Agniswar Sarkar

Classics

5.0  

Agniswar Sarkar

Classics

সাপের কামড়

সাপের কামড়

4 mins
883


উরি বাবা ! বলেই লাফিয়ে উঠলো মালতী । সাপ নাকি ? বুকটা ছ্যাঁত করে উঠলো ।

মেয়ে শ্যামলীকে নিতে পাশের বাড়িতে এসেছিল মালতী । অন্ধকারেই এই বিপত্তি । মেয়েকে নিয়ে চট করে বাড়ি ফিরে এল ।

 ‘আলোটা নিয়ে আয় তো । ’ ,মেয়েকে বলল মা । আলো আনার পর পা টা ভালো করে দেখতে লাগলো । দুটো ফুটো , সেখান থেকে অল্প রক্ত বেরোচ্ছে । দেখেই ভয়ে হাত পা অবশ হয়ে গেল মালতীর ।

‘ কী হয়েছে মা ? ’ , মেয়ে জিজ্ঞেস করল মা কে ।

মা পুরো ব্যাপারটা খুলে বলতে দুজনে ছুটল গ্রামের নারু ওঝার কাছে ।

নারু খানিক দেখেই বলল , ‘ এ তো জাত সাপে কামড়িয়েছে । সাক্ষাৎ মা মনসার নজর পড়েছে তোর ওপর । তুই ঠিক সময়েই এসেছিস । ’

 কিছু জড়িবুটি মালতীর হাতে দিয়ে বলল , ‘ বাড়িতে গিয়ে এগুলো বেঁটে খেয়ে নে । সাত দিন দুধ খাবি না । আট দিনের দিন আমার বাড়ির মা কে এসে এক সের দুধ দিয়ে পুজো দিয়ে যাবি । ভুল হলে তোকে আর কেউ বাঁচাতে পারবে না । যা এখন । ’

পরের দিন কাঁদতে কাঁদতে গ্রামের স্কুলের স্যারের কাছে উপস্থিত মালতী । এখানে মিড ডে মিলের রান্নার কাজ করে । এই স্কুলেই মালতীর মেয়ে পড়ে ক্লাস সেভেন এ । মালতী ক্লাস সেভেন অব্দি পড়াশোনা করেছে । তার পরেই গ্রামের মেয়ে মালতীকে বিয়ের পিঁড়িতে বসিয়ে দেয় তার বাবা । মালতীর ইচ্ছে তার মেয়ে পড়াশোনা করে অনেক বড় হোক । নিজের পড়াশোনা না করে ওঠার আক্ষেপটা মেয়ের উপর দিয়ে মিটিয়ে নিতে চায় গাঁয়ের স্কুলের মিড ডে মিলের রাঁধুনি মালতী ।

‘ আমি আজই কাজ ছেড়ে দেবো স্যার । ’ , কাঁদতে কাঁদতে বলে মালতী ।

‘ কেন ? কী হয়েছে ? ’ , হেডস্যার গম্ভীর ভাবে বলে ওঠেন ।

‘ কাল রান্নার পর আমি ছেলে-মেয়েদের খাওয়ার জায়গাটা ঝ্যাঁটা দিয়ে ভালো করে ধুয়েছিলাম । সেই জল পাশের রাস্তায় গিয়ে পড়েছিল । আপনি তো জানেন স্যার পাশেই মায়ের থান । বিশু বাবু রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় রেগে বলেছিলেন , ‘ মায়ের রাস্তায় জল এসেছে । তুই মায়ের কোপে পড়বি মালতী । ’ কাল রাতেই আমাকে জাত সাপে কামড়িয়েছে স্যার । ’ , বলা শেষ করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল মালতী ।

‘ তুমি কী করলে তারপর ? হাসপাতালে গিয়েছিলে ? ডাক্তারবাবু ইঞ্জেকশান , ওষুধ দিয়েছেন তো ? সাপটা তুমি দেখেছিলে ? ’ , হেডস্যার মালতীকে জিজ্ঞেস করলেন ।

‘ না স্যার । আমি কাল রাতেই নারু ওঝার কাছে গিয়েছিলাম স্যার । জানেন স্যার , সাক্ষাত ভগবান । শুনেই সব বলে দিল । ’ বলেই জোড় হাত করে নারুর উদ্দেশ্যে প্রণাম করল মালতী ।

‘ তুমি কোনও ডাক্তারের কাছে যাওনি ? ’হেডস্যার মালতীকে জিজ্ঞেস করলেন ।

‘ না স্যার । ভাগ্যিস গিয়েছিলাম নারু ওঝার কাছে । ওর দেওয়া শেকড়গুলো খেয়েই তো আমার সব বিষ পা দিয়ে নেমে গেল । দেখুন স্যার । ’ , বলেই সাপে কামড়ানো জায়গাটা স্যারকে দেখাতে উদ্যত হল মালতী ।

স্যার প্রচণ্ড রেগে গিয়ে মালতীকে বললেন , ‘ এখুনি আগে হাসপাতালে যাও । আর ওখানে গিয়ে কোনও সমস্যা হলে আমাকে ফোন কোরো । ’ 

মালতী তবুও দাঁড়িয়ে কাঁদতে থাকল ।

এবার স্যার রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে চিৎকার করে বলে উঠলেন , ‘ এখুনি আমার সামনে থেকে চলে যাও । যাওয়ার সময় মেয়েকেও নিয়ে যাও । ও এখানে পড়ে কী করবে ? পড়াশোনা করেও তো তোমাদের মতো অন্ধকারেই থাকবে । সাপে কামড়ালে আগে হাসপাতালে যেতে হয় সেটাও জানা নেই ? জাতসাপে কামড়ালে কোনও ওঝার বাবার ক্ষমতা নেই তোমাকে বাঁচানো । নির্বিষ সাপে কামড়িয়েছিল তোমাকে । এটুকু বোঝার ক্ষমতা নেই তোমার ? চলে যাও তুমি । আজ থেকে না হয় এই ছেলে-মেয়েদের সহায়তায় রান্নাটা আমিই করে নেবো । ’

স্যারের চিৎকার শুনে ক্লাস থেকে বাকিদের সাথে শ্যামলীও ছুটে এলো স্যারের কাছে ।

‘ এবারের মতো ক্ষমা করে দিন স্যার । আমি এখুনি মা কে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি স্যার । আর কাল থেকে মা না এলে আমি রান্নার কাজে আপনাকে সাহায্য করব স্যার , খালি আমকে স্কুল ছাড়াবেন না । আমকে লেখাপড়াটা ছাড়িয়ে দিলে সেটা ওই সাপের কামড়ের চেয়ে আরও মারাত্মক হবে । ’ , কাঁদতে কাঁদতে শ্যামলী বলে উঠলো ।

হেডস্যার সহ বাকি সকলে স্কুল থেকে মা – মেয়েকে নিয়ে এসে একটা ভ্যানে চাপিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা করে দিল ।

ভ্যানে যেতে যেতে মালতী শ্যামলীকে বলে উঠল , ‘ গ্রামের আঁধারে থাকতে থাকতে আমিও অন্ধ হয়ে গেছিলাম রে । আজ স্যার আমার চোখ খুলে দিয়েছেন । ঠাকুর দেবতার বিশ্বাস মনেই থাক । তোকে সবের উপরে উঠতে হবে রে শ্যামা । বড় হয়ে তোকে এই আঁধারে থাকা মানুষগুলোকে আলোতে নিয়ে আসতে হবে রে । ’

শ্যামলী ভাবতে শুরু করলো মায়ের দেওয়া এই দায়িত্ব সে পালন করতে পারবে তো ?     


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics