STORYMIRROR

SHUBHAMOY MONDAL

Tragedy

4  

SHUBHAMOY MONDAL

Tragedy

পূর্ণবৃত্ত - ৩

পূর্ণবৃত্ত - ৩

3 mins
384

পূর্ণবৃত্ত - ৩ (রহস্য ঘনাচ্ছে)

শুভময় মণ্ডল


পরের শুনানির দিন কোর্টে প্রথমদিকে যখন অন্য কেসগুলো শুনছিলাম তখনই দেখলাম - অ্যাডভোকেট ধীরাজ শেঠ তো হাজির কিন্তু বাকি চার অভিযুক্তের কেউই উপস্থিত নেই!


এই কেসটার শুনানির ঠিক আগে সেদিনের শেষ কেসটার শুনানি চলছিল যখন, দেখলাম জামান হন্তদন্ত হয়ে এসে ওদের উকিলকে কি সব যেন দেখাচ্ছে! আমার ঐ হিয়ারিংটাও এরই মধ্যে শেষ হলো।


ধীরাজ শেঠ তখন উঠে এসে আমার দিকে তার মোবাইলটা এগিয়ে দিয়ে বললেন - হুজুর, এই যে খবরটা লাইভ দেখাচ্ছে, একবার দেখুন। এজলাসে টিভি থাকলে সেটাই চালিয়ে দেখতে অনুরোধ করতাম।


দেখলাম - একটি বেসরকারী নিউজ চ্যানেলে একটা নৌকাডুবির ঘটনার লাইভ কভারেজ এবং আপডেট দেখাচ্ছে। ট্রলারের সঙ্গে ধাক্কায় নাকি একটা ভটভটি নৌকা ডুবে গিয়েছে। দুই নৌকা কর্মীসহ জনা বিশেক যাত্রীর কেউই বোধ হয় বেঁচে নেই, সবাই নদীর স্রোতে তলিয়ে গেছে! ট্রলারের লোকজন তাদের উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে। এখনও অবধি দুই নৌকাকর্মীসহ পাঁচজনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। তাদের মধ্যে ঐ যাত্রী তিনজনেরও পরিচয় জানা গেছে তাদের কাছে পাওয়া কোর্টের শমনের কপি দেখে। শনাক্ত করা ঐ তিনজন হলো - রফিকুল আলি, আরিফ সর্দার এবং বাবলু শেখ। এদের প্রত্যেকেই কোর্টে হাজিরা দিতে যাচ্ছিলো এবং এরা সবাই সৌদাসা গ্রামের বাসিন্দা।


বুঝতে পারলাম, আজকের হিয়ারিংটাও করা হ'লো না আমার! আর সবথেকে বেশি খটকা লাগলো একটা বিষয়ের দিকে। ঠিক আমার হিয়ারিংয়ের আগেই কিভাবে এই কেসের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের একের পর এক মৃত্যু হচ্ছে? প্রথম দুটো মৃত্যুর প্রতিটাই আপাত দৃষ্টিতে স্বাভাবিকই মনে হয়েছে। কোনোটাই ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত খুন বা হত্যা বলেও মনে হয়নি! সেই উকিল ভদ্রলোক তো নিজেই বাথরুমে পড়ে গিয়ে চোট পেয়েছিলেন! সেই তরুণটির মৃত্যুর পিছনেও কোনো যান বা অন্য কোনো কিছুর ধাক্কা দেওয়ার কোন তথ্য বা প্রমাণও পাই নি তখনও। আবার ঐ ট্রলার-ভটভটির ধাক্কাটাও নিছক দুর্ঘটনাই মনে হলো আমার। কারণ, নদীপথে যাতায়াত করার সময় এরা উভয়পক্ষই খুব ভালো বোঝাপড়া ও পারস্পরিক বিশ্বাস রেখেই চলে। তার ওপর জেনেশুনে কেউ কি একটা যাত্রীবাহী নৌকাকে ধাক্কা দিতে যাবে? নিজেদের প্রতিষ্ঠিত মাছ ধরার কারবারকে এভাবে ঝুঁকির মধ্যে আনতেই বা কেউ যাবে কেন?


খবরেও দেখাচ্ছিলো - ট্রলারটা নাকি রোজকার মতই সেদিনও গভীর সমুদ্রে সারারাত মাছ ধরে ফিরেছিলো। আর ওখানে নোঙর ফেলে বিশ্রাম নিচ্ছিলো! তাহলে কি নৌকাটাই ধাক্কা দিয়েছে? তারই বা কি কারণ থাকতে পারে? নৌকার কর্মী দুজনও মারা গেল, নৌকাটাও নষ্ট হলো আর যাত্রীরা তো কেউই বাঁচলো না! তাহলে? কি রহস্য ঘনাচ্ছে?


তখনও পর্যন্ত মূল অভিযুক্ত জামানুদ্দিনের নামে শমন জারী করিনি। এবার কি তবে ওর নামে শমন দেবো, আর ওরও মৃত্যু হবে? কিন্তু সেটা কি করে হয়? তাহলে এই কেসটার কি হবে? মেহেরুন্নেসার নামে এই যে এতগুলো অপবাদ লেগেছে, তার সত্য-মিথ্যার যাচাই হবে না? প্রকৃত ঘটনাটা, বাস্তবটা তাহলে কিভাবে জনসমক্ষে আসবে? প্রকৃত বিচার তাহলে আমিও করে উঠতে পারবো না? এটা তো কোন মতেই হতে দেওয়া যায় না!


আমি ধীরাজ শেঠকে তার মোবাইলটা ফেরত দিলাম। নির্দেশ গেলো পুলিশকে - এই কেসের হীয়ারিং শুরুর পর এর সঙ্গে যুক্ত প্রতিটি ঘটনার রিপোর্ট চাই। পি.পি.র ডেথ সার্টিফিকেট, যদি তাঁর পোস্টমর্টেম হয়ে থাকে তবে সেই রিপোর্টটিও পরের শুনানির দিন কোর্টে জমা দিতে বললাম। ঐ তরুণটির পোস্টমর্টেম এর রিপোর্টও জমা করতে জি আর পি বিভাগে এই অর্ডারের কপি দিতে নির্দেশ দিলাম। সেই সঙ্গে পরবর্তী হীয়ারিং এর আগেই এই নৌকাডুবির বিস্তারিত তদন্ত রিপোর্ট এবং ঐ তিন অভিযুক্তের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট জমা করতে নির্দেশ দিলাম।


অ্যাডভোকেট ধীরাজ শেঠ ও জামানুদ্দিনকে উপযুক্ত সুরক্ষিত জায়গায় পুলিশি নিরাপত্তায় রাখতে এবং কোর্টের আদেশ ছাড়া তাঁদের এই জুরিস্ডিকশন ছাড়তে নিষেধ করলাম। ধীরাজ শেঠ আদেশ শুনে একটু অবাক হলেও, আমার নির্দেশের কারণটা বোধ হয় উপলব্ধি করলেন। তাই আমায় বললেন - হুজুর, আমার বাসস্থানটি তো সদর থানার ঠিক বীপরীতেই। আমার মক্কেল শ্রী জামানুদ্দিনকেও আমি যদি আমার বাড়িতেই সঙ্গে রাখি, তাহলে পুলিশের পক্ষেও আমাদের নিরাপত্তা দেওয়া সহজ হবে আর কোর্টের নির্দেশও পূর্ণ রক্ষা করা হবে!


আমি তাঁর প্রস্তাবে সম্মতি জানালাম৷ তিনি আমায় অনুরোধ করলেন, যদি পরবর্তী শুনানির দিন একটু শর্ট ডেটে দেওয়া যায়! আমি পরের সপ্তাহেই পরবর্তী শুনানির দিন স্থির করলাম। আর জামানুদ্দিনকেও শমন দিলাম - ঐদিন কোর্টে ক্রসএগ্জামিনেশনের জন্য হাজির থাকতে! আমি নিজেই তখন সন্দিহান - আদৌ কি হীয়ারিং করা হবে পরের দিন?


(চতুর্থ পর্ব আসছে, খুব শীঘ্রই।)


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy