Manab Mondal

Abstract Romance Inspirational

4  

Manab Mondal

Abstract Romance Inspirational

প্রেম এসেছিল

প্রেম এসেছিল

4 mins
408


তাড়াহুড়ো করে স্কুলে বেরতে গিয়ে ও দেখলো সাইকেল পাম্পচার। মেজাজটা বিগড়ে গেল শুরুতেই। চিল্লিয়ে বলল " মা... ও..মা ও মা.."

চিত্রপিসি বললো "ওহো হো তোকে নিয়ে আর পারিনা বাপু, কি হলো! "

ও বললো - " টাকা দাও । সাইকেলের হাল, চাকায় একটুও হাওয়া নেই, কি করে যাবে এখন, ধুর... বিরক্তিকর। "

" নে টাকাটা রাখ, রিক্সা করে চলে যা আর সাইকেলটা দোকানে দিয়ে যা, ফেরার সময় নিয়ে আসিস" বলে চিত্রা পিসি পঞ্চাশ টাকা ধরিয়ে দিল। ওর খুব বিরক্ত লাগে এইভাবে সাইকেল হাঁটিয়ে নিয়ে যেতে। সবাই যেন কেমন করুণার দৃষ্টিতে তাকায়। কেউ কেউ আবার ন্যাকামো করে বলে কিরে কি হলো তোর পক্ষীরাজের? জাষ্ট সহ্য করতে পারে না এদের। মোড় ঘুরতেই দেখে ছেলেটি হাঁ করে এইদিকেই তাকিয়ে আছে। গা পিত্তি জ্বলে উঠল মাম্পির । মোটেই সহ্য করতে পারে না মোটেই ছেলেটিকে। সবকথাতেই মাতব্বরি, সবসময় শাসন। আত্মীয় হতো তাহলে না একটা কথা ছিল। দুপুরে মাঠে নেট টাঙ্গিয়ে সবার সাথে ব্যাডমিন্টন খেলছে মাপি, ব্যাস এসে হাজির। "এই বাড়ি যা, রৌদ্রে আর খেলতে হবে না, আর এতো জোরে সাইকেল চালানোর কি দরকার, আস্তে চালাতে পারিস না, রোজ এতো দেরী করে ফিরিস কেন? তোর সামনে পরীক্ষা না।উউফফফ্....

এতো প্রশ্নবাণে জর্জরিত হয়ে দুমদাম করে চলে আসে মাম্পি শাপসাপান্ত করতে করতে। ফিরেই চোটপাট মায়ের ওপর বলে "ওকে কি আমার কেয়ার টেকার রেখেছো নাকি? এই করবি না, ঐ করবি না, সবার সামনে, গা জ্বলে যায় এক্কেবারে। মা বলে দিও, আমার সাথে পাঙ্গা না নিতে, আমি লোকের সামনে এমন অপমান করে দেবো না তখন বুঝবে।" সব কিছুই আমাকে ও শুনিয়ে শুনিয়ে বলে । পিসি বলে " আমাদের ভালোবাসে, তোর ভালো চায় তাই একটু শাসন করে, তাতে এতো রাগ করার কি আছে, বড় হচ্ছিস তাই সাবধান করে আর কি!!"

ও ঐ বিরক্তিকর ছেলেটি আমি।মাম্পির ধারণা আমার যত্ত ভালো মানুষি সব মায়ের সাথে, তাই মায়ের কাছে খুব ভালো।

মুল গল্পে ফিরে আসি। সাইকেল নিয়ে ওদের বাড়ি পার হতেই পেছন থেকে আমি বললাম " দাঁড়া, সুমি দাঁড়াতেই সাইকেলটা হাতে নিয়ে বলে লিক্‌ হয়ে গেছে, না হাওয়া ছেড়ে দিয়েছিস ইচ্ছে করে।তোর তো দেরী হয়ে যাচ্ছে, চল তোকে রিক্সায় তুলে দি। "

মাম্পি বললো "আমি নিজেই পারবো, তোমাকে যেতে হবে না। আমি ইচ্ছে করে হাওয়া ছেড়ে দিয়েছি মানে কি " এমন ভাবে তাকালো দিকে যেন ভস্ম করেদেবে, মাম্পি। তবু একটা রিক্সা ডেকে দিলাম। মাম্পি কে তুলে ভাড়া দিয়ে দিলাম। কিছু বলার আগেই রিক্সা চলতে শুরু করে দিয়েছে। সুমি আমার কাকাতো বোনের বন্ধু ও বলেছে আমাকে তিরিশ টাকা দিয়ে চারটে টিকিট কাটতে বলেছিলো। আমি  তিনটে কেটে দিয়েছি। বাড়তি টাকা আমার থেকে ভর্তুকি। আজ ওরা " অমর সঙ্গী" দেখতে যাবে । সাইকেল নিয়ে হাঁটিয়ে যেতে কষ্ট হবে ওর তাই রিক্সা উঠিয়ে দিয়ে। সাইকেল রেখে দিলাম দোকানে।

সিনামা হল থেকে বেরিয়ে দেখলো একটু দূরে আমি দাঁড়িয়ে আছি ওর সাইকেল নিয়ে। দেখেও না দেখার ভান করে সুমিকে আর ওর সুমনাকে সাথে ফুচকা বালার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় । দু চারটে খাওয়া হতেই পেছন থেকে গিয়ে অগত্যা আমি বললাম "আর খাস না, চল এবার, শুনলেও সুমি ফিরে তাকায় না" 

ওর বন্ধু সুমনা বললো " তোকে কি বলছে শোন্, তোর বর " এর মধ্যে মাম্পি আরো দুটো ফুচকা খাওয়া হয়ে গেছে, পেছন ফিরে একবার দেখে নিয়ে ফুচকা খাওয়া থামিয়ে দিলো। তারপর সুমিকে বললো" তোর দাদাকে পয়সা মিটিয়ে দিতে বলতো নিজের পয়সায় খেতে হলে আরো পাঁচটা খাবো" আমার পকেট থেকে রুমাল বাড়িয়ে দিলাম । বললাম " মুখটা মোছ ভালো করে, "তারপর বললাম" ওঠ সাইকেলে," ও বললো," না আমি রিক্সায় যাবো, চুপচাপ এসে পেছনে এসে বস।" ও বলার মধ্যে এমন কিছু বেশী কিছু বলতে পারে না, চুপচাপ বসে পড়ে। ও বললো"মা বলবে না তো। সিনামা দেখতে এসেছি "

আমি বললাম "সুমি তো আগেই বলে দিয়েছে। টিকিট এর টাকা আমাকেই দিতে হয়েছে। তোর সাইকেল আমাদের দোকানে আছে, চল ওখান থেকে সাইকেল নিয়ে বাড়ি চলে যাবি। আর শোন বর্ষাকাল যখন তখন বৃষ্টি নামবে কিন্তু । আর সাইকেল নিয়ে বেরবি না টোইটোই করবিনা , সন্ধায় ঠিক সময় পড়তে আসবি । "

সুমি বললো "এই যে লেকচার শুরু হল আবার নতুন করে বিরক্তিকর।এর জন্য ও রাগ করে।দাদা আজ সিনামা দেখতে এলে কি হতো তোর? "

মাম্পি বললো " হাড় কিপটে জানিস না"

ইঞ্জিনিয়ার চান্স পেলাম ঠিকই কিন্তু সেই বরানগরে। সময় পেতাম না আর দেখা করার।

মাম্পি পূজার সময় বললো " হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছি মনে হয়েছিলো প্রথম প্রথম, তার পেছনে লেগে থাকার কেউ নেই। কিন্তু স্কুল বা পড়ে আসা যাওয়ার সময় চোখ চলে যায় এসে যায় । কেমন যেন খালি খালি লাগে আমার। "

সেই দিন আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ কেঁদে ছিলো। পেরিয়ে গেলোও অনেকটাই, বিয়ের জন্য ছেলে খোঁজা হলো, একদিন আমি ওকে বললাম "আমার জন্য আর দুএক বছর অপেক্ষা করতে পারবি না, আমার একটা চাকরি পাওয়া পর্যন্ত?"

মাম্পি কিছু বলেনি, ভাবলাম সে কোনোদিন হয়তো আমাকে ভালোই বাসেনি। বিয়ে হয়ে যায় ওর। তবে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ওর বিয়ের সব কাজ করে ছিলাম। বিয়ে হয়ে সংসার, বাচ্চা, শশুরবাড়ি সামলাতে অনেক বছর পার করে দিয়েছে ওর।

ব্যালকনি দাঁড়িয়ে ও আজ গায়ে আমার দেওয়া চাদরটা। মাঝে মাঝে চাদরটার গন্ধ শুকছে ও।

সেদিন ও পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলো।পেছন থেকে ডাক দিতে দাঁড়ালো।গায়ের থেকে পাতলা চাদরটা খুলে গায়ে দিয়ে বলেছিলাম," ঠাণ্ডা লাগাস না। "অনিচ্ছা সত্ত্বেও চাদর খানা নিয়ে চলে গিয়েছিল ও । "

হঠাৎ চোখ চোখি হতে ও কেমন যেনো বিব্রত হয়ে গেলো। ওরপর বললো " কেমন আজো বুবাই দা?

মামা মামীর তো অনেক বয়সে হলো । এবার একটা তো বিয়ে করো!!"



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract