্ষুচড়কগাছ | আমার সারা শরীর কাঁপতে শুরু করল , হাত-পা যেন ক্রমশঃ অবশ হয়ে আসছে | নীচের দিকে তাকিয়ে লাট্টুকে খোঁজার চেষ্টা করছি | হারিয়ে ফেলেছি বাকশক্তি | লাট্টুকে যে ডাকব,গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ-ই বেরোচ্ছেনা | দেখলাম সেই শাল গাছটার নিচে বড়সড় ঝোপটার কাছে একবার যায় আর আসে | আর ওদিকে দেখি বড়-ছোট মিলিয়ে পাঁচ-পাঁচটা শেয়াল একটা রামছাগলকে (বেশ বড় চেহারার ছাগল) ঘিরে গোল হয়ে বসে | পরক্ষণেই দৃশ্যটা বদলে গেল | এবার শেয়ালগুলো ছাগলটাকে মাঝে রেখে গোল হয়ে ঘুরতে শুরু করেছে | আবারও কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে দৃশ্যটা বদলে গেল | দুপাশে দু'জন, আর পিছনে দু'জন আর সামনে একজন দাঁড়িয়ে পড়ল, তারপর সামনের শেয়াল কি একটা আওয়াজ করে সামনের দিকে এগোতেই রামছাগলও চলতে শুরু করল | এই দৃশ্য দেখব ভাবিনি | প্রথমে ভয় পেলেও নিজেকে কোনোরকমে সামলে নিয়ে তরতর করে গাছ থেকে নেমে আসি |


লাট্টু খুব অস্থির হয়ে উঠেছে | আমার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে 'ভূ-ভূ' করে মৃদুস্বরে ডেকে উঠতেই আমি ধমক দিয়ে থামাই | ও আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে |

যা যা দেখেছি সব কথা লাট্টুকে বলি | বলেই আর দেরি না করে লাট্টুকে রাজি করিয়ে ছাগল আর শেয়ালদের পিছু নিই | তবে খুব সন্তর্পণে | ঘন শিয়াকুল কাঁটার ঝোপঝাড় ডিঙিয়ে কাঁটার আচড় খেয়ে কোন কৌতুহল মেটানোর অভিজ্ঞতা আমার এই প্রথম | দেখতে পাচ্ছি না ওরা কোনদিকে গেল | আমাদের চলার পথটা কোন পথ নয় | আমি যত বাঁদিক ঘুরি, লাটটু তত ডানদিক ঘোরে | আমি ফিসফিসিয়ে বাঁদিক দেখিয়ে বলি---'এদিকে চল্ লাট্টু', কে শোনে কার কথা ও ডান দিক ধরে | এবার আমি প্রচন্ড বিরক্ত | ওকে কিছু বলার আগেই ডানদিক থেকে মৃদু একটা 'ঘঁ-ঘঁ-ঘঁ' আওয়াজ শুনি | এতক্ষণে বুঝলাম লাট্টুর ডান দিকের যাওয়ার কারণটা | চাপাস্বরে লাট্টুকে 'চল-চল', বলে ডানদিকে বড় বড় শাল গাছ আর ঝোপের নীচ দিয়ে পা টিপে-টিপে যেতে লাগলাম | এইভাবে কিছুদুর যাওয়ার পর একশ ফুট দুরে শেয়ালগুলোকে দেখতে পেলাম | ওরা বেশিদুর যেতে পারেনি | ছাগলটাকে নিয়ে যাচ্ছে,হয়ত সেজন্যই | যাইহোক ছাগলটাকে ওদের ওভাবে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্য আমার বোধগম্য হোল না | লাট্টু যেন ক্রমশঃ অস্থির হয়ে উঠেছে | ওর চোখের ভাষাতেও না বুঝে ওঠার চিহ্ন দেখতে পেলাম | ওকে শান্ত করে চুপি চুপি বলি,'দেখি কি করে, চল্ না'--- ! ওরাও এগোয়, আমরাও পিছু পিছু সমানতালে যেতে থাকি | এইভাবে আরো প্রায় এক-দেড়শো মিটার যাওয়ার পরে দেখলাম , জঙ্গলের মাঝে খাল না জলাশয় ঠিক বুঝতে পারলাম না | শেয়ালগুলো ঐদিকে ছাগলটাকে নিয়ে ক্রমশঃ ঢালু হয়ে যাওয়া ঘাসবনের উপর দিয়ে নিচের দিকে নামছে | আমরা দাঁড়িয়ে পড়লাম | ভাবছি কি করব ? এখানটাই জঙ্গলের বড়বড় গাছ বিশেষ তেমন নেই | এখান থেকে শুরু হয়ে নিচের দিকে নেমে গেছে বড়বড় ঘাসের জঙ্গল আর ছোট লতানো গাছের ঝোপ | লাট্টু পাশেই একটা উঁচু ঢিবির উপর থেকে বসে ওদের নজর রাখছে | না ! ওদের আর দেখতে পাচ্ছি না | লাট্টু ত্বরিত গতিতে ঢিবি থেকে নেমে আমার গা ঘেঁষে দাঁড়ায় | সেও দেখতে পাচ্ছে না | তীক্ষ্ণ দৃষ্টি মেলে শেয়ালদের খুঁজতে থাকে , আর আমার দিকে তাকায় গর্ গর্-র্ করে | আমি ওকে শান্ত করে বলি; "কি হোল তোর ? তুই তো আসতে চাইছিলি না ! নে নে চল্ চল্ , " | 


আর এক মুহূর্তও দেরি না করে আমরা নামতে লাগলাম নিচের দিকে | ঢাল বেয়ে নেমে বড় একটা ঘাসের ঝোপের পিছনে দাঁড়ালাম | ঝোপের ফাঁক দিয়ে দেখবার চেষ্টা করছি , কিন্তু ওদের দেখা যাচ্ছে না | আমি লাট্টুকে কানে কানে বললাম; "যা-না , এগিয়ে দেখ্ না !" লাট্টু নির্বিকার | ও আসলে আমাকে কিছুতেই কাছ-ছাড়া করবে না | অগত্যা একসঙ্গে দুজনেই পা ফেলে- ফেলে এগোতে থাকি | ব্যা-ব্যা আওয়াজ হতেই থমকে দাঁড়াই ! পাশের ঝোপে লুকিয়ে পড়ি | তারপর ঝোপের ফাঁক দিয়ে যা দেখলাম !---- অবাক হওয়ার পালা, একবার করে আমার সারা শরীর শির্-শির্ করে উঠছে


ছোট একটা খাল | বড় মানুষের হাঁটুর উপরে জল হবে | জল বইছে কুলকুল করে | আমরা ওদের আরো কাছে চলে এসেছি | ভাবছি , জলের কিনারে কি করছে ওরা ছাগলটাকে নিয়ে ! ছোট আকারের শেয়াল দুটো ছাগলটার সামনের দুটি পা কামড়ে ধরেছে ……বড়গুলোর একটা পেছনের পাগুলো একবার কামড়ায় আর ছাড়ে | ছাগলটার মুখের কাছে অন্য দুটি কখনো কানে, কখনো গলায় কামড়ের চাপে জলে ঠেলে নামানোর চেষ্টা করে | তীব্ৰ যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকা ছাগলটার অনবরত 'ব্যা-ব্যা' আর সেই গোঙানির মতো 'ঘঁ-ঘঁ-ঘঁ' আওয়াজ আমাকে আর লাট্টুকে আরো বেশি অস্থির করে তোলে | একসময় ছাগলের চিত্কার থামল | তারপর সে জলে নামতেই একটা বড় শেয়াল ওকে পেছন থেকে ঠেলা মারতেই জলের মধ্যে হুমড়ি খেয়ে ডুবে গেল | তারপর ব্যা-ব্যা করতে করতে কোনোরকমে সোজা হয়ে উঠে দাঁড়ালো | জলের উপরে শুধু শরীরটা দেখা যাচ্ছে | অবাকের পর অবাক হচ্ছি | দেখলাম--- শেয়ালদের মধ্যে যে দুটো ছোট ছিল ওরা ছাগলটার পিঠে লাফিয়ে উঠল |


ছাগলটা ওদের পিঠে নিয়েই সাঁতরে চলেছে না হেঁটে যাচ্ছে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না | | কারণ, ওর পিঠের ওপর চেপে থাকা শেয়াল দুটোর পা কখনো জলের উপরে বা নিচে দেখা যাচ্ছে | বাকী তিনটে শেয়াল সাঁতরে পার হচ্ছে সামনে-পিছনে | খাল বেশি চওড়া নয় | জলে স্রোত নেই, সময় খুব একটা বেশি লাগলো না | পার হয়ে ওরা ওপারে চলে গেল | ওপারে পৌঁছেই ছাগলটা ঘাসের উপর উল্টে গেল | কি হোল ! মরে গেল নাকি ! লাট্টু আমার দিকে তাকায় ! তারপর দেখি বড় তিনটে শেয়াল ওপারের জঙ্গলের দিকে দ্রুত মিলিয়ে গেল | আর ছোট শেয়াল দুটো ছাগলের আশেপাশে ঘুরে বেড়াতে লাগল | ছাগলটা এখনো ওঠেনি | এবার মুখের কাছে একটা শেয়াল মুখ নিয়ে যেতেই ছাগলটা নড়েচড়ে বসে | উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করে,কিন্তু পড়ে যায় | শেষমেষ সোজা হয়ে দাঁড়ায় | খিদে পেয়েছে বোধ হয় , তারপর এদিক-ওদিক তাকিয়ে নরম সবুজ ঘাসে মুখ রাখে | এইভাবে বেশ কিছুক্ষণ ধরে ছাগলের ঘাস খাওয়া দেখতে লাগলাম | শেয়ালগুলো একবার করে বিরক্ত করে | ঘা ঘেঁসে দাঁড়ানো লাট্টুর ভিতরের গর্জন শুনে বুঝি ও ভীষণ রেগে আছে | ছাগলটাকে দেখে মনে হোল যেন দেহে বল পেয়েছে | ও আবার ঘাস খেতে শুরু করে | একটা শেয়াল বসে পড়েছে | অন্যটা খালের কিনারে এসে জল খাচ্ছে |

এখানে একনাগাড়ে একইভাবে ওদের দেখতে দেখতে আমার ভিতরের শিহরণ, রোমাঞ্চ মিলিয়ে গেছে | লাট্টুকে বলি; "চল্ লাট্টু, এবার বাড়ি…………" ফিরি বলার আগেই, ও আমার দিকে ঘুরে ভুক্-ভুক্ করে ওঠে ! তারপর আমার প্যান্টের ঝুল দাঁত দিয়ে টানতে টানতে ঝোপের আড়াল থেকে বের করে খালের কিনারের দিকে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেয় | শীতের রোদ্দুর গায়ে বেশ আরাম হলেও মাঝে মাঝে জঙ্গলের দিক থেকে বয়ে আসা ঠান্ডা হাওয়াও মন্দ লাগছে না | যদিও ঠান্ডাটা তেমন জোরালো ছিল না | লাট্টু ভিতরে ভিতরে ভিতরে ফুঁসেই চলেছে এতক্ষণ ধরে ঘটে চলা ওদের কাণ্ডকারখানা দেখে | "লাট্টু আর কিছু নেই, চল এবার যাই"----- যেই বলা এবং আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই অমনি ত্বরিত্ গতিতে সটান গিয়ে জলে ঝাপ লাট্টুর ! নিমেষের মধ্যে সাঁতরে ওপারে | দু'পায়ে দাঁড়িয়ে চরতে থাকা ছাগলটার শিং-এর উপরে থাবার পর থাবা বসাতে থাকে | একটু দুরে থাকা ছোটশেয়াল দুটো এগিয়ে আসে খ্যাঁক-খ্যাঁক করতে করতে | তত্ক্ষণাত্ লাট্টু বোঁ করে ঘুরে গর্জন করে তেড়ে যেতেই শেয়ালদুটো ভাগ | যেদিকে বড় গুলো গেছে | ফিরে এসে আবার ছাগলটাকে বিরক্ত করে , হাত-পা-মুখে থাবা দিয়ে খোঁচা মারতে থাকে | ছাগলটা অস্বস্তিবোধ করে | শেষে আর ধৈর্য্য রাখতে না পেরে শিং-উচিয়ে লাট্টুকে জোরে গুঁতো মারে, লাট্টু ছিটকে পড়ে মাটিতে, কাঁইমাঁই করে চেঁচাতে থাকে | লাট্টু যে কিছু একটা করতে চাইছে, এটা বেশ বুঝতে পারছি | ছাগল আবার চরতে শুরু করতেই ,লাট্টু আবার ওকে বিরক্ত করতে লাগলো |


শেষে ছাগলের বিরক্তির মাত্ৰা এমন পর্যায়ে নিয়ে গেল, যে লাট্টুকে শিং দিয়ে তুলে আছড়ে মাটিতে ফেলে গুঁতোতে থাকল | লাট্টু কোত্ কোত্ করতে করতে উঠে গোল হয় ছুটতে শুরু করে | ছাগলও পিছন ধরেছে শিং বাগিয়ে | মনে হচ্ছে মেরেই ছাড়বে, ভয়ংকর রেগে উঠেছে সে | এবার লাট্টু আমার দিকে তাকিয়ে খালের জলে দিল ঝাপ | সাঁতরে এপারে আসতে থাকে | তাড়া করতে থাকা ছাগলও ঝাপ দিল জলে | লাট্টুর পিছনে আসে | বুঝলাম লাট্টু যা করতে চেয়েছিল, তাতে সে সফল হয়েছে | ও আমার পিছনে গিয়ে লুকোনোর ভান্ করে ও মিথ্যে কাঁইকুঁই করে চলে | ছাগলটা জল থেকে উঠে এসে আমাকে দেখে থমকে দাঁড়ায় | তারপর পাশকাটিয়ে পিছনে দাঁড়ানো লাট্টুর দিকে এগিয়ে যাবার চেষ্টা করে | প্রথমে ছাগলের রণমুর্তি দেখে ভয় পেয়েছিলাম | বন্ধুদের সঙ্গে আদিবাসী পাড়ায় যাওয়ার সুবাদে রামছাগলদের সংস্পর্শে থেকেছি | তাই ভয় লাগেনি | একঝটকায় তার শিং দুটো ধরে ফেলি |


না----সে নড়বার চেষ্টা করেনি | শিং দুটো ধরে থাকা অবস্থায় মাথাটা নীচু করেই রাখে | আমি আস্তে আস্তে হাত সরিয়ে নিলাম | বললাম ; "ও হোল লাট্টু , খুউব ভালো"……প্রশংসা করতে লাগলাম------, শান্ত ভঙ্গিতে দু'বার 'ব্যা-ব্যা' করে উঠল | তারপর লাট্টুর কাছে গিয়ে একটা পা লাট্টুর ঘাড়ে চাপিয়ে হয়ত বন্ধুত্বের আহ্বান জানালো | লাট্টু দু'পা তুলে একপাক ঘুরে তার আহ্বানকে সম্মান জানালো | এরপর ফিরবার পথে পা বাড়াতেই দুর থেকে ভেসে আসা দৌড়ানোর শব্দ শুনতে পাই | শব্দটা ক্রমশঃ এদিকে এগিয়ে আসছে | তারপর ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি খালের ওপারে জঙ্গল থেকে সাঁই সাঁই শব্দ করতে করতে সেই বড় তিনটে শেয়াল মুখে শিকার ধরা অবস্থায় খালের দিকে আসছে | তারপর খালের কিনারে পৌঁছে শিকারগুলো এক ধারে ফেলে রেখে জলে দিল ঝাঁপ | সাঁতরে এপারে আসতে থাকে | আমি ভয় পেয়ে গেলাম | হ্যাঁ--ওরা আমাদের দিকেই আসছে | ঘাবড়ে গেলাম | লাট্টুও অপ্রস্তুত ! ওর চোখে মুখেও ভীতির ছাপ স্পষ্ট | তবে সেটা আমাকে নিয়ে | "ওরা তেড়ে আসছে , লাট্টু চল পালাই" বলে আমরা দৌড়োতে শুরু করি বনের ঝোপ-কাঁটা ঝোপের আঁচড় খেতে খেতে | ছাগলটাও দৌড়োচ্ছে আগে আগে | লাট্টু আমার পিছনে, ঘাড় ঘুরিয়ে শেয়ালদের দেখে আর দৌড়োয় | 


একবার করে তীব্ৰ গর্জন করে ওঠে | ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি ওরা প্রায় কুড়ি মিটার পিছনে চলে এসেছে | আমি হাঁপিয়ে উঠেছি, আর পারছি না | কোনো রকমে আমার প্রিয় পলাশ গাছটার কাছে এসে পড়ে যাই | বাঁ পায়ের গোড়ালির ঠিক উপরে ভীষণ যন্ত্রণা | শেয়ালগুলো আরও কাছে আসতেই লাট্টু রুদ্রমুর্তি ধরে | হুংকার ছাড়তে থাকে | আঁচড় কাটে মাটিতে থাবার নখে | আমার শরীর কাঁপছে | যেন উঠবার শক্তিটুকু হারিয়ে ফেলেছি |

লাট্টুর রুদ্রমুর্তি দেখে শেয়ালগুলো থমকে দাঁড়ায় | খ্যাঁ-খ্যাঁ করে গর্জন ছাড়ে | এক পা- এক পা করে এগিয়ে আসতে থাকে | লাট্টু গর্-র্ গর্-র্ করতে করতে ওদের দিকে এগোয় আর আমি কোনোরকমে উঠে বসে পিছোতে থাকি | এরা বোধ হয় আমাদের মেরেই ফেলবে | লাট্টু বিদ্যুত গতিতে প্রায় ভল্ট মেরে একেবারে তিনটের মাথায় সজোরে ধাক্কা মারে | শেয়াল তিনটে ছিটকে পড়ে |


লাট্টু ফের আক্রমণের জন্য ঘুরে দাঁড়াতেই দেখি একটা শেয়াল আমার বাঁদিকে আমাকে মারতে তেড়ে আসে | লাট্টু এক সেকেন্ডও দেরি করেনি, এক লাফে ওর পিঠে বসে ঘাড়ে জোর কামড় দেয় | শেয়ালটা গোঙাতে গোঙাতে মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়ে | ফের ওর বুকে চেপে মুখটা থাবার নখে ফালা ফালা করে দেয় | শেয়ালটা নেতিয়ে পড়ে | অন্যদুটো শেয়াল প্রথম আঘাতটা সামলে হামলার জন্য উদ্যত হয় | এবার তীব্ৰ আক্রোশে ওরা দু'জন দুদিকে ভাগ হয়ে আমার দিকে তেড়ে আসে | আমি ভয়ে পাথর , নড়াচড়ার শক্তিটুকও হারিয়ে ফেলেছি | লাট্টু দুরন্ত গতিতে এক লাফে আমার কাছে এসে গা ঘেঁসে দাঁড়িয়ে পড়ে | গায়ে-গা লাগিয়ে চক্কর দিতে থাকে | ওদের একজন এখনো সংজ্ঞাহীন | হামলা করার সাহস হোল না বোধহয়, দাঁড়িয়ে পড়ল | 


আমি তো ভাবলেশহীন, ফ্যালফ্যাল করে দেখে চলেছি ওদের কাণ্ড | লাট্টু সমানে গর্জন করে চলে | চারপাশটা কেমন থমথমে লাগছে ! পাখিদের কলতান যেন উধাও | কোনোরকমে উঠে বসি | লাট্টু আমার পিছনে চলে আসে | পেছনের দুটো পায়ের উপর উবু হয়ে বসে সামনের একটা পা আমার পিঠের ওপর আলতো ছুঁইয়ে রাখে | গাছের পাখিরা নীরবতা ভেঙ্গে চিত্কার করে ওঠে | হঠাত্ একটা শেয়াল বিচ্ছিরি আওয়াজ করে খেঁকিয়ে আমাকে লক্ষ্য করে মারল লাফ | দুরে কোথাও ছাগলটা 'ব্যা-ব্যা' চিত্কার করে ওঠে | আর কিছু মনে নেই ...........|

   জ্ঞান ফিরতেই দেখি লাট্টু আমার মাথার পাশে বসে…ওর চোখে জল্ | বুঝতে পারছি কিছুক্ষণ আগেই একটা যুদ্ধ হয়ে গেছে | আমি উঠে বসার চেষ্টা করি | লাট্টু তার পা বাড়িয়ে আমার হাতটা ধরে | আমি জানতে চাই ; "লাট্টু তোর খুব লেগেছে নারে ? ওর দেহের বাঁ-পায়ের পেশী ছাড়া আর কোথাও কোনো আঁচড়ের চিহ্ন নেই | জায়গাটা থেকে রক্ত বেরিয়ে পায়ের লোমের কিছুটা অংশ ভিজেছে | আমি কেঁদে ফেললাম | লাট্টু তার মাথা দিয়ে আমার গা ঘসে আদর করতে থাকে | মনে হোল ছাগলটা 'ব্যা-ব্যা' করতে করতে আসছে | আমি উঠে বসার চেষ্টা করি | বনের মধ্যে আলো কমে এসেছে | সময় হয়ত বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যের দিকে ! শয়তানগুলো লাট্টুর ধোলাই খেয়ে বেহাল দশা | তবুও মনে হচ্ছে এখনো আশা ছাড়েনি | ওদের দুজনকে দেখতে পাচ্ছি | একটা শেয়াল সোজা হয়ে দাঁড়াবার চেষ্টা করছে, পড়ে যাচ্ছে | লাট্টু ওদের দিকে তেড়ে কয়েক কদম যেতেই শয়তানগুলো লটপট করতে করতে ভাগ|


বাড়িতে মা বোধহয় খুব চিন্তা করছে | হয়ত এতক্ষণে খোঁজাখুঁজি শুরু করে দিয়েছে | বাবাও হয়ত অফিস থেকে ফিরেছে | শুধু পিঠে বেত্ পড়ার অপেক্ষা | পাতার উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার একটা শব্দ কানে আসছে | আর শব্দটা ক্রমশঃ এদিকে এগিয়ে আসছে বলে মনে হচ্ছে ! লাট্টুকে ধরে উঠে দাঁড়াই | আশ্চর্য্য ! ওর চোখে মুখে তেমন পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম না | ছাগলের চিত্কারও থেমে নেই | যাইহোক, আমি দেখবার চেষ্টা করি| একটু দুরে ঝোপটার ওপাশ থেকে দুটো কালো মুর্তি এদিকেই আসছে | লাট্টু একটু গিয়ে দেখে আবার আমার কাছে ফিরে এল | ততক্ষণে ছাগলটা চিত্কার থামিয়ে আমাদের কাছে চলে আসে | বনের বাইরে স্পষ্ট আলো | ভিতরে অন্ধকারাচ্ছন্ন ভাব থাকার জন্য একটু দুর থেকে ওদের চিনতে অসুবিধে হচ্ছিল | কাছে আসতেই জিজ্ঞেস করি; তোমরা ?" একজনের নাম 'টন', অন্যজন 'দাঁড়ু ', আদিবাসী ছেলে | জঙ্গলে ঢোকার আগে যে আদিবাসী পাড়া রয়েছে , ওখানকার ছেলে ওরা | আমার চেয়ে বছর কয়েকের বড় হবে | টন্ গিয়ে লাট্টুর পাশে দাঁড়ানো ছাগলটার শিং ধরে | দাঁড়ু জানায় ; এই ছাগলটা তার এবং তারা তাকেই খুঁজতে বেরিয়েছে | এবার আমি এখানে কি করছি, ওরা জানতে চায় | সবকথা ওদের বলি | ছাগলটা লাট্টুর জন্য ফিরে পেয়েছে শুনে, লাট্টুর উপরে খুব খুশি হয় | ওকে জড়িয়ে আদরও করে | লাট্টু এখন শান্ত, আবার বেশ ক্লান্তও বটে |

    

আমার পায়ের গোড়ালির উপরে ফুটে থাকা কাঁটা বের করে আনে টন্ | যন্ত্রনায় চিত্কার করে উঠি | জায়গাটা রক্তে বেশ মাখামাখি হয়ে আছে | এদিকে দাঁড়ু ছাগলটা নিয়ে আগে চলে গেল | ও ছাগলটা বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আবার আসবে বলল | টনের উপর ভর করে আমি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে শুরু করি | লাট্টু পিছনে আসে | জঙ্গল ছেড়ে বেরোতেই দাঁড়ু এসে আমার হাত ধরে আমাকে বাড়ি নিয়ে যেতে সাহায্য করে | যা ভেবেছিলাম ঠিক তাই হোল | বাড়ি পৌঁছতেই শুরু হয়ে গেল বাবা- মায়ের শাসন | বাবা আমাকে খুঁজতে লোক পাঠিয়েছে এদিক-ওদিক | রেগে আগুন বাবা | বলতে থাকে; পড়াশুনা নেই , সারাদিন রোদে টো-টো করে ঘুরে বেড়ানো…… কোথায় ছিলি এতক্ষণ ? কি কর ছিলি, বল ? একটা পেয়ারার ডাল ভেঙ্গে পিঠে বসিয়ে দিল সঁপাসঁপ | আমি কাঁদছি, কেঁদেই চলেছি | মা- না এলে হয়ত পেয়ারার সরু ডালটা ভেঙেই ফেলত | মা-ও বাদ গেল না ধমক থেকে | মায়ের আস্কারাতেই নাকি আমি বেয়াদপ হয়ে উঠেছি , কোনো শাসন নেই, ইত্যাদি ইত্যাদি বলতে থাকে | লাট্টু একটু দুরে ঝিমিয়ে দাঁড়িয়ে আছে | হঠাত্ কেঁদে ওঠে | বাবা ওকেও খুব বকে | বলে; "টানতে টানতে যেখানে নিয়ে যায় ,সেখানেই চলে যাস ? আর কোনো কাজ নেই তোর ? ঘরের চারপাশটা লক্ষ্য রাখা যায় নাকি ?" লাট্টু চুপচাপ বাবার পায়ের কাছে চলে আসে | আমি বলে উঠি ; "বাবা লাট্টু যেতে চায়নি , আমিই জোর করে নিয়ে গিয়েছিলাম |" টন্-দাড়ু পাশে দাঁড়িয়ে শুনছিল | বনের কথা ওদের যা যা বলেছিলাম , মা-বাবা ওদের কাছে সবই শুনল | শুনে স্তম্ভিত | মা ঝরঝর করে কাঁদতে কাঁদতে লাট্টুকে কাছে টেনে নেয় | গায়ে মাথায় হাত বুলোতে থাকে | "আমি আগেই বুঝেছিলাম তুই সাধারণ নোস্ | তুই আমার ছেলেকে বাঁচিয়েছিস্ , তুই না থাকলে ছেলেকে হারাতাম |" লাট্টুর চোখের কোণ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে | বাবা ওর পিঠ চাপড়ে বাহবা দিল | আর বলল; "সাবাস লাট্টু |" টন-দাড়ু বাড়ি ফিরে গেল | আমি আর লাট্টু স্নান সারলাম | মাকে ওর পায়ের ক্ষতটা দেখালাম | মা ভালো করে জল দিয়ে ধুয়ে দিলেন |

সন্ধ্যের কিছুসময় পরে ডাক্তারবাবু এলেন | আমাকে পরীক্ষা করলেন | তারপর কেটে যাওয়া জায়গাটা ওষুধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিলেন |

  

পরদিন সকালেই এলেন পশুচিকিত্সক | লাট্টুকে পরীক্ষা করলেন , ক্ষতস্থান ভালো করে পরিস্কার করে ওষুধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিলেন | এবার লাট্টুর দুষ্টুমি দ্যাখে কে ! ব্যাস্ শুরু হয়ে গেল | কি করছে বলতো ? আমি যাতে আর জঙ্গলে যাওয়ার বায়না না করি, সেই জন্য মার কাছে গিয়ে ভূ-ভূ করে চেঁচায়, আবার আমার কাছে ঐ একই কান্ড করে | মা বুঝে নিয়ে আমাকে বলে " আর কোনোদিন শুধু শুধু একা জঙ্গলে যাবিনা ! কথা দে ? " আমি চুপ করে আছি দেখে লাট্টু এসে চেঁচাতে শুরু করে | "যাব না"--- বলাতে চেঁচানো বন্ধ করল | তারপর দুপায়ের নাচ আর আমার দিকে তির্যক চাহনি, আমাকে রাগানোর পক্ষে যে যথেষ্ট, এটা সে ভালোই জানে | আমি তেড়ে গেলাম ---"তবে রে"… ! এইভাবেই দিনগুলো কাটছিল | ঠিকমত পড়াশুনা হচ্ছে না দেখে বাবা সদর শহরের এক স্কুলে ভর্তি করে ওখানের হোস্টেলে পাঠিয়ে দিল | প্রথম দিকে ঘন ঘন বাড়ি আসা হলেও ক্রমে বাড়ি আসা কমে যায় | লাট্টুর সঙ্গে মনের যোগাযোগ থাকলেও ক্রমশঃ একটা দূরত্ব তৈরী হতে শুরু করে | তখন আজকের দিনের মতো মোবাইল বা বাড়িতে বাড়িতে ল্যান্ডফোন ছিল না | জানতে পারিনি | তারপর পুজোর ছুটিতে যখন বাড়ি আসি , লাট্টুর দেখা পাইনি | সে এক অজানা অসুখে আমাদের ছেড়ে অনেক অনেক দুরে চলে গেছে |

               

 

 



Rate this content
Log in