প্রস্তাব
প্রস্তাব
এই যে মেয়ে শুনছ, এখন যত দূরে দূরে থাক
তোমাকে আমার লাগবেই, তোমাকে আমার সবচেয়ে বেশি লাগবে বৃদ্ধ বয়সে !
- যৌবনে আমরা প্রচুর ঝগড়া করবো, ঝগড়া করে প্রায় রাতেই না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়বো , বিছানার দু দিকে দুজনে মুখ করে শুয়ে থাকবো, কেউ কারও দিকে তাকাবো না, কথাও বলবো না !
- তুমি অভিমানে মুখ ফিরিয়ে কাঁদবে, বাইরে বৃষ্টি পড়তে শুরু করবে, ঠান্ডাতে আমিও কাঁপতে থাকবো, আমি ঘুমিয়েছি ভেবে তুমি চুপি চুপি আমার গায়ের উপর ব্ল্যাংকেট টা দিতে আসলেই ধরে ফেলবো তোমার হাত !
- একদিন বাজার থেকে পাঁচটা হলুদ গোলাপ কিনে বাড়িতে ফিরবো, হলুদ গোলাপ দেখে তুমি ভীষণ রেগে যাবে, রেগে গিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলবে তুমি, আমি তখন বুক পকেটের কোণা থেকে লাল টকটকে একটি গোলাপ বের করে তোমার হাতে দেবো, তুমি আচমকাই হেসে ফেলবে সেদিন !
- একদিন এক্সিডেন্ট করে বাড়িতে ফিরবো, আমার কপালে রক্ত দেখে তুমি কেঁদে ফেলবে খুউব, রাত জেগে জেগে আমার বিছানার পাশে বসে থাকবে তুমি, তোমাকে টেনে বুকের উপর নিয়ে ঘুমিয়ে পড়বো সেদিন !
- একদিন আমার মোবাইলে রং নাম্বারে ফোন আসবে, তুমি ফোনটা রিসিভ করে একটি মেয়ের কন্ঠ শুনে মন খারাপ করে বসে থাকবে, অভিমানে সারাদিন আমার সাথে কথা বলবে না, আমি ছাদে গিয়ে সিগারেট খাবো, তুমি যখন বুঝবে নাম্বারটা সত্যিই রং ছিল তখন দৌড়ে এসে আমার হাত থেকে সিগারেট নিয়ে ফেলে দেবে, তোমাকে জড়িয়ে ভালবাসি বলবো সেদিন !
যৌবনে তোমাকে ভালবাসার চাইতে ঝগড়া ই বেশি করবো, ঝগড়া করতে করতেই একদিন যৌবন থেকে বার্ধক্যে গিয়ে ঠেকবো, তোমার রক্ত জবার মতো মুখে বয়সের ছাপ পড়ে যাবে, আমার মাথার কালো চুলগুলো সাদা হয়ে যাবে, চোখে ছানি পড়ে যাবে, চশমার আড়াল থেকে সেদিনও ঝাপসা চোখে তোমার দিকে তাকিয়ে থাকবো !
- "বিশ্বাস করো" রক্তের জোরে কোনো না কোনো ভাবে আমার যৌবন ঠিকই কেটে যাবে, কিন্তু বৃদ্ধ বয়সে সন্তানদের কাছে যখন বোঝা হয়ে যাবো, বৃদ্ধা বয়সে সন্তানরা যখন বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসতে চাইবে, সেদিন তোমাকে আমার লাগবেই, সেদিন এক হাতে লাঠিতে ভর করে, আরেক হাতে তোমাকে ধরে কাঁপতে কাঁপতে বৃদ্ধাশ্রমে যাবো !
-একদিন রাতে বৃদ্ধাশ্রমের উঠোনে বসে দুজনে আকাশের চাঁদ দেখবো, পান খেতে খেতে দুজনে ফেলে আসা দিনগুলোর কথা মনে করে খুব হাসবো, "বিশ্বাস করো" বৃদ্ধ বয়সে মায়া করার জন্য একজন বুড়ির খুব দরকার আমার, একজন সাদা চুলের বুড়ির দিকে তাকিয়ে আমার জীবনের শেষ দিনগুলি কাটিয়ে দেবো, তুমি কি সেই দিনটাতেও আমার পাশে রবে?
আর তখন দুজনে মিলে স্বপ্ন দেখবো, যা কবির ভাষায় -
"পরের জন্মে বয়স যখন ষোলোই সঠিক
আমরা তখন প্রেমে পড়বো
মনে থাকবে?
বুকের মধ্যে মস্তো বড় ছাদ থাকবে
শীতলপাটি বিছিয়ে দেব;
সন্ধে হলে বসবো দু’জন।
একটা দুটো খসবে তারা
হঠাৎ তোমার চোখের পাতায় তারার চোখের জল গড়াবে,
কান্ত কবির গান গাইবে
তখন আমি চুপটি ক’রে দুচোখ ভ’রে থাকবো চেয়ে…
মনে থাকবে?
গভীর সুখে
এক নিমেষে সবটুকু জল শুষে নেব
মনে থাকবে?
পরের জন্মে কবি হবো
তোমায় নিয়ে হাজারখানেক গান বাঁধবো।
তোমার অমন ওষ্ঠ নিয়ে
নাকছাবি আর নূপুর নিয়ে
গান বানিয়ে__
মেলায় মেলায় বাউল হয়ে ঘুরে বেড়াবো…
মনে থাকবে?
আর যা কিছু হই বা না হই
পরের জন্মে তিতাস হবো
দোল মঞ্চের আবীর হবো
শিউলিতলার দুর্বো হবো
শরৎকালের আকাশ দেখার__
অনন্তনীল সকাল হবো;
এসব কিছু হই বা না হই
তোমার প্রথম পুরুষ হবো
মনে থাকবে?
এই জন্মের দূরত্বটা পরের জন্মে চুকিয়ে দেব
এই জন্মের চুলের গন্ধ পরের জন্মে থাকে যেন
এই জন্মের মাতাল চাওয়া পরের জন্মে থাকে যেন
মনে থাকবে?
আমি হবো উড়নচন্ডি
এবং খানিক উস্কোখুস্কো
এই জন্মের পারিপাট্য সবার আগে ঘুচিয়ে দেব
তুমি কাঁদলে গভীর সুখে
এক নিমেষে সবটুকু জল শুষে নেব
মনে থাকবে?
পরের জন্মে কবি হবো
তোমায় নিয়ে হাজারখানেক গান বাঁধবো।
তোমার অমন ওষ্ঠ নিয়ে
নাকছাবি আর নূপুর নিয়ে
গান বানিয়ে__
মেলায় মেলায় বাউল হয়ে ঘুরে বেড়াবো…
মনে থাকবে?
আর যা কিছু হই বা না হই
পরের জন্মে তিতাস হবো
দোল মঞ্চের আবীর হবো
শিউলিতলার দুর্বো হবো
শরৎকালের আকাশ দেখার__
অনন্তনীল সকাল হবো;
এসব কিছু হই বা না হই
তোমার প্রথম পুরুষ হবো
মনে থাকবে?
পরের জন্মে তুমিও হবে
নীল পাহাড়ের পাগলা-ঝোরা
গাঁয়ের পোষাক ছুড়ে ফেলে
তৃপ্ত আমার অবগাহন।
সারা শরীর ভ’রে তোমার হীরকচূর্ণ ভালোবাসা।
তোমার জলধারা আমার অহংকারকে ছিনিয়ে নিল।
আমার অনেক কথা ছিল
এ জন্মে তা যায়না বলা
বুকে অনেক শব্দ ছিল__
সাজিয়ে গুছিয়ে তবুও ঠিক
কাব্য করে বলা গেল না!
এ জন্ম তো কেটেই গেল অসম্ভবের অসঙ্গতে
পরের জন্মে মানুষ হবো
তোমার ভালোবাসা পেলে
মানুষ হবোই__ মিলিয়ে নিও!
পরের জন্মে তোমায় নিয়ে…
বলতে ভীষণ লজ্জা করছে
ভীষণ ভীষণ লজ্জা করছে
পরের জন্মে তোমায় নিয়ে…
মনে থাকবে?"
এই মেয়ে , বলোনা তুমি কি আমার সাথে একসঙ্গে বুড়ো হবে ....??

