দোলনচাঁপা
দোলনচাঁপা
পর্ব : ০১
কিরে দোলন ? তোর খবর কি ? সারাদিন কি এভাবেই পই পই করে ঘুরে বেড়াবি নাকি ? লোকে কি বলে তোকে কিছু জানিস ? এতো বড় একটা মেয়ে সারাদিন বাইরে ঘুরে বেড়ায়। লোকে এভাবে বদনাম করে বেরালে তোর বিয়েশাদি কেমন করে হবে বল ? তোর নাম যদি পাড়ার মানুষেরা এভাবে বদনাম করে বেড়ায় পাত্রপক্ষ তো তাদের ছেলের সাথে তোকে বিয়ে দিতে চাইবেনারে বুঝিস না কেন ? কথাগুলো দোলনের মামাতো বোন দোলনকে বলছিলো।
দোলন অনেকটা মুখ বাকিয়েই বললো , আমার বিয়ে নিয়ে তোকে ভাবতে হবেনা। ইশশ বিয়ের কত শখ ! তোর বেশি বিয়ে করার শখ তুই গিয়ে বিয়ে কর আমার পিছনে লাগতে আসিস না। আমার এতো বিয়ের শখ নেই। আমি এখন ও ঢের ছোট বুঝলি ?
হুম ছোট না ছাই ! বুড়া দামড়ি হয়ে যাচ্ছে তাও এখন ও নিজেকে ছোট দাবি করতেসে দেখো। আমার তো বিয়ে একদিন হয়েই যাবে আমিতো আর তোর মতো সারাদিন টো টো করে ঘুরে বেড়াইনা। আমি ঘরের কাজ করি। যাই হোক আমার কোনো ইচ্ছে নেই তোকে সেধে সেধে জ্ঞান দেয়ার। ফুফু বললেন তোকে বুঝাতে তোকে কালকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে তুই যেন মানুষিকভাবে প্রস্তুত থাকিস। আর শোন ওদের সামনে কোনোরকম উদ্ভট আচরণ করিস না। বংশের মানমর্যাদার কথাটা মাথায় রাখিস। কালকে তোর বাইরে যাওয়া কিন্তু একদম নিষিদ্ধ।
কিহ ! কেন নিষেধ কিজন্য ? আমি বাইরে গেলে কার কি ক্ষতি হয়ে যাবে বুঝলাম না।
তোকে না করা হয়েছে তুই যাবিনা ব্যস। একদিন না গেলে তো আর কিচ্ছু হবেনা।
আমি কারো জন্য এতো নিষেধ মানতে পারবোনা এতো নিয়ম মানতে পারবোনা আমাকে যে পছন্দ করবে আমার এইরকম আচরণ দেখেই করবে নতুবা নয়।
তুই এতো জেদি কেন আমি বুঝিনা তোর সাথে পারা যায়না আসলে।
দোলনের বয়স সবেমাত্র সতেরো পেরিয়ে আঠারোতে পড়েছে। এই বয়সের মেয়েরা স্বভাবতই একটু দুরন্ত হয়। দোলন ও ঠিক তেমন ই বা তার থেকে একটু বেশি ই বলা যায়। চেহারায় দুরন্তপনার ছাপ। গায়ের রং হলদে ফর্সা , চোখ দুটো বেশ মায়াবী ওই চোখের দিকে তাকিয়ে কেউ কোনো কড়া কথা বলতে পারবেনা কেউ। মা বাবা বেশ আদর করেই নাম রেখেছেন দোলনচাঁপা। নামের মতোই সুন্দর দোলন এবং তার স্বভাব। শুধু একটু দুরন্ত চঞ্চল।
দোলনরা এক ভাই এক বোন দোলন বড় আরেকটি ছোট ভাই আছে দোলনের নাম দিহান। দিহান দোলন থেকে দু বছরের ছোট। সে তার বোনকে খুব ভালোবাসে। মা সারাদিন বকলেও দিহান তার বোনের পিছনেই ঘুরঘুর করতে থাকে। বাবার চোখের মনি হলো দোলন।
দোলনের মা শিউলি বেগম তার স্বামী আজহার সাহেবকে বলেন , তুমি ই তো মেয়েটাকে লাই দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলেছো। তোমার জন্য কিচ্ছুটি বলা যায়না ওকে।
আজহার সাহেব বলেন থাকে বাদ দেওয়া একটাই তো মেয়ে আমাদের এতো বকোনা ওকে। ও যদি এখন ই বিয়ে না করতে চায় তো না করুক বয়স তো চলে যাচ্ছেনা
এই তোমার জন্যই আজ ওর এতো সাহস মুখের উপর সবকিছুতে না করে দেয়। পাড়ার মানুষজন কত কিছু বলে ওকে নিয়ে জানো তুমি ? যাকগে তুমি তোমার আদরের মেয়েকে বলে রেখো কালকে ওকে দেখতে আসবে ও যেন তৈরী থাকে আমি যেন না দেখি ও বাইরে ঘুরঘুর করছে বলে দিলাম।
