Sucharita Das

Tragedy

3  

Sucharita Das

Tragedy

প্রয়োজনীয়

প্রয়োজনীয়

5 mins
1.0K


" আঃ কাকু আমাকে এভাবে কেন ধরছো, লাগছে আমার।"

"কিছু হবে না। তুই গেম খেল্ মোবাইলে।দেখ আমার মোবাইলে অনেক ভালো ভালো গেমস আছে।রোজ তোকে দেবো খেলতে। তুই শুধু রোজ আসবি আমার কাছে। আমি তোকে অনেক আদর করবো। আর তুই আমার কোলে বসে গেম খেলিস মোবাইলে,গুড গার্ল। আর এই নে

চকোলেট টা খেয়ে নে। আমি তো শুধু তোকে একটু আদর করছি। বোকা মেয়ে, আদর করলে কি কারুর লাগে?"

" কিন্তু আমার তো খুব লাগছে। ছাড়ো আমাকে। মা বলেছে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে। নইলে খুব বকবে মা আমাকে।"

"ঠিক আছে ছেড়ে দেব। কিন্তু আগে বল্, কালকেও আসবি আমার কাছে , খেলে বাড়ি ফেরার সময়। কাল আরো ভালো আর অনেক চকোলেট দেব তোকে। আর প্রত্যেক দিন ভালো ভালো গেম খেলতে দেব তোকে। আর তুই পিজ্জা খেতে ভালোবাসিস তো খুব। কাল আসবি, তোর জন্য অর্ডার করে দেবো। কিন্তু একটাই শর্ত। কাউকে কিছু বলবি না। তাহলে কিন্তু আর কিছু দেব না তোকে।"

মিষ্টু ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালো যে সে আসবে কাল । আর কাউকে কিছু বলবে না।


খুব তাড়াতাড়ি করে হাঁটতে শুরু করলো মিষ্টু। মা বলেছে সন্ধ্যের আগে মা অফিস থেকে ফেরবার আগে ঘরে ঢুকতে রোজ। নইলে মা খুব রেগে যাবে। ও আর রেনি একসঙ্গেই ফিরছিল পার্ক থেকে। কিন্তু কাকু ওকে ডেকে নিলো। তাই রেনি একাই চলে গেল বাড়িতে।রোজ বিকালে ওরা এই পার্কে অল্প খেলতে যায়। দাদুন বলেছে রোজ অল্প দৌড়াদৌড়ি করে খেললে বডি ফিট থাকবে। দাদুন তো আরো বলেছে, মিষ্টুর বাবা যখন ছোট ছিল তখন অনেক দৌড়াদৌড়ি করে খেলতো, পিপি ও খেলতো রোজ সামনের মাঠে। অথচ মিষ্টু তো খেলতেই পারতো না জায়গার অভাবে। এখন ফ্ল্যাটে র সবাই মিলে বাচ্চাদের আউটডোর গেমসের জন্য ,সামনের খোলা জায়গায় একটা সুন্দর পার্ক বানিয়ে দিয়েছে। আর তাই মিষ্টু,রেনি, আর ওদের সব বন্ধুরা একসঙ্গে অনেক দৌড়াদৌড়ি করে খেলে ওখানে। খুব ভালো লাগে ওদের। চার বছরের মিষ্টুকে গোলগাল ডল পুতুলের মত দেখতে লাগে।



"মিষ্টু খাবে এসো। খাবার দিয়েছি"। মা ডাকছে ওকে। কিন্তু মিষ্টুর আজ খুব ব্যাথা করছে। কাকু আজ অনেক জোরে ওকে আদর করেছে। ও তো হাঁটতেই পারছে না ভালো করে। কিন্তু কাকু বারণ করেছে কাউকে যেন কিছু না বলে ও। তাহলে আর গেমস খেলতে দেবে না ওকে মোবাইলে। আর কাকু তো এটাও বলেছে, যে আদর করলে কারুর লাগে না। ওটা ওর ভুল মনে হচ্ছে। মিষ্টু আস্তে আস্তে নামলো নিজের বেড থেকে। তারপর ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসলো।

"একি ভদ্রভাবে বসো মিষ্টু। ওভাবে একদিকে ঝুঁকে কেন বসছো?"

মিষ্টু মায়ের কথায় সোজা হয়ে বসবার চেষ্টা করে। কিন্তু খুব লাগছে তো ওর। সোজা হয়ে বসতেই পারছে না। টেবিলে দাদুন, ঠামি , বাবা সবাই বসে আছে। কিছু বুঝতে দেবে না মিষ্টু কাউকে। কোনো রকমে খেয়ে উঠে পড়লো ও। আবার মা বকলো ওকে।"মিষ্টু সামান্য টেবিল ম্যানারস ও ভুলে যাচ্ছ নাকি? সবার সঙ্গে খেতে বসলে ,ওঠবার আগে বলে উঠতে হয় সবাইকে।"

"সরি মাম মাম। ভুল হয়ে গেছে। আর হবে না।"

"ইটস ওকে। যাও নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ো। আর পরের বার থেকে এই ভুল যেন না হয়। আর ব্রাশ করতে ভুলে যেও না যেন।" মিষ্টু ঘাড় নেড়ে আস্তে আস্তে চলে গেল নিজের রুমে।

কিন্তু মিষ্টু তো ঘুমোতেই পারছে না।ওর খুব ব্যাথা করছে। আস্তে আস্তে বেড থেকে নেমে মায়ের ঘরের দিকে এগিয়ে গেল।মাম মাম এখনও দরজা লক করেনি নিজের রুমের।ও আস্তে আস্তে দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।মাম মাম কে বলতে হবে ওর খুব ব্যাথা করছে।কাকু যদিও বারণ করেছে কাউকে বলতে। কিন্তু ওর তো অনেক ব্যথা করছে।

"মাম মাম" মিষ্টু আস্তে করে ডাকলো।

"কি হলো মিষ্টু। তুমি এখনও জেগে আছো? কখন তোমাকে ঘুমিয়ে পড়তে বলেছি , বলো। একটা কথাও শোনো না আজকাল। কাল সকালে স্কুল আছে।আমার , বাবার অফিসে যাবার আছে।যাও শুয়ে পড়ো এখনই।"

"কিন্তু মাম মাম আমার ঘুম পাচ্ছে না। একটা কথা বলবার ছিলো ।"

"রাত্রি বেলা এসব কি ড্রামা হচ্ছে মিষ্টু। এখন কোনো কথা না। সকালে বলবে যাও।"

আর কোনো কথা না বলে মিষ্টু চলে গেল মায়ের ঘরের সামনে থেকে। ওর চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়ছে। ওর তো টয়লেট করতেও কষ্ট হচ্ছে খুব।কাকু অনেক জোরে ওকে লাগিয়ে দিয়েছে আজ।



"কি হয়েছে দিদিভাই, তুমি ঘুমোওনি কেন এখনো?"

ঠামির গলা তো। মিষ্টু দেখলো ঠামি ওর মাথার কাছে বসে আছে। ও আর চেপে রাখতে পারলো না নিজের কষ্ট। ঠামিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো।"কি হয়েছে দিদিভাই, কাঁদছ কেন?"

"ঠামি আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। খুব ব্যাথা করছে। মাম মাম কে বলতে গেলাম। কিন্তু বকা দিয়ে পাঠিয়ে দিলো আমাকে। আমি তো টয়লেট ও করতে পারছি না ঠামি"।

"কি হয়েছে দেখি দিদিভাই? দেখাও আমাকে কোথায় ব্যাথা করছে তোমার?"

মিষ্টু নিজের নাইট ড্রেস খুলে শুয়ে ,ঠামি কে বললো ,"এইখানে কাকু হাত দিয়ে অনেক জোরে আদর করেছে আমাকে। কতো বললাম কাকু কে অনেক লাগছে আমার ছাড়ো।তাও শুনছিলো না কাকু। অনেক জোরে লেগেছে ঠামি আমার। সোজা হয়ে বসতেও পারছি না তাই।"



নীলা দেবী মানে মিষ্টুর ঠামি র তখন পুরো শরীর কাঁপছে। মিষ্টু যখন নিজের নাইট ড্রেসের প্যান্ট টা খুলছিল, তখন উনি ভেবেছিলেন খেলতে গিয়ে পড়ে গেছে হয়তো মিষ্টু। আর তাই হাঁটুতে বা পায়ে কোথাও আঘাত পেয়েছে জোরে। সেজন্যই হয়তো বেচারি সোজা হয়ে বসতে, শুতে পারছে না। কিন্তু এটা কি দেখালো মিষ্টু। ওর তো ভিতরটা পুরো রক্তাক্ত হয়ে আছে। ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে ভেতরের নরম অংশ। নিজেকে সামলে নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন মিষ্টুকে, "দিদিভাই আমাকে সব বলো। কে করেছে তোমাকে এরকম?"


মিষ্টু বললো, "রোজ ওই পার্ক থেকে ফেরার সময় পাশের ফ্ল্যাটের কাকু ওকে ডেকে নিয়ে যায়। অনেক গেমস খেলতে দেয় মোবাইলে। কখনো পিজ্জা, কখনো চকলেট, কখনো মোমো খাওয়ায় ওকে। আর কাকু শুধু আদর করে ওকে। রোজ ই তো করতো, কিছু হয়নি। কিন্তু জানো ঠামি আজ অনেক জোরে আদর করে দিয়েছে কাকু। তাই একটু লেগেছে আমার।"

নীলা দেবী ছেলের ঘরের কাছে গিয়ে দরজায় নক করেন। দরজা খুলে মিষ্টুর মা, বাবা বেরিয়ে আসে। সমস্ত ঘটনা জানান উনি। মিষ্টুর গায়ে তখন বেশ জ্বর। অভ্যন্তরীণ অঙ্গের এতোটা আঘাত ওইটুকু একটা প্রাণ, সহ্য করতে পারবে কি করে? সমস্ত দেখে ওর মা, বাবার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেল।এসব কি করে হলো? কই মিষ্টু তো বলেনি কখনো।

"কেন বৌমা আজ তো দিদিভাই শোবার আগে তোমাকেই বলতে গিয়েছিল। তুমিই তো ওকে বকাঝকা করে পাঠিয়ে দিয়েছো।"

"কিন্তু মা আমি এইসব হয়েছে কি করে জানবো। আমি ভাবলাম এমনি বলছে হয়তো।"

"বৌমা তোমরা আজকালকার মা, বাবারা এতই ব্যস্ত থাকো সবসময় নিজেদের চাকরি, কাজ এইসব নিয়ে যে, বাচ্চাদের মনের খবর তোমরা রাখতেই ভুলে গেছো। শুধু কখন কি লাগবে বাচ্চাদের, সেইটুকু দিয়েই ভাবো, সব দায়িত্ব পালন করে ফেলেছি আমরা। যখন যেটা চাইছে বাচ্চারা, এনে দিচ্ছি তো। ব্যস্, সব দায়িত্ব শেষ। কখনও ছুটির দিনে ওর সঙ্গে ঘরে বসে গল্প করে জানতে চেয়েছো যে, ওর মনে কি আছে।ও কিছু বলতে চায় কি না তোমাকে?"


পরের দিন সকালে সবার আগে মিষ্টুকে একজন ভালো গাইনোকলজিস্ট এর কাছে নিয়ে যাওয়া হলো। খুবই বিপজ্জনক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মিষ্টুর অভ্যন্তরীণ অঙ্গ। আর তারপর পুলিশ কে সঙ্গে নিয়ে মিষ্টুর বাবা, মা আশেপাশের ফ্ল্যাটে র সবাইকে জড়ো করে মিষ্টুর ওই নরপিশাচ কাকুর ফ্ল্যাটে গিয়ে ওটা কে পুলিশের হাতে তুলে দিলো সবাই। যাতে আর কখনও মিষ্টুর মতো নিষ্পাপ শিশু দের ক্ষতি করতে না পারে।

প্রত্যেক মা তার শিশুর প্রথম বন্ধু হয়ে , তাকে সমস্ত রকমের পারিপার্শ্বিক বিপদ থেকে সতর্ক রাখুন, যাতে মিষ্টুর মতো অবস্থার সম্মুখীন তাকে না হতে হয়। কারণ একটা বাচ্ছার জন্য তার মায়ের প্রতিটা শিক্ষা ভীষণ প্রয়োজনীয়।

সতর্ক থাকুন



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy