Baishakhi Biswas Debnath

Abstract Tragedy Inspirational

4  

Baishakhi Biswas Debnath

Abstract Tragedy Inspirational

ফিরে পাওয়ার সেই রাত

ফিরে পাওয়ার সেই রাত

5 mins
514


সে চলে গেছে আমায় একা রেখে প্রায় ১২বছর আগে।বলেছিল কোনোদিন আমায় ছাড়বে না একা।আজ সেই ১২ বছর আগের আমাদের প্রথম আলিঙ্গনের নিশুতি রাত।সব কিছু মনে আছে আমার।আজ ও চোখের সামনে উজ্বল হয়ে ওঠে ......

১২ বছর আগে.......

খুড়তুতো বোনের বিয়ে ঠিক হয়েছে। বাড়ির সবার এক দাবি বিয়ের অন্তত ৩ দিন আগে আমার বিয়ে বাড়ি উপস্থিত থাকতে হবে। অনেক বোঝালাম সবাইকে, নতুন চাকরি পেয়েছি। এখন ছুটি নেওয়াটা ঠিক হবে না। কিন্তু আদুরে বোনটির আদুরে অভিমানের কাছে অবশেষে হার মানলাম।

আমি সৌরভ। একটা কর্পরেট ফার্মের জুনিয়র ম্যানেজার হিসেবে জয়েন করেছি। বেশ ভাল স্যালারি। দুই বছর আগে যখন ছাত্র ছিলাম, এই স্যালারির অভাবটাই আমাকে দ্বীপপ্তির থেকে আলাদা করে দিয়েছিল। ছেলেটি ব্যাংকে জব করত, হয়ত এজন্যই আমাদের ২ বছরের রিলেশনটা হাসি মুখে ভেঙে গায়ে বেনারসি জড়াতে তার কোন কষ্টই হয় নি। আজ আমার সবই হয়েছে। কিন্তু যেটা সবথেকে বেশি চেয়েছিলাম তা হারিয়ে ফেলেছি।

পলাশী যেতে হবে, ট্রেনে যেতে ইচ্ছা হল খুব। অনেকদিন ট্রেনে ওঠা হয় না। সন্ধায় স্টেশনে পৌছলাম। টিকেট কেটে বসে আছি, কিছুক্ষন পরে ট্রেন ছাড়বে। হটাৎ খেয়াল করলাম কিছুটা দূরে বসে একটা সুন্দরী মেয়ে কাদছে। পোশাক বলে দিচ্ছে অবস্থাসম্পন্ন ঘরের মেয়ে। শুরুতে গুরুত্ব দিলাম না। মেয়েদের প্রতি একটা ঘৃনা জন্মেছিল, সেজন্যই হয়ত। কিন্তু অসহায় একটা মেয়েকে এতক্ষন কাদতে দেখে বিবেকে বাধা দিল।

* হ্যালো, কাদছেন কেন, কোন সাহায্য করতে পারি।

= না, এমনিতেই। সাহায্য দরকার নেই। (মেয়েটি)

এসে নিজ জায়গাই বসলাম, জানি সাধারন কেস। কারো জন্য হয়ত পালিয়ে এসেছে। কিন্তু সে আসে নি। এখন এটা খুব কমন একটা ব্যাপার।

= শুনুন...

তাকিয়ে দেখি মেয়েটি আমার সামনে দাড়িয়ে।

* বলুন।

= আসলে এখানে আসার পর আমার ব্যাগ চুরি হয়ে গেছে। ব্যাগে ফোন টাকা ট্রেনের টিকেট সব ছিল। আপনি যদি এই ঘড়িটা রেখে আমাকে ২০০ টাকা দেন তবে আমি হোস্টেল ফিরে যাব।

* ( একটু হেসে) কোথায় যাচ্ছিলেন?

= বাড়িতে, পলাশী।

* আমি আপনার টিকেট করে দিচ্ছি, বাড়ি পৌছে নাহয় আমাকে টাকা টা দিয়ে দিবেন। আপনার এত দামি ঘড়িটা ২০০ টাকায় বিক্রির দরকার নেই।

= (একটু ভেবে) ঠিক আছে।

নিজ জেলার একটা মেয়েকে বিপদে রাখতে মনে চাইলো না তাই সিদ্ধান্ত নিলাম সাহায্যই করব। প্রায় ১ ঘন্টা লেট করে ট্রেন আসল। আমি মেয়েটির টিকেট কেটে দিলাম। ট্রেন বেশ ফাকা, তাই মেয়েটি আমার পাশের সিটেই বসল। দেখেয় বোঝা যাচ্ছে, আমাকে খুব ভয় পাচ্ছে মেয়েটি। পাক না, আমারো বেশ মজা লাগছে সুন্দরীর ভীত চাহনী টা।

= আমি সোহিনী।(মেয়েটি)

* বেশ সুন্দর নাম।

= আপনার নামটা জানতে পারি..?

*..........সৌরভ।

= কোথায় যাবেন..?

* আপনার গন্তব্য যেখানে......

= আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

* এখানে কি করেন..?

= একটা প্রায়ভেট ইউনিতে ২য় বর্ষে পড়ি। একটা বিয়েতে এটেন্ড করতে বাড়ি যাচ্ছিলাম। পথে ব্যাগ চুরি হয়ে গেল। আর আপনি কি করেন...?

* চাকরি; তো শহরের কোথায় আপনার বাড়ি..?

= পলাশী সদরে বলতে পারেন।স্টেশন থেকে একটু আর কি!

সর্বনাশ করেছে, এই মেয়ে দেখি কাকুদের এলাকার, যেখানে আমি যাচ্ছি। তবে কি বিয়েটাও ওটাই..! ট্রেনের বাতাসে বেশ ঘুম পাচ্ছে। কয়েক বছর আগে হলেও এমন সুন্দরীর পাশে বসে সারারাত জেগে যেতাম। এখন সেই ইচ্ছা টা মরে গেছে। আজ আবার দ্বীপ্তি কে খুব মনে পড়ছে। স্বপ্ন ছিল ওর হাতে হাত রেখে সারারাত জেগে ট্রেনে জার্নি করার।

= আমরা চলে এসেছি। উঠুন।(সোহিনী)

* আপনি ঘুমান নি রাতে...?

= ঘুম আসেনি রাতে...।

* সোহিনী, আপনাকে আপনার বাড়ি পর্যন্ত লিফ্ট দিতে পারি। যদি একটা উপকার করেন।

= কি উপকার... (ভয়ে)

* পৌছানর পরে আপনি ভুলে যাবেন আমার সাথে কখন আপনার দেখা হয়েছিল।

সোহিনী শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, যার ভয়ে সে সারা রাত জেগে কাটিয়েছে কেন যেন তাকে এখন ভালমানুষ ভাবতে ইচ্ছা করছে। আচ্ছা লোকটা পাগল নয়ত। কথা গুল এমন উল্টাপাল্টা কেন। চেহারাটাও কঠিন। মাপা হাসি ছাড়া মন খুলে হাসতেও দেখেনি। এমন সুন্দরী মেয়ে পাশে, অথচ কথা বলার কোন ইচ্ছাই নেই তার ভেতরে। এই শেষ রাতে কোন গাড়ি পাওয়া যাবে না। কেন যেন মনে হচ্ছে মানুষটিকে বিশ্বাস করলে ঠকবে না।

আমার কাকুর বাড়ির দুই বাড়ি পরেই সোহিনীদের বাড়ি। ওকে পৌছে দিয়ে আমি গিয়ে বাড়ি ঢুকলাম। ফ্রেশ হয়েই লম্বা ঘুম। ঘুম থেকে উঠেই দেখি আমার খুড়তুতো বোন টিয়ার সাথে সোহিনী। আমাকে দেখেই হা হয়ে গেছে।

= আরে আপনি...?(সোহিনী)

> সোহিনী, তুই দাদাকে চিনিস? দাদা তুই চিনিস নাকি ওকে..? (টিয়া)

না, চিনি না। বলে সোজা কেটে পড়লাম। সারা বাড়ির সব খবর দুষ্টু টিয়া টা ঠিক বের করে নেয়। জানি, এটাও বের করে ফেলবে।

বড় ভাই হিসাবে পরবর্তি দুই দিন খুব ব্যাস্ত কাটালাম। আর সবসময় দেখছি সোহিনী আমার আশপাশেই থাকে। আবার আমি তাকালেই গায়েব। দুর থেকে মিষ্টি করে হাসি দেয়। কেন জানি মেয়েটা চোখের সামনে না থাকলে আমারো ভালো লাগে না। আমার মনে কি ওর জন্য যায়গা তৈরি হচ্ছে। না এ সম্ভব না। আমার যে কোন মন ই নেই।

বিয়ের আগের রাত। সব কিছু গুছিয়ে রেখে সিগারেট হাতে ছাদে এসে দাড়ালাম। চকচকে বিয়ে বাড়ি। একদিন আমারো এমন একটা বিয়ে বাড়ির স্বপ্ন ছিল। সেই সপ্ন আজ সিগারেটের ধোয়া হয়ে উড়ে যায়।

= কিছু জিনিষ ভুলে যেতে হয়। মনে রেখে নিজের ক্ষতি করতে হয় না।(পেছনে ঘুরে দেখি সোহিনী দাড়িয়ে। ও কি তাহলে সব জেনে গেছে..?)

* আপনি এখানে কেন...?

= আপনার টাকাটা দিতে এসেছিলাম। এখন ভাবছি দেব না।

* কেন..?

= টাকাটা বাকি থাকলে আপনি আমাকে নিয়ে ভাববেন। আর আমাকে সহজে ভুলতেও পারবেন না। তাই দিবনা টাকাটা।

* চিন্তা করবেন না ভুলে যাব।

= (হাত থেকে সিগারেট কেড়ে নিয়ে) এসব যেন আর কখন খেতে না দেখি।

অন্য সময় হলে যে কাউকে বেশ কিছু কড়া কথা শুনিয়ে দিতাম। কিন্তু মেয়েটিকে কেন যেন বকা দিতে ইচ্ছা হচ্ছে না। শুধু তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করছে। না না, আমাকে শক্ত হতে হবে।

* আমার বিষয়ে কথা বলার আপনি কে..?

= এখনো কেউ না, তবে সবকিছু হতে চায়।

কথাটা বলেই সে দৌড়ে চলে গেল। আমি শুধু তাকিয়েই রইলাম। বাড়ির ভেতরে গিয়ে দেখে মা কেও সোহিনী পটিয়ে ফেলেছে। পুরো বিয়ে বাড়ি কানাকানি চলছে পরবর্তী বিয়ে আমার আর সোহিনীর। নাহ্ আর থাকা যাবে না। ব্যাগটা গুছিয়ে পালিয়ে যেই মাত্র বাড়ির গেট পেরিয়েছি, কেউ একজন আমার হাত টেনে ধরল। তাকিয়ে দেখি সোহিনী। শাড়িতে মেয়েটাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। তার সাথে করুন দৃষ্টি আর চোখের কোনের জল যেন হৃদয়ে আঘাত করছে।

= আমাকে আপনার পছন্দ না সেকথা বলে দিলেই হতো। এভাবে কেন পালাচ্ছেন। আমি আর কখন আপনার সামনে আসবো না। তবু প্লিজ চলে যাবেন না।

* কে বলেছে তোমাকে আমার পছন্দ হয়নি..? আমি শুধু ভয় পেয়েছি। এখানে থাকলে সেই ভুলটা আবার করে ফেলব, যেটা একবার আমার স্বাভাবিক জীবনটাকেই কেড়ে নিয়েছে।

= আমাকে নাহয় একটা সুযোগ দিন আপনাকে সেই পুরনো আপনাকে ফিরিয়ে দেওয়ার।

* কখন ছেড়ে যাবে না তো...?

এবার আর মুখে জবাব পেলাম না। তবে কেউ একজন আমাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। আর না। আমি ওকে আর ছাড়তে পারব না। ও ই আমার অগোছালে জীবনটা জড়িয়ে ধরে রাখুক না।

.......সবই আজ স্মৃতি।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract