STORYMIRROR

Baishakhi Biswas Debnath

Tragedy Others

2  

Baishakhi Biswas Debnath

Tragedy Others

এক বেশ্যার গল্প

এক বেশ্যার গল্প

5 mins
970

আমি মিনু ওরফে মিনতি সরদার উত্তর কলকাতার এক ঘিঞ্জি বস্তি এলাকার নিষিদ্ধ পল্লীর বাসিন্দা।হ্যাঁ আমি আমার শরীর বেচেই পেট চালাই আমার।বহুদিন হয়ে গেল এই লাইনে আছি।আমার রোজকার ধরাবাঁধা খদ্দেরের সংখ্যা নেহাত কম নয়।এই নিষিদ্ধ পল্লী বহুদিন ধরে আমার রোজগারের একমাত্র জায়গা।বেশ নামডাক আছে আমার এই লাইনে যদিও সেটা সুনাম নয় আমি জানি।আমার রোজকার কাজ হল দিন রাত এক করে খদ্দেরের চাহিদা মেটানো তাই সকাল সকাল একটু কিছু খেয়েই ঠোঁটে গালে রঙ মেখে নিজেকে প্রস্তত করে নিই প্রতিদিন।




কিন্তু জানো আজকাল মনে হয় যদি আমারও একটা সংসার থাকতো একটা ভালোবাসার মানুষ থাকতো তাহলে বেশ হতো।কিন্তু ভুল করেও আমি তা প্রকাশ করি না হয়তো মেনে নিয়েছি ওসব ভাববার অধিকার আমার নেই।মাঝে মাঝে মনে হয় আমার বয়সী মেয়েরা হয়তো মা ডাক শুনছে আর আমি একা পড়ে আছি এক অন্ধকার জগতে,এখান থেকে বেরোনোর রাস্তা আমার জানা নেই।




এখানে এসেছিলাম বছর পনের হল। তখন সবে আমার বয়ঃসন্ধিকাল চলছে মা হতে পারার সত্ত্বা হিসেবে ঋতুচক্র শুরু হয়েছে ঠিক তখনই আমার আশ্রয় হয় এই নিষিদ্ধ পল্লিতে।প্রথম প্রথম খুব কষ্ট হতো যন্ত্রনায় কুঁকড়ে যেতাম আমি।কিন্তু আস্তে আস্তে সব সয়ে গেছে।জানো আমি লেখাপড়া করতাম ইস্কুলেও যেতাম।মা লোকের বাড়ি কাজ করে সংসার চালাতো।আর আমার বাপ মাকে মারধোর করে সেই টাকা় মদ জুয়া তে ওড়াতো।মা বলতো নাকি মেয়েবাজি করে বাবা।কথার মানেটা ঠিক বুঝতাম না তখন।


মা কষ্ট হলেও বলতো লেখাপড়া ছাড়িস না মা,নাহলে তুই বাঁচতে পারবি না।লেখাপড়া মন দিয়েই করতাম।দিনরাত অশান্তি হতো বাড়িতে।মায়ের উপর চলতো অত্যাচার মা তাও সহ্য করতো।বলতো শুধু তোর জন্য বেঁচে আছি মা।মায়ের জন্য খুব কষ্ট হতো আমার। কিন্তু আমার ভাগ্য যে খুবই খারাপ হঠাৎ মা খুব অসুস্থ হয়ে পড়লেন বাবাকে বললাম ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে কিন্তু বাবা কোনো ভ্রুক্ষেপ করলো না।উল্টে যে কটা টাকা ছিল তাই নিয়ে মদ খেতে চলে গেলো।


আমি অসহায়ের মতো লোকের হাতে পায়ে পড়তে লাগলাম দুটো টাকার জন্য।যেকটা টাকা পেলাম তাই দিয়ে ওষুধ দোকান থেকে ওষুধ আনলাম কিন্তু সারলো না তাতে।একদিন রাতে মায়ের প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হলো বাবাকে ডাকতে গেলাম দেখলাম নেশায় বেহুঁশ হয়ে পড়ে আছে।কি করবো ভেবে পেলাম না।মা আমার হাত ছাড়ছিল না।তাও আমি ছুটে আশপাশের লোকজন ডেকে আনতে গেলাম মা'কে বাঁচানোর আশায়।সবাই এসে বললো মা নাকি আর বেঁচে নেই আমার‌।মাকে আঁকড়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়লাম আমি। ছাড়ছিলাম না মাকে কিন্তু নিয়ে গেল মাকে সবাই মিলে।


লক্ষী মাসি আমার টাকা ঠিকঠাক মিটিয়ে দিতো।রোজগার মন্দ ছিল না।টাকা জমিয়ে একটা স্মার্ট ফোন কিনলাম।জগত খুলে গেলো আমার সামনে।ফাঁকা সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া তে ব্যস্ত রাখতাম নিজেকে।দেখতে যেহেতু খারাপ ছিলাম না তাই অনেকেই বন্ধুত্বের রিকোয়েস্ট পাঠাতো।এইভাবেই আমার আলাপ হলো দিলিপের সাথে।দিলিপ শিক্ষিত চাকুরীজীবি তাই ভয় লাগতো খুব।একদিন ভালোবাসার প্রস্তাব দিলো আমাকে।কখনো ভাবিনি আমার জীবনে এরকম দিন আসতে পারে সাগ্ৰহে সম্মতি জানালাম।ও জানতো না আমার জগত সম্পর্কে কিছুই।মাঝে মাঝে মনে হতো অন্যায় করছি কিন্তু হারানোর ভয় আমাকে আটকে রাখতো।এইভাবে অনেকদিন কেটে গেলো একদিন বললো যে ও আমাকে বিয়ে করতে চায়।তাই ও চায় ওর বাবা মায়ের সাথে দেখা করাতে।সেবার ছিল আমাদের প্রথম দেখা।অবাক হলাম সামনাসামনি প্রথম দেখাতেই বিয়ের কথা জানাবে!


লক্ষী মাসিকে বললাম কিছু কেনাকাটি করার আছে এই বলে দিলিপের দেওয়া ঠিকানা তে পৌছালাম।দেখলাম বাড়িতে ও একা‌।বললাম তোমার বাবা মা কোথায়?বললো বেরিয়েছে একটু পরেই চলে আসবে।আমাকে মিষ্টি খেতে দিল।তারপর দেখলাম ও ঘরের দরজা বন্ধ করেই ঝাঁপিয়ে পড়লো আমার উপর‌ যৌন খিদে মেটাতে।বললো আমার বৌ হবে তো কাছে এসো একটু।হতভম্ব হয়ে গেলাম আমি। কোনো মতে নিজেকে সামলে নিলাম।ওকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে দরজা টা খুলে প্রানপনে ছুটতে লাগলাম আর পিছন ফিরে তাকাইনি।আমি ভুল ছিলাম শুধু আমিই ঠকাইনি দিলিপকে।সমাজের শিক্ষিত ভদ্র মানুষের ভালোবাসার আড়ালে এই রূপ দেখে শিউরে উঠলাম।বুঝলাম ভদ্র শিক্ষিত মানুষ রাও অশিক্ষিত লোকদের থেকে কম যায় না।আবার ফিরলাম আমার আস্তানায়।স্মার্টফোন ব্যবহার করা বন্ধ করলাম।মানসিক কষ্টে কাতর ছিলাম আমি।খাওয়া দাওয়া ও ছেড়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু আস্তে আস্তে নিজেকে শক্ত করলাম।




বেশ কিছুদিন ধরেই দুলাল কে দেখি রাতে ঘরে ঢুকে সে চাহিদা মেটানোর পরিবর্তে আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে,ভালোবাসার কথা বলে।বলে চল পালাই বিয়ে করবো কিন্তু ওই মিথ্যে প্রতিশ্রুতি তে আমি আর ভুলি না। আজকাল‌ একদিন দুলাল না এলে মনটা কেমন লাগে যেনো।ওকে বোঝাই নেশা না করতে।একদিন দুলাল বললো আমার মা মরা ছেলেটার মা হবি মিনু?চোখের কোনটা চিকচিক করে উঠলো।এটা ভেবে যে আমিও স্বামী সন্তান নিয়ে সংসার করবো।




খুব লোভ হয়েছিল জানো?দুলাল কে সম্মতি প্রকাশ করলাম।ও বললো যে ছয় মাসের মধ্যে ও নতুন বাড়ি তৈরি করে সেখানে তুলবে আমায়।খুব খুশি হলাম আমি‌।আমার সর্বস্ব দিয়ে দিলাম দুলালের ঘর তৈরির জন্য।ছ মাস পর দুলালের ঘর তৈরি শেষ হলো।বললো রাতে পালিয়ে দূরের এক মন্দিরে অপেক্ষা করতে। ওখানে বিয়ে করে ঘরে তুলবে আমায়‌‌। নির্দিষ্ট দিন নিজের দরকারি কিছু জিনিসপত্র জামাকাপড় নিয়ে পালালাম রাতের অন্ধকারে।অপেক্ষা করতে লাগলাম দুলালের।কিন্তু ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে গেলো দুলাল আর এলো না।



রাত দুটো বাজে এখনো দুলাল আসেনি আমার দুচোখ দিয়ে জলের ধারা বইছে। দুলাল কে তো আমি কিছু মিথ্যে বলিনি তাহলে আমার নিঃস্ব করে আমার সর্বস্ব নিয়ে ঠকালো কেনো আমায়?আমার সব স্বপ্ন নিমেষে ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো। ভোরের আলো ফুটেছে চারপাশের লোকজন পুলিশে খবর দিয়েছে পুলিশ আমার অশুচি ঝুলন্ত দেহটা মন্দিরের পাশের গাছ থেকে উদ্ধার করেছে।জানো আমি খুব বড়ো অপরাধী ছিলাম লোভ যে বড়ো খারাপ।চেয়েছিলাম তোমাদের মতো সংসার করতে শুধু।


মরার পরও আমার দেহের শেষ অংশ মাটির নিচে স্থান পায়নি আড়াল পায়নি। বেওয়ারিশ লাশ তো তাই আমার দেহটা অনেক দিন ফর্ম্যালিনে চোবানো ছিল।এখন দেখি ফুটফুটে ছেলেমেয়ে গুলো আমার দেহের অংশ নিতে পড়াশোনা করে।হাড়ের আবার কতো নাম জানো?আমার কঙ্কাল টায় হাড়গুলো চিহ্নিত করে করে করে পড়ে যায় হিউমেরাস রেডিয়াস আলনা কারপ্যাল মেটাকারপ্যাল ফ্যালানজেস‌।হ্যাঁ আমি মিনু মিনতি সরদার মৃত্যুর পরও আমার নোংরা শরীরটা লুকাতে পারিনি।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy