STORYMIRROR

SHUBHAMOY MONDAL

Tragedy Classics

4  

SHUBHAMOY MONDAL

Tragedy Classics

প্রতিশোধ

প্রতিশোধ

3 mins
389

প্রতিশোধ

শুভময় মণ্ডল 


মূল ঘটনাটা তো সবারই জানা। খবরের কাগজেই এসেছিলো - কোন ঘটনাটা? ঐ যে - রোগীর আত্মীয় স্বজনদের মারে - মৃত্যু ডাক্তারের! ওহো, এ তো এখন প্রায় রোজকার ঘটনা, তাহলে? 


এই ঘটনাটায় একটু আলাদা মাত্রা ছিলো - রোগী মারা যায়নি, তাকে সুদক্ষ চিকিৎসার দ্বারা সুস্থ করে, বাঁচিয়ে তুলেছিলেন ডাক্তারবাবু। বলতে গেলে, এককথায় তারই পরিণামে, তিনি আক্রান্ত হয়ে, মারা যান!


মনে পড়ল কিছু? পড়লো না? আমাদের সবার স্মৃতিশক্তি - সত্যিই দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। যাক গে, একটু ছোট্ট করে দু' চার লাইনে, সেই ঘটনাটা তবে স্মরণ করাই আপনাদের।


প্রসব বেদনা নিয়ে, এক মহিলা ভর্তি হয়েছিলেন সরকারী হাসপাতালে। এমারজেন্সী অবস্থায় ভর্তি করে নিয়ে, তাঁকে লেবার রুমে নিয়ে যাওয়া হয়।

তার বাড়ির লোকজন তাকে হাসপাতালে রেখে পালায়। পরে তার গর্ভাশয়ে ভয়ঙ্কর সংক্রমণ দেখে, ডাক্তারবাবু সেটা কেটে বাদ দেন। 


বাড়ির কাউকে না পাওয়ায়, রোগিণীকে ছাড়া আর কাউকেই সেকথা বলা যায়নি। নবজাত শিশুকন্যাকে নিয়ে মহিলার বাড়ি যাবার দিন, তাঁর বাড়ির লোক জানতে পারে বিষয়টা।


ডাক্তারবাবুর ওপর চড়াও হয়ে তাঁকে প্রচণ্ড মারধোর করে তারা। গুরুতর আহত অবস্থায়, ঐ হাসপাতালের আই সি.ইউ.তেই এক সপ্তাহ চিকিৎসাধীন থেকে, ডাক্তারবাবু মারা যান।


পুরো ঘটনায়, সেই মহিলাটি নীরব দর্শক ছিলেন - নিজের সংসার, আর তিন তিনটি বাচ্চা মেয়ের কথা ভেবেই হয়তো! কিন্তু, বাড়ি ফিরে, অত্যাচার তাঁকেও সহ্য করতে হচ্ছিলো প্রচুর - বারংবার মেয়ের জন্ম দেওয়ার জন্য। 


অগত্যা, অনুশোচনায়, অভিমানে একদিন তিনি, তাঁর তিন শিশুকন্যাকে নিয়ে, রেললাইনে গলা দিয়ে আত্মহত্যা করেন।


আমি এই হাসপাতালে টেকনিশিয়ান হয়ে আসার, কয়েক মাস আগের ঘটনা ছিলো এটা। আমি এখানে কাজ করছি প্রায় বছর খানেক হলো।


হাসপাতালের স্টাফ এতো কম, যে আমরা যে ক'জন হাতে গোণা টেকনিশিয়ান আছি, কম বেশী তারা সব মেশিনই চালাতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি - একপ্রকার বাধ্য হয়েই!


এইসময়েই ঘটলো একটা মারাত্মক দুর্ঘটনা - পাশের রাজীবনগর বস্তিতে, নির্মীয়মান সরকারী আবাসন ভেঙে পরে হতাহত হলো অনেকে।


এদের একজনের হাতদুটো এমন থেঁতলে গিয়েছিলো, যে ডাক্তারবাবু আমায় বললেন - এক্স রে তে দেখো তো, আদৌ এর কোন হাড় সেট করার মতো অবস্থায় আছে কিনা?


আমি এক্স রে রুমে নিয়ে গেলাম লোকটিকে। আগেকার আই.সি.ইউ রুমটাকেই বর্তমানে, এমারজেন্সী পেশেন্টদের জন্য এক্সরে রুম বানানো হয়েছে। আর তার পাশের ভিজিটরস্' রুমটা এখন প্রসূতি ও নারীচিকিৎসা বিভাগ।


এখন, আই.সি.ইউ রুম, ভিজিটরস' রুম সব নতুন বিল্ডিংয়ে চলে গেছে। সেখানেও এক্সরে করানো হয়, তবে এমারজেন্সী ইউনিট টা এখানে হওয়ায়, ওনাদের এখানেই এক্সরে করানোটাই সুবিধার ছিলো।


আমি মেশিনের নিচে, তার হাতদুটো পজিশন করিয়ে দিয়ে, স্ক্রীনে এসে, শর্ট নিতে গিয়ে দেখি - সেখানে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। তাকিয়ে দেখি - লোকটা গড়িয়ে পড়ে, ছটপট করছে মেঝেয়, আর বিড়বিড় করে কিসব যেন বলছে! সেইসঙ্গে, উল্টে উল্টে আছড়ে পড়ছে মেঝেয় - একবার এপাশে, একবার ওপাশে!


তার ঐ শারীরিক অবস্থায়, এত লাফালাফি করা - তার নিজের পক্ষে কোনমতেই, তখন সম্ভব ছিলো না। তাই, আমি বোঝার চেষ্টা করলাম তার কথাগুলো। 


যা বুঝলাম, সে বলছে কাউকে - অন্যায় হয়ে গেছে স্যার, ছেড়ে দিন, অমন ভুল আর হবে না। আর মেরো না, বাবাগো, মরে গেলাম রে। ওরে বাবারে, মাগো। মরে গেলাম রে!


আমি ভারী অবাক হয়ে চারিদিকে চাইলাম - ঘরে কেউ কোথাও নেই। ওদিকে লোকটার হাল দেখে, আমি আর রিস্ক নিলাম না। তাড়াতাড়ি একটা স্ট্রেচার এনে, একাই তাকে কোনমতে ঠেলে শুইয়ে, ঐ ঘর থেকে বের করে আনলাম।


লোকটা বেশ শান্ত হয়ে গেলো - বাইরে এসে! তাই ঠিক করলাম - তাকে বরং নিউ বিল্ডিংয়ে এক্সরে করাতে নিয়ে যাই। সেই মত স্ট্রেচারটা ঠেলতে ঠেলতে, তাকে লেবার রুমের পাশ দিয়ে নিয়ে যাবার সময়, সে হঠাৎ কিছু দেখে, আঁতকে উঠে জ্ঞান হারালো যেন!


আমি চারপাশে তাকিয়ে দেখলাম ভালো করে। শুধু একজন রুগ্ন চেহারার মহিলার, ধীরে ধীরে প্রসূতি বিভাগে প্রবেশ করা ছাড়া - আর কিছুই দেখতে পেলাম না! 


আর ঐ মহিলাকেও দেখে, এই লোকটার চমকে ওঠার কি কারণ হতে পারে, কিছুই বুঝলাম না। ডাক্তারবাবুর কাছে গিয়ে, তাকে অন্যত্র এক্স রে করাতে নিয়ে যাবার কথা বললাম। 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy