প্রতিশোধ - শেষাংশ
প্রতিশোধ - শেষাংশ
প্রতিশোধ -শেষাংশ
শুভময় মণ্ডল
কিন্তু তিনি দেখি লোকটাকে খুব আশ্চর্যভাবে দেখছেন। তারপর নার্ভ চেক করে বললেন - এ তো মারা গেছে দেখছি। বডি পোস্ট মর্টেমে পাঠিয়ে দাও, আর কি করবে? তুমি বরং রীতাকে গিয়ে হেল্প করো ইউ.এস.জি করতে। একজন বয়স্কা মহিলা তলপেটে খুবই গুরুতর চোট পেয়েছেন ঐ দুর্ঘটনায়।
রীতা ঐ প্রসূতি ভিভাগেই নিয়ে গিয়ে এমারজেন্সীতে তাঁর ইউ.এস.জি. করার চেষ্টা করছিলো। কিন্তু মহিলা ভয়ানক ছটপট করায় সে একা পেরে উঠছিলো না। আমি ওখানে যাবার সময় সেই রুগ্ন মহিলাটি আমায় পাশ কাটিয়ে বের হয়ে গেলেন। আমি ভিতরে ঢুকে দেখি - রীতা হাঁ করে তাকিয়ে আছে বৃদ্ধার দিকে আর তিনি হাত পা ছোঁড়ার ভঙ্গীতে যেন স্ট্যাচু হয়ে গেছেন। যেন উঠে পালাবার একটা শেষ চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন আর হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছেন। ঠিকরে বেরিয়ে আসছে যেন তাঁর চোখদুটো!
আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম - কি হয়েছিলো?
রীতা বললো - কিছুতেই ওনাকে স্থির করিয়ে শোয়াতে পারছিলাম না। তো তখন একজন রোগামত মহিলা এসে পাশে দাঁড়িয়ে বললো - আমি সাহায্য করবো?তাকে দেখেই তো ইনি ভূত দেখার মত চমকে লাফিয়ে উঠে বললেন - বৌমা! ব্যস, তারপরেই একবারে স্থির হয়ে গেলেন। বোধ হয় আর বেঁচে নেই, না?
রীতার মুখে 'ভূত দেখার মত' কথাটা শুনে কেমন যেন খটকা লাগলো। তাই বললাম - ঐ যে মহিলা এখনই আমি আসার সময় এখান থেকে বেরিয়ে গেলেন, উনি?
রীতা ঘাড় নেড়ে আমার কথায় সায় দিলে, আমি তাকে স্মরণ করালাম যে এই সেকশনে কোনো রোগীর তো নিজে নিজে আসতে পারার কথাই নয়। শুধু রোগীরা কেন, আমরা টেকনিশিয়ানরা ছাড়া আর এখানে তো কেউ ঢুকতেই পারে না! তাহলে ও কি করে এখানে এল? কে ছিল ও, সত্যিই ভূত?
সন্দেহটা জাগতেই দ্রুত সেখান থেকে বাইরে এসে ঐ মহিলাকে খোঁজার চেষ্টা করলাম। কিন্তু কোথায় তিনি? রীতা আর আমি ছাড়া আর কেউ নাকি দেখেইনি তাঁকে! সেদিন এক্স রে করাতে গিয়ে, একই ভাবে আতঙ্কে জ্ঞান হারিয়ে (নাকি হার্ট ফেল করে) আরও কয়েকজন মারা গেলো - ঠিক একই ভাবে, ওখানেই!
পরে জানা গেলো - হাতদুটো থেঁতলে যাওয়া সেই লোকটা আর ঐ ইউ.এস.জি. করাতে গিয়ে মারা যাওয়া ঐ বৃদ্ধা ছিলেন মা আর ছেলে। বাকি মারা যাওয়া লোকগুলো সব ঐ লোকটারই বন্ধু বান্ধব, সঙ্গী সাথী আর কি!
আমার মনের খটকাটা কিছুতেই যাচ্ছিলো না। পুরানো কেস ডায়েরী ঘেঁটে, অনেক খোঁজার চেষ্টা করলাম - ঐ মহিলা এখানে লেবার রুমে মৃতাদের মধ্যে কেউ কিনা। কিন্তু কোনো ক্লু মিললো না। তাই বাড়িতে এসে ঐ মহিলার একটা স্কেচ বানিয়ে রাখলাম নিজের কাছে - যদি পরে কখনও কিছু জানতে পারি, তাঁকে চিনতে সুবিধা হবে ভেবে!
এর মাস খানেক পর একদিন জি.আর.পি অপিসে যেতে হলো আমায়। ঐ রাজীবনগরের সেই দুর্ঘটনার কেসটা নিয়েই। জায়গাটা রেলের ছিলো বলে ওরা কমপেনসেট দেবার আগে একটা মেডিকেল কেস লিস্ট চেয়েছিলো - সেদিনের ঐ সমস্ত অ্যাক্সিডেন্টাল ভিক্টিমদের ব্যাপারে।
ওখানে বেশ কিছুক্ষণ বসতে হলো আমাকে। তাই একটু ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম চারিদিকটা। সেখানেই হঠাৎ দেওয়ালে টাঙানো অসংখ্য ছবির ভিড়ে দেখি ঐ মহিলাটিরও ছবি রয়েছে! সেই ছবির সারিটার ওপরে দেখি লেখা আছে - আনআইডেন্টিফাইড রানওভার ভিক্টিমস' লিস্ট। মানে, রেল অ্যাক্সিডেন্টে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের ছবি, যাদের কেউ এসে শনাক্ত করেনি।
তাদের কাছে খবর নিয়ে জানলাম - তিন শিশু কন্যাকে নিয়ে ঐ ভদ্রমহিলা বছর খানেক আগে রেললাইনে সুইসাইড করেছিলেন। কিন্তু বাড়ির কেউ নাকি তার বডি আইডেন্টিফাই করতেই আসে নি!
