Baishakhi Biswas Debnath

Tragedy Classics Others

4  

Baishakhi Biswas Debnath

Tragedy Classics Others

সুদর্শন চক্র

সুদর্শন চক্র

3 mins
528


হিন্দু পুরাণ মতে ভগবান বিষ্ণু বিশ্বকে প্রতিপালন করার জন্য শিব বা মহাদেবের কাছে এমন একটি অস্ত্র চেয়েছিলেন যেটি হবে অস্ত্রদের ভিতর শ্রেষ্ঠ। সে জন্য ভগবান বিষ্ণু কৈলাস পর্বতে গিয়ে ভগবান শিবের আরাধনা শুরু করেন। ভগবান বিষ্ণু অনেক অনেক মন্ত্র উচ্চারণ পূর্বক ভগবান শিবের আরাধনা করলেও ভগবান শিব তাকে দেখা দিচ্ছিলেন না। ভগবান শিবের ১০০০ নাম- ভগবান বিষ্ণু শিবের ১০০০ নাম উচ্চারণ করে ভগবান শিবের আরাধনা করতে শুরু করেন। প্রতিদিন ভগবান বিষ্ণু ভগবান শিবের ১০০০ নাম উচ্চারণ করতেন এবং ১০০০ পদ্মফুল ভগবান শিবের উদ্দেশ্যে অর্পণ করতেন।একদিন মহাদেব তাঁর উদ্দেশ্যে অর্পিত ১০০০ পদ্মফুলের মধ্যে থেকে একটি ফুল ইচ্ছাকৃতভাবে সরিয়ে নিলেন। বিষ্ণু যখন দেখলেন যে একটি পদ্মফুল কম আছে, তখন তিনি নিজের একটি চোখ উৎপাটন করে হারানো পদ্মফুলের যায়গায় নিজের চোখটিকে অর্পণ করলেন। ভগবান শিব ভগবান বিষ্ণুর এমন ভক্তিতে খুশি হয়ে তার সামনে উপস্থিত হলেন এবং তাঁকে উপহার হিসেবে সুদর্শন চক্র নামক অস্ত্র দান করলেন।

 

‘সুদর্শন’ এর ‘সু’ মানে ‘সুন্দর’ আর ‘দর্শন’ মানে ‘দেখা’। সুতরাং,‘ সুদর্শন চক্র’ মানে দেখতে সুন্দর চক্রাকার অস্ত্র। এই অস্ত্রটি কাজ সম্পাদন করে নিক্ষেপকারীর নিকট পুনরায় ফিরে আসে। অস্ত্রটি অমোঘ, ভগবান শ্রী বিষ্ণুর অস্ত্র। ভক্তকে রক্ষা ও দুষ্টের দমন করতে তিনি এটি ব্যাবহার করতেন। মহাভারতে আছে- ‘অগ্নি’ খাণ্ডব বন দহন করার সময় শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুনের সাহায্য প্রার্থনা করেছিলেন। এ সময় শ্রীকৃষ্ণ নিরস্ত্র ছিলেন। তখন অগ্নি বরুণের কাছ থেকে শ্রীকৃষ্ণের জন্য পাঞ্চজন্য শঙ্খ ও সুদর্শন চক্র এনেছিলেন। তখন থেকেই সুদর্শন চক্র ও পাঞ্চজন্য শঙ্খ শ্রী কৃষ্ণের হাতে শোভা পায়। .....


মহাদেব বা শিবের স্ত্রী দেবী দুর্গার আরও কয়েকটি নাম আছে তার মধ্যে সতী হচ্ছে একটি, গৌরীও তার আরেকটি নাম। সতীর পিতা দক্ষ একবার বিশাল একটি যজ্ঞের আয়োজন করে। এই যজ্ঞে তিনি মর্ত্য ও স্বর্গের সকল প্রাণিকে নিমন্ত্রণ করলেও জামাই শিবকে নিমন্ত্রণ করেন না। এতে সীতা প্রতিবাদ জানানোর জন্য পিতৃালয়ে হাজির হয়ে প্রতিবাদ করেন। এ কারণে পিতা দক্ষ তার মেয়ে সতীকেও অপমান করেন। এ অপমান সহ্য করতে না পেরে সতী যজ্ঞস্থানে দেহত্যাগ করেন। স্ত্রীর দেহ ত্যাগের খবর পেয়ে স্বামী শিব ক্ষিপ্ত হয়েযান এবং যজ্ঞ স্থানে হাজির হয়ে তার দুই চ্যালা নন্দী এবং ভিরিঙ্গিকে প্রলয় নাচন নেচে বিশ্বকে ধ্বংস করতে আদেশ দেন। নন্দী এবং ভিরিঙ্গির নাচনে মর্ত্য ও স্বর্গ ধ্বংস হবার যোগাড় হয়। দেবতাগণ এতে চিন্তিত হয়ে মর্ত্য ও স্বর্গকে রক্ষার জন্য ভগবান বিষ্ণুকে আহ্বান করেন।

 

সতীর দেহ শিবের সামনে থেকে না সরালে শিব শান্ত হবে না, এ কথা ভেবে ভগবান বিষ্ণু তার সুদর্শন চক্র দিয়ে দেবী সতীর দেহ বিচ্ছিন্ন করেন এবং ধরাধামের বিভিন্নস্থানে সে খণ্ডাংশ নিক্ষেপ করেন। ভগবান বিষ্ণু সতীর দেহ সুদর্শন চক্র দিয়ে ৫১ টুকরা করে ফেলেন। সতীর এই ৫১ টুকরা দেহাবশেষ ভারতবর্ষের ৫১ জায়গায় পতিত হয় যা আজকের দিনে পবিত্র সতী-পীঠ নামে খ্যাত। এগুলি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান। ভারতের কামরূপের কামাখ্যায় সতীর যোনী বা মুদ্রা পতিত হয় বলে এ মন্দিরটি বিখ্যাত। সেখানে একটি পাথর আছে যেটি সতীর মুদ্রার পাথররূপ বলে প্রচারিত আছে। যাদের সন্তান-সন্ততি হয় না তারা এই মুদ্রাকে পূজা করার জন্য কামাখ্যার মন্দিরে যান। কথিত আছে যে, বাংলাদেশের মাধবকুণ্ডে সতীর দেহের একটি খণ্ড পতিত হয়। একারণে এটি হিন্দু ধর্মাবলীদের জন্য প্রাচীন তীর্থ স্থান। দক্ষের যজ্ঞ ভঙ্গ হবার ঘটনা থেকেই বাংলাভাষায় ‘দক্ষযজ্ঞ’ বাগধারাটি এসেছে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy