STORYMIRROR

Sadiya Afrin

Fantasy

4  

Sadiya Afrin

Fantasy

রহস্যময় অরণ্য পর্ব : ০২

রহস্যময় অরণ্য পর্ব : ০২

5 mins
320

আতাউর রহমান সপরিবারে তাদের গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দিলেন। পথের মধ্যে রুহি রোহান অনেকবার জিজ্ঞেস করলো ওদের বাবাকে জায়গাটা কোথায় কেমন ? কিন্তু আতাউর রহমান তাঁর ছেলেমেয়েদের কিছুই বললেন না শুধু বললেন জায়গাটা সিলেট এর সুনামগঞ্জের কাছাকাছি। জায়গাটা কেমন সে তোরা গেলেই দেখতে পারবি। 


তাদের পৌঁছাতে পৌঁছাতে পরের দিন সকাল পর্যন্ত সময় লেগে গেলো। পৌঁছানোর পর রুহি রোহান দেখলো তারা বিরাট একটা পুরোনো রাজপ্রাসাদের মতো বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে এবং সামনেই বিরাট এক ঘন জঙ্গল। চারদিকে শুধু সবুজ আর সবুজ। পাখিরা কিচিরমিচির করে যাচ্ছে। এতো সুন্দর একটা জায়গা যেন স্বপ্নের মতো। রুহি রোহান এতটা সুন্দর কল্পনাও করতে পারেনি। অবচেতন মনেই তারা বলে উঠলো অসাধারণ জায়গা ,বাবা ! তুমি যে এতো সুন্দর একটা জায়গায় আনবে ভাবতেও পারিনি। কিভাবে এই জায়গার সন্ধান পেলে বাবা ?

ছেলেমেয়েদের এমন প্রশ্নে আতাউর রহমান একটু ভড়কে গেলেন মনে মনে ঢোক গিললেন কিন্তু ওদেরকে বুঝতে দিলেন না। এটা তাদের ই পূর্ব পুরুষদের জায়গা কিন্তু তিনি এটা তাঁর পরিবারকে জানাতে চাননা কোনো এক কারণে। তাই তিনি তাদেরকে বললেন আমার এক ব্যবসায়িক বন্ধুর কাছ থেকে এই জায়গাটার খবর পেয়েছি। সে বলেছিলো জায়গাটা বেশ চমৎকার ঘুরে বেড়াবার মতো সেইজন্য ভাবলাম তোদের নিয়ে আসি। 

বাবা , আঙ্কেল কে একটা ধন্যবাদ দিয়ে দিও আমাদের পক্ষ থেকে , রুহি বললো। 

সত্যি ই জায়গাটা অসাধারণ। একবার আসলে আর যেতে ইচ্ছে করবে না। 

আচ্ছা তোরা কি শুধু বাইরে দাঁড়িয়েই দেখবি ? ভিতরে যাবিনা চল ভিতরে যাই। লম্বা একটা জার্নি ছিল সবাই ক্লান্ত হয়ে আছে নিশ্চয়ই। ভিতরে গিয়ে খেয়ে দিয়ে বিশ্রাম নিয়ে পরে ঘুরতে বের হওয়া যাবে। 

ঠিক বলেছো , রুমানা বেগম বললেন। 

সবাই ভিতরে প্রবেশ করলো আর এর মধ্যে রোহান ব্যস্ত ছিল তার ফটোগ্রাফি নিয়ে বাইরে থেকেই শুরু করে দিয়েছে ছবি তুলে এতো সুন্দর একটা জায়গা ছবি না তুলে থাকা যায় ? 

ভিটে ঢুকে তো সবাই আরো বেশি অবাক হলো এতো বড় বাংলোর মতো প্রাসাদ। কত বড় বড় রুম , জানালা দরজা। প্রতিটা রুম ই বিশাল বড় এবং রুম এর সাথে বড় জানালা বাহিরে প্রকৃতি বেশ ভালোভাবেই দেখা যায় আর এতো সুন্দর হাওয়া আসছে জানালা দিয়ে। রুমানা বেগম তো বেশ খুশি হলেন। রুহি বললো , বাবা , এত্ত বড় বড় রুম দেখে মনে হচ্ছে যেন জমিদার বাড়ি। 

হ্যাঁ রে মা এটা একটা জমিদার বাড়ি ই ছিল। এখন এটা বাংলো হিসেবে সবাই ব্যবহার করে। 

ওহ তাই ই বলো। এজন্যই তো এতো বড় বড় রুম। আচ্ছা বাবা আমি ওই দক্ষিণ দিকের বড় রুমটা নেবো ওখান দিয়ে অনেক বাতাস আসে। 

রোহান বললো ওই রুমটা তো আমি নিতে চাচ্ছিলাম আপু। 

হ্যাঁ তোর তো খালি ঐটাই লাগবে যেটা আমি নেই , বান্দর কোথাকার !

দেখ আপু আমি খালি বলসি নিতে চাচ্ছিলাম নিবো তো বলিনাই। ঐটা তুই ই নে। আমি পাশেরটা নিলাম। 

আতাউর রহমান বললেন আচ্ছা তোরা যে যার মতো রুম নিয়ে নিয়েছিস যেহেতু এখন বিশ্রাম নে। খাবার তৈরী হলে ডাক দেয়া হবে নিচে চলে আসিস। 

এদিকে রুহি রোহানকে বললো তুই চাইলে আমার সাথে রুম শেয়ার করতে পারিস। 

নাহ এতো বড় বাসায় নিজের একটা স্বাধীনতা আছেনা আমি একই একটা রুম নিবো। 

দেখিস আবার একা একা ভয়টয় পাশ না যেন। 

ভয় কেন পাবো ? আমার যথেষ্ট সাহস আছে বুঝছিস ? 

হুম কত যে সাহস আছে বুঝাই যায় সামান্য একটা তেলাপোকা দেখলে ভয় পায় তার আবার সাহস যাকগে থাকলে থাক একা আমি রুমে গেলাম শুবো একটু ক্লান্ত লাগছে অনেক। 

হুম আমিও রুমে যাই। 

রুমানা বেগম বললেন খাবার কি বাইরে থেকে আনবে নাকি ?

আতাউর রহমান বললেন নাহ এই বাড়ির দেখাশুনা করে যে রমিজ তার বৌ অনেক ভালো রাধে সেই আজকে রান্না করে নিয়ে আসবে বললো। তাই আর বাইরে থেকে খাবার আনলাম না। 

ওহ আচ্ছা। 

প্রায় দু ঘন্টা পর রমিজ দুপুরের খাবার নিয়ে আসলো। 

আতাউর রহমান এবং রুমানা বেগম নিচে নেমে দেখলেন রমিজ খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। 

তাড়াতাড়ি করে রুমানা বেগম খাবার টেবিল এ খাবার সাজালেন। রমিজের বৌ টিফিনকারীতে করে হরেক রকম খাওয়া পাঠিয়েছে । গরম ভাত , খিচুড়ি ,কয়েক পদের ভর্তা , ইলিশ মাছ , মুরগি মাংসের তরকারি , মুগ ডাল , বেগুন ভাজি আরো কত কি। 

রুমানা বেগম বললেন এতো খাবার রাঁধার কি দরকার ছিল আমরা কি এতো খাবো নাকি ?

না আপা আপনারা কি পছন্দ করে না করেন সেটা তো জানিনা তাই এতো কিছু করা আর কি আরো কিছু লাগলে জানাবেন আমার বৌ রেঁধে দিবে। ও অনেক ভালো রাঁধে। 

আরে না আর কিছু লাগবেনা রমিজ। তুমি আর তোমার বৌ ও আজকে এখানে আমাদের সাথে একসাথে খেয়ে যাও। 

না আপা আপনারা খান আমরা খেয়ে ফেলেছি আগেই। 

রুমানা বেগম সবাইকে খেতে ডাকলেন। 

সবাই খেতে নিচে নামলো। নামার সময় রুহি দেখলো উত্তর দিকের একটা রুম বন্ধ করে রাখা। মনে মনে ভাবলো সব রুম খোলা তাহলে ওই রুম কেন বন্ধ ?

খাবার টেবিল এ সবাই তৃপ্তিসহকারে খেলো। রুহি , রোহান বললো বাহ্ খাবারটাতো বেশ মজার হয়েছে। পাকা রাঁধুনির মতো। একবারে অমৃত। 

আতাউর রহমান বললেন হুম ঠিক বলেছো। তিনি রমিজকে বললেন তোমার বৌতো বেশ ভালোই রাঁধে। 

জি স্যার। আপনারা যেই কয়দিন আছেন আমার বৌ ই রেঁধে খাওয়াবে। না করবেন না। আপনারা শুধু বলবেন কি খেতে চান তাহলেই হবে। 

রুমানা বেগম বললেন তার দরকার কি আমি তো আছি তার কষ্ট করতে হবে না আমি ই রেঁধে নিবো। 

না কইরেন না আপা আমার বৌ রাঁধতে পারে ভালো আর এটা ও শখ করেই করে। আমার বৌ নিজে থেকেই বলসে ও আপনাগোরে রেঁধে খাওয়াইতে চায়। 

ঠিক আসে তাহলে আর কি করার। এই নাও বখশিশ তোমার বৌকে কিছু কিনে দিও। 

নাহ আপা লাগবেনা। আপনারা খুশি হইলেই হইবো বখশিশ লাগবোনা। 

আরে নাওনা এটা খুশি হয়েই দিসে তোমার আপা। 

এদিকে খাবার টেবিল এ রুহি তার বাবাকে জিজ্ঞেস করলো , আচ্ছা বাবা ,উত্তর দিকের ওই রুমটা বন্ধ করে রেখেছো কেন ? মানে সব রুম এ তো খোলা তাহলে ওই রুমটা কেন খোলাওনি ? ওই রুমটাও খোলো সব রুম এ তো দেখলাম শুধু ঐটাই বাকি ওটাও দেখবো। 

আতাউর রহমান বললেন নাহ ওই রুম খোলা যাবেনা। 

কেন বাবা ? খোলা যাবেনা কেন ? 

মেয়ের প্রশ্নে আতাউর রহমান কিছুটা ভড়কে গেলেন পরে নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন ঐটা আসলে স্টোর রুম তো এইজন্য। অনেক পুরোনো হাবিজাবি জিনিস রাখা ঐটা দেখে কি করবি। 

ওহ আচ্ছা বুঝলাম। আচ্ছা বাবা উপরে গেলাম আমি রেডি হয়ে আবার বের হতে হবে বিকেলে। 

হ্যাঁ মা তাই যা। 

উপরে যাওয়ার সময় রুহি রোহানকে বললো , তোর কি মনে হয় ওটা সত্যি ই স্টোর রুম ? 

রোহান বললো মনে হওয়ার কি আছে বাবা তো বললোই ওটা স্টোর রুম। 

রুহি বললো , আমার তা মনে হয়না। কারণ ওই রুমটার কথা জিজ্ঞেস করাতে বাবা কেমন যেন বিষম খেয়ে গেছিলো দেখলিনা ? আর যেভাবে কড়া নিষেধ করলো ঐদিকে যেতে আমার তো মনে হয় কোনো গড়বড় আছে। 

তুই সবসময় একটু বেশি ই বুঝিস আপু। মানে শুধু শুধু ই ওই রুম এর পিছনে পরে আছিস কেন ? একবার যেহেতু বাবা না করে দিয়েছে না গেলেই তো হলো এটা নিয়ে এতো ঘাটার কি আছে ?

এই বলে রোহান তার রুম এ চলে গেলো। 

কিন্তু রুহির মনে ওই রুম নিয়ে হাজারো প্রশ্ন জমা হচ্ছিলো। বাবা কড়া ভাবে নিষেধ করার কারণে যেন তার কৌতূহল আরো বেড়ে গেলো। 

কিন্তু ওই রুম এ ঢুকবার উপায় কি ? কি করে জানবে ও ওই রুম সম্পর্কে ? রমিজ চাচাকে জিজ্ঞেস করবে ? হুম তাই করতে হবে মনে মনে ভাবলো রুহি। 

পরের পর্বগুলো আরোবেশি ইন্টারেস্টিং হতে চলেছে। তাই সবাই পরের পর্বের জন্য অপেক্ষা করুন। 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Fantasy