Sangita Duary

Classics Inspirational

3  

Sangita Duary

Classics Inspirational

স্বপ্ন গড়ার কালে

স্বপ্ন গড়ার কালে

8 mins
215



"পাঁচশ টাকার চেঞ্জ হবে না দাদা, আপনি ওই দুশ সত্তরই দিন!"

এই গরমে টানা আধঘন্টা স্টেশনে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে মেজাজটা এবার বিগড়ে গেল অন্তরার, "আশ্চর্য! এত বড় দোকান আপনাদের, অথচ দুশো ত্রিশ চেঞ্জ ফেরাতে পারবেননা? সকলেই যদি খুচরো চান, তাহলে আমরা গোটা নিয়ে যাবো কোথায়?"

ওমা! পাশ থেকে অতনু অলরেডি খুচরো বের করে এগিয়ে দিয়েছে। এই জন্যই বলে, "যার জন্য করি চুরি সেই বলে..."

মরুক গে, যার টাকা সে বুঝবে। সানগ্লাসটা চোখ থেকে মাথায় তুলে আরও একবার প্লাটফর্মের ডিসপ্লে বোর্ডটা দেখে নিলো অন্তরা। উফফ! ট্রেনটা এখনও কুড়ি মিনিট পর আসবে! ভাল্লাগেনা। এই চ্যাপচ্যাপে গরমে কাঁহাতক এই বিজবিজে ভিড়ে প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা যায়! ওদিকে এত বিরক্তির মাঝেও পিতা পুত্র নিশ্চিন্তে মাটন লিভার রোলে কামড় বসিয়েছে। অন্তরা রে রে করে ওঠার আগেই অতনুর চোখে ক্ষমা চাওয়ার ইঙ্গিত। একে তো মুটিয়ে মুটিয়ে আশিতে ঠেকেছে, তাই এবার গেল মাসে সুগার ধরা পড়লো। এসব ছেলেমানুষি এই মধ্যবয়সে আর মানায়? হ্যা, বাড়িতে অন্তরার তোপে রেসট্রিক্টেড ডায়েট চলে বটে তাই বলে বাইরে বেরিয়ে ওরকম হুটহাট খেয়ে ফেলবে! এই তো সেবার ষষ্ঠীতে মা'র বাড়িতে, একমাত্র জামাই প্রায় একবছর পর শ্বশুরবাড়ি আসছে বলে মা একা হাতে কতকিছু আয়োজন করেছিল, অন্তরা গিয়ে স্রেফ সব না করে দিয়েছে। খাওয়া দাওয়া সব পরে, আগে তো নিজের শরীরটা দেখতে হবে নাকি! স্বামীকে বিরক্ত মুখে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো অন্তরা হঠাৎ পাশ দিয়ে , ওটা কে? শ্রাবণী না? "এই শ্রাবণী, এই..." 


বলেই বড় ঘড়িটার দিকে দৌড়েছে অন্তরা। 

-"হ্যা, ঠিক ধরেছি, শ্রাবণীই তো? কিরে চিনতে পারছিস না?"

-"আরে অন্তরা? অন্তু? কী ব্যাপার, কত বছর পর! কেমন আছিস? এখানে কী ব্যাপার? তোর তো বর্ধমানে বিয়ে হয়েছে না?"

-"আরে দাঁড়া দাঁড়া, সব একসঙ্গে কি করে উত্তর দেব? প্রথমত, হ্যা, আমার বর্ধমানেই বিয়ে হয়েছে, দ্বিতীয়ত, বেহালায় দিদির বাড়ি গিয়েছিলাম আর তৃতীয়ত, এমনিতে ভালো থাকলেও আপাতত খুব বিরক্ত হয়ে আছি।"

-"সেকি কেন রে?"

-"প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট হাওড়া স্টেশনকে সঙ্গ দিচ্ছি, অথচ রিটার্ন গিফ্ট আমি কিছুই পাচ্ছিনা, না একটু বাতাস না বর্ধমান লোকাল!" 

শ্রাবণী হেসেই অস্থির, "তোর রসিয়ে কথা বলার অভ্যেসটা যায়নি এখনো দেখছি!"

অন্তরা সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো, "আরে দাঁড়া দাঁড়া, আরো আছে, ঐদিকে দেখ, ঐ যে, আমার পতি পরমেশ্বর এবং সুবোধ পুত্র...."

-"হ্যা তো কি?"

-"দেখনা আমায় টেনশনে ফেলে কেমন উদরপূর্তি করছে! এই যা ! ছি ছি! তোর সাথে তো আলাপ করিয়ে দেওয়া হলো না..."

ওদিকে আপ বালিচক লোকাল সিগন্যাল দিয়েছে, সেইদিকে ঝলক তাকিয়ে শ্রাবণী চঞ্চল হয়ে উঠলো, "আজ আর হলোনা রে, আমার নম্বরটা রাখ, ফোনে কথা হবে।"

-"কিন্তু, বালিচক এ তুই.."

-"ওখানেই তো পোস্টিং পেলাম রে, শবং.."

-"পোস্টিং মানে?"

-"ও তুই জানিসনা, না? ওখানের বিডিওতে পেয়েছি, পাঁচ বছর হলো। ডেইলি প্যাসেঞ্জারি আর করতে পারিনা, বয়স হচ্ছে তো! শনিবার, রবিবার ছুটি থাকে। শুক্রবার বিকেলে বাড়ি আসি, আর রবিবার বিকেলে ব্যাক টু মিদনাপুর, এভাবেই চলে যাচ্ছে, লোকে রোববার সারাদিন ল্যাদ খায়, আমি শনিবারের বারবেলায় সুখে নাক ডাকি, হি হি হি...এই আসছি রে, বাই, ফোন করিস।"

শ্রাবণী দৌড়ে গিয়ে বালিচক লোকালের লেডিজ কামরার লাস্ট বগিতে উঠলো। অন্তরা স্থানুবত শ্রাবণীর ট্রেন ধরা দেখলো।

এই সেই শ্রাবণী, রোজ ভোর চারটের সময় ঘুম থেকে উঠতো। প্রায় একঘন্টার পথ সাইকেল চালিয়ে হাওড়া স্টেশনে আসতো, সকাল ছ টার লোকাল। উত্তরপাড়ার পিপিএমের ফার্স্ট রো এর ফার্স্ট সিট। কক্ষনো হাত ছাড়া থুড়ি সিট ছাড়া করতো না। পরীক্ষার সময় ঘাড় গোঁজ করে লিখে যেত, কেউ ডাকলে সাড়া দিতো না, কাউকে ডিস্টার্ব করতো না, নিজেও ডিস্টার্বড হতোনা। কলেজ বাড়ি টিউশন এই ছিল শ্রাবণীর ডেস্টিনেশন। অন্তরারা ক্লাস কেটে সিনেমায় যেত, পার্লার যেত, নিদেন পক্ষে মিলেনিয়াম পার্ক, কিংবা ভিক্টরিয়া, কিন্তু শ্রাবণীও যেত(মাঝেমাঝে) বইপাড়া। এতটুকু অতিরিক্ত উল্লাস না, এতটুকু অতিরিক্ত মজা আনন্দও যেন ওর কাছে ব্রাত্য ছিল।


অন্তরার মনে পড়লো, ফার্স্ট ইয়ারের পেপার খুব টাফ এসেছিল, কমন কিছুই নেই। সবার বুক ধুকপুক, অনার্স টিকবে তো? সেবার হাসতে হাসতে শ্রাবণী বলেছিলো, "তোদের রূপ আছে, বাবার টাকা আছে, চাকরি না পাস, ভালো বর পাবি অনায়াসেই। আমার তো সেই রাস্তাও নেই। অনার্সটা টেকাতে না পারলে...!"

এই যা! শ্রাবণী বিয়ে করেছে? জিজ্ঞেস করা হলো না তো!

বুকটা চিনচিন করছে অন্তরার। শ্রাবণী চাকরি করে। ফাইনালে অন্তরার নিজের নম্বরও তো খারাপ কিছু ছিলোনা! এমএ ও ভর্তি হলো। ফার্স্ট ইয়ারে নম্বরও ভালো এলো, তার পরেই তো অতনুদের বাড়ি থেকে সম্বন্ধ এলো। হার্ডওয়ার্সের ব্যবসা অতনুর। বাবা পাত্র হাতছাড়া করতে চায়নি। অবশ্য অন্তরাও গড়রাজি ছিলোনা। ওরকম জেরার্ড বাটলার মার্কা চেহারা! তাছাড়া অতনু তো বলেই ছিল, অন্তরা চাইলে বিয়ের পরেও চাকরি করতে পারে। 

বিয়ের পর কয়েকটা বছর অন্তরা খেটেও ছিল খুব, প্রথমে এমএ টা কমপ্লিট করলো, একে বাড়ির ছোটবউ তায় নতুন, সাংসারিক কোনো দায়িত্বই তখন বর্তায় নি, অলস দুপুরে কর্মসংস্থান খুঁটিয়ে দুএকটা চাকরির ফর্মও ফিল আপ করলো, তারপর তো আজ এই আত্মীয়ের বাড়ি, কাল ওই আত্মীয়ের বাড়ি জোড়ে বেরিয়ে বেরিয়ে পরীক্ষার তিনদিন আগে নমো নমো পড়ে পরীক্ষায় বসলো। ওপ্রান্তে বসে ভাগ্যদেবতা মুচকি হাসেন, "তোর জন্য সংসারই ঠিক, চাকরিটা ঠিক তোর জন্য নয়!"

অন্তরাও আপোষ করে, না চাইতেই মুঠো ভরা টাকা, জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকীতে দামি গয়না, পুজোয় দামি শাড়ি, বছরে একবার এক্সক্লুসিভ ট্যুর! আর কী চাই? চাকরি করলে তো দুপুরের ভাত ঘুমটাও মাটি হতো। তাছাড়া পাশের বাড়ির চৌধুরীদের তো দেখে, বউ চাকরি করে ফিরতে রাত হয় বলে কর্তা গিন্নিতে সে কি লাঠালাঠি! ছেলেটাকেও তো সময় দিতে পারেনা! 

এই যে অতনু, বিয়ের দুবছরের মাথায় ওপরে তিনকামরা মোজায়েক ঘর তুললো, এসি লাগালো, ফ্রিজ, ওয়াসিং মেশিন ইত্যাদি সমস্ত আধুনিক ইলেকট্রনিক্স দিয়ে ঘর সাজালো, অন্তরার সাপোর্ট না থাকলে পারতো? অন্তু চাকরি করলে, কেই বা পাঁচ পদ রেঁধে বেড়ে গুছিয়ে বরের জন্য শেষদুপুরে অপেক্ষা করতো?


এই যে পুপাই স্কুলে বছর বছর বেস্ট স্টুডেন্ট হচ্ছে, কার জন্য? অন্তু চাকরি করলে সময় দিতে পারতো ছেলেকে? 

হুম হুম বাবা, যতই মেয়েরা চাকরি চাকরি করে ছুটুক, সংসার সুখের হয় রমণীর গুনেই। 

তাছাড়া চাকরি না করেও তো সে খারাপ কিছু নেই, সবই তো স্বামী স্ত্রীর বোঝাপড়ার ব্যাপার। অতনু মাঝে মাঝেই স্ত্রীর জন্য দামি চকলেট আনছে, ফাইভ স্টারে ডিনার করাচ্ছে, অনলাইনে হট ড্রেস আনিয়ে বউকে সেক্সি বানিয়ে আদর করছে যখন তখন, এসব কিছু তো লং টাইম বোঝাপড়াই। সে চাকরি করলে.... হতোনা, এসব কিসসু হতোনা। আবার চাকরির জায়গাটাও যদি ওই শ্রাবণীর মতো সেই কোন সুদূরে হতো?

বাব্বা, অন্তু ভেবেই অদৃশ্য দেবতার উদ্দেশে করজোড়ে নমস্কার করলো। এমনিতেই এসি ছাড়া বাইরে গেলেই গায়ে কাঁটা ফোঁটে।

দরকার নেই বাবা চাকরির। অন্তু সংসারই দিব্বি আছে।

এইতো, শখ মেটাতে গতমাসে বাসস্ট্যান্ডের কাছে, ওই যে, নতুন কম্পিউটার সেন্টারে ভর্তি হলো অন্তু। ডিরেক্টর ওর মার্কশিট দেখে নিজে ডেকে পাঠিয়েছিলেন অন্তুকে, যাতে স্পোকেন ইংলিশ ক্লাসের দায়িত্বটা সে নেয়। এমনিতে দুদিন তো নিজে কম্পিউটার শিখতে যাচ্ছেই। এক্সট্রা একদিন নাহয় বাকি স্টুডেন্টদের সে স্পোকেন ইংলিশটাও শিখিয়ে দিলো। 

তার মানে, তার নিজেরও এলেম আছে, নাহলে এতো স্টুডেন্ট থাকতে তাকে ডেকেই কেন...?

তবে অন্তু কথা দেয়নি, হাজার হোক অতনুকেও তো জানাতে হয়, আর কতই বা দেবে? খুব জোর দুইহাজার! অন্তু জানে, অতনু বলবে, "ওই কটা টাকার জন্য তোমায় দুপুরের ঘুম কামাই করে লাভ নেই!"

***********


সকাল ছটার অ্যালার্মটা বাজতেই হুড়মুড়িয়ে বিছানা ছাড়ে অন্তু। কাল ফিরতে ফিরতে ভালো মতো সন্ধ্যে হয়ে গিয়েছিলো। সারাদিন জার্নি, সুবলাও আর এলোনা, কোনোরকম একটু ডাল আর পোস্ত চড়িয়ে দিয়েছিলো অন্তু। চটপট খেয়েদেয়ে বিছানায়। একঘুমেই সকাল। উফফফ! একদিনেই এই, যারা চাকরি করে, তারা যে কি করে...

নিজের মনকে আবার একবার তৃপ্ত করলো অন্তরা। সত্যিই কি দরকার তার চাকরির? সুস্থ শরীর ব্যস্ত করার!


নিয়ম মতো লেগে পড়লো কাজে। একগাদা জামা কাপড় ঢাই করা আছে পাশের ঘরে, একে একে ওয়াশিং মেশিনে ঢোকালো। ময়লা ফেলার গাড়িটা এসে হর্ন বাজাচ্ছে, দৌড়ে ডাস্টবিনটা খালি করে এলো। দুধ, কাগজ দরজার পাশে গড়াগড়ি কাছে, তুলে যথাস্থানে রাখলো। খানিক উঁকি দিলো বেডরুমে। পিতপুত্র নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে, চড়া এসিটা কমিয়ে রান্না ঘরে এলো অন্তু। মেপে মেপে দুকাপ জল চড়ালো সসপ্যানে। কিচেন ক্যাবিনেট খুলে বার করলো বিস্কিটের বয়াম। ট্রে তে সাজিয়ে নিচে গেল।

অতনুরা ওপরে ঘর তুলে আলাদা হয়ে যাওয়ার পর থেকেই আনন্দবাবু সস্ত্রীক দুই ছেলের কাছে পালা করে খেলেও থাকেন কিন্তু নিজের বানানো ঘরে, অর্থাৎ বড়ছেলে অপূর্বর কাছে। ছয় মাস ভাসুরের হাঁড়িতে শ্বশুর শাশুড়ির অন্ন জুটলেও দুবেলার চা টা অন্তরা নিজের হাতে শ্বশুরমশাইয়ের ঘরে পৌঁছে দেয়। শরীর স্বাস্থ্যের খবরাখবর নেয়।

আজ ঘরে ঢুকতেই আনন্দ বাবু বিলাপ করে উঠলেন, "আজ বোধহয় এবাড়ির অন্ন আমার জুটলনা!" ওদিকে শাশুড়ি মাও চোখের জল মুচ্ছেন। কী হয়েছে জানতে চাওয়ায় অন্তু জানতে পারে গতকাল পাশের বাড়ি হরিনাম সংকীর্তন শুনতে গিয়ে এক ডজন লুচি খেয়ে শ্বশুর মশাই যকৃতে অম্লশূল বাঁধিয়েছেন, সেই দেখে ভাসুরঠাকুর ধমকে গেছেন, "আজ কিচ্ছুটি জুটবেনা তোমাদের, সারাদিন উপোসে থাকো, এতখানি বয়স হলো, অথচ নোলা এখনো গেলোনা!"

অন্ত আড়ালে মুচকি হাসলো, ছেলে ভোলানোর ছলে শ্বশুরকে বোঝালো, "দাদা রেগে গিয়ে ওসব বলেছেন, আপনারা বাবা মা, গুরুজন, আপনাদের না দিয়ে কখনো খেতে পারেন? কখনো হয়েছে এমন? "

শাশুড়ির কান্নার সুর বি থেকে জি স্কেলে চড়তেই অন্তু বললো, "আচ্ছা বেশ, দাদা আজ খেতে না দিলে আমি দেব। হয়েছে? চুপ করুন মা, নিন চা টা খেয়ে নিন।"

খালি কাপ প্লেট নিয়ে বাইরে আসতেই ভাসুরমশায়ের কোপ, "এটা তুমি কী বললে অন্তরা? বাবামাকে তুমি খেতে দেবে মানে? আমি ওদের খেতে দিইনা?"


-"দাদা আপনি ভুল করছেন। ওনারা কাঁদছিলেন। ওনাদের শান্ত করতেই আমি..."

-"শান্ত করতে তাহলে বরাবরের মতো ওঁদের দায়িত্ব নাও।"

-"কেন? আমি একাই বা নেব কেন? বাবা মা তো আপনারও। তাছাড়া আপনার ভাইয়ের সাথে কথা না বলে ..."

-"হ্যা, ভাই এলে আমার নামে ভুলভাল বলবে তো"?

-"দাদা আপনি মিছিমিছি..."

-"মিছিমিছি? বেশ চলো, দেখি মিছিমিছি কেমন..."

দড়াম করে আনন্দবাবুর ঘরে ঢুকে অপূর্ব জিজ্ঞেস করলো, "তুমি নাকি ছোট বউএর কাছে কাঁদছিলে?"

বড়ছেলের আকস্মিক গর্জনে চমকে গেলেন বৃদ্ধ, "কৈ... ন ন ন না তো...!

ভাতৃবধূকে এবার বাগে পেয়েছেন অপূর্ব ,"এবার কী বলবে তুমি?"

অন্তরা ভ্যাবাচ্যাকা, শাশুড়ি মাকে জিজ্ঞেস করলো, "আপনারা কাঁদেন নি?"

শাশুড়ী পরনের শাড়িটি গুছিয়ে নিলেন, "না..."

অন্তরা অবাক।

মাথা নিচু করে ওপরে এলো।

ততক্ষণে অতনু বিছানা ছেড়েছে। নিচে চেঁচামেচি শুনে ব্যাপারখানা সরেজমিন করতে দাদার ঘরে ঢুকেছে।

অন্তু মুখ কালো করে ফ্রিজ থেকে সবজি বের করছিল। অতনু দুমদাম ঘরে ঢুকে, "কী ব্যাপার? দাদাকে তুমি কী বলেছ?"

-"তোমার দাদাকে আমি কিছুই বলিনি, বলেছি তোমার বাবামাকে।"

-'হ্যা সেই, বলেছ, সারাজীবন ওদের তুমি খাওয়াবে?"

-"সারাজীবন তো বলিনি, ওনারা কাঁদছিলেন, শান্ত করতে , ভোলাতে বলেছি, দাদা আজ ভাত না দিলে আমি দেবো, তোমরা সবাই এমন ওয়ারলেস কেন গো? এক বললে, আর এক মিন করো?"

অতনু এবার গর্জে উঠেছে, "কী বললি? আমরা তারকাটা? এক পয়সা রোজগারের মুরোদ নেই ঘরে বসে খালি ঘুম আর বাহার করা?"

-"ভাষা সংযত করো অতনু, ছেলেটা বড় হচ্ছে। তাছাড়া আমি এমন শিক্ষা পাইনি, বয়স্ক কেউ কাঁদলে তাঁদের উপেক্ষা করে চলে আসি।"

-"তাহলে কী শিক্ষা পেয়েছ, বড়দের মুখে মুখে চোপা করা? এমএ পাশ করেছ বলে কি মাথা কিনে নিয়েছো নাকি?"

-'এমএ পাশ করতেও ক্যালিবার লাগে..."

অতনু এবার আগুনে ঘি পড়ার মতো জ্বলে উঠলো।

ওদিকে ওপরে শোরগোল শুনে অপূর্ব ছুটে এসেছেন। ভাইটি তার এমনিতে নাড়ুগোপাল। রেগে গেলেই পঞ্চানন।

দাদার কায়িক পরিশ্রমে ভাই শান্ত হলো, বউ কে 'সরি' ও বললো।


পরিস্থিতি এখন আন্ডার কন্ট্রোল।

কিন্তু অন্তরার মনটা কিছুতেই যে কন্ট্রোলে আসছেনা।


**************


দুপুর তিনটে, খাওয়া সেরে অন্তরা খাটের বাজুতে হেলান দিয়ে বসেছে। ধরা পড়া চোরের মতন অতনু গুটিগুটি বউয়ের কাছে এলো। সকাল থেকে একটাও কথা বলেনি অন্তরা। বউয়ের কোলে নিজের মুখটা গুঁজে দিয়ে বলল, "কিগো এখনো রাগ করে থাকবে? আমি তো সরি বলেছি, আসলে সকাল সকাল অমন চিৎকারে ঘুমটা ভেঙে গেল, কী কানে এলো মনে নেই, দাদার ওপর তো রাগ দেখাতে পারিনা, তাই...''

দুফোঁটা চোখের জল গড়িয়ে অতনুর গালে পড়লো। অতনু জড়িয়ে ধরলো অন্তরাকে। একমিনিট, দুমিনিট,... পাচঁমিনিট, সাতমিনিট।


ক্লান্ত অতনু উপুড় হয়ে ঘুমোচ্ছে। অন্তরার দুইগালে চোখের জল শুকিয়ে ঝাপসা দাগ। 


বিছানা থেকে নেমে ব্যাগ হাতড়ে বের করলো একটা কার্ড, বর্ধমান যুব কম্পিউটার সেন্টারের ডিরেক্টরের। হোক, দুইহাজার, একবার অন্তত নিজের রোজগারের স্বাদটা নিতে হবে, নিতেই হবে।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics