প্রেম ও ঘৃণা
প্রেম ও ঘৃণা
তখন আমাদের কলকাতা শহরটা অতটা আমাদের অচেনা হয়নি। টালিগঞ্জ অবধি মেট্রো চলতো। আমাদের কুঁদঘাট মিনি, ২০৮ , ৪ নম্বর তখন কোলকাতার রাস্তার থেকে নিখোঁজ হয়নি মেট্রো রেলের দাপটে। ৪ নম্বর বাস তখন যায় বরাহ নগর অবধি। তখন বাস যাতায়াত করতে করতে সবার মধ্যে চেনা জানা হয়ে যেতো। বছরে একবার দুইবার পিকনিক হয়ে যেতো সহযাত্রীদের নিয়ে। রাজাদা আমার স্কুলের সিনিয়র ভালো পড়াশোনায় , এখন সরকারি চাকরি করে কাশীপুর বন্দুক তৈরি কারখানায়। ফলে অনেকটাপথ যাই এক সাথে যাওয়া আসা করি একসাথে, কারণ আমি তখন পড়াশোনা করি ডনবস্ক পলিটেকনিকে।
ও সময় আমরা সবাই সবার খোঁজ খবর রাখি। ৪ নং বাসের সহযাত্রীরা সে বছর পিকনিক আয়োজন করলো। সবাই দায়িত্ব দিও সহেলি ও ওর বাড়ির এই পিকনিক যোগ দেবার জন্য আমাকে রাজি করাতে হবে। অপরাধ আমার সহপাঠী ছিলো ও।
রাজাদা সহেলির ডানপিটে প্রেমিক। বাসের সহযাত্রীদের মুখে শোনা। স্কুল লাইফ থেকে পছন্দ করে ও। এমনি হমবি তমবি করলেও সহেলি এলেই সে বাসি লুচির মতো চুপসে যায়। তবে সহেলির অন্যকোন প্রেমিক জন্ম হতে দেয়না সে। কয়েক দিন আগে নাকি পেয়ারা বাগানের ভোলাদাকে শাসিয়ে এসেছে, সেহলি দেখলেই সে নচিকেতা হয়ে, গান গাইতো " হাজার কবিতা বেকার সবই তার, সে প্রথম প্রেম আমার,,,"
যাইহোক সহেলি পিকনিকে এলো।চমক বিষয় হলো সেইদিন সে জানলো, সে আমাকে পছন্দ করে। ভালো বন্ধু হিসেবে ও জানিয়ে দিলাম, সে আমাকে যতোই ঘণা করুক আমার ক্যারিয়ার গোছাতে এখনো দশবছর। তাই বাস্তবে এই প্রেম প্রেম ভাবটা আমাদের জন্য প্রশয় দেওয়া নয়। কারণ আর কয়েকদিন পরে ওর পড়াশোনা শেষ মানে বিয়ের কথাবার্তা শুরু হয়ে যাবে। তখনই দুই জনেই কষ্ট পাবো শুধু শুধু কারণ ভালো বাসা পেতে হলে যোগ্যতাও লাগে। রাজাদার সে যোগ্যতা আছে।
সহেলি আমার কথায় ভীষণ খুশি। ও আসলে সব বোঝে একটু নিশ্চিত করতে আমাকে মিথ্যা কথা বলে ছিলো। রাজাদাকে সহেলিও পচ্ছন্দ করে। কথাটা শুনে মনটা বেশ ভালো হয়ে গেলো। কথাটা রাজাদাকে জানাবো ভাবলাম কিন্তু রাজাদা একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলো। কে জনেনো ওকে বলেছে মদ খেলে সাহস পাওয়া যায়। তাই রাজাদা মদ খেয়েছিলো প্রথমবার। বেসামাল হয়ে ভুল ভাল গান ধরলো। কিছু লোক মজা নিচ্ছিলো।
সহেলি ব্যাপার স্যাপার দেখে বেশ রেগে গিয়ে ছিলো। আসলে জোকারের মতো ব্যবহার করছিলো রাজাদা। ওকে দেখে রাজাদার পাগালামিটা আরো বেড়ে গেলো। ছুটে গিয়ে একটা ফুলকপি নিয়ে এসে হাঁটু গেড়ে বসে বললো
" সহেলি আমি তোমাকে ভীষন ভালোবাসি"
সহেলি বললো " আমি আপনাকে ঘৃণা করি"
বলে সহেলি কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো। ভালোবাসা নিয়ে মস্করা করাটা ওর পছন্দ হয় নি আসলে।
যাইহোক মাস দুয়েক হাসিখুশি রাজাদা মন মরা। হয়ে থাকলো। সহেলি বোধহয় কুঁদঘাট থেকে যাতায়াত করা বন্ধ করে দিয়েছে। ওর সাথে দেখা করার চেষ্টা করেছি আমাদের কয়েক জন কিন্তু লাভ হয়নি। হতাশা কাটিয়ে আমরা যে যার জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। হঠাৎ একদিন রাজা দা সকালে বাসে উঠে আমাদের হাতে কার্ড দিয়ে বললো আজ বেশি কথা নয় কাল বিকেলে আমার বাড়িতে আসা চাই। ও ভীষণ খুশি সেটা দেখে বোঝা উচিত ছিলো পাত্রীটা কে। পাত্রীটা কে আবার সহেলিই আসলে , প্রেম না থাকলে সে ঘৃণা করবে কেন? রাজা দা হাল ছেড়ে নি। সহেলী রাজী হতেই ঝুঁকি নেয় নি। একেবারে ছাদনাতলায় বিয়ে পিড়িতে বসল দুই জনে।