পূর্বরাগের নিমন্ত্রণ
পূর্বরাগের নিমন্ত্রণ
রাস্তার আলোটা তির্যক ভাবে এসে পড়েছে সামনের রাস্তায়। সেই আলোয় দাঁড়িয়ে আছে দীপক । একটু অস্থির, চুল ঠিক করছে থেকে থেকে। তাছাড়া খেয়াল রাখছে ওর নিজের মুখে আলোটা ঠিকমতো পড়ছে কিনা।
আসলে এটা ওর প্রথম টিন্ডার ডেটিং কিনা!
গত ছ’মাস কারোর সঙ্গে দীপকের সেভাবে কথাই হয় নি। লকডাউনের লৌহকপাট শিথিল হলেও মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগটা কেমন যেন ম্লান হয়ে গেছে। তাই প্রথমে আপত্তি থাকলেও শেষে এই টিন্ডার ডেটিং অ্যাপেতেই নাম লিখিয়েছে সে। এতে খরচা আছে কিছুটা, কিন্তু তবু তো কারোর সঙ্গে মুখোমুখি দেখা হবে, কথা হবে। হয়তো অন্য কিছুও – বলা যায় না।
মেয়েটি এসে দীপকের ঠিক সামনে দাঁড়ালো। তারপর বলল “দীপস -১৫ ?”
মাথা হেলিয়ে সায় দিলো দীপক । ওটা ওর টিন্ডার পাসওয়ার্ড। তারপর বললো “আসল নাম দীপক । তোমার?”
“অলি। টিন্ডারে ‘দ্য বিউটি’। আমাদের আজকের বুকিং নম্বর ৫৪৯ কী, ঠিক আছে?”
হাসলো দীপক , যদিও মাস্কের আড়ালে সেটা বোঝা গেলো না। তারপর বলল “চলো, রেস্তোরায় যাই?”
“দাঁড়াও – তার আগে এটা দেখে নাও।“ অলি ওর মোবাইলে একটা সার্টিফিকেট দেখালো। অলির কোভিড টেস্টের সার্টিফিকেট। দুদিন আগে করা। রেজাল্ট নেগেটিভ।
“আর এই ট্র্যাকার অ্যাপ দেখাচ্ছে যে গত দুদিনে আমার সঙ্গে কোন কোভিড পেশেন্টের কন্ট্যাক্ট হয় নি। কাজেই – অল ওকে।“
যদিও এসব নিয়ম টিন্ডার-অ্যাপেই বলা ছিল, তবুও দীপক কেমন একটু থতমত খেয়ে গেল। আনাড়ি হাতে নিজের কোভিড সার্টিফিকেট আর ট্র্যাকার অ্যাপটা খুলে মোবাইলটা অলির হাতে তুলে দিল। দুটোকেই মন দিয়ে দেখে ফেরত দিতে দিতে অলি বলল “ক্লিন। চল, যাওয়া যাক।“
“রেস্তোরায়?”
“এত তাড়া কিসের? আগে এই সামনের পার্কে এক চক্কর হেঁটে নি?” বললো অলি।
ফুটফুটে চাঁদের আলো পার্কে। আজ বোধহয় পূর্ণিমা। ওরা দুজন হেঁটে চলেছে পার্কে। কথা বলছে মৃদুস্বরে। অলির চোখের তারায় চাঁদের প্রতিবিম্ব।
দুজনের দূরত্ব কমে আসছে ক্রমশ। হাতের গ্লাভস খুলে ফেলেছে দুজনেই।
পার্কের অন্যপ্রান্তে পৌঁছে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়লো অলি। তারপর দীপকের দিকে ঘুরে দাঁড়ালো। দূরত্বটা কমে গেল আরেকটু।
দীপকের বুকটা ধড়াস ধড়াস করছে এবার। অলির বাঁ হাত দীপকের গলা জড়িয়ে ধরেছে। কী অসম্ভব মাদকতা ওর পারফিউমের গন্ধে !
অব্যক্ত স্বরে দীপক কোনমতে বলল “মাস্কটা খুলবে না?”
খিলখিল করে হাসলো অলি। তারপর ডানহাতের এক টানে খুলে ফেললো নিজের মাস্কটা। তারপর দীপকেরটাও।
টকটকে লাল লিপস্টিক-মাখা অলির ওই রক্তিম ঠোঁটের ফাঁকে ঝিলিক মারলো ঝকঝকে সাদা দাঁতের পাটি। পূর্ণিমার আকাশ-ধোয়া চাঁদের আলোয় দীপক দেখতে পেল অলির শ্বদন্তটি একটু বেশিই দীর্ঘ। আর তাতে স্পষ্ট লাল দাগ।
দীপকের গলা জড়িয়ে থাকা অলির নরম কোমল হাতটা হঠাৎ ইস্পাত কঠিন হয়ে উঠেছে। রোহনের গলার কাছে তখন একটা তীক্ষ্ণ অসহ্য যন্ত্রণা।

